প্রশ্ন : বাংলাদেশী জমি উশরি না খারাজি?
উত্তর : বাংলাদেশের জমি তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
১. যেসব জমি ধারাবাহিকভাবে ব্রিটিশ শাসনের আগ থেকে মুসলমানদের মালিকানায় চলে আসছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়, সেগুলোকে উশরি ধরে উশর আদায় করা কর্তব্য।
২. যেসব জমি বিধর্মীর হাত থেকে মুসলমানদের হাতে এসেছে বলে প্রমাণিত, সেগুলোকে খারাজি গণ্য করে প্রতি বছর একবার খারাজ বা ট্যাক্স আদায় করতে হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যে খাজনা নেয়া হয় তাতে দাতা যদি খারাজ আদায়ের নিয়ত করে তাহলে খাজনা দ্বারাই খারাজি বা ট্যাক্স আদায় হয়ে যাবে।
৩. আর যদি উল্লিখিত কোনো সুরত জানা না যায় বা সন্দেহ হয়, সে ক্ষেত্রে সতর্কতা হিসেবে উশর আদায় করা ভালো। (সূত্র : রদ্দুল মুহতার : ৪/১৯২, বাদায়ে সানায়ে : ২/৫৮, জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-২/২৬১, ফাতাওয়া উসমানী : ২/১২৭)।
সূত্রঃ মাওলানা সাদেকুল ইসলাম, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, ঢাকা
ফসলের যাকাত বা উশরঃ
বাংলাদেশের জমি উশরী না খারাজী , বর্তমানে এব্যপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া অত্যন্ত জটিল বরং অসম্ভব। এ দেশকে উলামায়ে কেরাম একসময় দারুল হরব বলে ঘোষনা করেছিলেন। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের জমি উশরী বা খারাজী কোনটিই হতে পারে না।
তবে ফিকহী দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করলে বুঝে আসে উক্ত হুকুম ঐ সকল দারুল হরব সম্পর্কে, যা পূর্বে থেকে দারুল হরব ছিল। আর আমাদের দেশ পূর্বে দারুল হরব ছিল না। বরং আটশত বছর দারুল ইসলাম থাকার পর দারুল হরব হয়েছিল। কজেই উক্ত হুকুম আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য হবে না। আবার ইংরেজরা এদেশের ক্ষমতা দখলের পর যে সমস্ত জমি মুসলমানদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের মালিকানা বাতিল করে হিন্দুদেরকে জমিদারী প্রদান করেছিল, ঐসকল জমিও উশরী নয়। তবে এধরনের জমি খুজেঁ বের করাও কঠিন। এক্ষেত্রে উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত হল যে সকল জমি ধারাবাহিক ভাবে মুসলমানদের মালিকানায় চলে আসছে বলে প্রমান পাওয়া যায় সেগুলোকে উশরী ধরে উশর আদায় করবে।
আর যে সকল জমির ক্ষেত্রে জানা যায় যে, উক্ত জমি বিধর্মীর হাত থেকে মুসলমানদের হাতে এসেছে তবে তা খারাজী হিসাবে গন্য হবে এবং তার খারাজ আদায় করবে। যা প্রতিবছর একবার বর্তাবে। যদি উল্লে¬খিত সূরত জানা না যায় বা সন্দেহ হয় তবে সতর্কতা হিসাবে উশর আদায় করবে।
সূত্রঃ মুফতি হুসাইন সাহেব
বাংলাদেশের ভূমি ওশরী না খারাজী ?
বাংলাদেশের ভূমি ওশরী না খারাজী এ ব্যাপারে একদল ওলামা বলেন খারাজী। তাদের যুক্তি হলো, বাংলাদেশ ছিল পৌত্তলিকদের দেশ। এখানে সর্বপ্রথম মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান কুতুবুদ্দীন আইবেক এর সেনাপতি ইখতিয়ারউদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী ১২০৩ খ্রীষ্টাব্দে বাংলা বিজয় করেন। বিজয়ের পর তিনি বাংলাদেশের ভূমি মুসলমানদের মাঝে গণিমতের মাল হিসেবে বন্টন করেছিলেন কিনা একথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না।
তবে স্বাভাবিক যুক্তিতে এ কথাই বুঝে আসে যে, এ বিশাল বাংলা যেমন পূর্বে হিন্দুদের হাতে ছিল, এমন জমীন ছিল রাষ্ট্রের অধীন, তেমনি রেখে দিয়েছিলেন বখতিয়ার খিলজী। তাদের সাথে খারাজের চুক্তি সাধন । করেন, ওশরের নয়। কারণ ওশর কাফেরদের সাথে হয় না। যা তার নিযুক্ত গভর্নরের মাধ্যমে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত পৌঁছত। আর আমরা জানি, মুসলিম বাহিনী কর্তৃক বিজিত এলাকা মুসলমানদের মাঝে বন্টন না করলে তা খারাজী ভূমি হিসেবেই বাকি থাকে। আর যে ভূমিতে একবার খারাজ সাব্যস্ত হয়, তা চিরকাল খারাজীই থাকে। সুতরাং, এ সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায় যে, বাংলাদেশের ভূমি খারাজী। ওশরী নয়। (ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ন: ৩০৭-৩০৮)
সূত্রঃ মাওলানা লুৎফুর রহমান ফরায়েজি
No comments:
Post a Comment