Wednesday, April 8, 2020

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব
তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা
যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে
ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হতে পারে
অথবা কাজের সুযোগ কমে যাওয়ার কারণে হতে পারে
অথবা চাকরি থেকে অব্যহতির কারণে হতে পারে
আর এখন থেকেই সামর্থ্যবানদের উচিত
তাদের খরচ বহন করা
আমি এটাকে সদকা বলবো না, বরং নিজ ভাইয়ের জন্য খরচ করা বলবো
কেননা আমরা সবাই ভাই ভাই
এবং একে অন্যের দায়িত্বশীল
সামর্থ্যবানরা যাতে এই হুকুমকে নিজেদের ইচ্ছাধীন মনে না করে
যে সে মন চাইলেই নিজ অভাবগ্রস্থ ভাইয়ের খরচ বহন করলো
আর মন না চাইলেই কিছু না করে বসে থাকলো
এই মুহূর্তে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য
নিজ ক্ষতিগ্রস্থ ভাইদের জন্য খরচ বহন করা
অতি আবশ্যকীয় একটি ফরজ

সামর্থ্যবানদের প্রতি শায়খুল আযহারের আহ্বান

Tuesday, March 17, 2020

হিজরতপূর্ব ও পরবর্তী মদিনাঃ একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা

হিজরতের পর মদিনায় রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবর্তন ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও সামাজিক অবকাঠামো কেন্দ্রিক আলোচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তবে এ আলোচনা শুরু করার আগে হিজরতপূর্ব মদিনা বাসিন্দা কারা ছিল এ প্রশ্নের উত্তর খোজা জরুরী।

হিজরতের আগে মদিনা কাদের বাসভূমি ছিল, এ নিয়ে আধুনিক ইতিহাসবিদদের মাঝে মতবিরোধ দেখা যায়। বিশেষত, মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে গিয়ে ইতিহাস নিয়ে ইহুদিবাদী ইতিহাসবিদদের স্বেচ্ছাচারিতার ক্ষেত্রে। অতএব জ্ঞানগত মোকাবেলায় নির্ভরযোগ্য সূত্রে এর মীমাংসা জেনে রাখা প্রয়োজন।
প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. আলি কাযী অনুসন্ধান করে দেখিয়েছেন, প্রথমদিকে সীমিত পরিসরে বসতি গড়ে উঠেছিল পূর্বপুরুষদের প্রাচীন ধর্মানুসারী কিছু মানুষের। মদিনা তখন তার প্রাচীন নাম ইয়াসরিব হিসেবেই পরিচিত ছিল। তখনো আউস ও খাযরাজ গোত্রের বসবাস শুরু হয়নি। নূহ আ এর যুগের তুফানের পর সর্বপ্রথম সেখানে সোয়াল ও ফালেহ গোত্রের আগমন ঘটে। পরবর্তীতে দাউদ আ. এর সাথে যুদ্ধে পরজিত হয়ে তারা এ অঞ্চল ত্যাগ করলে এরপর ইয়াসরিবে আসে আমালেকা গোত্রের লোকেরা। এক পর্যায়ে আমালেকাদের বসতি বিস্তৃত হয়ে পড়ে মক্কা-মদিনার পুরো অঞ্চলজুড়ে। ইহুদিদের বসতি তখনও শুধু সিরিয়ার কিছু অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু সত্তর খৃষ্টাব্দে রোমানদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইহুদিরা সিরিয়া থেকে নির্বাসিত হয়ে মদিনায় এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। মূলত খ্রিষ্টীয়সনের প্রথম শতাব্দিতে তারা আরবে এসে বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছিল। অতএব মদিনা ইহুদিদের আদি বসতভূমি বলে যে দাবী করা হয় তা নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সূত্রের বিচারে অমূলক বলেই প্রমাণিত। 

মদিনায় ইহুদিদের বসতি গড়ে তোলার বিশেষ কারণ ছিল। পূর্বের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে পড়াশোনা করে তারা জানতে পেরেছিল এই ভূমিতেই আগমন ঘটবে শেষ নবীর। শুধু তাই নয়, এই ভূমি হবে মুহাজিরদের ভূমি। ধর্মগ্রন্থে যাদের বিশেষ মর্যাদার কথাও বলা আছে। প্রথমদিকে সবাই মদিনায় এসে বসবাস শুরু করলেও কিছুদিন পর তারা ইয়ামেন ও তার আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাদের তিনটি গোত্র মদিনায় থেকে যায়। বনু কায়নুকা, বনু নাযির ও বনু কুরাইযা।

এরপর এ অঞ্চলে ইহুদিদের সংখ্যা তেমন না বাড়লেও সঙ্গত কিছু কারণে আরবে তাদের শেকড় মজবুত হতে থাকে। 
কারণগুলো হচ্ছে,
এক, প্রাচীন ও পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুকরণ ব্যাতীত আসমানী কিতাবের ভিত্তিতে তখন ইহুদি ধর্মই একমাত্র ধর্ম হিসেবে অবশিষ্ট ছিল। তাহরিফ ও পরিবর্তনের পরও তাদের মাঝে আসমানী কিতাবের জ্ঞান চর্চা ও আলেম তৈরীর সংস্কৃতি জারি ছিল। 
দুই, সমাজে ইহুদিদের আচার-ব্যবহারের প্রচলন ঘটায় এর দ্বারা প্রচ্ছন্নভাবই অনেকে প্রভাবিত হতে থাকে।
তিন, পরস্পরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে।
চার, ইহুদিদের গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করার মাধ্যমে, যেখানে তারা ধর্মীয় শিক্ষা দিতো ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ইহুদী ধর্মের দাওয়াত প্রদান করতো।
পাচ, ইহুদিরা মদিনায় কিছু ধর্মীয় উপাসনালয় ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিল। সেখানে তাদের একনিষ্ঠ ইবাদতের দ্বারা মানুষ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হতো। ইবাদতের পাশাপাশি তারা সেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা লোকজনদের নিয়ে সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরামর্শ সভার আয়োজন করতো। এতে সমাজের সকল স্তরের লোকদের মাঝেই ইহুদি ধর্মের প্রতি সহানুভূতি ও সুধারণা তৈরী হতো।

কিন্তু এতকিছুর পরও তাদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পায়নি। যার ফলে আউস ও খাযরাজ গোত্রের কাছে ইহুদীরা সংখ্যালঘু হিসেবেই বিবেচিত হত। ইহুদিদের আগমনের আগে থেকেই আউস ও খাযরাজ গোত্র এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেছিল। সাধারণত ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে তখন গোটা আরব জাতি কুরাইশদের অনুসরণ করতো। আউস ও খাযরাজও এর ব্যাতিক্রম ছিল না। এবং কাবার রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসেবে কুরাইশদের তারা বিশেষ সম্মানের নজরেও দেখতো। আর সে কারণেই বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে মদিনায় যখন ইহুদিরা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠার চেষ্টা চালায় তখন সামাজিকভাবে পরস্পরের লড়াই দৃশ্যমান হতে থাকে। 

ইহুদিদের সাথে মদিনার মুশরিকদের বিবাদে জড়ানোর পেছনে অর্থনৈতিক বড় দুটি কারণও ছিল। প্রথমটি হচ্ছে, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালি হওয়ার জন্য সুদী কারবার চালু করা। প্রাথমিক পর্যায়ে মুশরিকদের তারা বাহ্যিক কিছু উপকারিতার দেখাতে সক্ষম হলেও মুশরিকরা ধীরে ধীরে এর অপকারিতা বুঝতে শুরু করে। এবং প্রতিরোধ করতে না পেরে ধূর্ত ইহুদীদের প্রতি আরো বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে ওঠে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বন্ধকদাতার উপর অতিরঞ্জিত শর্তারোপ করা। অর্থাৎ বন্ধক রেখে সময়মত টাকা পরিশোধ করতে না পারলে এমন কিছু শর্তারোপ করতো যা সাধারণ বিবেকসম্পন্ন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এমনকি বন্ধকদাতার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে পর্যন্ত বন্ধক রাখতে বাধ্য করা হত। নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্যকে চরিতার্থ করতেই তারা এসব শর্তারোপ করতো। আরবরা যেখানে আত্মসম্মানবোধের ব্যাপারে অন্য সব জাতির চেয়ে বেশি কঠোর ছিল তাদের পক্ষে এ ধরণের শর্ত মেনে চুপ করে থাকা কোনভাবেই সম্ভব ছিল না। এভাবেই ধীরে ধীরে বিবাদ বড় আকার ধারণ করে।

কিন্তু ইহুদিদের মধ্যে অনেকেই আহলে কিতাব আলেম ছিল। তাদের মাধ্যমে কিছু বাস্তবতা তারা অনুমান করতে পারতো। ইহুদি আলেমদের কথামত শেষ নবীর আগমনকে তারা বিশ্বাস করতো। এবং মদিনার মুশরিকদের গর্ব করে বলতো, শীঘ্রই আমাদের মাঝে আখেরী নবী আসবেন। আমরা তাকে আমাদের নেতা বানিয়ে নেবো। এবং তোমাদের থেকে অগ্রগামী হয়ে যাবো।

মদিনার এই অস্থিতিশীল পরস্থিতি ও বহুমূখী সংকট নিরসনে আল্লাহ তায়ালা নিজ নেযাম অনুযায়ী তার রাসুলকে মদিনায় আনার প্রেক্ষাপট তৈরী করা শুরু করেন। ঘটনাক্রমে খাযরাজ গোত্রের কিছু লোক হজের মৌসুমে মক্কায় আসলেন। তাদের সাথে নবীজীর সাক্ষাত হয়। রাসুল তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন। এতেই তারা বুঝে ফেলে, এই হচ্ছে সেই আখেরী নবী যার কথা ইহুদীরা আমাদেরকে এতদিন ধরে বলে আসছে। সাথে সাথে তারা সেই বৈঠকেই ইসলাম গ্রহণ করে ফেলে। এবং ইহুদীরা যাতে কোনভাবেই অগ্রগামি না হয়ে যায় সে কারণে তারাই মদিনায় রাসুলের বাণী প্রচারের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এভাবেই রাসুলের হিজরতের আগে থেকেই মদিনায় খাজরাজ গোত্রের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের বীজ বপন করা শুরু হয়। মদিনার সর্বত্র ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক অস্থিরতার বিপরীতে অভাবনীয় সাড়া জাগায় ইসলামের সুমহান প্রস্তাবনা। ব্যক্তি ও পারিবার গঠনে ইসলামের সুশৃঙ্খল প্রস্তাবনাকে মেনে নিয়ে মদিনায় শান্তির নীড় গড়ে তুলতে শুরু করে ইমানদারেরা। এখন শুধু নবীজীর আগমনের প্রতিক্ষা। যিনি এসে ইসলামের সামগ্রিক দিকনির্দেশনার মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির প্রস্তাবনাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মদিনাকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন।

অতঃপর এলো সেই বহুল প্রতীক্ষিত দিন। মদিনার বালকদের কণ্ঠে “তলাআল বাদরু” আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুললো। তিনি এসেই মসজিদে নববী নির্মাণ করলেন। মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন কায়েম করলেন। গোত্রের ভিত্তিতে বিবাদকে মিটিয়ে দিলেন। আযানের হুকুম এলো। প্রকাশ্যে ধর্মের দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলাম তার আলোয় উদ্ভাসিত করলো পুরো মদিনাবাসীকে। 

নবীজী সা. যে শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং পুরো মানবজাতির জন্য রহমত ছিলেন তারই প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল মদিনা নগরীতে তার হিজরতের পর। মুসলমানদেরকে দিক নির্দেশনা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে যাতে সহাবস্থান বজায় থাকে সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রেখেছিলেন। সাধারণত মদিনার আদি বাসিন্দা আউস ও খাযরাজের সাথে মুসলমানদের খুব একটা বিরোধ ছিল না। কারণ আউস ও খাযরাজের মুশরিকেরা মক্কার মুশরিকদের চেয়ে বেশি শিক্ষিত ছিল। তারা তাদের অনুসন্ধান ও পড়াশোনার মাধ্যমে এ সত্য আগেই জেনে গিয়েছিল যে তাদের শহরে শেষ নবীর আগমন ঘটবে। কিন্তু মুসলমানরা মদিনায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইহুদীরা বিবাদে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ খুজতে থাকে। কারণ মক্কার কুরাইশদের উস্কে দেওয়ার মাধ্যমে মুসলমানদের যে ক্ষতিসাধন তারা করতো সে পথ ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে আসছিল। কিন্তু নবীজী তাদেরকে সে সুযোগ দিলেন না। তিনি ইহুদিদের সাথে শান্তিচুক্তি করে ফেলেন। সিরাতে ইবনে হিশাম ও বিদায়া নিহায়াতে যা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। সংক্ষেপে সে চুক্তিগুলো হচ্ছেঃ
১) হত্যার প্রতিশোধ এবং বদলা গ্রহণের যে পদ্ধতি পূর্ব থেকে চলে আসছে তা সুবিচার ও ইনসাফের সাথে যথারীতি বহাল থাকবে।
২) প্রত্যেক গোত্রকেই ন্যায়পরায়ণতার সাথে নিজ দলের পক্ষে মুক্তিপণ দিতে হবে। অর্থাৎ যে সম্প্রদায়ের যতজন বন্দি থাকবে তাদের উদ্ধারের জন্য মুক্তিপণ প্রদান তাদেরই যিম্মায় থাকবে।
৩) অত্যাচার, পাপাচার, শত্রুতা ও বিবাদের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা। যদিও অপরাধী কারো পুত্র হোকনা কেন।
৪) কোন মুসলমান কোন মুসলমানকে হত্যায় কোন কাফেরের বিরুদ্ধে সহায়তা করতে পারবেনা। আর কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে কোন কাফেরকে সাহায্য করারও অনুমতি থাকবেনা।
৫) বিপন্নকে আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে একজন সম্ভ্রান্ত মুসলমানের যে অধিকার থাকবে একজন সাধারণ মুসলমানেরও সে অধিকার থাকবে। 
৬) যে সমস্ত ইহুদি মুসলমানদের অধীনে থাকবে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব মুসলমানদের উপর বর্তাবে। তাদের উপর না কোন অত্যাচার করা হবে আর না তাদের শত্রুকে কোন প্রকার সাহায্য করা হবে।
৭) কোন কাফের বা মুশরিকের এ অধিকার থাকবেনা যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন কাফেরের জীবন অথবা সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করে, কিংবা মক্কার কুরাইশ ও মুসলমানদের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে।
৮) যুদ্ধের সময় ইহুদিদেরকে জীবন ও সম্পদ দিয়ে মুসলমানদের সহায়তা করতে হবে। মুসলমানদের বিরোধী পক্ষকে সাহায্য করার অনুমতি থাকবেনা।
৯) নবীজীর কোন দুশমন যদি মদিনায় আক্রমণ করে তাহলে নবীজীকে সাহায্য করা ইহুদিদের জন্য আবশ্যক।
১০) যে সমস্ত গোত্র এ চুক্তি ও শপথে শরিক আছে তাদের মধ্যে যদি কেউ চুক্তি ও শপথ থেকে পৃথক হতে চায় তাহলে নবীজীর অনুমতি ছাড়া পৃথক হতে পারবেনা।
১১) কোন ফিতনাবাজকে সাহায্য করা কিংবা আশ্রয় দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবেনা। যদি কোন ব্যক্তি এরূপ কাউকে সাহায্য করে কিংবা আশ্রয় দান করে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ ও ক্রোধ নিপতিত হবে। কেয়ামত পর্যন্ত তার কোন আমল কবুল হবেনা।
১২) মুসলমানগণ যদি কারো সাথে সন্ধি করতে চায় তাহলে ইয়াহুদীদের জন্যও সে সন্ধিতে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক।
১৩) যে কেউ কো মুসলমানকে হত্যা করলে যদি তার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে এ হত্যার বদলা নেওয়া হবে। তবে নিহতের অভিভাবক যদি রক্তপণ ইত্যাদির বিনিময় গ্রহণে সম্মত হয় তাহলে বদলা নেওয়া হবেনা।
১৪) যদি কখনো কোন ঝগড়া বিবাদ কিংবা পারস্পরিক মতবিরোধ সৃষ্টি হয় তাহলে তা আল্লাহ্ব তার রাসুলের সামনে পেশ করা হবে।
 
মদিনায় হিজরতের পাচ মাস পর নবীজী এই চুক্তিনামা সম্পন্ন করেছিলেন। এবং এর মাধ্যমে মদিনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছিল।

লেখকঃ
আশরাফ মাহদি
অধ্যয়নরতঃ জামেয়া আযহার বিশ্ববিদ্যালয়
ফ্যাকাল্টিঃ শারিয়া ওয়াল কানুন

Monday, March 9, 2020

ইসলামের ইতিহাসে নারী মনিষী

'কোন কোন মুহাদ্দিসা এলেমের জগতে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হইছিলেন যে, ওনাদের জামাই ওনাদের ছাত্রত্ব গ্রহণ করছিলেন, এবং বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ও বিচার-সংক্রান্ত প্রশ্নে অন্যদেরও ওনাদের কাছে যাইতে বলতেন। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। মুয়াজ ইবনে হাবিব আল জুহানির বরাতে হিশাম ইবনু সাঈদ বয়ান করেন: মুয়াজ তার বউরে জিগেশ করছিলেন: 'বাচ্চারা কোন বয়সে এবাদত শুরু করবে?' তার বউ উত্তরে বলেন: নবি সা. থেকে আমাদের এক লোক বয়ান করেন যে, নবিজিকেও এই প্রশ্ন করা হইছিল। তখন উনি বলছিলেন: 'শিশু যখন ডান-বামের তফাত বুঝবে, তখন তারে এবাদতের আদেশ দাও।'

আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াহাব ইবনে জাময়াও তার বউ কারিমা বিনতে মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ আল কিন্দিয়ার থেকে হাদিস বর্ণনা করছেন। ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহাও তার বউ উম্মে ইয়াহইয়া হুমাইদা বিনতে উবাই ইবনে রাফিয়া আল আনসারিয়া যুরাকিয়া থেকে হাদিস বয়ান করছেন। 

ফাতেমা বিনতে মুনযির ইবনে যুবাইর ইবনুল আওয়ামরে তাবেয়িদের মধ্যে বেশ বড় মাপের স্কলার ও আইন-বিশেষজ্ঞ হিশাবে দেখা হইত। উনি অনেক হাদিস জানতেন, এগুলার বড় অংশ উনি শিখছিলেন ওনার দাদি আসমা বিনতে আবু বকরের কাছে। অনেক বড় বড় ইমাম ওনার থেকে হাদিস বয়ান করছেন, এদের মধ্যে, 'সিরাতে ইবনে ইসহাক'র লেখক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাকও আছেন। তার সনদে যেসব হাদিস বড় বড় হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়, সেসবের বেশিরভাগই উনার জামাই হিশাম ইবনে উরওয়া ইবনে যুবাইর উনার কাছ থেকে শুনে বয়ান করছেন, যেই হিশাম আবার ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, শু'বা, সুফিয়ান সাওরিসহ অনেক বড় বড় ইমামদের ওস্তাদ। 

'তুহফাতুল ফুকাহা'র লেখক মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে আবি আহমদ আল সমরকন্দী রহ. এর মেয়ে ফাতেমা অনেক উঁচা দরজার বিখ্যাত স্কলার ও আইনজ্ঞ ছিলেন। হানাফি ফেকাহর বিখ্যাত কিতাব 'বাদাইয়ুস সানায়ে'র লেখক আলাউদ্দিন আবু বকর ইবনে মাসুদ আল কাসানি ছিলেন উনার জামাই। ইবনে আদম বয়ান করেন: 'আমার বাবার কাছে শুনছি যে, উনি (ফাতেমা) হানাফি ফেকাহর মাসালাগুলা খুব ভাল জানতেন। উনার জামাই কাসানি রহ. মাঝেমাঝে কোন ফতোয়ার ব্যাপারে সন্দেহে পইড়া গেলে, বা ভুল কইরা ফেললে, উনি (ফাতেমা) তারে ঠিক মাসালাটা কারণসহ বুঝায়ে বলতেন।'

নবম শতকের একজন উদাহরণ হলেন ফাতেমা বিনতে ইয়াহইয়া। আল শাওকানি উনার ব্যাপারে বলেন: 'এলেমের জন্য উনি খুব মশহুর ছিলেন। বিচার সংক্রান্ত অনেক মাসালায় উনার আব্বার সাথে বিতর্ক হইছিল উনার। তার আব্বা ইমাম ছিলেন, এবং উনি নিশ্চিতভাবে বলছিলেন যে, ওনার মেয়ে মাসালা বের করার জন্য 'ইজতেহাদ' করতেছেন। এই কথা প্রমাণ করে যে, জ্ঞানের জগতে ওনার স্থান অনেক উঁচা ছিল। নাইলে একজন ইমাম কোন অযোগ্যর ব্যাপারে এমন কথা বলতেন না।' উনার আব্বা উনারে আল মুতাহহার ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান ইবনে মুহাম্মদের কাছে বিয়া দিছিলেন। 

আল মুতাহহার বিচার-সংক্রান্ত অনেক জটিল মাসালার ফয়সালার জন্য ফাতেমার কাছে লোকজনরে পাঠাইতেন। যখন উনার এবং উনার ছাত্রদের কাছে জটিল কোন মাসালা আসত, উনি বউয়ের কাছে গিয়া সেই মাসালার সমাধান জিগেশ করতেন। ওনার ছাত্ররা তখন বলাবলি করত: 'এই মাসালা তো আপনার না ওস্তাদ, এই মাসালা পর্দার ওইপাশ থেকে আসছে।'
~

[আল মুহাদ্দিসাত: দ্য উইমেন স্কলারস ইন ইসলাম, আকরাম নদভি; পৃ: ১৪২-১৪৪]

শাফেয়ি মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম ছিলেন তাকিউদ্দিন সুবকি রহ. (মৃ. ৭৫৬)। উনি ছিলেন দামেশকের বিচারক। ওনার ছেলে তাজ সুবকি রহ. (মৃ. ৭৭০)-ও ছিলেন শাফেয়ি মাযহাবের বিখ্যাত ইমাম এবং ওই সময়ের একজন বিখ্যাত ইতিহাস বিশারদ। বাবার পরে উনি দামেশকের বিচারক হইছিলেন। ইসলামি আইনের শাফেয়ি ট্রাডিশনে এই 'সুবকি ফ্যামিলি'র অবদান অনেক। 

তো, তাজ সুবকি ওনার বিখ্যাত বই 'তাবাকাতে শাফেয়িয়া আল কুবরা'-য় খুব ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা লিখছেন। সেই ঘটনার মূল চরিত্র এক ইয়েমেনি নারী, যার বিস্ময়কর জ্ঞান, শক্ত মনোবল আর প্রবল ইচ্ছাশক্তি ইসলামের ইতিহাসে এখনও উজ্জ্বল। এই নারীর নাম ফাতিমা বিনতে ওবাইদুল্লাহ। উনি ইসলামি ফেকাহর অন্যতম ইমাম, ইমাম শাফেয়ি রহ.-এর মা। 

এখন আমরা যাদের 'সিঙ্গেল মাদার' বলি, ইসলামের ইতিহাস এই 'সিঙ্গেল মাদার'দের অদ্ভুত সব জীবনসংগ্রামের কাহিনীতি ভরপুর। হাদিস ও ফেকাহর বিখ্যাত তিন ইমাম— ইমাম বুখারি, ইমাম মালেক এবং ইমাম শাফেয়ি— তিনজনের মা-ই ছিলেন 'সিঙ্গেল মাদার'। জন্মের পরেপরেই ইমাম শাফেয়ি রহ.-র বাবা মারা যান। উনার আম্মা উনারে নিয়া নানাবাড়ি ইয়েমেনে চলে যান। ওনার আব্বা ছিলেন খুবই গরিব। কিন্তু ওনার আম্মা, ফাতেমার মনোবল ছিল খুবই শক্ত। অল্প বয়সে বিধবা হওয়ার পরেও, ছেলের উচ্চশিক্ষার জন্য কীভাবে উনি মক্কায় যান, শুদ্ধ আরবি, কবিতা ও আর্চারি শেখানোর জন্য হুজাইল নামের বিখ্যাত বেদুইন গোত্রে ছেলেরে পাঠান, হাফেজ, মুহাদ্দিস ও ফকিহ বানান, ছেলের ভবিষ্যতের জন্য বাকি জীবন সিঙ্গেল মাদার হিশাবেই কাটায়ে দেন— সে এক আশ্চর্য সুন্দর কাহিনী। 

যাহোক, এই মহান নারী খালি যে একজন সফল মা ছিলেন, তা না। উনি ওইসময়ের একজন সেরা ফকিহও ছিলেন বটে। ওনার ফিকহি ইনসাইটেরই একটা ঘটনা তাজ সুবকি বয়ান করছেন তার বইতে। 

ঘটনাটা এমন: একবার মক্কায় একটা বিচারের কাজে সাক্ষী হওয়ার জন্য ফাতেমা বিনতে ওবাইদুল্লাহ আর উনার বান্ধবী বিশর আল মিরিসির আম্মা— এই দুইজনকে ডাকা হইল। শাফি মাযহাব-মতে, যদি কাজি সাহেবের মনে সাক্ষীদের ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকে, তাইলে উনি সাক্ষীদের আলাদা আলাদা কক্ষে নিয়া সাক্ষ্য গ্রহণ করতে পারবেন, বরং এইটাই বেটার। তো, ওই মজলিশে কাজি আলাদাভাবে দুইজনের সাক্ষ্য নিতে চাইলেন। ফাতেমা বিনতে উবাইদুল্লাহ শান্ত গলায় বললেন: আপনার এইটা করার কোন অধিকার নাই কাজী সাহেব। কারণ আল্লাহ কুরানে বলছেন: 'যদি তাদের (নারী সাক্ষীদের) একজন কোন কথা ভুলে যায়, তাইলে অন্যজন তা স্মরণ করায়ে দেবে' (সুরা বাকারা, ২৮২)। কাজি সাহেব এই দলিলের পরে আর উনাদের আলাদা করেন নাই, একসাথেই সাক্ষ্য গ্রহণ করছেন। 

সুবকি এই ঘটনায় মুগ্ধ হয়ে লেখেন: 'এইটা আসলে খুব সুন্দর দলিল, শক্তিশালী অর্থ, অসাধারণ যুক্তি-তর্ক। যদিও ওনার ছেলের মাযহাবমতে, আলাদা আলাদা করে সাক্ষ্য নেওয়া উচিত, যদি সন্দেহ থাকে। কিন্তু নারী সাক্ষীর ক্ষেত্রে এরকম করা যাবে না, এইটাই ছিল উম্মে শাফেয়ির মত। এই দলিলে কোন সমস্যা নাই।' 

ফাতেমা বিনতে উবাইদুল্লাহ। ফকিহ, মুহাদ্দিস, একজন সফল 'সিঙ্গেল মাদার'। যে ইমামের নাম আজ লাখ লাখ মানুশ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে, সেই ইমাম শাফিরে 'শাফি' করে তুললেন তো আপনিই। তবু ইতিহাসে আপনার নামটা পাইতে আমার ৫ টা কিতাব ঘাঁটতে হইছে। উইকিপিডিয়ায় আপনার নাম নাই, তাজ সুবকি আপনার নাম লেখেন নাই, আকরাম নদভিও লেখছেন 'মাদার অব ইমাম শাফি'। ফাতিমা বিনতে উবাইদুল্লাহ, নারী দিবসে আপনারে সশ্রদ্ধ সালাম।

তুহিন খান

ইসলামে পর্দা এবং জ্ঞানার্জনের ভারসাম্য

রাসূলের যুগে নারীরা মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়তেন। অন্ধকারের মধ্যে তারা মসজিদে যেতেন, আবার চারিদিক আলোকিত হবার আগেই বাড়ি ফিরতেন। কেউ তাদেরকে দেখে চিনতে পারতো না। এমনকি অন্ধকারে নারীরা একজন আরেকজনকে চিনতে পারতেন না। সহীহ বুখারীঃ ৩৭২, ৮৭২

ইসলামের স্বর্ণযুগের নারীদের জ্ঞানের প্রতি  ডেডিকেশন ছিলো ঈর্ষনীয়। জ্ঞানার্জনে তাদের আগ্রহ কোনাংশে কম ছিলো না। 

একবার কয়েকজন নারী এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অভিযোগ করেন- "ইয়া রাসূলাল্লাহ! (জ্ঞানার্জনের জন্য) পুরুষরা আপনার নিকট আমাদের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। আপনি আমাদের (জ্ঞানার্জনের) জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দিন।" 

রাসূলু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য একটি বিশেষ দিন নির্ধারণ করেন। সেদিন তিনি তাঁদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে নসীহাত করেন, নির্দেশ দেন। সহীহ বুখারীঃ ১০১

আবু হুরাইরা এবং আনাস ইবনে মালিকের রা, পর সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেন আঈশা রাঃ। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রায় দুই হাজার হাদীস বর্ণনা করেন। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী হিশেবে আঈশার রাঃ এতো বেশি হাদীস বর্ণনা করা উরওয়ার রাহঃ কাছে খুব একটা বিস্ময়কর ছিলো না। উরওয়া রাহিঃ ছিলেন আঈশার রাঃ বোনপো, আসমা বিনতে আবু বকর রা, ছেলে। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানে আঈশার রা,জ্ঞান দেখে উরওয়া অবাক হন। তিনি খালাকে জিজ্ঞেস করলেন, "এই জ্ঞান আপনি কিভাবে অর্জন করলেন?" আঈশা রা, বোনপো-কে বললেন, "আমি কিংবা অন্য কোনো লোক অসুস্থ হলে যে ওষুধ ও প্রেসকিপশন দেওয়া হয়, সেখান থেকে শিখেছি। তাছাড়া একজন আরেকজনকে যেসব রোগ ও ওষুধের কথা বলে আমি তাও মনে রেখেছি।" সিয়ারু আ'লাম আন-নুবালা ২/১৮২-১৮৩

আবু বকর রা, এর মেয়ে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী এই পরিচয়গুলো আঈশা রা, কে অহংকারী করেনি। এই পরিচয়গুলো তাঁর জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়নি। তিনি জ্ঞানার্জন করেন এবং তাঁর জ্ঞান থেকে মুসলিম উম্মাহ উপকৃত হয়। 

একজন সাধারণ মুসলিম নারী হিশেবে তিনি পর্দা করতেন। উম্মুল মু'মিনীন হিশেবে স্পেশাল পর্দা করতেন। পুরুষ সাহাবীরা সরাসরি তাঁর এক্সেস পেতেন না। আঈশার রা. থেকে হাদীস বর্ণনা করেন তাঁর বোনপো উরওয়া ইবনে যুবাইর। তিনি সরাসরি খালার রুমে ঢুকতে পারতেন, খালার কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করতে পারতেন। 

আঈশার রা. আরেকজন ছাত্রী ছিলেন। তাঁর নাম আমরাহ বিনতে আব্দুর রহমান রাহি.। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেকগুলো হাদীস তিনি বর্ণনা করেন। তিনি ছিলেন ইমাম মালিক রাহি: এর শিক্ষিকা। খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রাহিঃ শিহাব আয যুহরীকে হাদীস সংকলনের নির্দেশ দেবার সময় বলেন, "প্রথমে যাও আমরাহ'র কাছে। তাঁর হাদীসগুলো আগে সংগ্রহ করো।"

একবার মদীনার বিচারক একটা রায় দিলে আমরাহ রাঃ তাঁর শিক্ষার্থীদেরকে বলেন, "যাও, বিচারককে গিয়ে বলো এই রায়টি ভুল।" বিচারক যখন শুনলেন তার রায়ের ভুল ধরেছেন আমরাহ রাঃ, তখন সাথে সাথে আমরাহ'র রাঃ রায় মেনে নেন। 

মদীনার সাত ফুকাহার একজন ছিলেন সাইদ ইবনুল মুসাইয়িব রাহিঃ। একদিন দেখলেন তাঁর ক্লাসের এক ছাত্রের মন খারাপ। ছাত্রের নাম ছিলো আব্দুল্লাহ। আব্দুল্লাহকে সাইদ রাঃ জিজ্ঞেস করলেন, "কী হয়েছে তোমার?" 

আব্দুল্লাহ বললেন, "আজ আমার স্ত্রী ইন্তেকাল করেছেন৷ এজন্য আমার মন খারাপ।" 

স্ত্রী ইন্তেকাল করেছে, তারপরও ছাত্রটি ক্লাস মিস দিচ্ছেনা? ছাত্রের জ্ঞানার্জনের প্রতি এমন ডেডিকেশন দেখে সাইয়্যিদ রাঃ ঐদিনই নিজের মেয়ের সাথে আব্দুল্লাহর বিয়ে দেন। 

আগেরদিন স্ত্রী ইন্তেকাল করেছেন, তবুও আব্দুল্লাহ ক্লাসে যান। পরদিন নতুন স্ত্রীকে রেখে আবার ক্লাসে যেতে চাইলেন। আগেরদিন যিনি শিক্ষক ছিলেন, এখন তিনি শ্বশুর। 

আব্দুল্লাহ শ্বশুরের ক্লাসে যেতে চাইলে স্ত্রী বাধা দেন। স্ত্রী তাকে বললেন, "বসো, আমার বাবার কাছে গিয়ে যা শিখতে চাচ্ছো, সেটা আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি আমার বাবার ইলম অর্জন করেছি।"

নবম শতাব্দীর একজন নারী জ্ঞানার্জনের জন্য বিখ্যাত ছিলেন৷ তাঁর নাম ছিলো ফাতিমা বিনতে ইয়াহিয়া রাহঃ ইমাম আশ-শাওকানী রাহঃ তাঁর সম্পর্কে বলেন,
"ফাতিমা ইলমের দিক থেকে এতোটাই পারদর্শী ছিলেন, তাঁর বাবা ইয়াহিয়ার সাথে তিনি বিভিন্ন মাস'আলা নিয়ে বিতর্ক করতেন। মেয়ের জ্ঞান-প্রজ্ঞা দেখে তাঁর আলেম বাবা স্বীকৃতি দেন- এই মেয়ের ইজতিহাদ করার সক্ষমতা আছে।"

তাঁর বাবা তাঁকে বিয়ে দেন আল-মুতাছার ইবনে মুহাম্মদের রাহঃ সাথে। তিনিও ছিলেন একজন আলেম। মাঝেমধ্যে ছাত্রদের বিভিন্ন জটিল মাস'আলা নিয়ে আলোচনা করতেন। আলোচনা শেষে কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে না পারলে ঘরের ভেতর যেতেন। ফিরে এসে মাস'আলার সমাধান বলতেন।

ছাত্ররা মজা করে বলতো, "এই মাস'আলা তো আপনার থেকে আসেনি, ঘরের ভেতর থেকে এসেছে।"

অর্থাৎ আল-মুতাছার ইবনে মুহাম্মদ স্ত্রী ফাতিমা বিনতে ইয়াহিয়ার কাছ থেকে মাস'আলা জেনে আসতেন। Al-Muhadditath, Page 144

মাজহাবের চার ইমামের সবার বাবা বাল্যকালে ইন্তেকাল করেন। জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁদেরকে আগ্রহী বানান তাঁদের মা। ইমাম আশ-শাফে'ঈর রাহঃ মা তো জেরুজালেম থেকে ছেলেকে কোলে করে মক্কায় নিয়ে যান যাতে ছেলেটা মক্কার আলিমদের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করতে পারে। 

ইমাম মালিক রাহঃ ছোটবেলায় গায়ক হতে চেয়েছিলেন। ছেলেকে গায়ক হবার ব্যাপারে নিরুৎসাহি করে জ্ঞানের প্রতি উৎসাহি করেন তাঁর মা। কোন শিক্ষকের কাছে গিয়ে কী শিখবে সেই গাইডলাইন তাঁর মা তাঁকে দেন। 

ছোটবেলায় ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের রাঃ মা তাঁকে ভোরবেলায় মসজিদে নিয়ে যেতেন, আর দিনশেষে মসজিদ থেকে নিয়ে আসতেন। এইসব মহিয়সী নারীদের আত্মত্যাগের ফলে ইতিহাসে তাঁদের সন্তানরা 'ইমাম' হয়ে আছেন। 

ইসলামের স্বর্ণযুগে নারীরা পর্দার ব্যাপারে যেমন কনসার্ন ছিলেন, তেমনি জ্ঞানার্জনের ব্যাপারেও কমিটেড ছিলেন। পর্দার প্রশ্ন তাঁদের জ্ঞানার্জনে বাধা হয়ে দাড়ায়নি। আবার পর্দাকে জলাঞ্জলি দিয়ে তার জ্ঞানার্জনে অগ্রসর হননি। এই দুটোকে ব্যালেন্স করে চলেছেন। 

স্বর্ণযুগের নারীরা জ্ঞানার্জনের বেলায় হীনমন্যতায় ভুগতেন না। পর্দা পালন করেও কিভাবে শেখা যায়, শেখানো যায় তার উদাহরণ তারা রেখে গেছেন। 

জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের নারীরা রাসূলের দ্বারস্থ হয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে শেখার আগ্রহ জানিয়েছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের উৎসাহে পানি ঢালেননি৷ তিনিও তাঁদের জানার আগ্রহকে সমর্থন জানিয়েছেন। 

সমাজের একটা অংশ যদি ইলম বঞ্চিত থাকে তাহলে সমাজের বাকি অংশ বদলাবে কিভাবে? 

ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম রাহিঃ অবশ্য নারীদেরকে 'সমাজের অর্ধেক' বলতে নারাজ। তিনি বলেনঃ "Women are one-half of the society which gives birth to the other half so it is as if they are the entire society." 

অর্থাৎ, "নারীরা হলো সমাজের অর্ধেক। কিন্তু, বাকি অর্ধেককেও তো নারীরা জন্ম দেয়। তারমানে নারীরাই যেন পুরো সমাজ।"

- মোহাম্মাদ ইরফান

Sunday, March 1, 2020

কিওয়ামাহ : মুসলিম পরিবারে পুরুষের ভূমিকা


আমাদের পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। সাথে সাথে ভেঙ্গে পড়ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। পরিবার মানুষের প্রথম ও শেষ আশ্রয়। পার্থিব কোন সম্পর্কই পারিবারিক সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে না। পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার সাথে সাথে বাড়ছে হতাশা, বিষাদ, আত্মহত্যা, অপরাধ প্রবণতা, মাদকে আসক্তি ও মানসিক সমস্যা। পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার জন্য পুরুষের দায় অনেক বেশী। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের সমাজে দায়িত্বশীল বাবা ও স্বামীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। যে দায়িত্বশীলতাকে ইসলামের ভাষায় কিওয়ামাহ বলে। এই লেখায় কিওয়ামাহ'র ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করবো। 

আল্লাহ তাআলা সূরা নিসার মধ্যে ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ নারীর দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে ন্যস্ত করেছেন। কেননা পুরুষ এই দায়িত্বশীলতার বিশিষ্টতার অধিকারী, পাশাপাশি খরচের জিম্মাও তার ওপর। ( সূরা নিসা, আয়াত ৩৪) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাংসারিক পরিচালনার দায়িত্ব পুরুষের কাঁধে অর্পণ করেছেন, সরল দৃষ্টিকে একে অপ্রয়োজনীয় ও অসম্মানজনক মনে হলেও তলিয়ে দেখলে এর গুরুত্ব বুঝা যাবে। ইসলামের দৃষ্টিতে দায়িত্বশীলতার গুরুত্ব অনেক। তিনজনের ছোটদলও যদি সফর করে, তাহলে যে কোন একজনকে দায়িত্বশীল নির্ধারণের নির্দেশনা রয়েছে হাদিস শরীফের মধ্যে।

 ইসলামে একাকী সমাজবিচ্ছিন্ন থাকার কোন সুযোগ নেই। নবীজির হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, অনেক ক্ষেত্রে একাকী নফল ইবাদত করার চেয়ে সামাজিক জীবন যথাযথভাবে পালন করা বেশী প্রয়োজনীয়। কেননা একাকী জীবনে পদস্খলনের আশঙ্কা অনেক বেশী, বিষাদগ্রস্থতা, দায়িত্বহীনতা ও অপ্রাসঙ্গিক জীবন যাপনের ঝুঁকিও অনেক বেশী। ইসলাম সামাজিকভাবে জীবন যাপনে অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়। মানুষ তো আল্লাহর খলিফা, শুধু আল্লাহর ইবাদত নয়, সামাজিক জীবনে আল্লাহর আহকাম বাস্তবায়ন করাও মানুষের মৌলিক দায়িত্ব। এখান থেকেই সামাজিক ও পারিবারিক দায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গ এসেছে। এই পারিবারিক দায়িত্বশীলতাকেই কিওয়ামাহ বলা হয়। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু পুরুষ কেন মূল দায়িত্বশীল হবে, সব পুরুষ কি নারীদের চেয়ে অধিক যোগ্য, এটা তো সরাসরি নারীবিদ্বেষী অবস্থান। আদতে অনেক ক্ষেত্রে স্বামীর থেকে স্ত্রী বেশী যোগ্য হতে পারেন, অধিক মেধাবী ও দ্বীনদারও হতে পারেন। আল্লাহ কোরআনের মধ্যে বারবার বলেছেন, সৎ কর্মের ভিত্তিতে নারী ও পুরুষ সমান প্রতিদান পাবে। পুরুষ মাত্রই নারীর চেয়ে বেশী যোগ্য ও মেধাবী, এটা ইসলামি অবস্থান নয়। সূরা হুজুরাতে আল্লাহ বলেছেন, শুধুমাত্র তাকওয়া ও দ্বীনদারিতার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হতে পারে। 

বস্তুত যিনি দায়িত্বশীল হন, তিনিই সবসময় শ্রেষ্ঠ হবেন, সেটা জরুরী নয়। দায়িত্বশীলতা তো বিশেষ জিম্মাদারী, শ্রেষ্ঠত্বের সনদ নয়। তাই কোন পুরুষ যদি কিওয়ামাহ'র ভিত্তিতে নারীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে একে কোনভাবেই সমর্থন করা যাবে না। আবু জর গিফারি রাঃ দ্বীনদারিতায় অগ্রসর হওয়া সত্ত্বেও কখনো দায়িত্বশীল হননি। দায়িত্বশীলতার প্রসঙ্গ উপযুক্ততার সাথে সম্পৃক্ত, যে যে কাজের উপযুক্ত সে সেই কাজের দায়িত্বগ্রহণ করবে। পাশাপাশি ইসলামে কর্তৃত্বপরায়ণ হবার সুযোগ নেই। উপযুক্ত ব্যক্তি পরামর্শের মাধ্যমে দায়িত্বপালন করবেন। 

ফলে কিওয়ামার অনুবাদে কর্তা শব্দ উল্লেখ করা ঠিক নয়, পাশাপাশি পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বও দায়িত্বশীলতার কারণ নয়। তাহলে তবুও কেন পুরুষকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পুরুষ কেন এই কাজের উপযুক্ত? আল্লাহ তাআলা এখানে দু'টি কারণ উল্লেখ করেছেন। ক) পুরুষ রক্ষা ও দায়িত্বশীলতায় নারীর চেয়ে বেশী দক্ষ। পুরুষ শারীরিকভাবে কঠিন কাজে অধিক অভ্যস্ত। খ) পুরুষ নারীদের খরচের দায়দায়িত্ব বহন করেন। নারীও সুযোগ থাকলে উপার্জন করতে পাড়ে, তবে খরচ নির্বাহ করা তার দায়িত্ব নয়। এজন্যই আমরা দেখবো, পশ্চিমা সমাজেও নারীবাদের উত্থান ঘটলেও পুরুষকে বলশালী, বডিবিল্ডার ও শারীরিকভাবে ক্ষমতাবান হিসেবে দেখানো হয়। 

পরিবার হচ্ছে, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। সমাজকে যদি শরীর হিসেবে ধরেন, তাহলে পরিবার সেই শরীরের কোষ। ইসলাম পারিবারিক  দায়িত্বের মধ্যে ভাগ-বণ্টন করে দিয়েছে। এই ভাগ-বণ্টনের ভিত্তি নারীপুরুষের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ নারী ও পুরুষকে তাদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দায়িত্বে ভাগ-বণ্টন করে দিয়েছে। আমরা পুরুষের মধ্যে দৈহিক মোকাবেলা, পরিশ্রম ও ঝুঁকি নেবার প্রবণতা দেখি। আক্রমণাত্মক মানসিকতা দেখি। এর সাথে পুরুষের শারীরিক ও মানসিক গঠন বিশেষ ভাবে জড়িত। 

এখনো নারীপুরুষদের একইসাথে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয় না। ঐতিহাসিকভাবে আমরা পুরুষদেরকেই প্রধানত যুদ্ধ করতে দেখি। শারীরিক ও মানসিক বিশেষ গঠনের কারণে তারাই সবচেয়ে বেশী সহিংসতা ও মারামারির সাথে যুক্ত। জেলখানাগুলোতেও এই কারণে পুরুষ আসামীর সংখ্যা অনেক বেশী। অপরদিকে নার্স-প্রাথমিক শিক্ষকতায় নারীদের অংশগ্রহণ বেশী। একইভাবে লিডারশীপের পজিশনে পুরুষদের সংখ্যা বেশী। তবে এখানে বলে রাখা ভালো, পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক বিশেষ সামর্থ্য বিষয়টি সাধারণভাবে প্রযোজ্য, সর্বক্ষেত্রে নয়। কোন বিশেষ নারীর চাইতে অনেক পুরুষ শারীরিক সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকতে পারেন। 

এই শারীরিক বৈশিষ্ট্যতার ভিত্তিতে আল্লাহ পুরুষকে পারিবারিক দায়িত্বশীলতা ও খরচের দায়িত্ব দিয়েছেন। নারীকে সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন, স্তনদান, ঘরের দায়িত্ব ও বৈবাহিক আনন্দ আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে বলে রাখা ভালো, পুরুষ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেও একে শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ববাদ হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। কেননা আগেই যেমন বলেছি শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি তাকওয়া। পাশাপাশি ইসলামে সকল পরিচালনা শুরা ও মুশাওয়ারার ওপর নির্ভরশীল। একক কর্তৃত্ববাদ ফিরাউনি বৈশিষ্ট্য। ফিরাউন কোনভাবেই ইসলামি আদর্শ নয়। 

যদি একটি চিত্রের কথা চিন্তা করেন। রাতের বেলা দরজায় প্রচণ্ড জোরে আঘাত করা হচ্ছে। ইতিহাসে এই বিষয়ে যত লেখাজোখা আছে, সেগুলোর পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, পুরুষই সাধারণত এসব ক্ষেত্রে দরজা খুলতে যান, নারীদেরকে গোপন আশ্রয়ে যেতে বলা হয়। এই আক্রমণকামী প্রবণতার কারণেই পুরুষ ধর্ষকদের সংখ্যা নারী ধর্ষকদের চাইতে অনেক ও অনেক বেশী। এর যে ব্যতিক্রম নেই, তা নয়, তবে ব্যতিক্রম কখনো নিয়ম ও বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। 

অনেকে দাবী করেন, নারী-পুরুষের এই শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য সমাজ তৈরি করেছে, এই বৈশিষ্ট্য তাদের দৈহিক বিষয় নয়। তারা বলেন, সমাজ নারী ও পুরুষের ধারণা সৃষ্টি করেছে। জন্ম থেকে পুরুষকে নারী হিসেবে বড় করলে সে নিজেকে নারী হিসেবেই চিহ্নিত করবে, নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাববে না।  তবে এই দাবী সত্য নয়। কেননা এখন আপনি চাইলে অপরেশনের মাধ্যমে লিঙ্গপরিবর্তন করতে পারবেন। তবে লিঙ্গ পরিবর্তন করলেই শারীরিক গঠন পরিবর্তন করা যায় না। নির্দিষ্ট অঙ্গের গোশত কর্তন বা সংযুক্তির মাধ্যমে সারা শরীরের পেশি ও মানসিক গঠন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।    

এসব কারণে আরটি থেকে প্রকাশিত এক ডকুমেন্টরিতে দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরিবর্তিত লিঙ্গের লোকেরা আগের লিঙ্গে ফেরত যেতে চায়, অনেকে আত্মহত্যা করে। ফলে শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যকে নিছক সামাজিক সৃষ্টি হিসেবে আখ্যা দেওয়া যাচ্ছে না। যেহেতু লিঙ্গের পরিবর্তনে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে না, তাই লিঙ্গ পরিবর্তিত নারীদের প্রকৃত নারীদের সাথে খেলায় অংশগ্রহণ করা এখনো বিতর্কিত ইস্যু হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে নানারকম কেমিক্যাল ব্যবহার করে নারী বানানোর চেষ্টা করা হয়। তবে কখনোই নারী-পুরুষকে একইসাথে খেলায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয় না। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু পুরুষ কেন খরচের দায়িত্ব বহন করবে, নারীরাও তো উপার্জন করতে পারে। সময় ও সুযোগ থাকলে নারীদের উপার্জনে ইসলামের দৃষ্টিতে বিশেষ কোন বাঁধা নেই। তবে  ইসলাম নারীর কাঁধে এই দায়িত্ব দেয়নি। কেননা নারীরা কঠিন কাজের দায়িত্ব নিলে তাতে তাদের ঘরের কাজ ব্যাহত হতে পারে। ফুলটাইম জবের যে পরিমাণ ক্লান্তি ও পরিশ্রম, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নারীর পক্ষে সবকিছু কুলিয়ে উঠা সম্ভব হয়ে উঠে না। পাশাপাশি এই সুযোগে অনেকে নারীর রুপ ও শরীর ক্রয়ের চেষ্টা করেন। রিসিপশন ও বিজ্ঞাপনের মতো স্পর্শকাতর কাজে নারীকে ব্যবহার করা হয়। 

পাশাপাশি ঘরে ফিরে নারীকে তার সেই আগের দায়িত্বই পালন করতে হয়। সন্তান যথাযথ যত্ন ও আদর থেকে বঞ্চিত হয়। ঘন ঘন একাধিক বাচ্চা হলে হয়তো নারীকে তার ফুলটাইম কাজে অনিয়ম করতে হয় বা সন্তানের যত্নে ত্রুটি হয়। আমরা জানি, কাজের ক্ষেত্রে বিশেষায়িত দায়িত্বের বিশেষ ভূমিকা আছে। প্রত্যেকে এক কাজ না করে দায়িত্ব ভাগ করে নিলে প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। তাতে সমাজ ও জাতি বিশেষভাবে উপকৃত হয়। যে নারী সমাজে বিশেষ সার্ভিস দিতে চান, তিনি পরিবারে বিশেষ সময় দিয়ে সমাজের একটা বিশেষ ইউনিটকে শক্তিশালী করে তুলতে পারেন। এভাবেই প্রকৃতপক্ষে সমাজ বেশী উপকৃত হয়। 

তবে বলে রাখা ভালো, মৌলিক দায়িত্বপালন করতে পারলে নারীর জন্য চাকরীতে যোগ দেবার সুযোগ রয়েছে। ঘরে গৃহকর্মী ও সাহায্যকারী রেখে পরিশ্রম ভার কমিয়ে গৃহিণীর দায়িত্বশীলতার পাশাপাশি সামাজিক কাজ ও শ্রমেও অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে বাঁধা দেয়নি। তবে কোনভাবেই নারীর ওপর  বাধ্যতামূলক অর্থনৈতিক দায়িত্ব চাপায় নি। যেমন পুরুষের ওপর  সন্তান জন্মদান, প্রতিপালন, স্তনদান, ঘরের পরিচালনা ও বৈবাহিক আনন্দ আয়োজনের দায়িত্ব দেন নি। 

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়কে তার পরিমাপ মতো সৃষ্টি করেছেন। ( সূরা কামার, আয়াত ৪৯)। আল্লাহ দুনিয়াতে অনেক প্রাকৃতিক নীতি তৈরি করে দিয়েছেন, মানুষ চাইলেও এগুলোকে অতিক্রম করতে পারবে না।

ইফতেখার জামিল

Friday, February 14, 2020

খৃষ্টবাদের বিদাত ও একনায়কতন্ত্রিক ধর্মান্ধতা

ক্যাথোলিক পোপ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিবাহিতরা পাদ্রী হতে পারবে না। অর্থাৎ ভ্যাটিকান তার হাজার বছরের সিদ্ধান্ত থেকে বের হতে পারছে না। এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। 

ক)  একক ব্যক্তির সিদ্ধান্তে ধর্ম চলছে। ইসলামে এটা ভাবাই যায় না। কাবা শরীফ ইসলামে অত্যন্ত সম্মানিত জায়গা, দেওবন্দ বা আজহার বড় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তবে কারো পক্ষেই একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা নাই। কোরআন-সুনানের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে পারলে বাংলাদেশের কোন প্রান্তিক অঞ্চল থেকেও কেউ এর বিরোধিতায় দাড়াতে এবং ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। 

খ) বিবাহিতরা পাদ্রী হতে পারবে না, এটা মূলত একটা বিদআত। এর সূচনা হয়েছে হাজার বছর আগে। এর আগে খৃস্টান ধর্মে এর প্রচলন ছিল না। ইসলামে এমন সার্বজনীন বিদআতের কথা ভাবাও যায় না। এত দীর্ঘমেয়াদীভাবে কোন বিদআত টিকে থাকে এবং তথাকথিত সংস্কারবাদী পোপ তাতে সম্মতি জানান - বুঝেন অবস্থা ! 

গ) সবচেয়ে বড় কথা বিবাহের মতো স্পষ্ট হালাল ও অধিকারের বিষয় পোপ বা গির্জা হারাম বানায় কীভাবে, মানুষ কীভাবে  এই এখতিয়ার পেল? দেখুন, গণতন্ত্রেরও ঠিক একই সমস্যা। তারা আইন প্রণয়ন করে। অবৈধ প্রতারক চক্র সংসদে বসে মানুষের বৈধ-অবৈধ ঠিক করে দেয় ; আঠারো বছরের আগে বিবাহ করা যাবে না। *

ঘ) আমরা অনেক সময় মনে করি, গির্জা বা খৃস্টান ধর্মীয় ব্যবস্থায় বোধহয় গণতন্ত্র নেই। আদতে সেখানেও 'গণতন্ত্র' আছে। পাদ্রী-বিশপরা পোপ নির্বাচিত করেন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে পোপের স্বৈরতন্ত্রসহ  বাকীদের মতামত নেবার ব্যবস্থা আছে। তবে গির্জার মতো গণতন্ত্রেও মৌলিক কিছু সমস্যা আছে। বিদআতের কথাই ধরুন, কিছু একক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কীভাবে মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে, গির্জার মতো আধুনিক গণতন্ত্রও এভাবে স্বৈরাচার জারি রেখেছে। **  

এই লোকগুলোই আবার ধর্মীয় আইনের কথা বলে ইসলামি শরিয়তের বিরোধিতা করেন। ট্র্যাম্প তার ভাষণে শরিয়া ল উচ্চারণ করতে গিয়ে কীভাবে মুখ ও উচ্চারণ বিকৃত করেছিলেন, সেটা ভুলতে পারি না !

ইফতেখার জামিল

Thursday, February 6, 2020

ইতিহাসে ফিকহ ও তুরাছের গুরুত্ব কেন বেশী

যারা আধুনিক আইন বা সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন, তাদের অধিকাংশের একটা বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে, তারা ইসলামি ফিকাহ জানেন না। ফিকাহ ইসলামি চিন্তার মূল কেন্দ্রবিন্দু ; ফিকাহের মানে শুধু কোরআন-হাদিস নয়, পাশাপাশি চৌদ্দশো বছরের অভিজ্ঞতা ও চর্চা। সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মোকাবেলা। এখানে কত বিষয়ের  পর্যালোচনা, আলোকপাত ও ব্যাখ্যা আছে, সেটা ফিকাহের কিতাবগুলোর বিষয়বস্তু দেখলেই বুঝা যাবে। আমাদের প্রচলিত আইন ও সমাজতত্ত্ব কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার এমন অভিজ্ঞতার ওপরেই দাড়িয়ে আছে।

 তবে তলিয়ে দেখলে ধরতে পারবেন, পশ্চিমা সভ্যতায় ব্যাপক পরিসরে গ্রন্থ উৎপাদনের বয়স তিন থেকে চারশো বছর, তাই ক্লাসিক্যাল কাজকর্মের হিসেব করলে মুসলিম লেখাজোখার সংখ্যা অনেক বেশী। সমকালীন লেখাজোখার অবশ্যই গুরুত্ব আছে, তবে ক্লাসিকের স্বাদ ও গভীরতা অনেক বেশী। বইমেলায় যত বই প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে হয়তো বড়জোর পাঁচ-দশটা বই ক্লাসিক্যাল অর্থে কিতাব হবার যোগ্যতা রাখে। বাকীগুলো নোট, নকল বা খাতা, ইসলামি ইতিহাসে এসব বিষয়েরও দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। 

পশ্চিমাদের রেনেসাঁ যুগে শিক্ষিতদের প্রায় সবাই ল্যাটিন জানতেন। আদতে ধারাবাহিকতাহীন কোন রেনেসাঁ সম্ভব হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, আরবি ছাড়া আপনি কি ইসলাম শিখতে ও ভালো মুসলমান হতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা বা মুসলমানিত্বের কথা বলা হচ্ছে না। গবেষণা ও আত্মানুসন্ধানের প্রসঙ্গ আনা হচ্ছে। ক্লাসিক কিতাব তৈরি হতে সময় লাগে, সভ্যতাগত স্থিতিশীলতা লাগে, যার অনেককিছুই এখন অপ্রতুল। তাই চৌদ্দশো বছরের বিকল্প হাতছাড়া কেন করবেন? 

বলে রাখা ভালো, আমি ব্যক্তিগতভাবে মোটেই ইংরেজি বা পশ্চিমা শিক্ষার বিরুদ্ধে না। তবে ত্রিপল আইটির গবেষণা যেমন বলেছে, ইসলামি সভ্যতায় রাজনীতি বিষয়ক অমুদ্রিত প্রায় কয়েক শো গুরুত্বপূর্ণ বই আছে, মাকাসেদ বিষয়ক বই আছে কয়েক ডজন, নিজুত মানুষের হালাকাজাত অভিজ্ঞতার সঞ্চিত জ্ঞান অনেকটা গুপ্ত ধনের মতই , বরং তারচেয়েও বেশী পবিত্র, চিন্তার সাথে তো সম্পদের তুলনা হয় না। যদি মিসরের পিরামিডের রাজা-বাদশাদের মমি অত গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আমাদের ক্লাসিক কিতাবগুলো কেন নয়?

ইফতেখার জামিল

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...