Friday, January 3, 2020

পর্দায় মুখ ঢাকার ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের মত

পর্দা ইস্যুতে কালকে দেখলাম একজন শায়েখ জমহুর আর জমহুরে ফুকাহার পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেছেন। যেসব হাদীস দিয়ে ইবনে হুমাম ইমাম আবু হানীফার মতের পক্ষে ইসতেদলাল করেছেন, সেইসব হাদীস দলীল হবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আজকে দেখলাম আরেকজন সুপরিচিত সুযোগ্য শায়েখ লিখেছেন, 

‘মজার ব্যাপার হলো, ফিকহের কিতাবে মহিলাদের চেহারা, হাতের ও পায়ের পাতাকে ‘আওরাত’ বলা হয়নি। বয়ানে দেখলাম, এটাকে আজহারী সাহেব মুখ খোলা রাখার পক্ষের দলিল হিসেবে উপস্থাপন করছেন। অথচ ফিকহের প্রাথমিক স্তরের একটা ছেলেও জানে, এখানে মুখ-হাতের ও পায়ের পাতা ঢাকতে হবে না বলতে বুঝানো হয়েছে, নামাজের মধ্যে এই অংশগুলো খোলা থাকলে নামাজ ভংগ হবে না।’

এই কথাটা খুবই হাস্যকর লাগলো। ফেকাহর কিতাবে নামাযের অধ্যায়ে সতরের আলোচনা হয়। এর বাইরে নজর বা নারীর কতটুকু দেখা বৈধ ওই আলোচনা যে করা হয় সেটা কিসের আলোচনা? সেটাও কি নামাযের আওরাতের আলোচনা? 
দেখুন কওমি মাদরাসায় পাঠ্য হানাফী ফিকাহর বিখ্যাত কিতাব হেদায়ার মুসান্নিফ কী লিখেছেন:

قَالَ ( وَلَا يَجُوزُ أَنْ يَنْظُرَ الرَّجُلُ إلَى الْأَجْنَبِيَّةِ إلَّا وَجْهَهَا وَكَفَّيْهَا ) لِقَوْلِهِ تَعَالَى { وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا } قَالَ عَلِيٌّ وَابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ؛ مَا ظَهَرَ مِنْهَا الْكُحْلُ وَالْخَاتَمُ ، وَالْمُرَادُ مَوْضِعُهُمَا وَهُوَ الْوَجْهُ وَالْكَفُّ ، كَمَا أَنَّ الْمُرَادَ بِالزِّينَةِ الْمَذْكُورَةِ مَوْضِعُهَا ، وَلِأَنَّ فِي إبْدَاءِ الْوَجْهِ وَالْكَفِّ ضَرُورَةً لِحَاجَتِهَا إلَى الْمُعَامَلَةِ مَعَ الرِّجَالِ أَخْذًا وَإِعْطَاءً وَغَيْرَ ذَلِكَ ، وَهَذَا تَنْصِيصٌ عَلَى أَنَّهُ لَا يُبَاحُ النَّظَرُ إلَى قَدِمَهَا .
وَعَنْ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّهُ يُبَاحُ ؛ لِأَنَّ فِيهِ بَعْضَ الضَّرُورَةِ .
وَعَنْ أَبِي يُوسُفَ أَنَّهُ يُبَاحُ النَّظَرُ إلَى ذِرَاعِهَا أَيْضًا ؛ لِأَنَّهُ قَدْ يَبْدُو مِنْهَا عَادَةً

গায়রে মাহরাম নারীর চেহারা এবং দুই হাতের পাতা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ দেখা পুরুষের জন্য বৈধ নয়। দলিল কুরআনের আয়াত: ‘তারা তাদের অলঙ্কার প্রকাশ করবে না তবে যা আপনাতেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে’। আলী ও ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন, আপনাতেই প্রকাশিত হয়ে পড়ে শুরমা ও আঙটি। উদ্দেশ্য হলো শুরমা ও আঙটির জায়গা অর্থাৎ চেহারা এবং হাতের পাতা। যেনো অলঙ্কার বলে অলঙ্কার পরিধানের জায়গা উদ্দেশ্য। আকলী দলিল হলো: চেহারা এবং হাতের পাতা প্রকাশ করার প্রয়োজন পড়ে পুরুষের সাথে তার মুআমালা, লেন-দেন ইত্যাদি প্রয়োজনে। এই কথা থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় পুরুষের জন্য নারীর পা দেখা বৈধ নয়। তবে ইমাম আবু হানীফা থেকে এক বর্ণনায় আছে যে পা দেখাও বৈধ। কারণ মাঝে মাঝে পা খুলে রাখারও প্রয়োজন পড়ে। ইমাম আবু ইউসুফ থেকে বর্ণিত, নারীর হাতের নলা দেখাও বৈধ। কারণ কখনও কখনও স্বভাবত তা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। 

এর শরাহ করতে গিয়ে ফতহুল কাদীরে ইবনে হুমাম লিখেছেন,

فَالْأَوْلَى فِي الِاسْتِدْلَالِ عَلَى ذَلِكَ هُوَ الْمَصِيرُ إلَى مَا جَاءَ مِنْ الْأَخْبَارِ فِي الرُّخْصَةِ فِي النَّظَرِ إلَى وَجْهِهَا وَكَفَّيْهَا: مِنْهَا مَا رُوِيَ «أَنَّ امْرَأَةً عَرَضَتْ نَفْسَهَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَنَظَرَ إلَى وَجْهِهَا وَلَمْ يَرَ فِيهَا رَغْبَةً» . وَمِنْهَا مَا رُوِيَ «أَنَّ أَسْمَاءَ بِنْتَ أَبِي بَكْرٍ دَخَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَعَلَيْهَا ثِيَابٌ رِقَاقٌ، فَأَعْرَضَ عَنْهَا رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَقَالَ: يَا أَسْمَاءُ إنَّ الْمَرْأَةَ إذَا بَلَغَتْ الْمَحِيضَ لَمْ يَصْلُحْ أَنْ يُرَى مِنْهَا إلَّا هَذَا وَهَذَا وَأَشَارَ إلَى وَجْهِهِ وَكَفَّيْهِ» وَمِنْهَا مَا رُوِيَ " أَنَّ فَاطِمَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا - لَمَّا نَاوَلَتْ أَحَدَ ابْنَيْهَا بِلَالًا أَوْ أَنَسًا قَالَ: رَأَيْت كَفَّهَا كَأَنَّهَا فَلْقَةُ قَمَرٍ ": أَيْ قِطْعَتُهُ، فَدَلَّ عَلَى أَنْ لَا بَأْسَ بِالنَّظَرِ إلَى وَجْهِ الْمَرْأَةِ وَكَفِّهَا

উত্তম হলো এই মতের পক্ষে চেহারা এবং দুই হাত দেখার বৈধতা সম্বলিত হাদীস দিয়ে দলীল দেওয়া; এরকম একটি হাদীস হলো, একজন নারী নিজেকে রসূল সা.-এর জন্য পেশ করেছিলো তিনি তার চেহারার দিকে তাকিয়েছিলেন কিন্তু তার প্রতি আগ্রহী হননি। আরও একটি হাদীস হলো, আসমা বিনতে আবী বকর রা. রসূল সা.-এর কাছে গেলেন। তার গায়ে পাতলা কাপড় ছিলো। রসূল সা. মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, হে আসমা একজন নারী যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন তার এটা এবং এটা ছাড়া প্রকাশিত থাকতে পারে না এবং তিনি হাতের পাতা ও চেহারার দিকে ইশারা করলেন। আরেকটি বর্ণনায় আছে, ফাতেমা রা. যখন তার কোনো ছেলেকে বিলাল বা আনাসের কাছে দিতেন তিনি বলেন, আমি তার হাতের পাতা দেখেছি যেনো তা চাঁদের একটি টুকরা। এ থেকে বোঝা যায় চেহারা এবং হাতের পাতার দিকে তাকলে সমস্যা নাই। 

দেখেন ইবনে হুমামও প্রাথমিক ছাত্রদের মতো না বুঝে কোন কথার পক্ষে কী দলিল দিলেন! হায়্রে!

ফারুক ফেরদাউস

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...