প্রথম কথা হচ্ছে, বিজ্ঞানের কাজ বস্তু বা পদার্থ নিয়ে। স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ বা নাকচ করা বিজ্ঞানের কাজ নয়। এবং একইসাথে বিজ্ঞান মানুষের বিশ্বাস বা অনুভুতিকে ব্যাখ্যা করতে অক্ষম।
বিজ্ঞানের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা থাকার ফলে যারা জগতের সমস্ত কিছুই বৈজ্ঞানিক মানদণ্ডে মেপে উত্তীর্ণ করতে চান তারা একটা সহজ বাস্তবতা ভুলে যান। সেটা হচ্ছে বিজ্ঞান নিছকই জ্ঞানের একটা অংশ মাত্র। এতে বিশ্বাসের কোন শর্ত বা উপাদান নেই। এবং বিজ্ঞান ছাড়াও পৃথিবীর বুকে আরো বহু জ্ঞান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
বিজ্ঞানের গবেষণা চলমান। এটা প্রমাণিত সত্য যে বৈজ্ঞানিক যেসব থিউরি ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক আকারে হাজির হয়েছিল পরবর্তী গবেষণায় তার অনেকগুলোই ভুল প্রমাণিত হয়েছে এবং ধর্ম তার অবস্থানে বহাল তবিয়তে আছে। এক্ষেত্রে বড় বড় বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফলও ভুল প্রমাণিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বহুবার।
উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে আইনস্টাইনের কথা। সে তার আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্বে দাবী করেছিল আলোর চাইতে বেশী জোরে কিছু ছুটতে পারেনা। কারণ আইনস্টাইন বিশ্বাস করত যে কোয়ান্টম মেকানিকস বিজ্ঞান দ্বারা প্রমাণ করা যায় না। আইনস্টাইনের ভুলটা সেখানেই ছিল। ১৯৯৭ সালে সুইজারল্যান্ড জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ ড. নিকোলাস গিসিন এ কথা প্রমাণ করে দেয় যে কোয়ান্টাম মেকানিকসের বাস্তবতা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আলোর থেকেও কমপক্ষে দশহাজার গুণ বেশী গতিতে এই মেকানিকস চলে। সাত মাইল দূরে রাখা দুই ফোটন কণার মধ্যে সংকেত পরিবহণের খবর জানা যায়। এ নিয়ে একটি গবেষণা পত্র বের করা হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসে তা ছাপা হয়েছে।
(কোয়ান্টম মেকানিক বুঝার আগে একটা বিষয় বুঝে নেওয়া দরকার। আলো ফোটন একবিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে একটানা না গিয়ে ছোট ছোট কোয়ান্টা বা অংশে ভাগ হয়ে যায়। কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী অণু পরমাণুর অতি ক্ষুদ্র রাজ্যে কোনও বস্তু যুগপৎ তরঙ্গ ও কণার অস্তিত্ব নিয়ে থাকে।)
মজার ব্যাপার হল এই আইনস্টাইনও আস্তিক ছিল। কারণ সে মানতো যে নিয়মনীতি স্রষ্টাই প্রদান করে। এবং এটা মানার কারণেই ইহুদিরা তাকে ইজরাইল রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রস্তাব করতে পেরেছিল। যদি সে নাস্তিক হত তাহলে ইহুদীরা কখনোই তাকে এই পদের জন্য প্রস্তাব করতে পারতোনা। তবে একই সাথে এটাও সত্য যে বিশ্বাসের শাখা প্রশাখায় আইনস্টাইনের কিছু সমস্যা ছিল। এটা অনেক আস্তিকদেরই থাকে। এছাড়াও আরো অনেক বড় বড় বিজ্ঞানিরা আস্তিক ছিলেন। পিউ রিসার্চ সেন্টার ফর দা পিপল এন্ড দা প্রেস নামক এক সংস্থার গবেষণার উঠে এসেছে বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানীদের মধ্যে ৫১% এমন আস্তিক ছিল যারা বিশ্বাস করত যে মহাবিশ্বের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একজন অবশ্যই আছেন। এবং ৩৩% বিজ্ঞানী তো সরাসরি স্রষ্টা আছেন বলে বিশ্বাস করত। সেই সুপ্রসিদ্ধ বিজ্ঞানীদের মধ্যে ফ্রান্সিস কলিন্স, চার্লস ডারউইন, রেনে ডেসকারটেস, জোহানেস কেপলার, ফ্রান্সিস ব্যাকন, ইসাক নিউটন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এসব দিক বিবেচনায় রাখলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে বিজ্ঞানকে আস্তিকতা বিরোধী বলা বা প্রমাণ করতে চাওয়াটা শুধু অযৌক্তিকই নয় একইসাথে বাস্তবতা বিবর্জিতও বটে।
No comments:
Post a Comment