Wednesday, August 2, 2017

ইসলামের মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে সঠিকপন্থা অবলম্বনের উপায় (১)


  মতবিরোধমুক্ত সোনালী যুগ



বর্তমান যুগের ফিকহের আলোচনা যেভাবে সুবিন্যস্তভাবে আমাদের নিকট এসে পৌঁছেছে নবীর যুগে ফিকহী মাসায়েলের আলোচনা এভাবে করা হত না। সে সময়ে ফিকহ কিংবা উসুলে ফিকহ বলতে এরূপ সুবিন্যস্ত কোন বিষয়ের অস্তিত্ব ছিল না।

ইসলামের প্রথম যুগে হুজুর সা. এর থেকে সাহাবায়ে কেরামের মাসআলা মাসায়েলের শেখার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। যেমন, রাসুলুল্লাহ সা. যখন অযু করতেন সাহাবায়ে কেরাম তখন দেখে দেখেই শিখে নিতেন। পরবর্তীতে সেই তরিকায়ই তারা অযু করতেন। এমনিভাবে নামাজ, হজ সহ আরো বহু আমল তারা এভাবে শিখেছেন। কখনো আলাদাভাবে বলেননি যে অযুতে চার ফরজ। অপর দিকে সাহাবায়ে কেরামও এইসব বিষয় হুজুর সা. এর আমল থেকেই স্পষ্টভাবে বুঝে নিতেন। আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন হত না।
তখনকার সাহাবীদের ব্যাপারে হযরত আব্বাস রা. বলেন, সাহাবীরা শুধু সেসব প্রশ্নই জিজ্ঞেস করতেন যেগুলো তাদের প্রয়োজন ছিল। আমি রাসুলুল্লাহ সা. এর সাহাবাদের থেকে উত্তম কোন জামাত আর দেখিনি। পুরো জীবনে তারা রাসুলকে সবমিলিয়ে মোট তেরোটি প্রশ্ন করেছিলেন। এবং এর উত্তরও কুরআনে আল্লাহ তায়ালা দিয়ে দিয়েছেন।
যেমন ইয়াস আলুনাকা আনিস শাহরিল হারামি কিতালিন ফিহ... ইয়াস আলুনাকা আনিল মাহিদ...

মোটকথা হুজুর সা. এর যুগে বাস্তব সংগঠিত কোন কিছু জানার থাকলে সরাসরি হুজুরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করা হত হুজুর সা. এর বিধান বলে দিতেন।



মতপার্থক্যের ইতিহাসের সূচনা

সাহাবাদের যুগে মানুষ সাহাবায়ে কেরামকে মাসায়েল জিজ্ঞেস করতেন। যাকে জিজ্ঞেস করা হত তিনি না জেনে থাকলে অন্য সাহাবিদের থেকে জেনে বলে দিতেন। যেমন, হযরত আবু বকর রা. এর কাছে একবার একজন জানতে চাইলো, মৃতব্যক্তির উত্তরাধিকারের সম্পত্তির বন্টনের ক্ষেত্রে দাদির অংশ কতটুকু হবে? আবু বকর রা. নির্দ্বিধায় বললেন, আমি এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা. এর থেকে কিছু শুনিনি। এরপর হযরত আবু বকর রা. যোহরের নামাজের পর তিনি সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্য করে এই মাসয়ালাটি জিজ্ঞেস করলেন। তখন হযরত মুগিরা ইবনে শুবা রা. বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. থেকে শুনেছি, তিনি দাদীকে মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে এক-ষষ্ঠাংশ প্রদান করতে বলেছেন। আবু বকর রা. আবার জিজ্ঞেস করলেন, বিষয়টি আর কারো জানা আছে। তখন মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমা বললেন, মুগিরা সঠিক বলেছে।

আরেকটি উদাহরণ হল, হযরত উমর রা. এর কাছে গর্ভস্থ সন্তানের দিয়্যতের বিষয়ে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করতে আসলেন জনৈক ব্যক্তি। হযরত উমর রা. সেই মাসআলাটি সাহাবায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তখনও মুগিরা ইবনে শুবা বলেছিলেন রাসুলুল্লাহ এর রক্তমূল্য নির্ধারণ করেছেন "গুররাহ"। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন দাসী মুক্ত করা অথবা মৃতের ওলিকে পঞ্চাশ দীনার বা পাচশ দিরহাম প্রদান করা।

অতঃপর সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছ থেকে মাসায়েল এবং আমল শিখে পরবর্তীতে নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে ইসলাম প্রচার করা শুরু করেন। এবং তাদের সামনে নিত্য নতুন এমন অনেক বিষয় আসতে থাকে যেগুলোর সমাধান তারা সরাসরি কুরআন হাদিস থেকে করতেন। যদি কুরআন হাদিসে সরাসরি পাওয়া না যেত তাহলে কুরআন হাদিসের আলোকে কিয়াস এবং ইজতেহাদের মাধ্যমে তাঁর শরয়ী সমাধান দিতেন।



শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী রহ. এই মতপার্থক্যের সাতটি কারণ নির্ণয় করেছেন।


মতপার্থক্যের প্রথম কারণঃ

ইজতেহাদের ভিন্নতা। রাসুলুল্লাহ সা. এর সমস্ত হাদিসের ব্যাপারে সকল সাহাবায়ে কেরাম সমানভাবে অবগত ছিলেন না। যার ফলে একই মাসআলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে অনেক সাহাবী সরাসরি হাদিসের উপর আমল করেছেন আবার অনেকে হাদিসের ব্যাপারে অবগত না থাকার কারণে সেই জায়গায় ইজতেহাদ করেছেন।

এই ধরণের ইজতেহাদের সাধারণত চারটি অবস্থা হতঃ
১) কখনো ইজতেহাদের ফলাফল হুবহু হাদিসে বর্ণিত হুকুমের সাথে মিলে যেত।
এর উদাহরণ ইমাম নাসাঈর বর্ণিত এক হাদিস থেকে পাওয়া যায়। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর নিকট এক মহিলার মহরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল। সেই মহিলার স্বামী তাঁর মহরানা নির্ধারণ করেনি এবং মহিলার সান্নিধ্যে যাওয়ার আগেই স্বামী মৃত্যুবরণ করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা এই মহরানার হুকুম না জানার ফলে জবাব দিলেন, এই ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সা. এর ফয়সালা আমার জানা নেই। কিন্তু লোকেরা ইজতেহাদ করে  একটি ফয়সালা দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকে।
তখন তিনি ইজতেহাদ করে ফয়সালা দেন, এই মহিলাকে সেই পরিমাণ মহর দিতে হবে যেই পরিমাণ তাঁর সমমর্যাদার অন্যান্য মহিলা পেয়ে থাকে। এর থেকে কমও না বেশিও না। এবং এই মহিলার ইদ্দত পূরণ করতে হবে এবং স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে সে উত্তরাধিকার লাভ করবে।
এই ফায়সালা শুনার সাথে সাথে মাকাল ইবনে ইয়াসার দাঁড়িয়ে বললেন রাসুলুল্লাহ সা আমাদের কাবীলার এক মহিলার ব্যাপারে ঠিক এমন সিদ্ধান্তই দিয়েছিলেন।

২)  ইজতেহাদগুলো কখনো এমন হত, একটি মাসয়েলের ইজতেহাদ বিষয়ে দুইজন সাহাবীর মধ্যে আলোচনা হত। তখন আলোচনার মাধ্যমে কোন একটা হাদিস তাদের সামনে এসে যেত। এবং হাদিসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে  যখন তাদের প্রবল আস্থা ও বিশ্বাস জন্ম নিত তখন তাঁরা ইজতেহাদ ত্যাগ করে হাদিস গ্রহণ করতেন।
যেমন, আবু হুরাইরা রা এর ধারণা ছিল, যার উপর গোসল ফরজ হলো সে যদি সূর্যোদয়ের পূর্বে গোসল না করে তাবে তাঁর রোজা হবে না। কিন্তু যখন নবী করীম সা এর স্ত্রীগণের মধ্যে কয়েকজন রাসুলুল্লাহর আমল বর্ণনা করলেন তখন দেখা গেল রাসুলুল্লাহ সা. এর আমল আবু হুরাইরা রা এর ধারণার বিপরীত ছিল । তখন আবু হুরাইরা রা. তাঁর ধারণা থেকে প্রত্যাবর্তন করেন।

৩) কখনো এমন হত, ইজতেহাদকারী সাহাবীর নিকট সাহাবীর হাদিস এসেছে বটে তবে তা বিশ্বাসযোগ্য পন্থায় আসেনি। এমতবস্থায় মুজতাহিদ সাহাবী সেই অগ্রহণযোগ্য বর্ণনা পরিত্যাগ করে নিজেদের ইজতেহাদের উপর ভিত্তি করে রায় দিতেন। যেমন, ফাতিমা বিনতে কায়েস রা. হযরত উমর রা. এর সামনে বললেন, রাসুলুল্লাহ জীবত থাকতে আমাকে তিন তালাক দেয়া হয়েছিল। এবং রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে ইদ্দতকালীন খোরপোষ দেয়ার নির্দেশ দেননি এবং তালাক দেয়া স্বামীর বাড়িতেও থাকতে বলেননি।
হযরত উমর রা. ফাতিমা বিনতে কায়েসের এই বক্তব্যকে অস্বীকার করেন। এবং বলেন আমরা একজন নারীর কথায় আল্লাহর কথার বিপরীত করতে পারিনা। তাছাড়া ফাতিমার কথা শুনে হযরত আয়েশা রা. ও বলেছিলেন ফাতিমার কি হল! সে কি আল্লাহকে ভয় করেনা!

৪) কখনো এমন হত যে মুজতাহিদ সাহাবীর নিকট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন হাদিসই পৌঁছেনি। তিনি মাসয়ালার সিদ্ধান্ত ইজতেহাদের ভিত্তিতে দিতেন। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. মহিলাদেরকে গোসল করার সময় মাথার চুল খোলার হুকুম বর্ণনা করতেন।
 হযরত আয়েশা রা. ব্যাপারটি জানতে পেরে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইবনে উমরের কি হল! কেন তিনি মহিলাদের চুল খোলার নির্দেশ দিচ্ছেন! এমন হলে তো তাদের মাথার চুল কমিয়ে ফেলতে বললেই হয়। অথচ আমি এবং রাসুলুল্লাহ এক পাত্রে গোসল করতাম এবং আমি কখনো চুল খুলতাম না শুধু মাত্র মাথায় তিনবার পানি ঢেলে নিতাম।


মতপার্থক্যের দ্বিতীয় কারণঃ

অনেক সময় এমন হত, সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ সা. কে একটি কাজ করতে দেখেছেন। কিন্তু নিজস্ব চিন্তা ও গুরুত্বের তারতম্যের কারণে একেকজন আমলটিকে একেকভাবে নিতেন। ফলে দেখা যেত রাসুলুল্লাহ সা. এর একটি কাজ কোন সাহাবী আমল হিসেবে নিয়েছেন আর কোন সাহাবী মুবাহ হিসেবে নিয়েছেন। যেমন হজ্জের সময় রমল করার বিষয়টি। অনেক সাহাবী এটাকে সুন্নত বলেছেন যে হিসেবে আমরা এখন আমল করে থাকি। অন্যদিকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের নিকট এই রমল ছিল একটি আকস্মিক ঘটনা। তাঁর মতে মক্কার মুশরিকদের তিরস্কারের জবাবেই রাসুলুল্লাহ এই কাজটি করেছিলেন।

এছাড়া  হজ্জের সফরে রাসুলুল্লাহ সা এর আবওয়া উপত্যকায় অবতরণের ঘটনাও অনুরূপ। আবু হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. এর মতে এটি ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই তারা এটাকে হজ্জের সুন্নত বলে গণ্য করেছেন। কিন্তু হযরত আয়েশা রা ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা এর মতে রাসুলুল্লাহ সা. এর এই উপত্যকায় অবতরণ একটি সাধারণ ঘটনা ছিল। কোন আমলের উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে অবতরণ করেননি।


মতপার্থক্যের তৃতীয় কারণঃ

রাসুলুল্লাহ সা. এর আমল পর্যবেক্ষণ তো সকলেই করতো এবং শিখতো। কিন্তু সব আমল সবার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে হত না। এবং সবার পর্যবেক্ষণও সমান থাকতো না। একই আমল কেউ ইল্লতের কারণে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মনে করেতেন কেউ আবার মুবাহ হিসেবে ধরতেন। তাই পরবর্তীতে বিশ্লেষণের সময় বা অন্যত্র বর্ণনার সময় ভিন্নতা দেখা দিত। যেমন, রাসুলুল্লাহ সা. জীবনে একবারই হজ্জ করেছেন। পরবর্তীতে সেই হজ্জের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেউ বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সা. হজ্জে তামাত্তু করেছিলেন, কেউ বলেছেন হজ্জে ইফরাদ করেছিলেন, কেউ বলেছেন হজ্জে কেরান করেছিলেন।
এক্ষেত্রে দ্বিতীয় আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সা. হজ্জের তালবিয়া কখন পাঠ করেছিলেন এ নিয়ে মতপার্থক্য। এ ব্যাপারে ইবনে জুবায়ের রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করলেন,হজ্জের ইহরাম বাধার পর যে রাসুলুল্লাহ সা. তালবিয়া পাঠ করেছিলেন এ নিয়ে সাহাবায় কেরামের মতপার্থক্য দেখে আমার অবাক লাগছে। ইবনে আব্বাস এই কথা শুনে বললেন, এই বিষয়ে আমি বেশ ভাল জানি কি ঘটেছিল। আসলে রাসুলুল্লাহ একটি মাত্র হজ্জ করেছিলেন। ঘটনা হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ হজ্জের উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন। এরপর তিনি মসজিদে যুল হুলাইফাতে দু রাকাত নামাজ পড়েন এবং সেখানেই হজ্জের ইহরাম বাধেন অতঃপর তালবিয়া পড়েন। এখন সেই সময় আশে পাশে যারা ছিল তারা তালবিয়া পাঠ শুনেন ও মনে রাখেন। এরপর যখন তিনি উটের পিঠে উঠেন তখন উট যাত্রা করার সময়ও তালবিয়া পড়েন, তখন সাথে যেই সাহাবীরা ছিল তারা সেসময়েরটা মনে রাখেন।  এরপর রাসুলুল্লাহ বাইদা উপত্যকা অতিক্রম করার সময়ও তালবিয়া পড়েছেন। এ সময় আরেকদল সাহাবী শুনতে পান। এভাবে পুরো সফরে খেদমতে একেক সময় সাহাবাদের একেক গ্রুপ থাকতো। তারা যে যেভাবে শুনেছেন তাই বর্ণনা করেছে। কারো বর্ণনাই ভুল নয়। তারা যে যেভাবে শুনেছেন সেভাবেই বলেছেন।



মতপার্থক্যের চতুর্থ কারণঃ

অনেক সময় ভুলে যাওয়ার কারণে মতপার্থক্য হত। মানুষ হিসেবে ভুলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। যেমন, ইবনে উমর রা. বলেছিলেন রাসুলুল্লাহ সা. ওমরা করেছেন রজব মাসে। শুনে হযরত আয়েশা রা. বলেছিলেন, ইবনে উমর ব্যাপারটি ভুলে গেছেন।



মতপার্থক্যের পঞ্চম কারণঃ 

রাসুলুল্লাহ সা. এর বক্তব্যের সঠিক উদ্দেশ্য আয়ত্ত করতে বা ধরতে পারা না পারার পার্থক্য। যেমন ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন মৃত ব্যক্তির পরিবার পরিজন কান্না কাটি করলে মৃত ব্যক্তিকে আজাব দেওয়া হয়। এই বর্ণনা শুনে হযরত আয়েশা রা. বলেছিলেন এটা ইবনে উমরের ধারণা প্রসূত কথা। রাসুলের এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য এবং পরিস্থিতি তিনি আয়ত্ত করতে বা ধরতে পারেন নি। আসল ঘটনা হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সা. এক ইহুদী মহিলার কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখলেন তাঁর আপন জনেরা তাকে নিয়ে মাতম করছে। তিনি তখন বলেছিলেন, এরা এখানে তাঁর জন্যে কান্নাকাটি করছে অথচ তাঁর কবরে তো আযাব হচ্ছে। রাসুলের এই বক্তব্য ছিল সেই পরিস্থিতির জন্য। অতএব পরিস্থিতি জানলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে যে এখানে রাসুলুল্লাহ সা. কান্নাকাটিকে আযাবের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন নি।



মতপার্থক্যের ষষ্ঠ কারণঃ

কোন হুকুম বা বিধান দেয়ার পিছনে কি ইল্লত বা কারণ ছিল সেই ইল্লত বা কারণ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে মতভিন্নতা। যেমন পাশ দিয়ে লাশ অতিক্রম করার সময় দাড়ানোর হুকুম। এই হুকুমের কারণ হিসেবে কোন সাহাবী বলেছেন, এই দাড়ানোর হুকুম করার কারণ হচ্ছে ফেরেশতাদের সম্মান করা। কেননা প্রত্যেক লাশের সাথেই ফেরেশতা থাকে। আর কোন কোন সাহাবী এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, লাশ দেখে মৃত্যুর কথা স্মরণ করে মৃত্যুর ভয়ের কারণে দাঁড়ানো। কারণ এই দুইটার যেটাই হোক, একই হুকুম। অর্থাৎ মুমিন হোক আর কাফের সব অবস্থাতেই দাড়ানোর হুকুম।
অন্যদিকে কোন কোন সাহাবী বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর সামনে দিয়ে লাশ অতিক্রম করার সময় দাড়িয়েছিলেন কারণ তিনি ইহুদীদের লাশ তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাওয়াকে পছন্দ করেননি।
এটা যদি কারণ হিসেবে ধরা হয় তাহলে দাঁড়ানোর হুকুম শুধু কাফেরের লাশ অতিক্রম করার সময়ের সাথে নির্দিষ্ট।



মতপার্থক্যের সপ্তম কারণঃ 

কখনো সামঞ্জস্যবিধান করতে গিয়ে মতপার্থক্য হত। যেমন, রাসুলুল্লাহ সা. খাইবার যুদ্ধের মধ্যে মুতয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এরপর তা আবার নিষেধ করে দেন। এরপর আওতাস যুদ্ধের মধ্যে পুনরায় আবার অনুমতি দেন এবং এবং যুদ্ধের পর অনুমতি প্রত্যাহার করে নেন।

এখন এই বর্ণনার প্রেক্ষিতে মুতয়া বিবাহের ব্যাপারে হযরত আব্বাস রা. এর মত হল, প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মুতয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজন শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সুতরাং এ অনুমতি প্রয়োজনের সাথে সম্পর্কিত। প্রয়োজন দেখা দিলে করা যাবে প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে তা নিষিদ্ধ। আর যেহেতু এখন আর সে প্রয়োজন নেই অতএব এখন নিষিদ্ধ।



কিন্তু জমহুর সাহাবীগণের মত এর বিপরীত। তাদের মতে অনুমতি ছিল মুবাহের পর্যায়ে। রাসুলুল্লাহ সা এর স্পষ্ট হাদিসের নিষেধাজ্ঞা এ অনুমতিকে স্থায়ীভাবে মানসুখ অর্থাৎ রহিত করে দিয়েছে। অতএব কোনভাবেই এখন আর এর অনুমতি নেই।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...