Tuesday, December 13, 2016

বিপন্ন মানবতার আর্তনাদ (১)


শত প্রতিকূলতা ঠেলে নাফ নদীর তীরে

"তাহলে আগামী সোমবার আমরা ত্রাণ নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।"
টেকনাফ যাওয়ার আগের বুধবার বিকালে লালবাগ জামেয়ার দফতরে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হল। নাফ নদির ওপাড় থেকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে, সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে টেকনাফে এসে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যার্থে গঠিত ত্রাণ তহবিলে তখনও কিছুই জমা পড়েনি।
কাজে নেমে পড়লাম। দুদিন যেতে না যেতেই ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত নানান জল্পনাকল্পনা ও প্রতিবন্ধকতার খবর বাতাসে ভেসে আসতে শুরু করলো। সোমবার দিনটা যতই ঘনিয়ে আসছিল ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বহুমুখী বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোরতার একটা আভাষ পাওয়া যাচ্ছিলো। এদিকে প্রচুর শীতবস্ত্রসহ বিরাট অংকের টাকা তহবিলে জমা হয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে এ ধরণের সংবাদ পেয়ে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক। চারিদিক থেকে ফোন আসতে শুরু করল, "শুনেছি ত্রাণ নিয়ে নাকি যাওয়া যায় না? প্রশাসন নাকি বাধা দিচ্ছে? তাহলে আপনারা কিভাবে যাচ্ছেন?"
আল্লামা আহমদ শফি সাহেব দা.বা. রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর আহবানের খবরটা যেদিন পত্রিকায় এসেছে ঠিক সেদিনই আমরা উদ্যোগটা নিয়েছিলাম। আমাদের দায়িত্বশীল উস্তাদগণের মাধ্যমে হাটহাজারীতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। যতটুকু বোঝা গেল, বাতাসে ভেসে আসা খবরগুলোর আংশিক সত্যতা ছিল। তবে একদিন যেতে না যেতেই খুব আশাব্যঞ্জক একটা সংবাদ পেলাম। আহমদ শফি সাহেব
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে ফোনে কথা বলেছেন। এবং মন্ত্রী ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ সংবাদ পেয়ে আমাদের কাজের গতি বেড়ে গেল।
ঠিক রওনা হবার দিন জানতে পারলাম, আহমদ শফি সাহেবকে দেয়া প্রশাসনের এ অনুমতি কেবলই মৌখিক।  তাই অন্য কেউ ত্রাণ বিতরণ করতে পারবে কিনা এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না। সিদ্ধান্ত হল, আমরা প্রথমে হাটহাজারী যাবো, এরপর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
মংগলবার ফজরের পরপর আমরা হাটহাজারী পৌছলাম। সেখানকার দায়িত্বশীলদের সাথে খোলামেলা আলাপ করে বুঝতে পারলাম যে সরকারী অনুমতির কোন অগ্রগতি নেই। ফোনের আলাপে যা জেনেছিলাম পরিস্থিতি এখনো সেখানেই আটকে আছে। সরকার দিবে দিবে করে এখনো লিখিত অনুমতি দেয়নি। তাই হাটহাজারীও প্রকাশ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য আরো দু'চারদিন অপেক্ষা করবে। আমরা তখনই বুঝে নিয়েছি যে হাটহাজারী ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলে তাতে বাধাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনো প্রশাসন তাদের সেই "দুইদিনে"র আশা দিয়ে রেখেছে। আর তারাও স্বীকৃতির মত "গুরুত্বপূর্ণ" বিষয় নিয়ে অতিব্যস্ত সময় পার করছে। জোরদার আন্দোলন করে মায়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ কেন করছেনা সেটা ভাবছেন? কেন? এটা কি হেফাজতের দায়িত্ব  নাকি? আচ্ছা, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফরিদ উদ্দিন মাসুদ সাহেবের বক্তব্য কি? অং সান সুচিকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কি কোন "ফতুয়া" সাক্ষরিত হচ্ছে?
থাক সেসব কথা। প্রশাসনের প্রতিশ্রুত সেই "দুইদিন" অপেক্ষার সময় ও সুযোগ তখন আমাদের হাতে ছিল না। আর এত সহজে আমরা ফিরেও আসছিনা। দায়িত্ব যখন নিয়েই ফেলেছি যে করেই হোক এই ত্রাণ মানুষের হাতে হাতে পৌছে দিতে চেষ্টার কোন ত্রুটি করবোনা আমরা। কতদূর যেতে পারবো সে ফায়সালা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। তবে এটা সত্যি যে বর্ডার গার্ডরা কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেও মানবতার দিকটি প্রাধান্য পেয়েছিল। এসব কিছু বিবেচনায় আমারা ধারণা করেছিলাম যে কাজটা করার ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হতে পারলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। ধারণাটা একেবারেই ভুল ছিলনা।
হাটহাজারী থেকে আসর পড়েই রওনা হলাম। কক্সবাজার পৌছতে রাত হল। কক্সবাজারে রাত কাটানোর বিষয়টা অবশ্য পূর্বপরিকল্পিত ছিল। কারণ টেকনাফে ঢুকতে বর্ডার গার্ডের কড়া পাহাড়াদারীতে থাকা সাতটি চেকপোষ্ট পাড়ি দিতে হয়। ফজরের পর রওনা হলে সেসব চেকপোস্টে সেনাবাহিনীরা গাড়ি খুব একটা থামায় না। কারণ কেবলমাত্র সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলেই সাধারণত এত সকালে কেউ এই পথে যায়। এটা নিত্যদিনকার ঘটনা। তাও একেবারে শেষ চেকপোস্টটায় গাড়ি থামানো হল। কড়া নির্দেশের ভঙ্গিতে একজন আর্মি গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলতে বলল। ভাবসাব দেখে মনে হল, সে আমাদের ব্যাপারে আগে থেকে কোন সংবাদ পেয়ে গেছে। কিন্তু আমরা তো এত ঢাকঢোল পিটিয়ে আসিনি, তাহলে সে এতসব জানবে কোত্থেকে!.....
(চলবে)

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...