Saturday, December 17, 2016

বিপন্ন মানবতার আর্তনাদ (৩)


কাজের ক্ষেত্র ও রাহবারের কৃতজ্ঞতা


গত দুইদিন রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ না শুনানোর পেছনে একটা বিশেষ কারণ ছিল। বিজয়ের ধ্বনিতে উল্লাসিত ফেসবুক নিউজফিডকে দুঃখ-কষ্টমুক্ত রাখা। তবে এবারের বিজয় দিবসে তাদের স্ট্যাটাসগুলো খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করে পড়ার চেষ্টা করেছি  যারা সিরিয়া আর মিয়ানমারের মানচিত্রে রক্তের দাগের ভেতর দিয়ে বিজয় আনন্দ পালনের অর্থ  খুজে পাননি। তখন মনে হয়েছে, কিছু মানুষ এখনো বেচে আছে।
তো গল্পটা থামিয়েছিল শরণার্থী ক্যাম্পের ভেতর। ক্যাম্প নিয়ে একটু বলি। সদ্য ওপাড় থেকে আসা রোহিঙ্গা যারা আছে তাদেরকে খুজে পেলে আশ্রয় দেয়ার নামে নিবন্ধন করে করে সেই বন্দিশালায় আটক করা হয়। এবং কোন ধরনের নূন্যতম নাগরিক সুবিধা তো দূরের কথা, দুবেলা খাওয়ার জন্য উপার্জন করতে চাইলেও এই অসহায় মানুষগুলোকে বেশ বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। যে ঘরটাতে পাচজন পুরুষ আর পাচজন মহিলা থাকছে তারা দশজনই হয়তো ওপাড়ের দশটা পরিবার থেকে আসা। অনুভূতিগুলো পাথর হয়ে যাওয়ার পর থেকে এভাবে পশুর মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েই বোধহয় ফেলে আসা অতীতের কষ্টগুলো ভুলে যাবার চেষ্টা করছে তারা। এরপর খাবারের সময় হলে যখন ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ পাচজনের খাবার দশজনকে খেতে দেয়, তখন বাচার তাগিদে তারা শিখে নেয়, কি করে ক্ষুধার্ত হায়নার মত শিকার দেখলেই হামলে পড়তে হয়। যে মানুষগুলোর সামনে দুই প্লেট খাবার এতটা অনিরাপদ সেখানে আপনি যখন ত্রাণ নিয়ে যাবেন আর তারা সেটা বুঝতে পারবে তখন আপনি কতটা নিরাপদ হবেন চিন্তা করেন?
ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের লালবাগ জামেয়ার উস্তাদ মাওলানা ইসহাক সাহেব। ক্যাম্পে ঢুকে যাওয়ার পর উনাকে পেছন থেকে পুলিশ ডাক দিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল। হুজুর বলেছিলেন যে তিনি কেবলই ক্যাম্পটা ঘুরে দেখতে এসেছেন। পুলিশের কথাবার্তা শুনেও বুঝা যাচ্ছিলো যে পুলিশ হুজুরের কথা বিশ্বাস করছেনা। এরপরও হুজুরকে সাবধান করে ছেড়ে দেয়ার মতলব হল, "আপনারা ত্রাণ দেন সমস্যা নাই, তবে ভুলেও কিন্তু আমাদের চোখের সামনে পইড়েন না।"
ঢাকা থেকে অনেকে আবার ত্রাণ নিয়ে গিয়ে শরণাপন্ন হন স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের। যেই নেতারা দায়িত্ব নিয়ে বেশিরভাগ ত্রাণ বিলি বন্টন নিজ দলের কর্মীদের মাঝেই সেরে ফেলেন। আর অনেকে সাহায্যের জন্য স্থানীয় লোক খুজতে গিয়ে পড়েন দালালের খপ্পরে। দালালরাও নেতাদের মতই। নিজেদের লোকদের রোহিঙ্গা বানিয়ে আপনার সামনে এনে হাজির করবে।
তাই সবচেয়ে নিরাপদ হল, এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে যারা তাবলীগের কাজের সাথে জড়িত এমন কাউকে সাথে রাখা। তারা অনেক সমস্যা থেকে বাচাতেও পারেন আবার পুরাতন রোহিঙ্গাদেরও চিনে তাদেরকে লাইন থেকে সরিয়েও দিতে পারেন।
টেকনাফে যাওয়ার পর যেই মানুষটি আমাদের সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করেছেন তিনি হলেন আমাদের ইয়াকুব মামা।  আমরা যাওয়ার আগে থেকেই তিনি অতিগোপনে ও সুকৌশলে স্বার্থহীনভাবে একাই কাজ করে যাচ্ছিলেন। উনি না থাকলে আমাদের কাজের শুরুটা আরো অনেক ধীর গতিতে হত। হয়তো সম্ভবই হতো না। যাওয়ার সাথে সাথেই উনার তাজা তাজা অভিজ্ঞতাগুলো পাওয়াতে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকার পরও শুধুমাত্র আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ফেরার প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে দিয়েছেন। মামা! আপনার এসব স্বার্থহীন কাজগুলো আপনার প্রতি ভাল লাগার পরিমাণ সত্যিই অনেক বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহ আপনার সবধরনের খেদমতকে কবুল করুক।
এরপর শুরু হয়ে গেল আমাদের কাজ। আগামী পর্ব থেকে সদ্য আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খুজে বের করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলবো ইনশাল্লাহ।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...