ভয়ংকর সেই মুহূর্তটা কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারছিনা। চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠছে। কয়েক সেকেন্ড আগে আমি তো ঠিক সেই জায়গা দিয়েই হেটে এসেছি।
সালাহ সালেম রোড। কায়রোর যে রাস্তাগুলো দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চলাচল করে সেগুলোর একটি। বিষয়টা আমি দুর্ঘটনার পরে জেনেছি। তবে আমি এখনো জানিনা কেন যুবায়ের ভাইয়ের কথায় বিকল্প রাস্তায় না গিয়ে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসলে ধারণাই করতে পারিনি যে এইভাবে রাস্তা পার হওয়ার ভুল সিদ্ধান্ত এতটা মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। বড় কথা হচ্ছে তাকদিরে ছিল।
রাস্তা পার হওয়ার সময় বারবার দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আর দুই পাশ দিয়ে সাঁইসাঁই করে পার হওয়া গাড়ির গতি দেখে ভেতরে ভয় ঢুকে যাচ্ছে। একটা গাড়ি একটু এদিক সেদিক হলে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আল্লাহর রহমতে আমি কোনভাবে পার হয়ে গেলাম।
পেছন ফিরে দেখি যুবায়ের ভাইও চলে এসেছেন প্রায়। এমন সময় দুই পাশ থেকে দুইটা গাড়ি প্রচন্ড গতিতে আসছিল। যুবায়ের ভাই তখন মাঝখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন এতে ডান ও বাম পাশ দিয়ে অনায়াসেই গাড়ি দুইটা পার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটার চালক বেপরোয়া ছিল। জলজ্যান্ত একটা মানুষ যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে দেখতেই পেল না। এমনকি বাপাশের খালি জায়গাটাও তার চোখে পড়লোনা না। এবং সে গাড়ির গতিও কমালোনা। আর যুবায়ের ভাইও সেখানে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেন।
ফলাফল যা হল তার কয়েক সেকেন্ড আগেই আমার মনে হচ্ছিল খুব ভয়াবহ ধরণের একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি। কারণ এখন ঠিক কি ঘটতে যাচ্ছে আমি বুঝে ফেলেছিলাম। এত মারাত্মক এক্সিডেন্ট দুঃস্বপ্নেও কখনো দেখেছি বলে মনে পড়েনা। চোখের একেবারে সামনে মুহূর্তের মধ্যে একটা ঝড়ের ঝাপটা বয়ে গেল। আমি হয়তো চিৎকার করে সরতে বলতে চেয়েছিলাম অথবা বাকরূদ্ধ হয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি জানিনা কিছু করার ছিল কিনা।
শুধু তাকিয়ে দেখলাম যুবায়ের ভাই প্রথম ধাক্কায় উড়ে গিয়ে গাড়ির সামনের কাচের উপরে, এরপর আরো এলোপাথাড়ি সব ধাক্কা আর ওলটপালট, সবশেষে ছিটকে গিয়ে পড়লেন রাস্তায়। এ দৃশ্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। শুধু খেয়াল করলাম আমার শরীর প্রচন্ডভাবে কাঁপছে।
গাড়ি থামার সাথে সাথেই যুবায়ের ভাই উঠে গেলেন। আমি গিয়ে ধরার আগেই নিজে উঠে স্বাভাবিকভাবে রাস্তার পাশে এসে পড়লেন। যে দৃশ্য দেখেছি তার সাথে এই স্বাভাবিকতা মিলছে না। আমি সত্যিই ভাবিনি উনি এত কিছুর পর সোজা হয়ে দাড়াতে পারবেন। নিঃসন্দেহে হেফাজতের ফেরেশতাদের দিয়ে আল্লাহ একেবারে নিজ হুকুমে হেফাজত করে নিয়ে এসেছেন তাকে।
লোকটা গাড়ি থামালো। সামনের কাচটা যেদিক থেকে ভেঙেছে ঠিক সেইদিকের সিটটায় তার স্ত্রী বসেছিল। লোকটা নেমে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো সে কিছু শুনে নিজের অনুতাপ কমাতে চাইছে। কিন্তু ঘৃণায় আমাদের কিছু বলতেই ইচ্ছে করছিল না।
আরো মেজাজ খারাপ হচ্ছিল কারণ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল না যে সে কোন সাহায্য করতে আগ্রহী। কিন্তু এরপরও সে কেন দাঁড়িয়ে ছিল সেটা পরে জানতে পারলাম। মামলা খাওয়ার একটা বড়সর ভয় ছিল। কায়রোতে এসব নিয়ম খুব কঠিন। এসময় সে যদি চলে যেত এবং পরে পুলিশ এসে আমাদের দেখতো তাহলে ক্যামেরায় খুজে বের করে হলেও অবশ্যই তার খবর করা হত। আর যেহেতু আযহারের ছাত্র এর উপর বিদেশী, তার জামিন পেতে বারোটা বাজতো।
আমরা তখন রাস্তার পাড়েই বসে আছি। হাত পায়ের কোথাও কোন সমস্যা হয়েছে কিনা আমি দেখতে বলছি বারবার। তখনও আমি প্রচন্ডভাবে কাপছি। হাতের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছিল যুবায়ের ভাইয়ের। ড্রেসিংয়ের জন্য হসপিটালে যাওয়া দরকার। কিন্তু আশেপাশে কোন হসপিটাল চিনিনা আমরা। এমন সময় মিসরী এক যুবক গাড়ি থামিয়ে দেখতে এল। অবস্থা দেখে সাথে সাথে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখান থেকে ড্রেসিং করিয়ে একেবারে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল আমাদের। হাসপাতালেই ডাক্তাররা বারবার জিজ্ঞেস করছিল একসিডেন্ট হয়েছে কিনা। যদি বলে দিতাম তাহলে ডাক্তার সাথে সাথে পুলিশ ডাকতো। কিন্তু আমরা এটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম। শরীর তখনো কাপছে আমাদের।
প্রথম ধাক্কাতেই গিয়ে গাড়ির উপরে পড়ায় হয়তো এক্সিডেন্টটা মারাত্মক হয়নি। কোন হাড়ে আঘাত লাগেনি মনেহচ্ছে। সরাসরি কাচের উপর পড়ায় গাড়ির কাচ ভেঙে হাতে কাচ ঢুকে গেছে কিছু জায়গায়। এছাড়া ইনজুরী এখন পর্যন্ত তেমন সিরিয়াস মনে হচ্ছে না। তবে শরীরের কিছু জায়গায় ব্যথা অনুভব হচ্ছে আজকে। চেকআপ করানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। সবার কাছে তার সুস্থতার জন্য দুয়া চাচ্ছি।
সালাহ সালেম রোড। কায়রোর যে রাস্তাগুলো দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে গাড়ি চলাচল করে সেগুলোর একটি। বিষয়টা আমি দুর্ঘটনার পরে জেনেছি। তবে আমি এখনো জানিনা কেন যুবায়ের ভাইয়ের কথায় বিকল্প রাস্তায় না গিয়ে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আসলে ধারণাই করতে পারিনি যে এইভাবে রাস্তা পার হওয়ার ভুল সিদ্ধান্ত এতটা মারাত্মক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। বড় কথা হচ্ছে তাকদিরে ছিল।
রাস্তা পার হওয়ার সময় বারবার দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আর দুই পাশ দিয়ে সাঁইসাঁই করে পার হওয়া গাড়ির গতি দেখে ভেতরে ভয় ঢুকে যাচ্ছে। একটা গাড়ি একটু এদিক সেদিক হলে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আল্লাহর রহমতে আমি কোনভাবে পার হয়ে গেলাম।
পেছন ফিরে দেখি যুবায়ের ভাইও চলে এসেছেন প্রায়। এমন সময় দুই পাশ থেকে দুইটা গাড়ি প্রচন্ড গতিতে আসছিল। যুবায়ের ভাই তখন মাঝখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন এতে ডান ও বাম পাশ দিয়ে অনায়াসেই গাড়ি দুইটা পার হয়ে যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে একটার চালক বেপরোয়া ছিল। জলজ্যান্ত একটা মানুষ যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সে দেখতেই পেল না। এমনকি বাপাশের খালি জায়গাটাও তার চোখে পড়লোনা না। এবং সে গাড়ির গতিও কমালোনা। আর যুবায়ের ভাইও সেখানে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলেন।
ফলাফল যা হল তার কয়েক সেকেন্ড আগেই আমার মনে হচ্ছিল খুব ভয়াবহ ধরণের একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি। কারণ এখন ঠিক কি ঘটতে যাচ্ছে আমি বুঝে ফেলেছিলাম। এত মারাত্মক এক্সিডেন্ট দুঃস্বপ্নেও কখনো দেখেছি বলে মনে পড়েনা। চোখের একেবারে সামনে মুহূর্তের মধ্যে একটা ঝড়ের ঝাপটা বয়ে গেল। আমি হয়তো চিৎকার করে সরতে বলতে চেয়েছিলাম অথবা বাকরূদ্ধ হয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমি জানিনা কিছু করার ছিল কিনা।
শুধু তাকিয়ে দেখলাম যুবায়ের ভাই প্রথম ধাক্কায় উড়ে গিয়ে গাড়ির সামনের কাচের উপরে, এরপর আরো এলোপাথাড়ি সব ধাক্কা আর ওলটপালট, সবশেষে ছিটকে গিয়ে পড়লেন রাস্তায়। এ দৃশ্য ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। শুধু খেয়াল করলাম আমার শরীর প্রচন্ডভাবে কাঁপছে।
গাড়ি থামার সাথে সাথেই যুবায়ের ভাই উঠে গেলেন। আমি গিয়ে ধরার আগেই নিজে উঠে স্বাভাবিকভাবে রাস্তার পাশে এসে পড়লেন। যে দৃশ্য দেখেছি তার সাথে এই স্বাভাবিকতা মিলছে না। আমি সত্যিই ভাবিনি উনি এত কিছুর পর সোজা হয়ে দাড়াতে পারবেন। নিঃসন্দেহে হেফাজতের ফেরেশতাদের দিয়ে আল্লাহ একেবারে নিজ হুকুমে হেফাজত করে নিয়ে এসেছেন তাকে।
লোকটা গাড়ি থামালো। সামনের কাচটা যেদিক থেকে ভেঙেছে ঠিক সেইদিকের সিটটায় তার স্ত্রী বসেছিল। লোকটা নেমে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো সে কিছু শুনে নিজের অনুতাপ কমাতে চাইছে। কিন্তু ঘৃণায় আমাদের কিছু বলতেই ইচ্ছে করছিল না।
আরো মেজাজ খারাপ হচ্ছিল কারণ তাকে দেখে মনে হচ্ছিল না যে সে কোন সাহায্য করতে আগ্রহী। কিন্তু এরপরও সে কেন দাঁড়িয়ে ছিল সেটা পরে জানতে পারলাম। মামলা খাওয়ার একটা বড়সর ভয় ছিল। কায়রোতে এসব নিয়ম খুব কঠিন। এসময় সে যদি চলে যেত এবং পরে পুলিশ এসে আমাদের দেখতো তাহলে ক্যামেরায় খুজে বের করে হলেও অবশ্যই তার খবর করা হত। আর যেহেতু আযহারের ছাত্র এর উপর বিদেশী, তার জামিন পেতে বারোটা বাজতো।
আমরা তখন রাস্তার পাড়েই বসে আছি। হাত পায়ের কোথাও কোন সমস্যা হয়েছে কিনা আমি দেখতে বলছি বারবার। তখনও আমি প্রচন্ডভাবে কাপছি। হাতের ক্ষত থেকে রক্ত ঝরছিল যুবায়ের ভাইয়ের। ড্রেসিংয়ের জন্য হসপিটালে যাওয়া দরকার। কিন্তু আশেপাশে কোন হসপিটাল চিনিনা আমরা। এমন সময় মিসরী এক যুবক গাড়ি থামিয়ে দেখতে এল। অবস্থা দেখে সাথে সাথে নিজের গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেল। সেখান থেকে ড্রেসিং করিয়ে একেবারে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেল আমাদের। হাসপাতালেই ডাক্তাররা বারবার জিজ্ঞেস করছিল একসিডেন্ট হয়েছে কিনা। যদি বলে দিতাম তাহলে ডাক্তার সাথে সাথে পুলিশ ডাকতো। কিন্তু আমরা এটা শেষ করতে চাচ্ছিলাম। শরীর তখনো কাপছে আমাদের।
প্রথম ধাক্কাতেই গিয়ে গাড়ির উপরে পড়ায় হয়তো এক্সিডেন্টটা মারাত্মক হয়নি। কোন হাড়ে আঘাত লাগেনি মনেহচ্ছে। সরাসরি কাচের উপর পড়ায় গাড়ির কাচ ভেঙে হাতে কাচ ঢুকে গেছে কিছু জায়গায়। এছাড়া ইনজুরী এখন পর্যন্ত তেমন সিরিয়াস মনে হচ্ছে না। তবে শরীরের কিছু জায়গায় ব্যথা অনুভব হচ্ছে আজকে। চেকআপ করানোর প্রয়োজন পড়তে পারে। সবার কাছে তার সুস্থতার জন্য দুয়া চাচ্ছি।
No comments:
Post a Comment