Tuesday, October 31, 2017

কায়রোর দিনলিপি ১২


মন ভাল না থাকায় ইদানীং কিছু মধুর স্মৃতি রোমন্থন করে সান্ত্বনা নেয়ার প্রচেষ্টায় আছি। নিকট অতীতে দেশীয় মিষ্টান্ন প্রস্তুতকালে কিছু ভিডিও ক্লিপ ধারণ করে রেখেছিলাম।

আগেই বলে রাখি, আমি কিন্তু কখনোই সেই পর্যায়ের মিষ্টিখোর ছিলাম না। তবে সবধরনের প্রতিবন্ধকতাই যে একটা নেশাতুর আসক্তি সৃষ্টি করে সেটা ডায়বেটিসের রোগীদের দেখলে ভাল বুঝা যায়। তারা কেন এত মিষ্টির পাগল হয় বিলেতে না আসলে বিষয়টা আমার উপলব্ধিতে আসার সম্ভাবনা খুবই কম ছিল। এখন তো অবাক হই! কি করে সম্ভব, পাঁচ পাঁচটি মাস মিষ্টি না খেয়ে কাটিয়ে দেয়া!

কালোজাম বরাবরই আমার পছন্দের তালিকায়। বিদেশে বসে বসে সেই তালিকার কথা স্মরণে এনে বিশেষ ফায়দা নেই। কিন্তু "স্মরণবাবু" আসার সময় কি আর সেইসব লাভ লোকসানের হিসেব কষে আসে! সে তো তার খুশি মত আসবে এবং আমার ভেতরে মিষ্টির যে লোভাতুর অংশটা আছে সেটাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে ঢাকার অভিজাত কোন এক মিষ্টির দোকানে। এমন অসহায় পরিস্থিতিতে আপাতত কালোজাম প্রস্তুতপ্রণালীর সেই ক্লিপগুলোর মধ্যে সান্ত্বনা খোজার চেষ্টা করছি। দেখছিলাম আরকি, এগুলোও কি এডিট করা যায়!

কাহিনী হল, সেদিন যখন মিষ্টি খেতে খুব মন চাইছিল তখন আমাদের বড় ভাইয়ের নেতৃত্বে বাসার সকল সদস্য মিলে কোমর বেধে কালোজাম "নির্মাণে" নেমে পড়লাম। যা হবার তাই হল না অবশ্য। তার চেয়ে একটু ভালই হল। সব মিলিয়ে মিষ্টির নির্মাণশৈলী যে অতটাও খারাপ হয়নি তার প্রমাণ চাইলে কষ্ট করে তিন মিনিটের এই সংক্ষিপ্ত ভিডিওটি দেখতে হবে।


বিঃদ্রঃ যারা খুব সহজেই এমন সুস্বাদু ও "আবেদনময়ী" কালোজাম বানানো শিখতে চান তাদের জন্য রিকমান্ডেশন হল, আমার তৈরী করা ক্রিয়েটিভ এই ভিডিওটি আপনারা সকাল বিকাল রুটিন করে ততদিন পর্যন্ত দেখতে থাকুন, যতদিন পর্যন্ত আমার মত মিষ্টি "নির্মাণ" করার দক্ষতা অর্জন না হবে।

Saturday, October 21, 2017

বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কি আদৌ কোন সংঘাত আছে?

প্রথম কথা হচ্ছে, বিজ্ঞানের কাজ বস্তু বা পদার্থ নিয়ে। স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ বা নাকচ করা বিজ্ঞানের কাজ নয়। এবং একইসাথে বিজ্ঞান মানুষের বিশ্বাস বা অনুভুতিকে ব্যাখ্যা করতে অক্ষম।

বিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকার ফলে যারা জগতের সমস্ত কিছুই বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডে মেপে উত্তীর্ণ করতে চান তারা একটা সহজ বাস্তবতা ভুলে যান। সেটা হচ্ছে বিজ্ঞান নিছকই জ্ঞানের একটা অংশ মাত্র। এতে বিশ্বাসের কোন শর্ত বা উপাদান নেই। এবং বিজ্ঞান ছাড়াও পৃথিবীর বুকে আরো বহু জ্ঞান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। 

বিজ্ঞানের গবেষণা চলমান। এটা প্রমাণিত সত্য যে বৈজ্ঞানিক যেসব থিউরি ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক আকারে হাজির হয়েছিল পরবর্তী গবেষণায় তার অনেকগুলোই ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং ধর্ম তার অবস্থানে বহাল তবিয়তে আছে। এক্ষেত্রে বড় বড় বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফলও ভুল প্রমাণিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আইনস্টাইনের কথা। সে তার আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে দাবী করেছিল আলোর চাইতে বেশী জোরে কিছু ছুটতে পারেনা। কারণ আইনস্টাইন বিশ্বাস করত যে কোয়ান্টম মেকানিকস বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করা যায় না। আইনস্টাইনের ভুলটা সেখানেই ছিল। ১৯৯৭ সালে সুইজারল্যান্ড জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. নিকোলাস গিসিন এ কথা প্রমাণ করে দেয় যে কোয়ান্টাম মেকানিকসের বাস্তবতা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আলোর থেকেও কমপক্ষে দশহাজার গুণ বেশী গতিতে এই মেকানিকস চলে। সাত মাইল দূরে রাখা দুই ফোটন কণার মধ্যে সংকেত পরিবহণের খবর জানা যায়। এ নিয়ে একটি গবেষণা পত্র বের করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসে তা ছাপা হয়েছে।

(কোয়ান্টম মেকানিক বুঝার আগে একটা বিষয় বুঝে নেওয়া দরকার। আলো ফোটন একবিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে একটানা না গিয়ে ছোট ছোট কোয়ান্টা বা অংশে ভাগ হয়ে যায়। কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী অণু পরমাণুর অতি ক্ষুদ্র রাজ্যে কোনও বস্তু যুগপৎ তরঙ্গ ও কণার অস্তিত্ব নিয়ে থাকে।)

মজার ব্যাপার হল এই আইনস্টাইনও আস্তিক ছিল। কারণ সে মানতো যে নিয়মনীতি স্রষ্টাই প্রদান করে। এবং এটা মানার কারণেই ইহুদিরা তাকে ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রস্তাব করতে পেরেছিল। যদি সে নাস্তিক হত তাহলে ইহুদীরা কখনোই তাকে এই পদের জন্য প্রস্তাব করতে পারতোনা। তবে একই সাথে এটাও সত্য যে বিশ্বাসের শাখা প্রশাখায় আইনস্টাইনের কিছু সমস্যা ছিল। এটা অনেক আস্তিকদেরই থাকে। এছাড়াও আরো অনেক বড় বড় বিজ্ঞানিরা আস্তিক ছিলেন। পিউ রিসার্চ সেন্টার ফর দা পিপল এন্ড দা প্রেস নামক এক সংস্থার গবেষণার উঠে এসেছে বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৫১% এমন আস্তিক ছিল যারা বিশ্বাস করত যে মহাবিশ্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একজন অবশ্যই আছেন। এবং ৩৩% বিজ্ঞানী তো সরাসরি স্রষ্টা আছেন বলে বিশ্বাস করত। সেই সুপ্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীদের মধ্যে ফ্রান্সিস কলিন্স, চার্লস ডারউইন, রেনে ডেসকারটেস, জোহানেস কেপলার, ফ্রান্সিস ব্যাকন, ইসাক নিউটন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

এসব দিক বিবেচনায় রাখলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে বিজ্ঞানকে আস্তিকতা বিরোধী বলা বা প্রমাণ করতে চাওয়াটা শুধু অযৌক্তিকই নয় একইসাথে বাস্তবতা বিবর্জিতও বটে।

নাস্তিকতার প্রকারভেদ

নাস্তিক কারা আর আস্তিকই বা কারা?
সহজভাবে বললে, যারা বলে পৃথিবীর কোন স্রষ্টা নেই এবং মহাবিশ্বের সবটাই পদার্থ দ্বারা গঠিত তারাই নাস্তিক। এবং এর বিপরীতে যারা বিশ্বাস করে জগতের সকল সৃষ্টির পেছনে একজন স্রষ্টা আছে তারাই আস্তিক।

চিন্তাগত দিক থেকে নাস্তিকরা সাধারণত চার ধরণের হয়ে থাকেঃ

১ ডগম্যাটিকঃ যারা একেবারে খোদার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।

২ স্কেপটিকালঃ যারা খোদার অস্তিত্বকে সরাসরি অস্বীকার না করে কৌশলে নাস্তিকতার চর্চা করে। তাদের যুক্তি হল, যেহেতু মানুষ খোদার অস্তিত্ব জানতে অক্ষম তাই স্রষ্টা সংক্রান্ত সবকিছুকেই এড়িয়ে যেতে হবে।

৩ ক্রিটিকালঃ যারা বলে খোদা আছে কিন্তু এর অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নেই। এদের মনোভাব স্কেপটিকালের কাছাকাছি।
 
৪ প্র‍্যাকটিকালঃ তাদের মতে মানুষ যেহেতু খোদা ছাড়াও চলতে সক্ষম তাই স্রষ্টার থাকা বা না থাকার বিষয়টি মানুষের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিৎ না।

মজার ব্যাপার হল এই চার প্রকারের নাস্তিকেরা কখনোই আস্তিকদের সহজ একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সঠিক যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনা। আর সেই প্রশ্নটি হচ্ছে আল্লাহ যে নেই এটা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেখানো যায়?
আস্তিক নাস্তিক তর্কে নাস্তিকদের বড় আরেকটি পরাজয় হচ্ছে যুক্তি দিয়ে মানব মন ও নৈতিকতার ব্যাখ্যা দেওয়া। নাস্তিকরা এর পক্ষে নিজেদের মত অনুযায়ী থিউরী দাড় করাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

ধর্মকে থেকে মুক্ত থাকতে চাওয়া আরেকটি মতবাদের নাম হচ্ছে এগনস্টিসিজম বা অজ্ঞেয়বাদ। এগনস্টিসিজম শব্দটির ব্যবহার ১৮৬৯ সালে দার্শনিক হাক্সলি সর্বপ্রথম করেছিল। অজ্ঞেয়বাদীদের মতে যে খোদা ও এর বাইরের জগত সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানেনা। এবং মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থাও যেহেতু জানা যায়না তাই এই ধরণের সব বিশ্বাসকে অজানার গণ্ডিতে ফেলে দায়মুক্ত থাকতে হবে। 


অজ্ঞেয়বাদী এবং নাস্তিকেরা পৃথিবীর প্রকৃতিগত এই নিয়মটি ভুলে যায় যে স্রষ্টার সামগ্রিক জ্ঞান স্রষ্টাই সৃষ্টিকে দেননি। কারণ তারা সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্কটা বুঝে না।যদি বুঝতো তাহলে এটাও জানতো যে প্রভু এবং দাসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যতটুকু জ্ঞানের প্রয়োজন ততটুকুই তিনি তার বান্দাকে দিয়েছেন। আস্তিকদের প্রথম পরিচয়ই হচ্ছে তারা প্রভূর গোলাম। সব নবীকে পাঠিয়ে প্রভূ আস্তিকদের আবদ বা বান্দা হওয়ার ধারণাটিই মৌলিকভাবে বুঝিয়েছেন। 

এই সম্পর্ককে মেনে নিলে খুব সহজেই বুঝা যাবে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সাথে কেন স্রষ্টার অস্তিত্বকে তুলনা করা যাবেনা। পৃথিবীতে পাঠানো গোলামগুলোর বিচারই তো মহাবিশ্ব ধ্বংস করার পর স্রষ্টা করবেন। এটাই তার নীতি।

আর যতটুকু যেভাবে জানা দরকার ততটুকু সেভাবে আল্লাহ তার বান্দাকে জানিয়েছেন। অবান্তর কত প্রশ্ন তো সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে কত মূর্খরাই করেছিল। কিন্তু আল্লাহ যেগুলোর উত্তর যেভাবে দেয়ার প্রয়োজন মনে করেছেন সেগুলোর উত্তর সেভাবেই দিয়েছেন। যেমন পৌত্তলিকদের প্রশ্ন ছিল আল্লাহ কিসের তৈরী সোনার না রূপার। কিন্তু আল্লাহ তার উত্তরে বলেননি যে তিনি সোনার তৈরী নাকি রূপার তৈরী।
পবিত্র কুরআনে সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসীসহ বিভিন্ন জায়গায় নিজ পরিচয় সেভাবেই তুলে ধরেছেন যেভাবে বান্দার জানার প্রয়োজন ছিল। 

Monday, October 16, 2017

কায়রোর দিনলিপি ১১


মিসরে কিউট বিড়ালের সংখ্যা অত্যাধিক হারে বেশী। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও টেবিলের নিচে এসে ভদ্রভাবে বসে থাকা বিড়ালগুলোকে মিসরীরা বিশেষ সমাদর করে থাকে।
সেদিন পিৎজা খেতে গিয়ে দেখি সেখানেও উনাদের অবাধ বিচরণ। এত বড় রেষ্টুরেন্টেও বিড়াল মশাই দিব্যি হাটাচলা করে পিৎজা খাচ্ছেন। এই পিৎজা লাভার বিড়ালদের ভাবসাবই আলাদা। এরা রুটি খায়না। শুধু গোশত খায়। মিসরীরাও তাই খাওয়ায়।
আরেকদিন শর্মা খেতে বসে প্রায় অর্ধেকটা মাংস বিড়ালকে খাওয়ানোর পর আমি তো দুশ্চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। হায় খোদা! মিসরী হয়ে যাচ্ছিনা তো আবার! মিসরী হয়ে যাওয়াটা কেন দুশ্চিন্তার সেটা অন্যসময় বলতে হবে। কারণ সেই গল্পটা পারসোনাল। তবে সেদিনকার বিড়ালটা একটু বেশীই কিউট ছিল। মুশ মাসরীরাও অর্থাৎ যারা মিসরী না তারা দেখলেও খাওয়াতো।

রাস্তায় একদিন দেখলাম একটা অতিরিক্ত কিউট বিড়াল একা একা বসে আছে। ভিআইপি এরিয়া ছিল। ওসব এরিয়ার এলিটক্লাস নাগরিকরা অন্ধের মত ওয়েস্টার্ন কালচার ফলো করায় তাদের কাছে বিড়ালের চেয়ে কুকুরের সমাদর বেশী। বিড়ালটা হাতে নিয়ে অবাক হলাম। এতো পার্সিয়ান! ঢাকার কাটাবন থেকে কিনতে গেলে নির্ঘাত ২০ হাজারের উপরে পড়বে। সেদিন এই বিড়ালের মায়া ছাড়তে যে কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা মনে পড়লে আজও আমি কয়েক মিনিটের জন্য নিরব হয়ে যাই।

তো আজকে আমাদের কামরুল ভাই বিড়ালের ডিম নিয়ে একটি বিনোদনমূলক পোষ্ট লিখছিলেন। আমার বিড়াল প্রীতির ব্যাপারটি দেখেই হয়তো বিষয়টি আমাকে জানিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু এইভাবে বিড়াল নিয়ে হাসিতামাশা করার অধিকার কি আমি কামরুল ভাইকে দিতে পারি? আমি গভীর চক্রান্ত করলাম। এবং কামরুল ভাই সেই ফাঁদে পা দিলেন।

ঘোড়ার ডিম আর বিড়ালের ডিম কি অভিন্ন বস্তু, নাকি বিড়ালের ডিম অস্তিত্বশীল, তর্কটা এভাবে শুরু না হলেও কামরুল ভাইয়ের সংশয়মাখা প্রশ্নে আমি সেই তর্ক উস্কে দেয়ার সুযোগ লুফে নিলাম।
প্রথমে অবশ্য মজা করেই কামরুল ভাই জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ
- মাহদি ভাই, বিড়ালের ডিম সম্পর্কে আপনার জানাশোনা কেমন?
-ভাল জানাশোনা। কেন? আপনি দেখেননাই কখনো!
-মজা নিতেছেন?

কামরুল ভাইয়ের এই ধরণের প্রশ্নে আমি মজা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে নিয়ে ফেললাম।
খুব সুন্দর করে বানিয়ে এক প্রজাতির বিড়াল যে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটায় সেটা নিখুঁতভাবে প্রমাণ করেই আমি গোসলে ঢুকলাম।
বের হয়ে দেখি কামরুল ভাই এই বিড়ালের ডিমের ইস্যু নিয়ে এতটাই সিরিয়াস হয়ে গেছেন যে তাহকীক করতে করতে গুগলের প্রায় সব আর্টিকেল পড়ে শেষ করে ফেলেছেন। উনি আবার পড়তে জানেন খুব। পরিক্ষায় পুরা বাংলাদেশে এক নাম্বার তো আর এমনি এমনি হননাই। (যেহেতু তিনিও পোষ্টটা পড়বেন, তাই এইটুকু প্রশংসা না করলে খারাপ দেখা যায় :p )

তো গুগলেও পাওয়া গেল না। তাহলে কি বিড়ালের ডিমের এই ইস্যুটা কামরুল ভাইয়ের কাছে রহস্যই থেকে যাবে! সেই বিনোদনমূলক পোষ্ট কি মাঠে মারা যাবে!

ভাবলাম এই রহস্যে আরেকটু মসলা মাখানো যাক। আফফান ভাইকে সাথে নিলাম।
"ভাই, কাহিনী শুনছেন! কামরুল ভাই জানেই না যে এক প্রজাতির বিড়াল ডিম দেয়।"

আফফান ভাইও বেশ অবাক হয়ে আমার সাথে শরিক হলেন। বিড়ালের ডিম নিয়ে কামরুল ভাইয়ের সংশয়ের তখন তুঙ্গে থাকলেও বিষয়টা তিনি চেপে গিয়ে মুরগির ডিম আর আলুর তরকারী দিয়ে মজা করে ভাত খাচ্ছেন। আর প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমার রান্নার খুবই প্রশংসা করছেন। রান্না নাকি আজকে খুবই মজা হয়েছে। রান্না আসলেও আজকে মজা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এইভাবে মুরগির ডিম দিয়ে বেড়ালের ডিমের রহস্যকে চাপা দেওয়া হবে!

Friday, October 6, 2017

আপনি কি র‍্যাডিকাল মুসলিম নাকি মডারেট মুসলিম

কিছুদিন আগে উপস্থাপিকা সামিয়া রহমান যখন মিশেল ফুকোর লেখা চুরি করে নিজের গবেষণাপত্র বলে চালিয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়লো তখনই প্রথম জানতে পেরেছিলাম সে গবেষণা পত্রও লিখতে জানে। লেখার চুরির অভিযোগ এড়াতে গিয়ে সে আবার বলেছিলও যে সে নাকি তখন বিদেশে অবস্থান করছিল। এ ব্যাপারে তার বিশেষ কিছু জানা নেই। শুধু টকশোতে বসে একনাগাড়ে অযৌক্তিক ও একরোখা প্রশ্ন করে যাওয়া একটা মহিলা এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়ার পরও যে ঢাকা ভার্সিটির মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকতে পারে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিলনা। এমনকি শুধু ভার্সিটিই নয়, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার জায়গা এখন ঢাবির ভিসির চেয়ারের হাতল পর্যন্ত পৌছে গেছে। এহেন পদোন্নতি তো বড়ই বিস্ময়কর!

তার লেখাচুরি প্রসঙ্গ নিয়ে পোষ্ট দেয়া এক জ্ঞানীজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম ২০১৩ সালে সামিয়া রহমানের লেখা আরেকটি গবেষণাপত্র মুক্তি পেয়েছিল। সেখানে তিনি বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে হেফাজতে ইসলামের মত একটি র‍্যাডিকাল গ্রুপের উত্থানে আসলে বাংলাদেশের কতটা শংকিত হওয়া উচিত। জানিয়েছেন, সেই আন্দোলনকে 'দাড় করিয়ে' কত বড় 'অপরাধ' করেছিল আমার দেশ ও দিগন্তের মত মিডিয়া এবং জামাত ও বিএনপির মত রাজনৈতিক দল।

আইরনি হল, আট পৃষ্ঠার সেই জার্নালে ইংরেজী ব্যাকরণের কাচা ভুল দেখে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে এটা সত্যিই আমাদের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের জার্নালিজম বিভাগ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র।

পয়েন্ট হচ্ছে, এই মহিলার মত একজন অর্ধ শিক্ষিত সাংবাদিক এইসব খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে ভুলভাল ইংরেজিতে একটা জার্নাল লিখে হেফাজতে ইসলামের মত একটি অরাজনৈতিক সংগঠনকে র‍্যাডিকাল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলেও শাহবাগীরা কিন্তু তাদের সেই সামগ্রিক অপচেষ্টায় অনেকটাই সফল। ২০১৩ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হেফাজতের সাথে র‍্যাডিকাল শব্দটি ইসটাবলিশড করতে শাহবাগকেন্দ্রীক সম্প্রদায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল চোখে পড়ার মত। এবং মাসখানেক আগে যখন বাল্যবিবাহ নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে আলজাযিরা পর্যন্ত হেফাজতকে র‍্যাডিকাল গ্রুপ বলে বসলো তখন মেনে নিতেই হল যে তাদের এই মেহনত মাকবুল হয়েছে।

যাইহোক, যেহেতু এরসাথে ইসলাম প্রশ্ন জড়িত তাই বাস্তবিক অর্থেই কি হেফাজতকে র‍্যাডিকাল বলা যাবে কিনা অন্তত বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে এই বিষয়টা পরিষ্কার থাকা দরকার।

যেহেতু র‍্যাডিকাল মুসলিম আর মডারেট মুসলিমের ভাগটা আমাদের সমাজে সেই অর্থে চর্চা হয় না তাই এর ছোট একটি ভূমিকা দিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় পর্বে প্রামাণ্য কিছু দলিলপত্র নিয়ে আসবো।
ওয়ামা তাউফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

আপনি একজন মুসলিম। তবে সেটা র‍্যাডিকাল না মডারেট?
শুধু আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে যদি বলা হয় তাহলে র‍্যাডিকাল মানে আপনি ধর্মের ব্যাপারে অতিউগ্রপন্থী। আর যদি মডারেট হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ধর্মের ক্ষেত্রে অতিউদারপন্থী।

এখন এই দুইটা পন্থাই কিভাবে একজন মুসলমানকে ধীরে ধীরে ইসলামের বিপদজনক সীমানায় নিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর উদাহরণটা এমন হতে পারেঃ অতি উদার হতে হতে একটা সময় মানুষ শাহবাগী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নাস্তিকতা এবং ধর্ম বিদ্বেষের চর্চাকে কোন সমস্যা মনে করবেনা, এটাকে সে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত বলতে রাজি হবেনা। এবং পারলে এই ঘৃণ্য কাজের বৈধতা দিবে। 
আর অন্যদিকে অতি উগ্র হতে হতে একটা পর্যায়ে মানুষ খারেজী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এই সময় সে কোন মুসলমানকেই আর মুসলমান মনে করেনা। এটা অনেক সময় হতাশা থেকে হয়, অনেক সময় হয় কট্টর দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা থেকে। এই ধরণের মানুষেরা একটা পর্যায়ে গিয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মাঝেও বৈধতা খুজে বের করার চেষ্টা করে। এবং যেইসব আলেমগণ কুরআন হাদিস আলোকে উগ্রপন্থাকে ইসলাম বিরোধী বলে প্রমাণ করে তাদেরকে পর্যন্ত ভ্রান্ত বলতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। খেয়াল করুন, দুইটা প্রবণতাই মানুষকে একটা পর্যায়ে ইসলাম থেকে বের করে দিচ্ছে।

এখন আপনি হয়তো বলবেন যে আমি র‍্যাডিকাল বা মডারেট কোনটাই না, আমি মধ্যপন্থী। ইসলামও তো মধ্যপন্থার কথাই বলে। হ্যা, আপনার চিন্তা তাহলে ঠিক আছে।

বিপদ হল, ব্যক্তি হিসাবে আপনি নিজের ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়ে দিলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে হিসাবটা এত সহজে শেষ হবার নয়। বাস্তবতা একটু কঠিন। দেশীয় এবং সামাজিকভাবে দেখতে গেলে আপনি দেশ ও সমাজের একটি অংশ। যেহেতু সমাজে শাহবাগী অথবা সংখ্যায় নগণ্য হলেও খারেজী বসবাস করে তাই তারা নিজ দায়িত্বে আপনার উপর বিপরীত গ্রুপের তকমা লাগিয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি একজন
মধ্যপন্থী মুসলমান হন তখন শাহবাগীরা আপনাকে র‍্যাডিকাল তকমা দিবে। কারণ আপনি ধর্মটাকে একান্তই ব্যক্তিগত ভাবতে পারছেননা। আপনার ধর্ম আপনাকে সেই অনুমতি দেয়নি। তারা হেফাজতকে র‍্যাডিকাল বলে চালিয়ে দেয়ার এটাও একটা কারণ যে হেফাজত ইসলামীক পার্সপেক্টিভে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলে দেখে।
আবার অন্যদিকে খারেজীরা আপনাকে মোডারেট বলে। কারণ আপনি তাগুতকে প্রভূ মানছেন। যেটা হেফাজতকেও খারেজীরা বলে। কারণ খারেজীদের মতে হেফাজত গণতন্ত্র নামক কুফুরীব্যবস্থায় ডুবে আছে। আর রাষ্ট্রের এত "সমস্যা" থাকার পরও এখনো কেন হেফাজত হুকুমতের বিরুদ্ধে জীহাদ ঘোষণা করছেনা? কেন তাগুতের সঙ্গে আপোষ করেই যাচ্ছে? এই হল হেফাজতের প্রতি খারেজীদের প্রশ্ন।

এটা শুধু সামাজিক প্রেক্ষাপট বললাম। আন্তর্জাতিক না।
আন্তর্জাতিকভাবে বুঝতে হলে ইসলাম নিয়ে পশ্চিমাদের খেলাটা বুঝতে হবে। যার উপর ভিত্তি করে তারা র‍্যাডিকাল আর মডারেটের ভাগটা করেছে। বিস্তারিত পরের পর্বে, সংক্ষেপে শুধু এতটুকু বলি
পশ্চিমের মানদন্ডে মডারেট হতে গেলে মুসলমানের ঈমান আকিদার সামগ্রিক অবস্থা কোনভাবেই আশংকামুক্ত নয়। তাই সেই প্রচেষ্টা করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং তাদের হিসেবে আমরা সবাই র‍্যাডিকাল হলেই ঈমান আকিদায় ক্ষতির আশংকা কম থাকবে। এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে র‍্যাডিকাল ও মডারেটের আলাপ।
অতএব দেশীয় ও সামাজিক পর্যায়ে শাহবাগীরা যদি হেফাজতকে র‍্যাডিকাল বলে সেটাকে আন্তর্জাতিক আলাপ বানানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ মুসলিমদেরকে আমেরিকা র‍্যাডিকাল বলার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এইসব বিবাদে জড়াতে গিয়ে আমাদের দেশের তথাকথিত র‍্যাডিকাল বা মডারেট মুসলিমরা ভুলেই যায় যে মুসলমানদের ভাগ করার জন্য এই মডারেট আর র‍্যাডিকাল তকমা দুটি পশ্চিমের দেয়া। পশ্চিমারাই বলে যে বেধে দেওয়া দুইটার একটাতে মুসলিমদের অবশ্যই থাকতে হবে। এখন আমাদের তথাকথিত শাহবাগী আর খারেজী উভয় গোষ্ঠীই পশ্চিমাদেরকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর কুফফার বলে সকাল সন্ধ্যা রুটিন করে গালিগালাজও করবে আবার দিনশেষে এই সাম্রাজ্যবাদী আর কুফফার শক্তির করে দেওয়া একটা ভাগ দিয়েই নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।

একটা বিষয় আমি হয়তো স্পষ্ট করতে পেরেছি যে দেশীয় প্রেক্ষাপটে এই র‍্যাডিকাল আর মডারেট ভাগটাকে কেন আমাদের সমর্থন করা উচিৎ না। একজন মধ্যপন্থী মুসলমান ইসলামের এই ভাগকে সচেতনভাবে কখনই সমর্থন করতে পারেনা। যারা করে তাদের ভাসাভাসা বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষণকে করুণা ভিক্ষা দেয়া উচিৎ। 

তবে একই সাথে এটাও সত্য এ ভাগের আলাপ যখন আন্তর্জাতিক পর্যায় নিয়ে হবে তখন এড়িয়ে যাওয়া কিছুটা কঠিন। তবে অসম্ভব না। সেক্ষেত্রে ইসলামপন্থাকে আমরা কোন জায়গা থেকে দেখছি এবং রাজনীতি ও আন্তর্জাতিকতায় ইসলামের বয়ানগুলো কি, এ নিয়ে আলাপগুলো পরিস্কার করতে হবে। সবই কুরআন হাদিসে আছে। ইসলামী বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ফিকহ আর সিয়াসাত নিয়ে আলাপগুলো হয়ে রয়েছে। আমাদের শুধু তুলে নিয়ে আসতে হবে।
আন্তর্জাতিকতার বাজারে আমরা কি র‍্যাডিকাল বা মডারেট মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে বাধ্য থাকবো নাকি আমাদের পরিচয় হবে শুধুই মুসলিমতখন এই প্রশ্নের মীমাংসা তখন খুব সহজেই হয়ে যাবে।

রেশমী রুমাল আন্দোলন


১৯১৪ থেকে ১৯১৯ সাল। একদিকে চলছে বিশ্বযুদ্ধ, অন্যদিকে ভারতবর্ষের ওলামায়ে কেরামের উপর ইংরেজদের নির্যাতন।
এই আন্দোলনে ইংরেজরা পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক আলেমদের ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়েছে। কালাপানি, সাইপ্রাস, আন্দামান ও মাল্টার দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে হাজার হাজার আলেমওলামাকে। শুধু দিল্লিতেই সে সময় মাদরাসার সংখ্যা ছিল চার হাজারেরও অধিক। ইংরেজরা সমস্ত মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে দ্বীন রক্ষার্থে আলেমদের কুরবানীর সেই স্বর্ণযুগেও কিছু দরবারী আলেম নিজেদের ইংরেজদের কাছে গিয়ে সপে দিয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে ব্রিটিশ সৈন্যরা অন্যায়ভাবে দুটি তুর্কি জাহাজ আটক করে। এর প্রতিক্রিয়া হয় বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তখন বিশ্ব দুইটি শিবিরে ভাগ হয়েছিল। একপক্ষে ছিল ভারত শাসক ব্রিটিশ আর তাদের মিত্ররা। অন্যপক্ষে ছিল জার্মানি, তুরস্ক, হাঙ্গেরী ও অষ্টিয়া।

ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীনতাকামীর সংখ্যা কম ছিল না। যার ফলে ইতিহাসের পাতা উল্টালে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যেই বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা কমবেশী লক্ষ্য করা যায়। সেবার শুরুটা হয়েছিল জার্মানিতে অধ্যায়নরত কিছু ভারতীয় ছাত্র ও স্বাধীনতাকামী কিছু বুদ্ধিজীবীর মাধ্যমে। তারা তুর্কি ও জার্মানের সাথে মিলে ভারতের ব্রিটিশ শক্তিকে আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা সফল করার জন্য আফগানিস্তানের সহায়তা জরূরী ছিল। তুরস্ক থেকে সৈন্যবাহী জাহাজ ভারত আসতে আফগানের করিডোর ব্যবহার করার বিকল্প ছিল না। কিন্তু আফগানেও তখন ছিল বৃটিশপন্থী সরকার। তাই গোপনে তুর্কি ও জার্মানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাদের সাথে নিয়ে কয়েকজন স্বাধীনতাকামী ভারতী আফগান সফরে আসলো। উদ্দেশ্য ছিল আফগান সরকারকে বৃটিশ বিরোধী ভূমিকায় উদ্বুদ্ধ করা।

এ সময় শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান রহ.কে তুর্কি ও আফগান সরকারের সাথে প্রত্যক্ষ আলাপ আলোচনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। সক্রিয়তা টের পেয়ে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়ে যায় তাদের উপর। শায়খুল হিন্দ ওবাইদুল্লাহ সিন্ধিকে পাঠিয়ে দেন কাবুলের পথে। এবং নিজে রওনা হন হিজাজের পথে। কাবুলে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল আফগান সরকারের সহযোগিতা নিশ্চিত করা ও আফগান সীমান্তে থাকা স্বাধীনতাকামীদেরকে সংগঠিত করে ভারতের আজাদী আন্দোলনের কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করা।

১৯১৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ওবাইদুল্লাহ সিন্ধি রহ. কাবুল পৌঁছেন। কাবুল সরকারকে সহযোগিতায় রাজি করান। এবং তুর্কি ও জার্মানি মিশনের সাথে কাজ করতে রাজি হন। ওবাইদুল্লাহ সিন্ধি সেখানে গিয়ে অনেক স্বাধীনতাকামীদের দেখতে পান। এবং সেখানে একটি অস্থায়ী ভারত সরকার গঠন করেন। তুর্কি- জার্মান মিশনের সমন্বয়কারী প্রতিনিধি রাজা মহেন্দ্র প্রতাপকে এই সরকারের প্রেসিডেন্ট, বরকতুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী, এবং হযরত সিন্ধি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন।

১৮ই সেপ্টেম্বর শাইখুল হিন্দ মক্কা পৌঁছেন। মক্কা মদিনা তখন ছিল তুর্কি খেলাফতের অংশ। তিনি গিয়ে হিজাজের গভর্নরের গালিব পাশার সাথে সাক্ষাত করেন। গালিব পাশার তখন ধর্মীয় প্রভাব ছিল অনেক। তিনি দুটি পত্র লিখেন। একটি পাঠানো হয় মদিনার গভর্নর বসরী পাশার কাছে আরেকটি আফগান গোত্রপতি মুসলমানদের কাছে। এতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের আহ্বান ছিল। ইতিহাসে এই চিঠিকে “গালিবনামা” বলা হয়। আরেকটি চিঠিতে ছিল শায়খুল হিন্দের প্রস্তাব অনুযায়ী আফগান ভূখন্ডকে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করার অনুরোধ। এই চিঠিকে “গালিবের চুক্তিনামা” বলা হয়।

শায়খুল হিন্দ অতঃপর তুরস্কের যুদ্ধমন্ত্রী আনোয়ার পাশার সাথে সাক্ষাতেরও পরিকল্পনা করেলেন। মদিনায় পৌঁছে জানতে পারলেন তিনি তুরস্ক থেকে মদিনায় রওজার জিয়ারতে এসেছেন। সেখানেই সাক্ষাত হয়ে গেল। তিনি বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সহায়তার আশ্বাস দিলেন ও একটি চুক্তি সাক্ষর করলেন। তিনি শায়খুল হিন্দকে তিনটি চিঠি লিখে দিলেন।
একটি ছিল অস্থায়ী ভারত সরকার ও তুর্কি সরকারের মধ্যকার চুক্তিনামা।
দ্বিতীয়টি মুসলিম নেতৃবৃন্দের কাছে শায়খুল হিন্দকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান।
তৃতীয়টি ছিল আফগান সরকারের প্রতি।
এবং সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আফগান সরকার সম্মত থাকলে তুর্কি বাহিনী সীমান্তে অবস্থান নিবে। ১৯ ফেব্রুয়ারী ১৯১৭ সালে সেই বাহিনী ভারতে প্রবেশ করবে এবং অভ্যুত্থান ঘটাবে। সেই সময় শায়খুল হিন্দ আফগানিস্তান থেকে সামগ্রিক দিক নির্দেশনা দিবেন।

ওবাইদুল্লাহ সিন্ধির নেতৃত্বে এই পত্র আফগান সরকারের নিকট পৌঁছানো হল। কিন্তু তিনি পররাষ্ট্র চাপের কথা তুলে প্রথমে সম্মতি দিতে চাইলেন না। কিন্তু প্রশাসনের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনগণ স্বাধীনতাকামীদের সমর্থন করছিল। শেষ নাগাদ চুক্তি হল আফগান সরকার নিরপেক্ষ থাকবে। তবে তুর্কি বাহিনী আফিগান সীমান্ত দিয়েই ভারতে প্রবেশ করবে। আর যদি কোন আফগানী এই যুদ্ধে যেতে চায় তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নিষেধ থাকবেনা। ইংরেজদের দেয়ার জন্য কৈফিয়তও প্রস্তুত রাখা হল, “সীমান্তের স্বাধীনতাকামীদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে আফগান সরকার”।

এরপর যেই কাজটি করা হল সেই নামেই এই আন্দোলনের নামকরণ করা হয়। ইংরেজ বাহিনীর কড়া পাহাড়ার ফলে তথ্য ফাস হওয়া ভয় ছিল। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে ওবাইদুল্লাহ সিন্ধি রহ. একটি রেশমি রুমালে সুতা দিয়ে আরবিতে পত্র লিখে শায়খুল হিন্দের কাছে তা পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। অনেকগুলো হাত বদল হয়ে এই রুমালটি শেখ আব্দুর রহিমের হাতে পৌঁছে। তিনি হজে গিয়ে রুমালটি শায়খুল হিন্দের হাতে দিবেন।

কিন্তু এর মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আফগান আমির হাবিবুল্লাহ বিরাট অর্থের বিনিময়ে ইংরেজদের কাছে এই তথ্য বিক্রি করে দেয়। খবর পাওয়া মাত্রই ব্রিটিশ গোয়েন্দা আব্দুর রহিমের বাড়ি তল্লাশি করে এই রুমাল জব্দ করে। এরপর আব্দুর রহিম আত্মগোপনে চলে যান। কথিত আছে তিনি আর কখনো জনসম্মুখে ফিরে আসেনি।

এই ঘটনার পর ইংরেজ সরকারের আলেম ওলামাদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। হেজাজ থেকে গ্রেফতার করা হয় আন্দোলনের প্রধান নেতা শায়খুল হিন্দ ও তার ছাত্র হুসাইন আহমদ মাদানী। এবং তাদেরকে মাল্টা দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

তথ্যসুত্রঃ
উপমহাদেশে আলেম সমাজের বিপ্লবী ঐতিহ্য (উর্দুঃ উলামায়ে হিন্দ কি শানদার মাযি)
চেপে রাখা ইতিহাস
তারিখে দেওবন্দ

উবাইদুল্লাহ সিন্ধির ডায়রী

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...