যারা আধুনিক আইন বা সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেন, তাদের অধিকাংশের একটা বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে, তারা ইসলামি ফিকাহ জানেন না। ফিকাহ ইসলামি চিন্তার মূল কেন্দ্রবিন্দু ; ফিকাহের মানে শুধু কোরআন-হাদিস নয়, পাশাপাশি চৌদ্দশো বছরের অভিজ্ঞতা ও চর্চা। সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মোকাবেলা। এখানে কত বিষয়ের পর্যালোচনা, আলোকপাত ও ব্যাখ্যা আছে, সেটা ফিকাহের কিতাবগুলোর বিষয়বস্তু দেখলেই বুঝা যাবে। আমাদের প্রচলিত আইন ও সমাজতত্ত্ব কিন্তু পশ্চিমা সভ্যতার এমন অভিজ্ঞতার ওপরেই দাড়িয়ে আছে।
তবে তলিয়ে দেখলে ধরতে পারবেন, পশ্চিমা সভ্যতায় ব্যাপক পরিসরে গ্রন্থ উৎপাদনের বয়স তিন থেকে চারশো বছর, তাই ক্লাসিক্যাল কাজকর্মের হিসেব করলে মুসলিম লেখাজোখার সংখ্যা অনেক বেশী। সমকালীন লেখাজোখার অবশ্যই গুরুত্ব আছে, তবে ক্লাসিকের স্বাদ ও গভীরতা অনেক বেশী। বইমেলায় যত বই প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে হয়তো বড়জোর পাঁচ-দশটা বই ক্লাসিক্যাল অর্থে কিতাব হবার যোগ্যতা রাখে। বাকীগুলো নোট, নকল বা খাতা, ইসলামি ইতিহাসে এসব বিষয়েরও দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে।
পশ্চিমাদের রেনেসাঁ যুগে শিক্ষিতদের প্রায় সবাই ল্যাটিন জানতেন। আদতে ধারাবাহিকতাহীন কোন রেনেসাঁ সম্ভব হয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, আরবি ছাড়া আপনি কি ইসলাম শিখতে ও ভালো মুসলমান হতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। এখানে প্রাথমিক শিক্ষা বা মুসলমানিত্বের কথা বলা হচ্ছে না। গবেষণা ও আত্মানুসন্ধানের প্রসঙ্গ আনা হচ্ছে। ক্লাসিক কিতাব তৈরি হতে সময় লাগে, সভ্যতাগত স্থিতিশীলতা লাগে, যার অনেককিছুই এখন অপ্রতুল। তাই চৌদ্দশো বছরের বিকল্প হাতছাড়া কেন করবেন?
বলে রাখা ভালো, আমি ব্যক্তিগতভাবে মোটেই ইংরেজি বা পশ্চিমা শিক্ষার বিরুদ্ধে না। তবে ত্রিপল আইটির গবেষণা যেমন বলেছে, ইসলামি সভ্যতায় রাজনীতি বিষয়ক অমুদ্রিত প্রায় কয়েক শো গুরুত্বপূর্ণ বই আছে, মাকাসেদ বিষয়ক বই আছে কয়েক ডজন, নিজুত মানুষের হালাকাজাত অভিজ্ঞতার সঞ্চিত জ্ঞান অনেকটা গুপ্ত ধনের মতই , বরং তারচেয়েও বেশী পবিত্র, চিন্তার সাথে তো সম্পদের তুলনা হয় না। যদি মিসরের পিরামিডের রাজা-বাদশাদের মমি অত গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে আমাদের ক্লাসিক কিতাবগুলো কেন নয়?
ইফতেখার জামিল
No comments:
Post a Comment