Saturday, May 27, 2017

কায়রোর দিনলিপি (৪)

রমজানে তারাবীহ 


-"রামাদান কারীম"
-"রামাদান কারীম"
-না না, কেউ "রামাদান কারীম" বললে তার উত্তরে বলতে হয় "আল্লাহু আকরাম"। কি বলতে হয়?
-"আল্লাহু আকরাম"

আজকে কায়রোর প্রথম রোজা চলছে। প্রথমদিন মারকাযে গিয়ে পড়া শুনানো শুরু করলাম ক্বারী শায়খ ঈদ আযহারীর কাছে। উস্তাদজী প্রথম সাক্ষাতে কুশল বিনিময়ের এই ব্যাপারটা শিখিয়ে দিলেন। আর পড়া শোনার সময় তাজভীদে তো এমন এমন সূক্ষ্মতর কিছু বিষয় ধরলেন, মনে হল যে এখনো অনেক কিছুই শেখা বাকি।

ইফতারের সময় হয়ে এসেছে প্রায়। ইফতার করেই তারাবীহর জন্য বের হব। বড় কোন মসজিদে তারাবীহ পড়তে চাইলে ইফতারের পরপরই রওনা দিতে হয়। গতকাল আমরা প্রথম তারাবীহ পড়েছিলাম আব্বাসিয়ার মসজিদ, মসজিদে রহমানুর রহীমে। এটি কায়রোর একটু বেশী সুন্দর মসজিদগুলোর একটি। গুগলকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় "জুমার নামাজ আদায়ের জন্য কায়রোতে বেস্ট মসজিদ কোনটি?" আল্লামা গুগল এই মসজিদে রহমানুর রহিমের নাম বলে।
ছবি যেটা এখানে আপলোড দিলাম তা দেখে আমার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে যে সৌন্দর্যের দশভাগের একভাগও ফুটে ওঠেনি এতে। এরপরও সাধ্যমত দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস। এখানে শাফেয়ী মাযহাবের অনুসরণ করা হয়।

ইমাম সাহেব প্রতি দুই রাকাত পড়াতে সময় নিয়েছেন ২০ মিনিট করে। আর তিলাওয়াত তো, আল্লাহু আকবার, এতদিন তো তাদের তারাবীহর কথা লোকমুখে শুনে এসেছিলাম। আজকে নিজ থেকে স্বীকারোক্তি দিচ্ছি, সত্যিই, এই তিলাওয়াত শুনতে শুনতে যদি একটারাত মুগ্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যায়, জীবন স্বার্থক।

আজ দুপুরে রাস্তায় বের হয়ে চোখে পড়েছে হরেকরকম ইফতারের সমাহার। হোটেল মালিকরা বিভিন্ন আইটেম সাজিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় আছে। আর খাবারের গুণগত মানে এলাকায় যেসব হোটেলের নামযশ আছে, তাদের দোকানের সামনে ইতিমধ্যেই লম্বা লাইন পড়ে গেছে। মহিলা আর পুরুষরা দুই লাইনে দাঁড়িয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু খরিদ করছে।

রমজান নিয়ে এলাকাবাসীর প্রস্তুতিও ব্যাপক। শিশু কিশোর থেকে নিয়ে শুরু করে একেবারে বয়সের ভারে কুজো হয়ে পড়া বৃদ্ধা বুড়িমা, সকলেরই এই প্রস্তুতিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে। এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দশ টাকা করে চাদা তুলে রঙ বেরঙের কাগজ, বাতিসহ রাস্তা সাজানোর নানান সামগ্রী কিনে এনেছে। আমাদের ফ্ল্যাট থেকেও তিনটা পিচ্চি এসে চাদা নিয়ে গেছে।

রোজার শুরুর দিকে শহরের বেশিরভাগ কর্মস্থলের কর্মচারীরা, বিশেষ করে যারা গ্রাম থেকে এসেছে দোকানপাট বন্ধ করে গ্রামে চলে যায় পরিবারের সাথে কয়েকটি রোজা কাটানোর জন্য। এদিকে সুপারশপগুলোতে রাতভর ভীড় লেগে থাকে সেহরী ও ইফতারের কেনাবেচায়। চারিদিকে উৎসবের এই আমেজের মধ্যে মিশরী শিশুদের কন্ঠে মাঝে মাঝে কানে ভেসে আসে রমজান নিয়ে গাওয়া কোরাসের সুর। সে যেন এক ভিন্ন আবেশ তৈরী করে।



No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...