Monday, June 13, 2016

বেড়ালটা আমার ছিল

তারাবীহ শেষে রুমে ঢুকতে দেরী মাগার আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উনার দেরী হয়না। এরপর শুরু হয় নখগুলো হালকা বের করে আদুরে খামচি আর হাতে দাত বসিয়ে রাখা। আমার অপরাধ হল দীর্ঘ সময় উনার সাথে দেখা না করে থাকা। অবশ্য আমাকে দেখা মাত্রই উনি সর্বদা এই কাজই করে থাকেন। তাই গত একমাস ধরে মাদরাসায় একটা গুজব রটেছে। এই বিড়ালটা নাকি আমার। আমি অস্বীকার করিনি। কারণ বেশ ভাল একখানা নাম পেয়েছি উনার কল্যাণে। তবে এটা আমার মালিকানাধীন না হলেও পরিক্ষার সময় থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত উনার পেছনে খরচ কম হয়নি। প্রতিদিন হাফ কেজি দুধ। যদিও বেশিটুকু আমারই খেতে হয়েছে। তখন একটা উদ্দেশ্য অবশ্য ছিল। মোবাইলে এটার ছবি দেখে ছোট বোন বারবার করে বলছিলো এটাকে বাসায় নিয়ে যেতে। কিন্তু পারমিশন নিতে গেলে আম্মু পাঠায় আব্বুর কাছে, আর আব্বু পাঠায় আম্মুর কাছে। শেষমেশ বেচারী হাল ছেড়ে দিয়েছে।
গতকাল একজন এসে খুব ভয় দেখিয়ে বললো, বিড়ালের কামড় খাওয়ার পর ভেক্সিন না নিলে যেই রোগ হয় সেই রোগ আর সেরে ওঠার সম্ভাবনা নাই। তার মানে হচ্ছে আমি কিছুদিনের মধ্যে মারা গেলেও যেতে পারি। এটা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যথা নেই। মরলে মরলাম।
কিন্তু কিউট বিড়ালটার এই কুকীর্তির কথা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়াতেই যত সমস্যা বেধেছে। কত করে বলেছিলাম, "ব্যাটা যা করবি কর। কিন্তু প্রমাণ রাখিস না।" শুনলোই না আমার কথা। নানুবাসায় সেদিন দুই হাতে কামড় আর খামচির দাগ দেখে আম্মু নানীর কাছে বিচার দিলো। কেন আমি এখনো ডাক্তার দেখাচ্ছিনা।
নানী অভিযোগ শুনে যা বললেন,
"ছোট বেলায় শুনছিলাম, বিলাইয়ের কামড় খাইলে চকির নিচে পলায়া নুন খাইতে হয়। তাইলে ভাল হয়া যায়, কিন্তু তুই চকি পাবি কই? এখন তো সবখানেই বক্স খাট"। এ কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে আমার কেসটা হালকা করে দিয়েছিল।
ব্যাপার হলো, সে তো আমাকে আদর করেই কামড়ায়। যদিও মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত উত্তেজিত হওয়ার কারণে দাগ বসে যায়। সেটা তো একান্তই তার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। মানুষের মত নিষ্ঠুর প্রাণীর ভালবাসায় মরার নিয়ম থাকলে বিড়ালের মত কিউট প্রাণীর ভালবাসার মরার নিয়ম কেন থাকবেনা!

এই বিড়ালের সাথে বিচ্ছেদের ঘটনাটা খুব মজার ছিল। ঘটনা হচ্ছে, রাসেল সেদিন তারাবী পড়ে এসে বিছানায় বসে দেখে কে যেন খেজুর রেখে দিয়েছে। রমজান মাস খেজুর এদিক সেদিক থেকে আসতেই পারে। কিন্তু খেজুরটা হাতে নেয়া মাত্রই যে তাঁর সন্দেহ হয়েছিল সেই স্পন্দেহ দূর করতে কি সে অই খেজুরটা নাকের কাছে নিয়েছিল কিনা আমি জানি না। তবে সে মুখে দেয়ার আগেই নিশ্চিত হয়েছিল যে এটা সেই বেড়ালের পেট থেকে বের হওয়া মলমূত্র সেটা আমি জানি। এরপর দরজাটা আটকে পুরা রুমে বেশ ভালমত ধাওয়া দিল কতক্ষণ। শুনতে নির্মম শুনালেও রাসেলের অবস্থা ভেবে শুধু হাসিই আসছিল তখন। এরপর থেকে বেড়ালটা আর রুমে ঢুকতোনা। দরজার পাশে উকি দিলেই আমানুল্লাহ "রাসেল!" বলে চিৎকার দিত। সাথে সাথে আর তাকে কে পায়। কঠিন দৌড়।

মিসর আসার কিছুদিন আগে ঠিক এক বছর পর বেড়ালটার সাথে আবার দেখা হয়েছিল। রুমের সামনের টেবিলটার নিচে এসেছিল কোত্থেকে যেন। আমি আগের মত ডাকলাম। কিন্তু সে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। টেবিলের নিচ থেকে বের হতে দেখলাম না। নিচে তাকিয়েও দেখলাম। সেখানেও নেই। বেড়ালটা আমার ছিল আসলে, এখন আর নেই।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...