Friday, July 21, 2017

মুফতি আমিনী রহ. এর আদর্শ ও বর্তমান ইসলামী ঐক্যজোট

( বিএনপির বিরুদ্ধে ইসলামী ঐক্যজোটের দেয়া এক বিবৃতি নিয়ে গতকাল ভাইরাল হওয়া একটি নিউজের ব্যাপারে ইনবক্সে অনেকেই জিজ্ঞাসা করছেন। নৈতিকতার জায়গা থেকে নিজের অবস্থান পরিস্কার করতে কিছু লেখার বিশেষ তাগিদ অনুভব করছি।) 

মুফতি আমিনী রহ. এর ইন্তেকালের পর অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, "হুজুর সাথে করে উনার রাজনীতিও কবরে নিয়ে গেছেন।" এটা বলার কারণও ছিল।
মুফতি আমিনীর আদর্শে রাজনীতি করতে চাইলে আমিনীর মত সিংহপুরুষ হওয়ার বিকল্প নেই। এবং এখন আর কাউকেই মনে হচ্ছে না যে আমিনীর রেখে যাওয়া আমানতকে মনজিলে মাকসাদের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

২০০১ সালের কথা। রাজনীতির "র" বুঝার মত বয়স হয়নি তখনও আমার। তবে পত্রিকায় দেখতাম মাঝে মাঝে নানাজীর ছবি আসত। এক সময় একটু আধটু বুঝতে শুরু করলাম যে নানাজী জুলুমের বিরুদ্ধে হুংকার দেয়ার কারণে বেশ জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। এবং জুলুমকারী যে আওয়ামীলীগ এ কথাও স্বাভাবিকভাবেই জানা হয়ে গিয়েছিল। এরপর যখন আরেকটু চোখকান খুললো তখন দেখলাম বাংলাদেশের ওলামায় কেরাম আওয়ামীলীগের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ। এবং নানাজী তখন ইসলামী ঐক্যজোটের পক্ষ থেকে বিএনপির সাথে চারদলীয়জোটে শরিক হয়ে নির্বাচনে দাড়িয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরপরের ইতিহাস অনেক লম্বা। তবে ইতিহাসের সেসব বিচিত্র অধ্যায়ের মধ্যে একটা বিষয় খুব সরলভাবেই উপলব্ধি করা যায়। মুফতি আমিনী রহ. আওয়ামীলীগকে ইসলামবিরোধী শক্তি বলতেন এবং তা খুবই স্পষ্ট ভাষায়। কেন বলতেন এর প্রমাণ
তার ইন্তেকালের পরপরই অবশ্য ৫ই মে তে দেশবাসী বেশ ভালভাবেই পেয়েছিল।
তাছাড়া আরো নানান যৌক্তিক কারণে আমাদের দেশের ইসলামপন্থীরা আওয়ামীলীগকে ইসলামের বন্ধু ভেবে অভ্যস্ত না।

তবে এখনকার প্রেক্ষাপটে হেফাজতের ব্যাপারটা ভিন্ন। ২০১৩ সালে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিচার চাইতে আসার পরও হেফাজতের সাথে যে অন্যায় আওয়ামীলীগ সে রাতে করেছিল, তাতে আওয়ামীলীগের মধ্যে একটা অপরাধবোধ জাগ্রত হতেই পারে। এবং তার কারণে হেফাজতের প্রতি সাময়িকভাবে তারা এমন সমর্থিত আচরণ দেখাতেই পারে। এদিকে আবার নির্বাচনের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। এবং হেফাজত যেহেতু কোন রাজনৈতিক দল না তাই প্রতিপক্ষ ভেবে রাজনৈতিক কৌশলে লড়ে যাওয়ার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা হেফাজতের নেই। যদিও সেই রাতের রক্তের দাগ খুব সহজে শুকাবেনা।

অন্যদিকে ইসলামী ঐক্যজোট একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তাদের থেকে প্রত্যাশা বেশী থাকার ঐতিহাসিক বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান।
হেফাজতের আন্দোলনে সামনের সারি থেকে যেসকল ওলামায় কেরাম হেফাজতের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাদের অনেকের রাজনীতির ক্যারিয়ারের একটা দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়েছিল মুফতি আমিনীর সাথে রাজনীতি করে। এখানে হেফাজতের কৌশলগত হিসেবগুলো মেলানো গুরুত্বপূর্ণ। হেফাজত কিন্তু তাদের দাবী আদায়ের ক্ষেত্রে অভিনব কোন পদ্ধতি বা রীতির অনুসরণ করেনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় দাবী দাওয়া আদায়ের যেই পদ্ধতি শামসুল হক ফরিদপুরি রহ. ও হাফেজ্জী হুজুর রহ. দেখিয়ে গিয়েছিলেন, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. ও মুফতি আমিনী রহ. তাদের অনুসরণ করতেই শিখিয়ে গেছেন। আমিনী রহ তার সর্বশেষ কিতাব "আদর্শ রাষ্ট্রনীতি আদর্শ রাজনীতি"তে এসব নীতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। এবং পরবর্তীকালে হেফাজতও নিজেদের দাবী আদায়ের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সেই ধারাকেই অব্যাহত রেখেছে।

এমন অবস্থায় ইসলামী ঐক্যজোট যখন বিএনপি থেকে বের হয়ে যায় তখন মানুষের মনে এর কারণ নিয়ে নানান ধরণের প্রশ্ন জাগতেই পারে। তবে জনগণের এই প্রশ্ন বিএনপি থেকে বের হওয়ার কারণে না। বরং বিএনপির বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতে গিয়ে আওয়ামীলীগের সুরে কথা বলার কারণেই আমজনতার প্রশ্ন জাগে। যদি নীতিনির্ধারক মহল এই প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব দিতে ব্যর্থ হন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমজনতা সেসব প্রশ্নের উত্তর নিজ থেকে খুজে নিতে বাধ্য হবে। আমি মোটেও এসব ব্যাখ্যা নিজ থেকে করছিনা। আমার কথাগুলোর বাস্তবতা নিজ চোখে দেখতে চাইলে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া বিএনপির ব্যাপারে ঐক্যজোটের দেয়া বিবৃতির সংবাদের নিচে কমেন্টগুলো পড়ে দেখা যেতে পারে। মুফতি আমিনী রহ: কে যারা রাজনীতি করতে দেখেছেন বা তার রাজনীতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণাও রাখেন তারা কসম করে বলতে পারবেন যে মুফতি আমিনী রহ. কখনোই এই রাজনীতি করেননি।

দরবারী আলেমদের ভয়াবহতা থেকে মুফতি আমিনী রহ. আমাদের কম সতর্ক করেননি। "অসৎ আলেম পীর" নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাবও লিখে রেখে গেছেন। মানুষ যদি এখন জিজ্ঞেস করে, আওয়ামীলীগের সাথে সুর মিলে যাওয়ার কারণে যদি ফরিদ উদ্দিন মাসুদকে দরবারী আলেম বলা হয়, তাহলে ঐক্যজোটের কথা যখন আওয়ামী সুরের সাথে মিলে যায় তখন কেন তাদেরকে দরবারী বলা হবেনা? আসলেই কি কোন জবাব আছে এই প্রশ্নের?

আল্লাহ তায়ালা সময় থাকতে আমাদের বুঝার তৌফিক দান করুক।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...