প্রশাসনের গতিবিধি ও হালকা বিশ্লেষণ
বর্ডার গার্ডের এধরণের অস্বাভাবিক আচরণে অবাক হব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে এভাবে আমাদের নাম কেন জিজ্ঞেস করছে সে? আবার খুব ধমকের সুরে সাবধানও করে দিচ্ছে আমরা যাতে কেউ নিজেদের পরিচয় গোপন না করি। তবে এরপরের প্রশ্নেই আমাদের কাছে তার অস্থিরতার রহস্য স্পষ্ট হয়ে গেল। ঘটনা হচ্ছে,উপর থেকে তাকে নির্দেশ দেয়া আছে, ঢাকার অমুক ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা থেকে অমুকেকের নেতৃত্বে এই রাস্তা দিয়েই বিশাল ত্রাণের বহর যাবে। তাদেরকে যেকোন মূল্যে আটকাতে হবে। কারণ দুর্ভাগ্যবশত তাদের ঢাকঢোল পিটানোর শব্দটা একটু বেশিই জোরে হওয়াতে প্রশাসনের কান পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। অতএব এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করলাম যে প্রকাশ্যে ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের ব্যাপক আপত্তি আছে।
এবার হালকা বিশ্লেষণের দিকে যাওয়া যাক।
মিয়ানমারে গত দুমাস আগে নতুন করে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরপর রোহিঙ্গারা যখন এপাড়ে আসতে শুরু করেছিল তখন সরকার এদের প্রবেশে বাধা দেয়ার ব্যাপারে খুব কঠোর ছিল। এদিকে সবাই বলছে, মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাধ্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে এর স্থায়ী সমাধান আসবেনা। কিন্তু এসব "আবেগী" বক্তব্যের উপর আমল করে দেশীয় স্বার্থকে ছোট
করে দেখার সময় এবং সুযোগ আসলেই আমাদের সরকারের নেই। চীনের সাথে ব্যাপক লেনদেনের একটা বিষয় আছে। মিয়ানমারকে চাপ দিলে যদি এ সম্পর্কের অবনতি হয়ে যায়! তাই দেশীয় স্বার্থের কথা ভেবেই হয়তো কিছু বলছেনা সরকার। আচ্ছা, এই ব্যাপারটা কি কেউ লক্ষ্য করেছেন? চীন সরকার যে বিবৃতিটা এক ডিসেম্বর দিয়েছিল, আমাদের সরকার হুবহু সেই কথাটাই নয় তারিখে এসে বলেছে। "সামরিকশক্তি নয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।"
অসাধারণ বক্তব্য!
মিয়ানমারে গত দুমাস আগে নতুন করে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরপর রোহিঙ্গারা যখন এপাড়ে আসতে শুরু করেছিল তখন সরকার এদের প্রবেশে বাধা দেয়ার ব্যাপারে খুব কঠোর ছিল। এদিকে সবাই বলছে, মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাধ্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে এর স্থায়ী সমাধান আসবেনা। কিন্তু এসব "আবেগী" বক্তব্যের উপর আমল করে দেশীয় স্বার্থকে ছোট
করে দেখার সময় এবং সুযোগ আসলেই আমাদের সরকারের নেই। চীনের সাথে ব্যাপক লেনদেনের একটা বিষয় আছে। মিয়ানমারকে চাপ দিলে যদি এ সম্পর্কের অবনতি হয়ে যায়! তাই দেশীয় স্বার্থের কথা ভেবেই হয়তো কিছু বলছেনা সরকার। আচ্ছা, এই ব্যাপারটা কি কেউ লক্ষ্য করেছেন? চীন সরকার যে বিবৃতিটা এক ডিসেম্বর দিয়েছিল, আমাদের সরকার হুবহু সেই কথাটাই নয় তারিখে এসে বলেছে। "সামরিকশক্তি নয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।"
অসাধারণ বক্তব্য!
গল্পের এ অংশ পর্যন্ত আমরা প্রথম পর্ব হিসেবে ধরে নিতে পারি। এরপর ধরেন স্ক্রীনে ভেসে উঠলো "ইন্টারভাল"...
পরের পর্বে এসে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশাসনিক বিধিনিষেধের কঠোরতা রহস্যজনকভাবে কমে আসতে থাকে। বর্ডার শিথিল হয়। কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন মানবতার কথা। আর ইসলামপন্থীদের ব্যাখ্যা হল, আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে বিধায় সরকার বর্ডার শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। এগুলোর যেকোন একটি বাস্তব হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা আমি বিলকুল অস্বীকার করছিনা। তবে এসব কিছুর পূর্বে আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি শুধু সেইদিকটায় একটু ফোকাস করতে চাচ্ছি। এতে করে সেখানকার পরিস্থিতি বুঝতে সহজ হবে।
যদি পত্রিকায় কারো নিয়মিত নজর বুলানোর অভ্যাস থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই জানবেন যে কিছুদিন আগে জাতিসংঘের কফি আনান সাহেব মিয়ানমারে গিয়ে তেমন কোন পাত্তা পাননি। মংডুতে তার চোখের সামনেই মকদস্যুরা রোহিঙ্গা নিধনের বর্বরতার চিত্র প্রদর্শন করেছে। তাই তিনি ফিরে এসে কিছু অভিযোগ তুলে উনার দায়িত্ব পালন করে ক্ষান্ত হলেন। এরপর যা হলো, কিছু মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশকেই মানবতার প্রদর্শন করতে আহবান জানালো। এদিক থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তাদেরকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে বলছেন। খাপে খাপ মিলে গেলনা? আশ্রয় দেয়া যে স্থায়ী কোন সমাধান না এ ব্যাপারে সবাই একমত হওয়ার পরও এই শিথিলতার মানে কি?
এখনো বুঝেননাই ব্যাপারটা। সরেজমিন নিয়ে একটু বলি নাইলে বুঝবেন না।
এখনো বুঝেননাই ব্যাপারটা। সরেজমিন নিয়ে একটু বলি নাইলে বুঝবেন না।
ওপাড় থেকে আসা রোহিঙ্গারা দুই ধরণেরঃ
১. নিবন্ধিত। তারা শরণার্থী শিবিরে বা ক্যাম্পগুলোতে থাকছে। এরা হচ্ছে পুরাতন অনুপ্রবেশকারী।
২. অনিবন্ধিত। এরা নতুন এসে কারো ঘরে গোপনে আশ্রয় নিয়েছে। যারা সাতই অক্টোবর শুরু হওয়া নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এপাড়ে এসেছে।
১. নিবন্ধিত। তারা শরণার্থী শিবিরে বা ক্যাম্পগুলোতে থাকছে। এরা হচ্ছে পুরাতন অনুপ্রবেশকারী।
২. অনিবন্ধিত। এরা নতুন এসে কারো ঘরে গোপনে আশ্রয় নিয়েছে। যারা সাতই অক্টোবর শুরু হওয়া নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এপাড়ে এসেছে।
এখন এই পুরাতন যেই রোহিঙ্গারা আছে তারা নিবন্ধিত হওয়ার ফলে জাতিসংঘসহ আরো কিছু সংস্থা থেকে বিরাট অংকের একটা টাকা এদের জন্য আসে। দায়িত্বশীলরা নিজ দায়িত্বে এখান থেকে ব্যাপক লুটপাটও করে থাকেন। তাই রোহিঙ্গারা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের শোষণে অভ্যস্ত লোকদের জন্য ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি। অতএব এসব দায়িত্বশীলদের সাথে পরামর্শ বসলে তো সরকার অবশ্যই রোহিঙ্গা আসতে দিতে বলবেন।
যাইহোক দুইপর্ব বিশিষ্ট এ নাটকে যে সরকার অসাধারণভাবে ব্যালেন্স ধরে রেখেছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। হয়তো বিশ্লেষণের ধারাবাহিকতা বাস্তবতা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। হতেও পারে। আমি কেবল আমার খালি চোখে দেখা ঘটনা সামনে রেখে বিশ্লেষণ করেছি।
তবে এটা সত্যি যে যদি সরকারী অনুমতি নিয়ে ত্রাণ দিতে যেতে হয় তাহলে এই নিবন্ধিত পুরাতন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিয়েই ফিরে আসতে হবে। প্রকৃত হকদার পর্যন্ত পৌছার সুযোগ খুব একটা নেই। কারণ প্রশাসনের কাছে নতুন রোহিঙ্গারা অবৈধ। সুযোগ সুবিধা পেতে চাইলে তাদেরকে নিবন্ধিত হয়ে সেই ক্যাম্প নামক মৃত্যুকূপে ঢুকতে হবে। কারণ নিবন্ধিত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন আর মানুষ হিসেবে বেচে নেই। ক্যাম্পের পরিবেশ পরিস্থিতি তাদেরকে পশুর মত একটা জীবন যাপন করতে বাধ্য করেছে। এরা এতটাই ক্ষুধার্ত হায়নার মত ভেতরে থাকে যে একবার যদি বুঝতে পারে আপনি ত্রাণ নিয়ে গেছেন গায়ের কাপড়টা নিয়েও ফিরে আসতে দিবে কিনা সন্দেহ। এসব দিক বিবেচনায় আমরা আর ক্যাম্পমূখী হবোনা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সুকৌশলে বাইরে বিভিন্ন ঘরে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গাদের নিয়েই কাজ করবো। এরপরও একদিন আমাদের কাফেলার এক হুজুর ক্যাম্পে ঢুকার সাহস করেই ফেললেন। বাধাহীনভাবে প্রথমে ঢুকেও পড়েছিলেন। হঠাৎ ঠিক পেছন থেকে একজন ডাক শুনে থেমে গেলেন....
(চলবে)
No comments:
Post a Comment