Friday, October 6, 2017

আপনি কি র‍্যাডিকাল মুসলিম নাকি মডারেট মুসলিম

কিছুদিন আগে উপস্থাপিকা সামিয়া রহমান যখন মিশেল ফুকোর লেখা চুরি করে নিজের গবেষণাপত্র বলে চালিয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়লো তখনই প্রথম জানতে পেরেছিলাম সে গবেষণা পত্রও লিখতে জানে। লেখার চুরির অভিযোগ এড়াতে গিয়ে সে আবার বলেছিলও যে সে নাকি তখন বিদেশে অবস্থান করছিল। এ ব্যাপারে তার বিশেষ কিছু জানা নেই। শুধু টকশোতে বসে একনাগাড়ে অযৌক্তিক ও একরোখা প্রশ্ন করে যাওয়া একটা মহিলা এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়ার পরও যে ঢাকা ভার্সিটির মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকতে পারে সেটা আমার কল্পনাতেও ছিলনা। এমনকি শুধু ভার্সিটিই নয়, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার জায়গা এখন ঢাবির ভিসির চেয়ারের হাতল পর্যন্ত পৌছে গেছে। এহেন পদোন্নতি তো বড়ই বিস্ময়কর!

তার লেখাচুরি প্রসঙ্গ নিয়ে পোষ্ট দেয়া এক জ্ঞানীজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম ২০১৩ সালে সামিয়া রহমানের লেখা আরেকটি গবেষণাপত্র মুক্তি পেয়েছিল। সেখানে তিনি বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে হেফাজতে ইসলামের মত একটি র‍্যাডিকাল গ্রুপের উত্থানে আসলে বাংলাদেশের কতটা শংকিত হওয়া উচিত। জানিয়েছেন, সেই আন্দোলনকে 'দাড় করিয়ে' কত বড় 'অপরাধ' করেছিল আমার দেশ ও দিগন্তের মত মিডিয়া এবং জামাত ও বিএনপির মত রাজনৈতিক দল।

আইরনি হল, আট পৃষ্ঠার সেই জার্নালে ইংরেজী ব্যাকরণের কাচা ভুল দেখে মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল যে এটা সত্যিই আমাদের প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের জার্নালিজম বিভাগ থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র।

পয়েন্ট হচ্ছে, এই মহিলার মত একজন অর্ধ শিক্ষিত সাংবাদিক এইসব খোঁড়া যুক্তির মাধ্যমে ভুলভাল ইংরেজিতে একটা জার্নাল লিখে হেফাজতে ইসলামের মত একটি অরাজনৈতিক সংগঠনকে র‍্যাডিকাল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলেও শাহবাগীরা কিন্তু তাদের সেই সামগ্রিক অপচেষ্টায় অনেকটাই সফল। ২০১৩ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হেফাজতের সাথে র‍্যাডিকাল শব্দটি ইসটাবলিশড করতে শাহবাগকেন্দ্রীক সম্প্রদায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ছিল চোখে পড়ার মত। এবং মাসখানেক আগে যখন বাল্যবিবাহ নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে আলজাযিরা পর্যন্ত হেফাজতকে র‍্যাডিকাল গ্রুপ বলে বসলো তখন মেনে নিতেই হল যে তাদের এই মেহনত মাকবুল হয়েছে।

যাইহোক, যেহেতু এরসাথে ইসলাম প্রশ্ন জড়িত তাই বাস্তবিক অর্থেই কি হেফাজতকে র‍্যাডিকাল বলা যাবে কিনা অন্তত বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে এই বিষয়টা পরিষ্কার থাকা দরকার।

যেহেতু র‍্যাডিকাল মুসলিম আর মডারেট মুসলিমের ভাগটা আমাদের সমাজে সেই অর্থে চর্চা হয় না তাই এর ছোট একটি ভূমিকা দিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। দ্বিতীয় পর্বে প্রামাণ্য কিছু দলিলপত্র নিয়ে আসবো।
ওয়ামা তাউফিকি ইল্লা বিল্লাহ।

আপনি একজন মুসলিম। তবে সেটা র‍্যাডিকাল না মডারেট?
শুধু আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে যদি বলা হয় তাহলে র‍্যাডিকাল মানে আপনি ধর্মের ব্যাপারে অতিউগ্রপন্থী। আর যদি মডারেট হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ধর্মের ক্ষেত্রে অতিউদারপন্থী।

এখন এই দুইটা পন্থাই কিভাবে একজন মুসলমানকে ধীরে ধীরে ইসলামের বিপদজনক সীমানায় নিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এর উদাহরণটা এমন হতে পারেঃ অতি উদার হতে হতে একটা সময় মানুষ শাহবাগী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে নাস্তিকতা এবং ধর্ম বিদ্বেষের চর্চাকে কোন সমস্যা মনে করবেনা, এটাকে সে সামাজিক দায়বদ্ধতা বা ধর্মীয় অনুভূতির আঘাত বলতে রাজি হবেনা। এবং পারলে এই ঘৃণ্য কাজের বৈধতা দিবে। 
আর অন্যদিকে অতি উগ্র হতে হতে একটা পর্যায়ে মানুষ খারেজী আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। এই সময় সে কোন মুসলমানকেই আর মুসলমান মনে করেনা। এটা অনেক সময় হতাশা থেকে হয়, অনেক সময় হয় কট্টর দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা থেকে। এই ধরণের মানুষেরা একটা পর্যায়ে গিয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার মাঝেও বৈধতা খুজে বের করার চেষ্টা করে। এবং যেইসব আলেমগণ কুরআন হাদিস আলোকে উগ্রপন্থাকে ইসলাম বিরোধী বলে প্রমাণ করে তাদেরকে পর্যন্ত ভ্রান্ত বলতে কুণ্ঠাবোধ করেনা। খেয়াল করুন, দুইটা প্রবণতাই মানুষকে একটা পর্যায়ে ইসলাম থেকে বের করে দিচ্ছে।

এখন আপনি হয়তো বলবেন যে আমি র‍্যাডিকাল বা মডারেট কোনটাই না, আমি মধ্যপন্থী। ইসলামও তো মধ্যপন্থার কথাই বলে। হ্যা, আপনার চিন্তা তাহলে ঠিক আছে।

বিপদ হল, ব্যক্তি হিসাবে আপনি নিজের ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দিয়ে দিলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে হিসাবটা এত সহজে শেষ হবার নয়। বাস্তবতা একটু কঠিন। দেশীয় এবং সামাজিকভাবে দেখতে গেলে আপনি দেশ ও সমাজের একটি অংশ। যেহেতু সমাজে শাহবাগী অথবা সংখ্যায় নগণ্য হলেও খারেজী বসবাস করে তাই তারা নিজ দায়িত্বে আপনার উপর বিপরীত গ্রুপের তকমা লাগিয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি একজন
মধ্যপন্থী মুসলমান হন তখন শাহবাগীরা আপনাকে র‍্যাডিকাল তকমা দিবে। কারণ আপনি ধর্মটাকে একান্তই ব্যক্তিগত ভাবতে পারছেননা। আপনার ধর্ম আপনাকে সেই অনুমতি দেয়নি। তারা হেফাজতকে র‍্যাডিকাল বলে চালিয়ে দেয়ার এটাও একটা কারণ যে হেফাজত ইসলামীক পার্সপেক্টিভে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা বলে দেখে।
আবার অন্যদিকে খারেজীরা আপনাকে মোডারেট বলে। কারণ আপনি তাগুতকে প্রভূ মানছেন। যেটা হেফাজতকেও খারেজীরা বলে। কারণ খারেজীদের মতে হেফাজত গণতন্ত্র নামক কুফুরীব্যবস্থায় ডুবে আছে। আর রাষ্ট্রের এত "সমস্যা" থাকার পরও এখনো কেন হেফাজত হুকুমতের বিরুদ্ধে জীহাদ ঘোষণা করছেনা? কেন তাগুতের সঙ্গে আপোষ করেই যাচ্ছে? এই হল হেফাজতের প্রতি খারেজীদের প্রশ্ন।

এটা শুধু সামাজিক প্রেক্ষাপট বললাম। আন্তর্জাতিক না।
আন্তর্জাতিকভাবে বুঝতে হলে ইসলাম নিয়ে পশ্চিমাদের খেলাটা বুঝতে হবে। যার উপর ভিত্তি করে তারা র‍্যাডিকাল আর মডারেটের ভাগটা করেছে। বিস্তারিত পরের পর্বে, সংক্ষেপে শুধু এতটুকু বলি
পশ্চিমের মানদন্ডে মডারেট হতে গেলে মুসলমানের ঈমান আকিদার সামগ্রিক অবস্থা কোনভাবেই আশংকামুক্ত নয়। তাই সেই প্রচেষ্টা করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং তাদের হিসেবে আমরা সবাই র‍্যাডিকাল হলেই ঈমান আকিদায় ক্ষতির আশংকা কম থাকবে। এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে র‍্যাডিকাল ও মডারেটের আলাপ।
অতএব দেশীয় ও সামাজিক পর্যায়ে শাহবাগীরা যদি হেফাজতকে র‍্যাডিকাল বলে সেটাকে আন্তর্জাতিক আলাপ বানানোর কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ মুসলিমদেরকে আমেরিকা র‍্যাডিকাল বলার প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এইসব বিবাদে জড়াতে গিয়ে আমাদের দেশের তথাকথিত র‍্যাডিকাল বা মডারেট মুসলিমরা ভুলেই যায় যে মুসলমানদের ভাগ করার জন্য এই মডারেট আর র‍্যাডিকাল তকমা দুটি পশ্চিমের দেয়া। পশ্চিমারাই বলে যে বেধে দেওয়া দুইটার একটাতে মুসলিমদের অবশ্যই থাকতে হবে। এখন আমাদের তথাকথিত শাহবাগী আর খারেজী উভয় গোষ্ঠীই পশ্চিমাদেরকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর কুফফার বলে সকাল সন্ধ্যা রুটিন করে গালিগালাজও করবে আবার দিনশেষে এই সাম্রাজ্যবাদী আর কুফফার শক্তির করে দেওয়া একটা ভাগ দিয়েই নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।

একটা বিষয় আমি হয়তো স্পষ্ট করতে পেরেছি যে দেশীয় প্রেক্ষাপটে এই র‍্যাডিকাল আর মডারেট ভাগটাকে কেন আমাদের সমর্থন করা উচিৎ না। একজন মধ্যপন্থী মুসলমান ইসলামের এই ভাগকে সচেতনভাবে কখনই সমর্থন করতে পারেনা। যারা করে তাদের ভাসাভাসা বুদ্ধিমত্তার বিশ্লেষণকে করুণা ভিক্ষা দেয়া উচিৎ। 

তবে একই সাথে এটাও সত্য এ ভাগের আলাপ যখন আন্তর্জাতিক পর্যায় নিয়ে হবে তখন এড়িয়ে যাওয়া কিছুটা কঠিন। তবে অসম্ভব না। সেক্ষেত্রে ইসলামপন্থাকে আমরা কোন জায়গা থেকে দেখছি এবং রাজনীতি ও আন্তর্জাতিকতায় ইসলামের বয়ানগুলো কি, এ নিয়ে আলাপগুলো পরিস্কার করতে হবে। সবই কুরআন হাদিসে আছে। ইসলামী বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ফিকহ আর সিয়াসাত নিয়ে আলাপগুলো হয়ে রয়েছে। আমাদের শুধু তুলে নিয়ে আসতে হবে।
আন্তর্জাতিকতার বাজারে আমরা কি র‍্যাডিকাল বা মডারেট মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে বাধ্য থাকবো নাকি আমাদের পরিচয় হবে শুধুই মুসলিমতখন এই প্রশ্নের মীমাংসা তখন খুব সহজেই হয়ে যাবে।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...