নোবেল বিজয়টা আমাকে এমন একটা লাইফস্টাইল উপহার দিলো, যেটা আমি আসলে চাইনি —নাজিব মাহফুজ
নাজিব মাহফুজের আজকে মৃত্যুদিন। তার মৃত্যু নিয়ে আসেল কোন হা-হুতাশ নাই। সুদীর্ঘ এক জীবন পার করেই তিনি বিগত হইছেন। আজকে যেহেতু তিরিশে আগস্ট, সো, আমরা তাকে তাকে স্মরণ করলাম। নোবেল বিজয় নাজিব মাহফুজের জীবনের মূল ঘটনাই বলতে হবে। তিনি একজন আরব, তথা ইজিপশিয়ান- আরব সাহিত্যিক হিসেবে তিনিই প্রথম নোবেল এওয়ার্ড পেয়েছেন। এটা খুব বড় ঘটনা। এটা খুব স্বস্তির খবর। নাজিব মাহফুজ মারা গেছেন দুই হাজার ছয়ে। জীবিতকালে তার এই ইন্টারভিউটা নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সালমাভী। খুবই সংক্ষিপ্ত। ইন্টারভিউটা অনুবাদ করেছেন আশরাফ মাহদী।
সাহিত্যে নোবেল পেতে যাচ্ছেন খবরটা শোনার পর আপনার কেমন লেগেছিল?
এটা অবশ্যই অবাক করা এবং ভালো লাগার মত একটি খবর ছিল। এ সম্মান আমার ভাগ্যে জুটবে, এ আশা কখনো করিনি। আমাদের সময় এনাটোল ফ্রেঞ্চ, বার্নার্ড শ, আর্নেস্ট হ্যামিংওয়ে, উইলিয়াম ফকনারের মত উঁচুমানের লেখকরা নোবেল পেত। তাদের মধ্যে জেন পল সার্ট্রি আর আলবার্ট ক্যামাসও ছিল। সে সময় লোকে বলে বেড়াতো যে, একদিন কোন এক আরব সাহিত্যিকও এই নোবেল প্রাইজ জিতে দেখাবে। কিন্তু আমার কখনোই মনে হত না যে, এমন কিছু ঘটবে। বা এটাও সম্ভব।
কিন্তু আপনার নোবেল জেতার প্রায় বিশ বছর আগে তো আব্বাস মাহমুদ আল আক্কাদ আপনাকে মনোনীত করেছিলেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন যে, আপনাকে এই নোবেল প্রাইজের যোগ্য মনে করেন।
আল আক্কাদ সবসময় তার চিন্তার ব্যাপারে খুব সাহসী ছিলেন। মন্তব্য করার সময় লোকে কি বলবে তা খুব কমই ভাবতেন।
নোবেল প্রাইজ পাওয়াটা কোন দিক থেকে আপনাকে প্রভাবিত করল? জীবনে অথবা পরবর্তী সাহিত্য রচনায় কোন রকম রূপান্তর ঘটিয়ে দিল?
হ্যা, এটা আমাকে ধারাবাহিক লিখে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমি এই এওয়ার্ডটা আমার রাইটিং ক্যারিয়ারের অনেক পরে এসে পেয়েছি। এরপর প্রকাশিত হওয়া ‘একোস অব এন অটোবায়োগ্রাফি’ এখন পর্যন্ত একমাত্র বই। আপাতত ‘ড্রিমস অফ রিকিউপারেশন’ লিখছি। এমনকি ‘কশতুমুর’ উপন্যাসটি, যা কিনা আল আহরাম পত্রিকা ধারাবাহিকভাবে ছেপেছিল, সেটাও ছিল নোবেল প্রাইজে পাওয়ার আগে। পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে নোবেল বিজয়টা আমাকে এমন একটা লাইফস্টাইল উপহার দিলো, যেটা আমি আসলে চাইনি। এইসব ইন্টারভিউ, মিডিয়ায় উপস্থিতির বাড়তি ঝামেলা, এগুলোতে আমি অভ্যস্ত নই। আমি চেয়েছিলাম শান্তিপূর্ণভাবে নিজের কাজ করে যেতে।
কিভাবে একজন লেখক হয়ে উঠলেন? অনুপ্রেরণার উৎসটা কি?
স্কুলে থাকতেই লেখালেখি করতাম। তখন খাতায় লেখতাম। আল মানফালুতি, ত্বাহা হোসেন ও আল আক্কাদের মত সমসাময়িক ও নতুন ধারার আরব সাহিত্যিকরা আমার বেশ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তারাই মূলত লেখালেখির নেশাটা প্রচণ্ডভাবে আমার ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছেন। যার ফলে মাধ্যমিকে পড়ার সময় আমি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সাহিত্য বিভাগে চলে আসি।
নোবেল পাওয়ার আগ পর্যন্ত আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা কি ছিল?
মাধ্যমিকে সাহিত্য বিভাগে আসার ঘটনাটা গুরুতপূর্ণ ছিল। তাছাড়া ১৯৯৪-তে আমার উপর হওয়া হামলাটাকে ছোটখাটো কোন ঘটনা বলা যায় না। এক যুবক আমার গলায় ছুরি চালানোর চেষ্টা করেছিল। এ-হামলার পর দীর্ঘসময় পর্যন্ত আমার ডানহাত প্যারালাইজড ছিল। তবে এ দুর্ঘটনার পর দেশ ও মানুষ যেভাবে আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছে সেটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে।
নোবেল পাওয়ার আগে আপনার কাজগুলো আরবি সাহিত্যে কেমন প্রভাব ফেলত?
এর উত্তরটা সমালোচকদের উপর ছেড়ে দেয়া উচিত বলে মনে করছি। তারাই ভালো বলতে পারবে আমার লেখা আরবি সাহিত্যে কোন প্রভাব ফেলেছে কিনা। তবে নোবেল পাওয়ার পর একটা ইতিবাচক ব্যাপার লক্ষ্য করেছি। আরবি সাহিত্যের উপর করা কাজগুলো এখন অনেক ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। একজন রাশিয়ান ভিজিটর এরকমই বলছিল আমাকে। তারা ফ্র্যাঙ্কফার্ট আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজন করছে। সেখানে আমাকেও নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
আজ/এসআর/৩০২