যে সমস্ত গুরুতর অপরাধের শাস্তির পরিমাণের ব্যাপারে কুরআন হাদিসের বক্তব্য সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত সে সব শাস্তিকে শরিয়তের পরিভাষায় হদ ও কিসাস বলা হয়।
আর তাযীর হল সেই সব সাধারণ শাস্তি যা হদ ও কিসাস ব্যতীত অন্যান্য সাধারণ অপরাধের কারণে দেয়া হয়ে
থাকে। শরিয়ত তাযীরের কোন পরিমাণ নির্ধারিত করে দেয়নি। এবং এই লঘু অপরাধের শাস্তির ব্যাপারে হাদিসে ক্ষেত্রবিশেষ কিছুটা শিথিলতা এসেছে। ইসলামে সাধারণ অপরাধের জন্য যেই শাস্তির কথা বলা হয়েছে তাঁর ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্টই এসেছে যে তা দশ বেত্রাঘাতের বেশি যাতে কোন ভাবেই না হয়। এমনকি কোন শাসক বা বিচারকও যদি তাযিরের ক্ষেত্রে হদের সমপরিমাণ শাস্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয় তাহলে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সে মু'তাদীন বা সীমালঙ্ঘনকারী সাব্যস্ত হবে।
তাযীর সংক্রান্ত অন্য এক হাদিসে সম্মানিত ব্যক্তিদেরকে তাদের লঘু অপরাধের শাস্তির
ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে।
আবু দাউদ ও তাবারানীরতে বর্ণিত মারফু হাদিস, আকিলু যাবিল হাইয়াত আসারাতিহিম,
ইল্লাল হুদুদ।
অর্থাৎ সাধারণ শাস্তির ক্ষেত্রে সমাজের মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের ভুলত্রুটি
ক্ষমা করা হবে তবে হদের ক্ষেত্রে নয়। হাদিসের সনদের বর্ণনাকারীগণ সকলেই সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।
তাহলে কি ইসলাম সম্মানিত মানুষদের জন্য শিথিলতা প্রদর্শন করে এলিটিজমকে
উৎসাহিত করলো? অনেকে এই ভুল ব্যাখ্যায় গিয়ে ইসলামে এলিটিজম খুজে পেতে পারেন।
এই হাদিস থেকে নেয়া হুকুম থেকে কোনভাবেই এই কথা বুঝে নেয়ার সুযোগ নেই যে ইসলাম
এলিটিজমকে উৎসাহ দিল। একটা কথা মনে রাখতে হবে ধর্মীয় কারণে সমাজে মর্যাদাবান
ব্যক্তি আর দুনিয়াবী মর্যাদাবানের হিসেব এক নয়। নৈতিকতার বিচারে অবশ্যই তাকে শতভাগ
ন্যয়ের উপর থাকতে হবে। আজকাল প্রসিদ্ধি পেয়ে বসাটাই যে সমাজের মর্যাদাবানের
মাপকাঠি হয়ে দাড়িয়েছে এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসে এই হাদিসের অর্থ বুঝতে হবে।
যারা ধর্মীয় ভাবে সমাজে মর্যাদাবান হন তারা সেই সমাজের মুকতাদা বা অনুসরণীয়
ব্যক্তিত্ব হয়ে থাকেন। অতএব তাদের সাধারণ কোন অপরাধের ব্যাপারে যদি শীথিলতা
প্রদর্শন করে তাদের দোষকে গোপন রাখা যায় তাহলে তাঁর ইতিবাচক প্রভাবের বিষয়টিই
যৌক্তিক। কেননা সাধারণ মানুষ তখন এই কথা বলে বেড়াতে পারবেনা যে “আরেহ, কত বড় বড়
মানুষকে দেখলাম এসব করে বেড়ায়, আমরা আর কোন
ছার”
তাই সবক্ষেত্রে সমতার বিচার দেখাতে গিয়ে যদি নূন্যতম কারণেও একজন গণ্যমান্য
ব্যক্তিকে সাধারণ সমাজের সামনে দাড় করানো হয় তাহলে এটা নিঃসন্দেহে সমাজের ভারসাম্য
নষ্ট করবে। সমাজের ভারসাম্য রক্ষার্থেই ইসলাম এখানে বড় কোন কল্যাণের নিমিত্তে ছোট
একটি বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করেছে।
No comments:
Post a Comment