আমরা যেমন ক্ষেপে আছি এই চুনোপুঁটি মার্কা জঙ্গিগুলোর উপর, ঠিক তেমনি আমেরিকাও কিন্তু খুব ক্ষেপে আছে। আমরা যেমন এদের বিচার করতে চাচ্ছি, তারাও কিন্তু খুব চাচ্ছে। আমরা যেমন সন্দেহে আছি হামলা কারীরা আইএস কিনা, তারাও সন্দেহে আছে আইএসের দায় স্বীকারের সত্যতা নিয়ে। কত্তো মিল ওদের সাথে আমাদের তাই না? বরং ওরা তো আমাদের থেকেও সিরিয়াস মনে হচ্ছে। মজার কিন্তু ব্যাপারটা।
আমাদের সাথে তারা ফোনে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এখন সব ধরনের সাহায্য সহযোগীতাসহ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের দায়ভার নিতে তারা আগ্রহী। আমরা দিতে আগ্রহী তো? অবশ্যই!! কেন নয়!! মজা বাড়বে তো এতে..
তবে সমস্যা হলো এই কাহিনীটা খুব একটা ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠছেনা। কেমন যেন বাংলা ছবির মত। শুরু দেখেই শেষ বলে দেওয়া যাচ্ছে। নতুন বোতলে পুরান মদ খাওয়ানোর চেষ্টা আর কি। ওরা হয়তো জানে না বাঙালি এখন হলিউড দেখে অভ্যস্ত। তাহলে হয়তো আরেকটু প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখাতো।
এই দীর্ঘ অভিযান শেষে ধরতে পারলোই মাত্র একটা জঙ্গি সেটাও নাকি আবার সন্দেহভাজন। আমাদের দেশে সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরার প্র্যাকটিসটা একটু বেশীই হয় কিনা! :p
তবে সফল এই অভিযানের জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে একটা অভিনন্দন জানাতেই হয়। এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে রাজনীতি শুরু হওয়ার আগেই এর সুষ্ঠ তদন্ত হোক। সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটুক।
কেবল মাদ্রাসায় পড়ার কারণে আর দাঁড়ি রাখার কারণে গত ১২ বছরে নিত্যদিন যে হেনস্থা আর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি তা নিয়ে লিখলে বোধ হয় বিশাল মহাকাব্য লেখা যাবে। গুলশানের ঘটনা আমার মতো অনেকের জীবনের অভিজ্ঞতাকে যে নয়া ডাইমেনশানে নিয়ে যাবে তা পষ্ট। অনিক ভাই লিখেছেন,"গুলশান হামলার একটা গুরুত্বপূর্ন দিক হলো এই হামলা অনেকগুলো ফিল্ডকে লেভেল করে দিয়েছে। কোন দোষ ছাড়া, শুধুমাত্র মাদ্রাসায় পড়ার কারনে মিথ্যে অপবাদ খেতে মাদ্রাসার ছাত্রদের কেমন লাগে, সেই ফিলিংসটা এখন বড়লোকের ছেলে মেয়েদের বুঝতে সুবিধা হবে। শুধু মাত্র স্কলাস্টিকা, টার্কিশ স্কুল,ব্র্যাক ভার্সিটি, মোনাশ, কিংবা নর্থ সাউথে পড়ার কারনে কেউ যখন স্টেরিওটাইপড হবে, বিদেশের ভিসা নিতে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হবে, সে হয়তো বুঝতে পারবে শুধু মাত্র একটা পাঞ্জাবী পড়ার কারণে, কিংবা টুপি পড়ার কারণে হেনস্থা হতে মানুষের কেমন লাগে।"
সদ্য প্রকাশিত সাইট ইন্টেলিজেন্সের ভিডিওতে আইএসের বেশে হাজির হয়েছেন সাবেক ক্লোজআপ তারকা তাহমিদ রহমান শাফি। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে নতুন করে আইএসভীতি ছড়াচ্ছে। বিবিসির দাবী তাহমীদের জঙ্গি হয়ে ওঠার পেছনে কারণ ছিল তার ধর্মের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠা। এবং তাদের অফিসিয়াল পেজেরই অন্য একটা নিউজে তারা তাহমীদকে খুব নামাজী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। হয়তো তার মধ্যে এসব গুণাবলী ছিল, তাই বলে জঙ্গি হওয়ার কারণ হিসেবে এইসব ধার্মিকতাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করাটা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়?
গুলশানে হামলাকারী সেই ছেলেগুলো যে কি কারণে জঙ্গি হয়েছিল এসব নিয়ে গতকয়েকদিনে সোসাল মিডিয়ায় বিশ্লেষণ তো কম হয়নি। ব্যাপারগুলো এত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও ধর্মটাকে জোর করে টেনে এনে দোষারোপ কেন করছে তারা? এতে তাদের উদ্দেশ্যটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। এইসব জঙ্গিদের ইসলামিক বানানোর জোরদার প্রচেষ্টা কিছু মহল অনেক আগ থেকেই করে আসছে। আর বিবিসি তখন থেকেই সে মহলের অন্তর্ভুক্ত। এটাকে ইসলাম বলে প্রচার করে তারা মূলত দোষটা ইসলামের ঘাড়ে চাপাতে চায়।
ইসলামের নামে নানান জায়গায় হামলা করে নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে যারা হালাল মনে করে তাদেরকে ইসলাম ধ্বংসকারী বলার নানান কারণ আছে। এভাবে যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে হালাল মনে করে হাদিসের ভাষ্যমতে তারা খারেজী সম্প্রদায়ভুক্ত । এবং খারেজী হওয়ার কারণে অনেক ওলামায়েকেরামের মতে তারা কাফের। এর সপক্ষে দলিল হিসেবে আল্লামা আনওয়ার সাহ কাশ্মিরী ইবনে মাজার হাদিস এবং ইমাম বুখারী হযরত আবু সাঈদ খুদরীর রেওয়ায়েত এনেছেন। তাছাড়া এই নিরপরাধ মানুষগুলোকে হত্যা করাকে তারা ইসলামের পক্ষে বিশাল জীহাদ করে ফেলার দাবী করলেও এর যথাযথ কোন কুরআন হাদিসের ভিত্তিতে যৌক্তিক দলিল প্রমাণ তারা আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি।
আচ্ছা, অতসব ইতিহাস না টেনে শুধুমাত্র যদি বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে বিচার করা হয় তাহলেও তাদের এজেন্ডা অনেকাংশে পরিষ্কার হয়ে যায়। মূলত তাদের এসব জঙ্গি কর্মকান্ডকে সামনে এনে কারা ইসলামকে দোষারোপ করার সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছে? এই গেমপ্ল্যানটা কাদের সাজানো এরপরও বুঝতে বাকি থাকার কথা না।
অতএব আইএস ইস্যুকে ইসলামিকলি ডিল করতে হবে। শুধু এতটুকু বললেই হবে না যে ইসলাম এসব সমর্থন করে না। ইসলাম কেন সমর্থন করে না এবং তাদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে এসব কথাও এখন খুব স্পষ্টভাষায় বলে দিতে হবে। এবং প্রচার প্রসারের মাধ্যমে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। কেবল কে জঙ্গি আর কোথাথেকে জঙ্গি বের হয় এ তর্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আপাতত বিপদ কমার কোন সম্ভাবনা নেই।
ঈদের দিন পাশের বাড়ির প্রতিবেশী আপনার বাসায় বেড়াতে আসাটা স্বাভাবিক হলেও পাশের দেশের প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে সন্দেহজনকভাবে আপনার দেশে প্রবেশ করাটা মোটেও স্বাভাবিক না। আপনি হয়তো ঈদ আনন্দে ব্যস্ত তাই এই "প্রতিবেশী"র আগমনের সংবাদ আপনি পাননি। কেন আসলো সে বিশ্লেষণ পরে হবে। আসা যে শুরু করেছে এই সংবাদ অন্ততপক্ষে জেনে রাখা দরকার।
নয়া দিগন্তের সংবাদঃ "কিশোরগঞ্জে বিস্ফোরণের তদন্তের স্বার্থে ঢাকায় পাড়ি দিচ্ছে ভারতের স্পেশাল জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী (এনএসজি) টিম৷ বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করতেই পাঠানো হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী, খবর পিটিআই সূত্রে৷ সঙ্গে যাবেন গোয়েন্দা ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও৷ এনএসজি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী ঢাকা পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত মিলেছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে৷ কিশোরগঞ্জে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে নমুনা ও প্রমাণ সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ যে দলটি ঢাকায় পাড়ি দেবে সেই দলে রয়েছেন বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞ ও জঙ্গি মোকাবিলা সংক্রান্ত যেকোনো অপারেশনে সক্ষম অফিসাররা৷"
"জঙ্গিরা সব প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান" এখনকার মত সংকটময় মুহূর্তে এমন কথা বলে বলে মাদরাসাপড়ুয়া ও ভার্সিটিপড়ুয়াদের মধ্যে বিভাজন তৈরী করাটা সমর্থনযোগ্য না। কিন্তু শোলাকিয়ার ঘটনাতে আবারো নর্থ সাউথের ছেলেগুলাই খবরে ওঠে আসার পর এই অসমর্থনযোগ্য বাক্যটা আমাদের মুখেও চলে আসে...
পিস টিভি বন্ধ করাতে যারা খুব বেশী খুশি হচ্ছেন তাদের কাছে জাকির নায়েককে নিষিদ্ধ করার যুক্তিটা অনেকটা এরকম না? হয়তো না, হয়তোবা হ্যা। এটা সত্য কথা যে আজকে তাকে একজন ইসলামপন্থী হিসেবেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। আঘাতটা এখানে সরাসরি ইসলামের উপর। তার লেকচার শুনে মানুষ জঙ্গি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলাটা নিতান্তই হাস্যকর একটা ব্যাপার। অনেকে বরং তার দাওয়াতী স্টাইলের লেকচারের উপর উদারপন্থার অভিযোগ তুলে তাকে মডারেট বলে থাকেন। আর মডারেটদের ব্যাপারে অভিযোগ আছে যে তারা এতটাই উদার যে জীহাদের আয়াতগুলোর ক্ষেত্রেও নমনীয় ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তাহলে এই নমনীয়তা আর উদারপন্থা দিয়ে জাকির নায়েক কি করে উগ্রবাদ শেখায় সেই প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনের কাছে আছে বলে মনে হয়না। অতএব তাদের এইভাবে একটা চ্যানেল ব্যান্ড করাকে অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলতে হবে। আর হকপন্থী আলেমওলামাদের সাথে জাকির নায়েকের বিরোধটা অন্যখানে। মাজহাবগত কিছু শাখাগত বিষয়ে। সেটা এখানে একেবারেই ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ। সেটাকে আকিদার সমস্যা বলে বলে যারা এতদিন জাকির নায়েককে ইহুদীদের দোসর থেকে শুরু করে কাফের পর্যন্ত বানিয়ে ছেড়েছেন তারা একটু বেশীই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। মনে রাখবেন আজকে যদি আপনি প্রশাসনের এই অন্যায়কে সমর্থন করেন অথবা ধিক্কার জানালে বিপদ আসতে পারে এই ভয়ে চুপ থাকেন তাহলে আগামীকাল যখন শুধুমাত্র ইসলামপন্থী হওয়ার অপরাধে আপনার উপর কোন অন্যায় করা হবে সেই অন্যায়টাকেও অনেকে সমর্থন জানাবে। অথবা নিরাপত্তার ভয়ে চুপ থাকবে। তাই অন্তত অপরাধকে ঘৃণা করতে শিখুন। চুপ থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অপরাধবোধটাও একসময় মরে যায়।
|
No comments:
Post a Comment