Friday, August 5, 2016

বন্যাদুর্গতদের পাশে লালবাগ জামেয়ার সাথে


২রা আগস্ট,২০১৬

এইতো তিনদিন আগের কথা। বন্যার্ত মানুষগুলোর দুঃখ কষ্ট দেখে কেবল হাহাকার ছাড়া করার মত তেমন কিছুই পাচ্ছিলাম না। ওদিকে রুম্মান ভাই একলাই বন্যা ইস্যুতে সবাইকে সক্রিয় করার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর আওয়াজ তুললেন মুসা ভাই। জানতে পারলাম অপু ভাই আর জুবায়ের ভাইও ভিক্টিমদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। এতগুলো মানুষ পাশে পেয়ে মনে হলো কিছু একটা করার সুযোগ এসেছে। যোগ দিলাম কাহাফ ব্যাটেলিয়নে। সাকিব ভাই, সাইফ ভাই, ফায়সাল ভাই, মাহমুদ ভাই, এবিসি ভাই ও এমদাদ মামা সহ আরো অনেকে এগিয়ে এলেন। রোকন ভাই তার মিডিয়া আওয়ার ইসলামকে আমাদের পার্টনার বানিয়ে দিলেন। প্রচুর সাপোর্ট আসতে লাগলো সবদিক থেকে। 

বন্যার্তদের নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায় এ নিয়ে কাহফিয়ানদের চ্যাটগ্রুপে পরামর্শ শুরু হলো। সিদ্ধান্ত হলো সবাই প্রাথমিকভাবে নিজ নিজ মাদরাসায় ক্যাম্পেইন করবে। সে মোতাবেক গতকাল আমি মাদরাসার ভেতর কাজ করার জন্য অনুমতি নিতে গেলাম দায়িত্বশীল হুজুরদের কাছে। কথা বলতে বসে বন্যার প্রসঙ্গ তুলতেই হুজুররা জানালেন লালবাগ মাদরাসা ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই সপ্তাহে ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর আমাকে লিফলেট বানাতে পাঠানো হলো আমাকে। আসহাবে কাহাফের রুম্মান ভাইয়ের লেখা এত সুন্দর ডেসক্রিপশন থাকতে আবার কষ্ট করে কেন লিখতে যাবো? শুধু নামটা চেঞ্জ করে দিলাম কপি মেরে। 

এইভাবেই মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে একই সাথে দুইটা গ্রুপের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছি। আসলে ভেতরের মানবতাবোধটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে একটা মানুষ যে কতটা অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে এটা দেখতে পাচ্ছি। সত্যিই অভিভূত হচ্ছি। এখনো এমন কিছু ভাল মানুষ বেচে আছে যারা সুযোগ পেলে মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে জানে। কালেকশন করতে নেমে মনে হচ্ছে সবাই টাকা হাতেই বসে ছিল। শুধু দেওয়ার জায়গাটাই পাচ্ছিলোনা।

আপাতত এই শুক্রবার পর্যন্ত মাদরাসার কাজ নিয়ে অফলাইনে একটু ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তবে আসহাবে কাহাফের কাজটাও চলতে থাকবে পাশাপাশি। কাহাফের জন্য আমার যেই বিকাশ নাম্বারটা আছে এখন পর্যন্ত সেই একাউন্টের সংগ্রহ দশ হাজার টাকা। সাকিব ভাইয়ের একাউন্টেও আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভাল অংকের টাকা জমা হয়েছে।



সবকাজ বেশ তাড়াহুড়োর বধ্যেই করেছিলাম। তখনকার লিফলেট দিয়ে পোষ্ট যেটা দিয়েছিলাম ফেসবুকেঃ
লালবাগ জামেয়ায় ছাত্র শিক্ষক ও এলাকাবাসীর ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাড়ানোর। আগামী শুক্রবার বাদ আসর ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দুর্যোগ কবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা করা হবে।
যারা শরিক হতে চান সহায়তা পাঠাতে পারেন লিফলেটে উল্লেখিত বিকাশ নাম্বারে।





৬ই আগস্ট ২০১৬ এর স্ট্যাটাসঃ
রওনা হয়ে গেলাম বন্যার্তদের ত্রাণ নিয়ে। গন্তব্য গাইবান্ধা। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর একটি। খোজ খবর নিয়ে বিতরণকেন্দ্র চূড়ান্ত করতে ও ত্রাণ তহবিলে আরো কিছু যোগ করতে বড়দের পরামর্শে নির্ধারিত দিবসের একদিন পরই রওনা হতে হলো। কেবলমাত্র চারদিনের কালেকশন। প্রথম দুইদিনে তো আমি নিজেও নিশ্চিত ছিলাম না যে আসলেই নিয়ে যাওয়ার মত ত্রাণ হবে কিনা। কারণ লাখ দেড়েক যা উঠেছিলো তার অর্ধেক তো যাওয়া আসাতেই খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু ফয়সালাটা যে উপর থেকেই করা হয়েছিল সেটা গতকাল জুমার পর বেশ ভালভাবে উপলব্ধি করলাম। কারণ জুমার পরের সংগ্রহে বেশ বড় একটা অংক ত্রাণ তহবিলে জমা পড়ে গেল। এবং তখন এলাকার অনেকেই আরো একটা দিন সময় চাইলো। আলহামদুলিল্লাহ, সবার সহযোগিতায় লালবাগ টিম আগামীকাল প্রায় চারশত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিনে খোজখবর নিয়ে যা মনে হলো, দেশের বন্যাপ্লাবিত এলাকাগুলোর পরিস্থিতি যতটা ভয়াবহ তার সিকিভাগও মিডিয়া তুলে ধরছেনা। দেশের জনগণকে হতাশ করতে চায়না বলেই হয়তো এসব বন্যার্তদের অসহায়ত্বের প্রদর্শন একটু কম করে প্রদর্শন করছে তারা। তাছাড়া মিডিয়ার কাছে তো রামপাল ও জঙ্গি ইস্যুসহ আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পড়ে আছে খেয়াল করার মত। যেসব মানুষদের রান্না করার ব্যবস্থাটা পর্যন্ত নেই, কলা বা বাশের ভেলায় বিকল্প পদ্ধতিতে রান্না করে কোনও রকম জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে তারা আর যাই হোক মিডিয়ার লাখ টাকার ক্যামেরার লেন্সগুলোর দৃষ্টি নিজেদের দিকে ফেরানোর ক্ষমতা রাখেনা। কারণ আজকাল অসহায়ের আর্তনাদ শোনাতে যতটুকু ক্ষমতার প্রয়োজন ততটুকু ক্ষমতা তাদের নেই।

গাইবান্ধার একটা উপজেলার কিছু তথ্য দেই। শুধু ফুলছড়ি উপজেলায় ভেঙ্গে গেছে প্রায় ছয়টি ব্রীজ। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৪০টি কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আরো তলিয়ে গেছে তিন হাজার চার শত ৪০ হেক্টর জমির আউস, রোপা আমন, আমন বীজতলা ও শাকসবজি। ফলে বাজারে শাকসবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বন্ধ হয়ে গেছে ২৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

আসলে এতকিছুর মাঝে আমাদের এতটুকু প্রচেষ্টা সত্যিই খুব সামান্য। কিন্তু এতটুকু করার সামর্থ্য থাকার পরও যদি একেবারেই কিছু না করতাম তাহলে যিনি এই সামর্থ্যটুকু দিয়েছিলেন তার কাছে অবশ্যই এর জবাবদিহিতা করতে হতো।





চলছে বিতরণ
ঠিক যেখানটায় দাঁড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তিনদিন আগেও তার অনেকটাই পানিতে ডুবে ছিল। দেয়ালগুলোতে কোমর পর্যন্ত পানির দাগ এখনো খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর মানুষগুলোর চেহারায় যে ছাপ পরিস্ফুটিত হচ্ছিলো সেটাকে অসহায়ত্ব বললে যথেষ্ট হবে কিনা জানিনা। কারণ এই মলিন চেহারাগুলোকে বোঝাতে কোন শব্দ যদি ব্যবহার করতে চাই তাহলে সে শব্দের প্রকাশ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। খুব কঠিন হয়ে গেল মনে হয়। 
আমার কাছে তাদের জীবনটা এর চেয়ে বহুগুণ বেশী কঠিন মনে হয়েছে। তাও তো তারা বেচে আছে। একটু সাহায্যের আশায়। একটু ভালবাসার আশায়। 

ফুলছড়ির একশত ত্রিশ পরিবার ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এক মাদরাসায় ত্রাণ বিতরণ শেষে এখন লালবাগ টিম যাচ্ছে মুন্সিপাড়া স্পটে।




আরেক স্পটের ছবি
লালবাগ টিমের আজকের দ্বিতীয় স্পট ছিল মুন্সিপাড়া মাদরাসা প্রাঙ্গণ। এই পর্বে গ্রামের দুইশত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...