মিসরে কিউট বিড়ালের সংখ্যা অত্যাধিক হারে বেশী। বিভিন্ন রেস্টুরেন্টেও টেবিলের
নিচে এসে ভদ্রভাবে বসে থাকা বিড়ালগুলোকে মিসরীরা বিশেষ সমাদর করে থাকে।
সেদিন পিৎজা খেতে গিয়ে দেখি সেখানেও উনাদের অবাধ বিচরণ। এত বড় রেষ্টুরেন্টেও
বিড়াল মশাই দিব্যি হাটাচলা করে পিৎজা খাচ্ছেন। এই পিৎজা লাভার বিড়ালদের ভাবসাবই
আলাদা। এরা রুটি খায়না। শুধু গোশত খায়। মিসরীরাও তাই খাওয়ায়।
আরেকদিন শর্মা খেতে বসে প্রায় অর্ধেকটা মাংস বিড়ালকে খাওয়ানোর পর আমি তো
দুশ্চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। হায় খোদা! মিসরী হয়ে যাচ্ছিনা তো আবার! মিসরী হয়ে
যাওয়াটা কেন দুশ্চিন্তার সেটা অন্যসময় বলতে হবে। কারণ সেই গল্পটা পারসোনাল। তবে
সেদিনকার বিড়ালটা একটু বেশীই কিউট ছিল। মুশ মাসরীরাও অর্থাৎ যারা মিসরী না তারা দেখলেও
খাওয়াতো।
রাস্তায় একদিন দেখলাম একটা অতিরিক্ত কিউট বিড়াল একা একা বসে আছে। ভিআইপি এরিয়া
ছিল। ওসব এরিয়ার এলিটক্লাস নাগরিকরা অন্ধের মত ওয়েস্টার্ন কালচার ফলো করায় তাদের
কাছে বিড়ালের চেয়ে কুকুরের সমাদর বেশী। বিড়ালটা হাতে নিয়ে অবাক হলাম। এতো
পার্সিয়ান! ঢাকার কাটাবন থেকে কিনতে গেলে নির্ঘাত ২০ হাজারের উপরে পড়বে। সেদিন এই
বিড়ালের মায়া ছাড়তে যে কতটা কষ্ট হয়েছে সেটা মনে পড়লে আজও আমি কয়েক মিনিটের জন্য
নিরব হয়ে যাই।
তো আজকে আমাদের কামরুল ভাই বিড়ালের ডিম নিয়ে একটি বিনোদনমূলক পোষ্ট লিখছিলেন।
আমার বিড়াল প্রীতির ব্যাপারটি দেখেই হয়তো বিষয়টি আমাকে জানিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু
এইভাবে বিড়াল নিয়ে হাসিতামাশা করার অধিকার কি আমি কামরুল ভাইকে দিতে পারি? আমি গভীর চক্রান্ত করলাম। এবং কামরুল ভাই সেই ফাঁদে পা
দিলেন।
ঘোড়ার ডিম আর বিড়ালের ডিম কি অভিন্ন বস্তু, নাকি বিড়ালের ডিম অস্তিত্বশীল, তর্কটা এভাবে শুরু না
হলেও কামরুল ভাইয়ের সংশয়মাখা প্রশ্নে আমি সেই তর্ক উস্কে দেয়ার সুযোগ লুফে নিলাম।
প্রথমে অবশ্য মজা করেই কামরুল ভাই জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ
- মাহদি ভাই, বিড়ালের ডিম সম্পর্কে আপনার জানাশোনা কেমন?
-ভাল জানাশোনা। কেন? আপনি দেখেননাই কখনো!
-মজা নিতেছেন?
কামরুল ভাইয়ের এই ধরণের প্রশ্নে আমি মজা নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে নিয়ে
ফেললাম।
খুব সুন্দর করে বানিয়ে এক প্রজাতির বিড়াল যে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটায় সেটা
নিখুঁতভাবে প্রমাণ করেই আমি গোসলে ঢুকলাম।
বের হয়ে দেখি কামরুল ভাই এই বিড়ালের ডিমের ইস্যু নিয়ে এতটাই সিরিয়াস হয়ে গেছেন
যে তাহকীক করতে করতে গুগলের প্রায় সব আর্টিকেল পড়ে শেষ করে ফেলেছেন। উনি আবার পড়তে
জানেন খুব। পরিক্ষায় পুরা বাংলাদেশে এক নাম্বার তো আর এমনি এমনি হননাই। (যেহেতু
তিনিও পোষ্টটা পড়বেন, তাই এইটুকু প্রশংসা
না করলে খারাপ দেখা যায় :p )
তো গুগলেও পাওয়া গেল না। তাহলে কি বিড়ালের ডিমের এই ইস্যুটা কামরুল ভাইয়ের
কাছে রহস্যই থেকে যাবে! সেই বিনোদনমূলক পোষ্ট কি মাঠে মারা যাবে!
ভাবলাম এই রহস্যে আরেকটু মসলা মাখানো যাক। আফফান ভাইকে সাথে নিলাম।
"ভাই, কাহিনী শুনছেন! কামরুল ভাই জানেই না যে এক প্রজাতির বিড়াল
ডিম দেয়।"
আফফান ভাইও বেশ অবাক হয়ে আমার সাথে শরিক হলেন। বিড়ালের ডিম নিয়ে কামরুল ভাইয়ের
সংশয়ের তখন তুঙ্গে থাকলেও বিষয়টা তিনি চেপে গিয়ে মুরগির ডিম আর আলুর তরকারী দিয়ে
মজা করে ভাত খাচ্ছেন। আর প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমার রান্নার খুবই প্রশংসা করছেন।
রান্না নাকি আজকে খুবই মজা হয়েছে। রান্না আসলেও আজকে মজা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে
এইভাবে মুরগির ডিম দিয়ে বেড়ালের ডিমের রহস্যকে চাপা দেওয়া হবে!
No comments:
Post a Comment