Monday, July 24, 2017

কায়রোর দিনলিপি (৮)

ভয়ংকর সেই মুহূর্তটা কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারছিনা। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে। কয়েক সেকেন্ড আগে আমি তো ঠিক সেই জায়গা দিয়েই হেটে এসেছি।

সালাহ সালেম রোড। কায়রোর যে রাস্তাগুলো দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চলাচল করে সেগুলোর একটি। বিষয়টা আমি দুর্ঘটনার পরে জেনেছি। তবে আমি এখনো জানিনা কেন যুবায়ের ভাইয়ের কথায় বিকল্প রাস্তায় না গিয়ে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসলে ধারণাই করতে পারিনি যে এইভাবে রাস্তা পার হওয়ার ভুল সিদ্ধান্ত এতটা মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। বড় কথা হচ্ছে তাকদিরে ছিল।

রাস্তা পার হওয়ার সময় বারবার দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আর দুই পাশ দিয়ে সাঁইসাঁই করে পার হওয়া গাড়ির গতি দেখে ভেতরে ভয় ঢুকে যাচ্ছে। একটা গাড়ি একটু এদিক সেদিক হলে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আল্লাহর রহমতে আমি কোনভাবে পার হয়ে গেলাম।

পেছন ফিরে দেখি যুবায়ের ভাইও চলে এসেছেন প্রায়। এমন সময় দুই পাশ থেকে দুইটা গাড়ি প্রচন্ড গতিতে আসছিল। যুবায়ের ভাই তখন মাঝখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন এতে ডান ও বাম পাশ দিয়ে অনায়াসেই গাড়ি দুইটা পার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটার চালক বেপরোয়া ছিল। জলজ্যান্ত একটা মানুষ যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে দেখতেই পেল না। এমনকি বাপাশের খালি জায়গাটাও তার চোখে পড়লোনা না। এবং সে গাড়ির গতিও কমালোনা। আর যুবায়ের ভাইও সেখানে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেন।

ফলাফল যা হল তার কয়েক সেকেন্ড আগেই আমার মনে হচ্ছিল খুব ভয়াবহ ধরণের একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি। কারণ এখন ঠিক কি ঘটতে যাচ্ছে আমি বুঝে ফেলেছিলাম। এত মারাত্মক এক্সিডেন্ট দুঃস্বপ্নেও কখনো দেখেছি বলে মনে পড়েনা। চোখের একেবারে সামনে মুহূর্তের মধ্যে একটা ঝড়ের ঝাপটা বয়ে গেল। আমি হয়তো চিৎকার করে সরতে বলতে চেয়েছিলাম অথবা বাকরূদ্ধ হয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি জানিনা কিছু করার ছিল কিনা।

শুধু তাকিয়ে দেখলাম যুবায়ের ভাই প্রথম ধাক্কায় উড়ে গিয়ে গাড়ির সামনের কাচের উপরে, এরপর আরো এলোপাথাড়ি সব ধাক্কা আর ওলটপালট, সবশেষে ছিটকে গিয়ে পড়লেন রাস্তায়। এ দৃশ্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। শুধু খেয়াল করলাম আমার শরীর প্রচন্ডভাবে কাঁপছে।

গাড়ি থামার সাথে সাথেই যুবায়ের ভাই উঠে গেলেন। আমি গিয়ে ধরার আগেই নিজে উঠে স্বাভাবিকভাবে রাস্তার পাশে এসে পড়লেন। যে দৃশ্য দেখেছি তার সাথে এই স্বাভাবিকতা মিলছে না। আমি সত্যিই ভাবিনি উনি এত কিছুর পর সোজা হয়ে দাড়াতে পারবেন। নিঃসন্দেহে হেফাজতের ফেরেশতাদের দিয়ে আল্লাহ একেবারে নিজ হুকুমে হেফাজত করে নিয়ে এসেছেন তাকে।

লোকটা গাড়ি থামালো। সামনের কাচটা যেদিক থেকে ভেঙেছে ঠিক সেইদিকের সিটটায় তার স্ত্রী বসেছিল। লোকটা নেমে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো সে কিছু শুনে নিজের অনুতাপ কমাতে চাইছে। কিন্তু ঘৃণায় আমাদের কিছু বলতেই ইচ্ছে করছিল না।
আরো মেজাজ খারাপ হচ্ছিল কারণ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল না যে সে কোন সাহায্য করতে আগ্রহী। কিন্তু এরপরও সে কেন দাঁড়িয়ে ছিল সেটা পরে জানতে পারলাম। মামলা খাওয়ার একটা বড়সর ভয় ছিল। কায়রোতে এসব নিয়ম খুব কঠিন। এসময় সে যদি চলে যেত এবং পরে পুলিশ এসে আমাদের দেখতো তাহলে ক্যামেরায় খুজে বের করে হলেও অবশ্যই তার খবর করা হত। আর যেহেতু আযহারের ছাত্র এর উপর বিদেশী, তার জামিন পেতে বারোটা বাজতো।

আমরা তখন রাস্তার পাড়েই বসে আছি। হাত পায়ের কোথাও কোন সমস্যা হয়েছে কিনা আমি দেখতে বলছি বারবার। তখনও আমি প্রচন্ডভাবে কাপছি। হাতের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছিল যুবায়ের ভাইয়ের। ড্রেসিংয়ের জন্য হসপিটালে যাওয়া দরকার। কিন্তু আশেপাশে কোন হসপিটাল চিনিনা আমরা। এমন সময় মিসরী এক যুবক গাড়ি থামিয়ে দেখতে এল। অবস্থা দেখে সাথে সাথে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখান থেকে ড্রেসিং করিয়ে একেবারে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল আমাদের। হাসপাতালেই ডাক্তাররা বারবার জিজ্ঞেস করছিল একসিডেন্ট হয়েছে কিনা। যদি বলে দিতাম তাহলে ডাক্তার সাথে সাথে পুলিশ ডাকতো। কিন্তু আমরা এটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম। শরীর তখনো কাপছে আমাদের।

প্রথম ধাক্কাতেই গিয়ে গাড়ির উপরে পড়ায় হয়তো এক্সিডেন্টটা মারাত্মক হয়নি। কোন হাড়ে আঘাত লাগেনি মনেহচ্ছে। সরাসরি কাচের উপর পড়ায় গাড়ির কাচ ভেঙে হাতে কাচ ঢুকে গেছে কিছু জায়গায়। এছাড়া ইনজুরী এখন পর্যন্ত তেমন সিরিয়াস মনে হচ্ছে না। তবে শরীরের কিছু জায়গায় ব্যথা অনুভব হচ্ছে আজকে। চেকআপ করানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। সবার কাছে তার সুস্থতার জন্য দুয়া চাচ্ছি।

Saturday, July 22, 2017

মুফতি আমিনী রহ. এর রাজনীতি নিয়ে চুলকানিওয়ালাদের চুলকানী

মুফতি আমিনী রহ. এর রাজনীতি নিয়ে চুলকানিওয়ালাদের চুলকানী আবার চরমে পৌছেছে। কি লাভ হয় তাদের এইসব করে! দলের কর্মী কি দুয়েকজন বাড়ে!
মাঝখানে যাও একটু চুপ ছিল। আমাদের নেতাদের আওয়ামী প্রীতি আবার সেই দরজা ভালমতই খুলে দিল।

আসলে শাসনতন্ত্রের ভাইদের দোষ দিয়েই বা কি লাভ! মুফতি আমিনী রহ. এর আদর্শের রাজনীতি থেকে সরে আসার কারণেই তারা এভাবে পুনরায় গলাবাজি করার সুযোগ করে দিয়েছে। 

কিন্তু ভাইয়েরা! আপনাদের শাসনতন্ত্রের সাথে ঐক্যজোটের সাবেক কর্মীদের একটা মৌলিক পার্থক্য ধরিয়ে দেই। সাবেক এই জন্য বললাম, ঐক্যজোটে এখন কোন কর্মী নেই। নেতারা জোট থেকে বের হয়ে আসার পর এর সঠিক কোন ব্যাখ্যা না দিতে পারায় অনেকেই ছাত্র খেলাফতের রাজনীতি থেকে সরে এসেছে। কেউ নিষ্ক্রিয়তাকে বেছে নিয়েছে কেউবা ছাত্র জমিয়তে যোগ দিয়েছে নয়তো অন্যকোন ইসলামী রাজনৈতিক দলে। এখন কেন তারা শাসনতন্ত্রে গেল না এটা বুঝতে হলে আপনাদের সাথে তাদের মৌলিক পার্থক্যটা বুঝতে হবে।

আপনাদের অবগতির জন্য বলছি, যেদিন থেকে ঐক্যজোট নেতারা আওয়ামী সুরে দলীয় কার্যক্রম শুরু করেছে ঠিক সেদিন থেকেই দলের কর্মীরা সবাই তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করা শুরু করেছে। এই দ্বিমত পোষণের তালিকায় অধিকাংশ নেতারাই আছেন। কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন। তবে ফিতনার আশংকায় কেউ তেমনভাবে মুখ খোলেননি। কিন্তু এটা সত্য যে লালবাগের অনেক ছাত্র সাহস করে নেতাদের গিয়ে বলে এসেছে, "এটা আমিনীর আদর্শের রাজনীতি না, এটা শুধুই দালালী।"

অথচ নিজেদের দিকে দেখেন আমিনীকে নিয়ে অতীতেও আপনাদের বহুনেতা নেতারা ঘরোয়া মিটিংয়ে যা তা বলে বেড়িয়েছে তাদের কথার কোন প্রতিবাদ একটা কর্মীও করেনি। এটাই আপনাদের সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য।

শুধুমাত্র এই কারণেই অনেকে আপনাদের কিছু দিক পছন্দ করার পরও আপনাদের সাথে যোগ দেয়ার কথা চিন্তা করেনা। আর এইসব ইখতেলাফি বিষয় নিয়ে যখন আপনারা দুনিয়া কাপানো পোষ্ট দেন তখন আবার একই মুখে ঐক্যের কথা বলাটাও স্ববিরোধী হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া হেফাজতের বৃহত্তর ঐক্যের প্লাটফর্মে আপনারা যা করেছেন সে ইতিহাস জাতি এত জলদি ভুলে যাবেনা।

একটু ঠান্ডা মাথায় একটা বিষয় বুঝার চেষ্টা করেন। সবসময় এইভাবে যুক্তি দিয়ে বারবার নিজেদের সঠিক দাবী করার মাধ্যমে যে আপনারা দুনিয়ার সবার কাছে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়ে যাবেন বিষয়টা কিন্তু মোটেও এমন না। এবং রাজনীতির নামে আপনারা যা করেন সেটাও তো অনেকের কাছেই দোষনীয়। তখন কতটা মজা পান আপনারা সেটা তো অন্যের সমালোচনা করার সময় মনে রাখা উচিত।

মুফতি আমিনী রহ. আমাদেরকে এসব নেতিবাচক এবং আক্রমণাত্মক সমালোচনা থেকে বিরত থাকতে শিখিয়ে গেছেন। সে কারণে আমরা পীর সাহেব চরমোনাইয়ের সিয়াসী মানহাজের হক্কানীয়্যত নিয়ে নেতিবাচক কোন প্রশ্ন তুলেছি এর নজির দেখাতে পারবেন না।

আসলে শাসনতন্ত্রের কর্মী পর্যায়ে ইদানীং ওলামায়ে কেরামের পদচারনা বাড়লেও দীর্ঘ একটা সময় এটা শূন্যতায় ভুগেছে। যার কারণে তাদের মানহাজী সিয়াসতের ইলমী জায়গাগুলোতে ব্যাপক কিছু সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। তাদের প্রবল বিশ্বাস যে দুনিয়ার সব মানুষকে শুধু শাসনতন্ত্রের সিয়াসী মানহাজ মেনেই রাজনীতি করতে হবে। অথচ একথা যে কুরআন হাদিসের কোথাও লেখা নেই এই ব্যাপারটা তাদের জ্ঞানের গন্ডিতে ধরতো না। তাই তারা এ কথাও বুঝতে সক্ষম হতোনা যে আজকে ওলামায় কেরামের ভেতর তাদের ব্যাপারে এতটা বিরূপ মনোভাব কেন।

রাজনীতির ন্যূনতম মোরাল এথিক্সগুলোও যদি জানা থাকে তাহলে এটাও জানা উচিত ছিল যে হকের পথে থাকা যেকোন ভিন্নমতকেও সম্মান প্রদর্শন করতে হয়। আর যদি আলেমদের বিশাল একটা অংশ এই মানহাজের অনুসরণ করে থাকে তাহলে তো তার হক্কানীয়্যত নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন যৌক্তিকতাই নেই। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হল, বিগত দেড় যুগ ধরে তারা এর বিপরীত নীতির চর্চাই করে আসছেন। এভাবে নিজেরটা পুরা দুনিয়ার মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে শুধু বিভেদ সৃষ্টি ছাড়া আর কিছুই হয়নি।

মুফতি আমিনীর রাজনীতির মানহাজটা যে শাসনতন্ত্র থেকে ভিন্ন ছিল আর কত যুগ গেলে তারা এটা বুঝবে আল্লাহ ভাল জানেন। জোটের রাজনীতি করেই কেন আমিনী তার ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে অমর ব্যক্তিত্ব হয়ে রয়েছেন এবং থাকবেন এর কোন ব্যাখ্যাই কোনদিন তাদের মনে ধরবে বলে মনে হয়না। ফলাফলে যা দাঁড়াবে, সংঘাত বাড়বে। কারণ মুফতি আমিনী একমাত্র ব্যক্তি না যিনি জোটের রাজনীতি করেছেন। এখন বাংলাদেশে জমিয়তে ইসলামের মত একটি উল্লেখযোগ্য ইসলামীক দলও জোটের রাজনীতি করছে। এবং তারা নিজেদের জায়গায় সফলভাবে এগিয়েও যাচ্ছে।

হাস্যকর ব্যাপার হল, মুফতি আমিনীর ইন্তেকালের পর জায়গায় জায়গায় শাসনতন্ত্রী অনেক নেতাই মুফতি আমিনীর নাম নিয়ে তার জন্য মায়াকান্না করেছেন। হয়তো সেটা ছিল নিজের ওয়াজের কাটতি বাড়ানোর জন্য। তা নাহলে তার ছোট্ট কোন একটা অবদানের কথাও ইন্তেকালের আগে স্বীকার করতে এত কষ্ট কেন হত তাদের! এমনকি ২০১১ সালের ৪ই এপ্রিল কুরআনী আইন রক্ষার জন্য আমিনী সাহেব যখন হরতাল ডেকেছিলেন সেসময় "হরতাল হারাম" টাইপের আরো কত ফাতওয়া পোস্টারিং করে পর্যন্ত প্রচার করেছিল তারা। এসব কি মানুষ এত জলদি ভুলে গেছে!!!

এই মরা মানুষটাকে নিয়ে আর কতদিন বললে তাদের ক্ষোভ কমবে জানিনা। বলুক, যতখুশি বলতে থাকুক। সাথে এটাও লিখে রাখতে পারেন। তাদের এহেন গলাবাজিতে আমিনীর গায়ে কলংকের কোন দাগ লাগেনি, লাগবেনা কোনদিন।

Friday, July 21, 2017

মুফতি আমিনী রহ. এর আদর্শ ও বর্তমান ইসলামী ঐক্যজোট

( বিএনপির বিরুদ্ধে ইসলামী ঐক্যজোটের দেয়া এক বিবৃতি নিয়ে গতকাল ভাইরাল হওয়া একটি নিউজের ব্যাপারে ইনবক্সে অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন। নৈতিকতার জায়গা থেকে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে কিছু লেখার বিশেষ তাগিদ অনুভব করছি।) 

মুফতি আমিনী রহ. এর ইন্তেকালের পর অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, "হুজুর সাথে করে উনার রাজনীতিও কবরে নিয়ে গেছেন।" এটা বলার কারণও ছিল।
মুফতি আমিনীর আদর্শে রাজনীতি করতে চাইলে আমিনীর মত সিংহপুরুষ হওয়ার বিকল্প নেই। এবং এখন আর কাউকেই মনে হচ্ছে না যে আমিনীর রেখে যাওয়া আমানতকে মনজিলে মাকসাদের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

২০০১ সালের কথা। রাজনীতির "র" বুঝার মত বয়স হয়নি তখনও আমার। তবে পত্রিকায় দেখতাম মাঝে মাঝে নানাজীর ছবি আসত। এক সময় একটু আধটু বুঝতে শুরু করলাম যে নানাজী জুলুমের বিরুদ্ধে হুংকার দেয়ার কারণে বেশ জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। এবং জুলুমকারী যে আওয়ামীলীগ এ কথাও স্বাভাবিকভাবেই জানা হয়ে গিয়েছিল। এরপর যখন আরেকটু চোখকান খুললো তখন দেখলাম বাংলাদেশের ওলামায় কেরাম আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ। এবং নানাজী তখন ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে বিএনপির সাথে চারদলীয়জোটে শরিক হয়ে নির্বাচনে দাড়িয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরপরের ইতিহাস অনেক লম্বা। তবে ইতিহাসের সেসব বিচিত্র অধ্যায়ের মধ্যে একটা বিষয় খুব সরলভাবেই উপলব্ধি করা যায়। মুফতি আমিনী রহ. আওয়ামীলীগকে ইসলামবিরোধী শক্তি বলতেন এবং তা খুবই স্পষ্ট ভাষায়। কেন বলতেন এর প্রমাণ
তার ইন্তেকালের পরপরই অবশ্য ৫ই মে তে দেশবাসী বেশ ভালভাবেই পেয়েছিল।
তাছাড়া আরো নানান যৌক্তিক কারণে আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা আওয়ামীলীগকে ইসলামের বন্ধু ভেবে অভ্যস্ত না।

তবে এখনকার প্রেক্ষাপটে হেফাজতের ব্যাপারটা ভিন্ন। ২০১৩ সালে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচার চাইতে আসার পরও হেফাজতের সাথে যে অন্যায় আওয়ামীলীগ সে রাতে করেছিল, তাতে আওয়ামীলীগের মধ্যে একটা অপরাধবোধ জাগ্রত হতেই পারে। এবং তার কারণে হেফাজতের প্রতি সাময়িকভাবে তারা এমন সমর্থিত আচরণ দেখাতেই পারে। এদিকে আবার নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। এবং হেফাজত যেহেতু কোন রাজনৈতিক দল না তাই প্রতিপক্ষ ভেবে রাজনৈতিক কৌশলে লড়ে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা হেফাজতের নেই। যদিও সেই রাতের রক্তের দাগ খুব সহজে শুকাবেনা।

অন্যদিকে ইসলামী ঐক্যজোট একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তাদের থেকে প্রত্যাশা বেশী থাকার ঐতিহাসিক বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান।
হেফাজতের আন্দোলনে সামনের সারি থেকে যেসকল ওলামায় কেরাম হেফাজতের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাদের অনেকের রাজনীতির ক্যারিয়ারের একটা দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়েছিল মুফতি আমিনীর সাথে রাজনীতি করে। এখানে হেফাজতের কৌশলগত হিসেবগুলো মেলানো গুরুত্বপূর্ণ। হেফাজত কিন্তু তাদের দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে অভিনব কোন পদ্ধতি বা রীতির অনুসরণ করেনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় দাবী দাওয়া আদায়ের যেই পদ্ধতি শামসুল হক ফরিদপুরি রহ. ও হাফেজ্জী হুজুর রহ. দেখিয়ে গিয়েছিলেন, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ও মুফতি আমিনী রহ. তাদের অনুসরণ করতেই শিখিয়ে গেছেন। আমিনী রহ তার সর্বশেষ কিতাব "আদর্শ রাষ্ট্রনীতি আদর্শ রাজনীতি"তে এসব নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। এবং পরবর্তীকালে হেফাজতও নিজেদের দাবী আদায়ের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সেই ধারাকেই অব্যাহত রেখেছে।

এমন অবস্থায় ইসলামী ঐক্যজোট যখন বিএনপি থেকে বের হয়ে যায় তখন মানুষের মনে এর কারণ নিয়ে নানান ধরণের প্রশ্ন জাগতেই পারে। তবে জনগণের এই প্রশ্ন বিএনপি থেকে বের হওয়ার কারণে না। বরং বিএনপির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে গিয়ে আওয়ামীলীগের সুরে কথা বলার কারণেই আমজনতার প্রশ্ন জাগে। যদি নীতিনির্ধারক মহল এই প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব দিতে ব্যর্থ হন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমজনতা সেসব প্রশ্নের উত্তর নিজ থেকে খুজে নিতে বাধ্য হবে। আমি মোটেও এসব ব্যাখ্যা নিজ থেকে করছিনা। আমার কথাগুলোর বাস্তবতা নিজ চোখে দেখতে চাইলে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া বিএনপির ব্যাপারে ঐক্যজোটের দেয়া বিবৃতির সংবাদের নিচে কমেন্টগুলো পড়ে দেখা যেতে পারে। মুফতি আমিনী রহ: কে যারা রাজনীতি করতে দেখেছেন বা তার রাজনীতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও রাখেন তারা কসম করে বলতে পারবেন যে মুফতি আমিনী রহ. কখনোই এই রাজনীতি করেননি।

দরবারী আলেমদের ভয়াবহতা থেকে মুফতি আমিনী রহ. আমাদের কম সতর্ক করেননি। "অসৎ আলেম পীর" নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাবও লিখে রেখে গেছেন। মানুষ যদি এখন জিজ্ঞেস করে, আওয়ামীলীগের সাথে সুর মিলে যাওয়ার কারণে যদি ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে দরবারী আলেম বলা হয়, তাহলে ঐক্যজোটের কথা যখন আওয়ামী সুরের সাথে মিলে যায় তখন কেন তাদেরকে দরবারী বলা হবেনা? আসলেই কি কোন জবাব আছে এই প্রশ্নের?

আল্লাহ তায়ালা সময় থাকতে আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুক।

Friday, July 7, 2017

কায়রোর দিনলিপি (৭)

কায়রোতে রিকশা নেই বলে এত সুন্দর শহরটা খোলা আকাশের নিচে ঘুরে ঘুরে দেখারও কোন সুযোগ নেই। ব্যাপারটা দুঃখজনক। তবে এখানে ট্যাক্সি ভাড়া কম হওয়াতে ট্যাক্সিতে চড়ে শহর ঘুরে সেই দুঃখ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর উবারের নতুন গাড়িগুলোতে যাতায়াত তো আরো সস্তা। নতুন গাড়ি না থাকলে আবার এখানকার ড্রাইভাররা উবার জয়েন করতে পারেনা। তাই ইদানীং ট্যাক্সিওয়ালাদের ভাত মেরে উবার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখানে। 

োসনি মোবারকের আমলে এদেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম থাকলেও সে সময় করা রাস্তাঘাট এখনো তার উন্নয়নের উৎকর্ষতার প্রমাণ বহন করছে। এখনো কায়রোর রাস্তা পুরো মিসরের মধ্যে নামকরা। তাছাড়া পরিকল্পিতভাবে করা ফ্লাইওভারগুলো শহরের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়েছে। যানজট নেই বললেই চলে। তাই মাখনের মত মসৃণভাবে আস্তর করা রাস্তাগুলোতে একটু বেশিই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ড্রাইভাররা। ১৪০-১৫০ গতিতে গাড়ি টানাটা যেমন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার তেমনি এক্সিডেন্টও খুব স্বাভাবিক। এমন গাড়ি খুজে পাওয়া কঠিন যেটাতে কোন ডেন্ট পড়েনি, নেই হয়তো। অন্তত আমি গত একমাসে দেখিনি। গাড়ি যত নতুনই হোক না কেন, কোন না কোনদিকে একবার ধাক্কা খাওয়ার চিহ্ন থাকতেই হবে। এদের আরেকটা বদ অভ্যাস হচ্ছে এরা গাড়ি আর মোবাইল একসাথে চালায়। এক হাতে গাড়ির স্টেয়ারিং অন্যহাতে ফেসবুক নিউজফিড স্ক্রোলিং, নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারস্যাপার এদের কাছে।

আগে উবারে উঠে এসি ছাড়তে বলা লাগতোনা। কিন্তু গত সপ্তাহে এখানে তেলের দাম এক পাউন্ড থেকে হুট করে পাচ পাউন্ড হয়ে যায়। এরপর থেকে এখন উবার ড্রাইভারদের এসি ছাড়ার অনুরোধ করলেও কাজ হয়না। পাচ পাউন্ড মানে কিন্তু মাত্র বিশ টাকা। কিন্তু মিসরীরা তো সারাজীবন পানির থেকেও কম দামে তেল কিনে এসেছে। অতএব পানির লিটার যেখানে চার পাউন্ড, সেখানে পাচ পাউন্ড দিয়ে এক লিটার তেল কিনতে এদের একটু তো গায়ে লাগবেই।

প্রচন্ড গরম পড়েছে। এমন গরম নাকি আরো সপ্তাহখানেক থাকবে। তবে শহরের বেশিরভাগ বিল্ডিংই শতবছর পুরানো হওয়াতে বাইরের গরম ঘরে খুব একটা ঢুকতে পারেনা। তো এ অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা বের হওয়ার সাহস না করাটাই স্বাভাবিক। এখন আমার নিত্যদিনকার রুটিন হচ্ছে
সকাল আটটায় বের হয়ে ক্লাসে যাওয়া, আর ক্লাস শেষে দুপুরে বাসায় ফিরে এসে নিজ রান্নায় মনোযোগী হওয়া। ছুটির দিনে অবশ্য সন্ধার পর বাইরে যাওয়া হয়।

ঈদের পর থেকে আমাদের বাসায় নতুন নিয়ম হয়েছে। যার যার রান্না সে সে করবে। কারণ সবার ডেইলি রুটিন ভিন্ন। এরপর থেকে প্রথম কয়েকদিন তো বাইরের খাবার খেয়ে চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু সেটাও আর কতদিন ভাল লাগে? বাসায় যেহেতু রান্নার সুব্যবস্থা আছে তাই রান্নাটা শিখে ফেলা উচিৎ।

প্রথমদিন ভিডিও কল দিয়ে আম্মুর থেকে শিখে শিখে রান্না করছি। ভালই হয়েছিল। বাসার রান্নার স্বাদ কিছুটা পেয়েছিলামও। খানিকটা সাহস হওয়াতে আজকে দ্বিতীয়দিন রান্নাঘরে ঢুকলাম। কিন্তু রান্না শেষে তরকারীর রঙ দেখে খুশি হতে পারলাম না। রান্না বোধহয় তেমন একটা ভাল হয়নি। পেয়াজ আর লাল মরিচের গুড়া পরিমাণে একটু বেশিই হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। ধুর, এত কষ্ট করে রান্না করার পরও যদি ভাল না হয় তাহলে তো বাইরে খেয়ে নিলেই ভাল। এসব চিন্তা করতে করতে খেতে বসলাম।
নাহ, রান্না তো অতটাও খারাপ হয়নাই আসলে। খাওয়া যাচ্ছে।

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...