নাস্তিক কারা আর আস্তিকই বা কারা?
সহজভাবে বললে, যারা বলে পৃথিবীর কোন স্রষ্টা নেই এবং মহাবিশ্বের সবটাই পদার্থ দ্বারা গঠিত তারাই নাস্তিক। এবং এর বিপরীতে যারা বিশ্বাস করে জগতের সকল সৃষ্টির পেছনে একজন স্রষ্টা আছে তারাই আস্তিক।
চিন্তাগত দিক থেকে নাস্তিকরা সাধারণত চার ধরণের হয়ে থাকেঃ
১ ডগম্যাটিকঃ যারা একেবারে খোদার অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে।
২ স্কেপটিকালঃ যারা খোদার অস্তিত্বকে সরাসরি অস্বীকার না করে কৌশলে নাস্তিকতার চর্চা করে। তাদের যুক্তি হল, যেহেতু মানুষ খোদার অস্তিত্ব জানতে অক্ষম তাই স্রষ্টা সংক্রান্ত সবকিছুকেই এড়িয়ে যেতে হবে।
৩ ক্রিটিকালঃ যারা বলে খোদা আছে কিন্তু এর অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নেই। এদের মনোভাব স্কেপটিকালের কাছাকাছি।
৪ প্র্যাকটিকালঃ তাদের মতে মানুষ যেহেতু খোদা ছাড়াও চলতে সক্ষম তাই স্রষ্টার থাকা বা না থাকার বিষয়টি মানুষের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিৎ না।
মজার ব্যাপার হল এই চার প্রকারের নাস্তিকেরা কখনোই আস্তিকদের সহজ একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সঠিক যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনা। আর সেই প্রশ্নটি হচ্ছে আল্লাহ যে নেই এটা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করে দেখানো যায়?
আস্তিক নাস্তিক তর্কে নাস্তিকদের বড় আরেকটি পরাজয় হচ্ছে যুক্তি দিয়ে মানব মন ও নৈতিকতার ব্যাখ্যা দেওয়া। নাস্তিকরা এর পক্ষে নিজেদের মত অনুযায়ী থিউরী দাড় করাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
ধর্মকে থেকে মুক্ত থাকতে চাওয়া আরেকটি মতবাদের নাম হচ্ছে এগনস্টিসিজম বা অজ্ঞেয়বাদ। এগনস্টিসিজম শব্দটির ব্যবহার ১৮৬৯ সালে দার্শনিক হাক্সলি সর্বপ্রথম করেছিল। অজ্ঞেয়বাদীদের মতে যে খোদা ও এর বাইরের জগত সম্পর্কে মানুষ কিছুই জানেনা। এবং মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থাও যেহেতু জানা যায়না তাই এই ধরণের সব বিশ্বাসকে অজানার গণ্ডিতে ফেলে দায়মুক্ত থাকতে হবে।
অজ্ঞেয়বাদী এবং নাস্তিকেরা পৃথিবীর প্রকৃতিগত এই নিয়মটি ভুলে যায় যে স্রষ্টার সামগ্রিক জ্ঞান স্রষ্টাই সৃষ্টিকে দেননি। কারণ তারা সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্কটা বুঝে না।যদি বুঝতো তাহলে এটাও জানতো যে প্রভু এবং দাসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যতটুকু জ্ঞানের প্রয়োজন ততটুকুই তিনি তার বান্দাকে দিয়েছেন। আস্তিকদের প্রথম পরিচয়ই হচ্ছে তারা প্রভূর গোলাম। সব নবীকে পাঠিয়ে প্রভূ আস্তিকদের আবদ বা বান্দা হওয়ার ধারণাটিই মৌলিকভাবে বুঝিয়েছেন।
এই সম্পর্ককে মেনে নিলে খুব সহজেই বুঝা যাবে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের সাথে কেন স্রষ্টার অস্তিত্বকে তুলনা করা যাবেনা। পৃথিবীতে পাঠানো গোলামগুলোর বিচারই তো মহাবিশ্ব ধ্বংস করার পর স্রষ্টা করবেন। এটাই তার নীতি।
আর যতটুকু যেভাবে জানা দরকার ততটুকু সেভাবে আল্লাহ তার বান্দাকে জানিয়েছেন। অবান্তর কত প্রশ্ন তো সৃষ্টির শুরু লগ্ন থেকে কত মূর্খরাই করেছিল। কিন্তু আল্লাহ যেগুলোর উত্তর যেভাবে দেয়ার প্রয়োজন মনে করেছেন সেগুলোর উত্তর সেভাবেই দিয়েছেন। যেমন পৌত্তলিকদের প্রশ্ন ছিল আল্লাহ কিসের তৈরী সোনার না রূপার। কিন্তু আল্লাহ তার উত্তরে বলেননি যে তিনি সোনার তৈরী নাকি রূপার তৈরী।
পবিত্র কুরআনে সুরা ইখলাস, আয়াতুল কুরসীসহ বিভিন্ন জায়গায় নিজ পরিচয় সেভাবেই তুলে ধরেছেন যেভাবে বান্দার জানার প্রয়োজন ছিল।
No comments:
Post a Comment