Saturday, June 24, 2017

কায়রোর দিনলিপি (৬)

মিসরীদের ঈদ উদযাপন চাঁদ উঠার পর থেকেই পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। রাতভর চলে হৈ হুল্লোড়। ফজরের পর ঈদের জামাতের যাবতীয় কার্যক্রম বড়জোর ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে শেষ করে এরা। তাই রাত থেকেই দলবেধে ঈদের জামাতে যাওয়ার একটা প্রস্তুতি চলতে থাকে।

তো আজকে ঈদের নামাজ আমরা আযহার মসজিদে আদায় করলাম। ফজর পড়ে আলো ফুটতে না ফুটতেই বের হলাম। যাওয়ার সময় রাস্তার দুপাশে তাকিয়ে দেখি এলাহী কারবার। এই সাঝ সকালে মানুষের এমন ভীড় দেখে অবাকই লাগছিল। আর এরা দেখছি একেবারে পুরো পরিবার নিয়ে চলে এসেছে ঈদের নামাজ পড়তে! এ যেন উৎসবের এক ভিন্ন আমেজ।

নামাজ শেষে খতিব সাহেবের খুতবা লম্বা হলেও একদম বিরক্ত লাগেনি। ফসীহ আরবিতে দেওয়া খুতবার প্রত্যেকটা শব্দ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল। যদিও "জামায়াহ" বলতে গিয়ে বারবারই আঞ্চলিকতার টানে তিনি "গামায়াহ" বলে ফেলছিলেন। 

খুতবা শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে প্রবাসী বাঙালি ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ, কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ের আনন্দঘন একটা পর্ব চলে কিছুক্ষণ। এবং সেখান থেকে জানতে পারলাম যে, আযহারে কওমীর ছাত্র যারা আছেন তাদের পক্ষ থেকে রাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সে উপলক্ষে আজ বিকেলে আমরা বাঙালি ছাত্ররা একত্রিত হচ্ছি।
মজার ব্যাপার হল, আমরা নামাজ শেষে যখন আযহার মসজিদ চত্বরে কোলাকুলি করছিলাম, আশেপাশের অনেকেই তাকিয়ে দেখছিল আমাদের। এখানে ঈদের পর এমন কোলাকুলির রেওয়াজ নেই। এরা সাধারণত গালেগাল লাগিয়ে এক ধরনের মুয়ানাকা করে থাকে। ঈদের জন্য এদের বিশেষ কোন কোলাকুলি নেই।

আযহার মসজিদ থেকে বাসায় হেটে আসতে হাজার বছর পুরানো মুঈয বাজার অতিক্রম করতে হয়। সাধারণত এ বাজারের পথঘাটগুলো বছরের প্রত্যেকটা বিকেলই উৎসবে জমজমাট থাকে। অনেক মিশরী নারীরা নিজ পোশাকের উপর শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা টেনে ছবি তুলতে আসে এখানে। এদের মধ্যে অনেককে দেখতে তখন আজব প্রকৃতির প্রাণির মত লাগে। এইসব রংঢংয়ের জন্য এখানে বিশেষ দোকান আছে। যে দোকান খুলতে চাইলে রসদ হিসেবে কয়েক টুকরো শাড়ির কাপড় আর একটা ক্যামেরা লাগে। ভাল ব্যবসা। এ বাজার দিয়ে হাটলে এমন আরো আজব কাণ্ডকারখানা দেখা যায়। আজ আবার এইসব কিছুর সাথে যোগ হয়েছে ঈদ আনন্দোৎসব।

বাসায় এসে সাথে সাথেই বের হতে হল। Luthferabbe Afnanমামার বাসায় ঈদের সকালের দাওয়াত। আগে যদি জানতাম উনি আমাদের জন্য চটপটি ও কাচ্চি মত দেশী খাবার তৈরী করে বসে আছেন তাহলে তো নামাজের পর কোনভাবেই দেরী করতাম না। মামার কাচ্চি রান্নার হাত সত্যিই অসাধারণ। আর এখন তো সাথে মামিও আছেন। আসার পরদিনই দাওয়াত করে কাচ্চি রান্না করে খাইয়েছিলেন। সেদিন আমি কাচ্চির কদর বুঝিনি। পুরান ঢাকা থেকে কেবল এসেছিলাম তো, তাই হয়তো। কিন্তু আজ যখন দেড় মাস পর দেশী খাবারের স্বাদ পেলাম তখন বুঝলাম আসলে পুরো দুনিয়ার হাজারো সুস্বাদু খাবার এনে দিলেও দেশী খাবারের উপর কোন খাবার হয়না।

আর সাথে ছিল মামির হোমমেইড স্পেশাল রসমলাই। স্বাদটা একেবারে মুখে লেগে আছে। মামি তাই একটা স্পেশাল ধন্যবাদ পাবেন।

ঈদের সকালটা তাহলে ভালই শুরু হল।
নাহ, সবমিলিয়ে ঈদটা খারাপ যাবেনা মনে হচ্ছে।

Tuesday, June 13, 2017

মুফতি আমিনীর রাজনীতি ও আওয়ার ইসলামের বার্ষিক সম্মেলন



আজ ১৭ই রমজান, বদর দিবস। বদরের কিছু অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য ফ্যাক্ট আছে। যা আজও সারা বিশ্বের বিশ্বাসী মুসলমানদের প্রেরণার উৎস। এর মধ্যে শক্তিশালি একটা ফ্যাক্ট হচ্ছে,
শত্রুর মোকাবেলার জন্য সংখ্যায় অধিক হওয়ার চাইতে সেই উপরওয়ালার সাথে সম্পর্কের গভীরতাটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ যিনি আমাদেরকে শত্রু চেনার তৌফিক দিয়েছেন। 

কিভাবে সাহাবায়ে কেরাম রোজা রেখে আরবের তপ্ত রোদে দগ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন? ওজর আপত্তি তো দূর কি বাত, বদরের বাহিনীতে শামিল হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভেবেছিলেন।
সেদিন তো কেউ রাসূলুল্লাহকে গিয়ে বলেননি,
হুজুর!
রোজা রেখে তো কর্মীদের যেতে কষ্ট হয়ে যাবে। যুদ্ধটা নাহয় ঈদের পরই শুরু করি!
কারণ এটা রাসূলুল্লাহর নির্দেশ ছিল।

একটু ২০১১ সালের ১৭ই রমজানে ফিরে যাই। আমরা সে বছর হেদায়াতুন্নাহু পড়লাম। কুরআনবিরোধী নারী-নীতিমালা এবং শিক্ষানীতি নিয়ে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আন্দোলন তখন তুঙ্গে। মুফতি আমিনী রহঃ আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর। দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম প্রায় সবাই এ ব্যানারে এসে আন্দোলনের শরিক হয়েছেন।

ওদিকে রমজানে মৌলভীদের কর্মসূচী শিথিল হবে ভেবে যখনই আইন প্রণয়নের ফন্দিফিকির শুরু হল মুফতি আমিনী রহঃ সাথে সাথে ১৭ই রমজান বদর দিবসেই বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকে বসলেন। তিনি "ঈদের পর"এর অপেক্ষায় থাকলেন না। বাধ্য হয়ে সরকার তখন সেই নীতিমালা স্থগিত করেছিল। যা এখনো সে অবস্থায়ই বহাল আছে।

মুফতি আমিনী নিশ্চিতভাবে জানতেন সেদিন প্রশাসনিক বাধা আসবে। লাঠিচার্জ হবে। এবং হয়েছিল। মারাত্মকভাবে আহতও হয়েছিল একজন কর্মী। তারপরও রোজার অজুহাতে সেদিন মিছিলে লোক কম দেখা যায়নি। আমার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জ তারাবীহ পড়াতো, সেখান থেকে ছুটে এসেছিল। এমন আরো অনেকেই এসেছিল সেই ১৭ই রমজান বদর দিবসে।

পুলিশের লাঠিচার্জে সেই ছেলেটির হাত ভেঙে যাওয়ার পর আমিনী সাহেব নিজ খরচে তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার গ্রহণ করেছিলেন। অথচ উনাকে তখন আমি বাসার বাজারের টাকা পর্যন্ত ধার করতে দেখেছি। আন্দোলনের খরচ যোগাতে নিজের বাড়িটা পর্যন্ত বিক্রি করতে বসেছিলেন।
এই ছিল আমিনীর রাজনীতি। রাজনীতির নামে পেটপুজা করতে দেখেছেন অনেক চেতনাধারীকেই কিন্তু এই নোংরা পরিমন্ডলের কোন কিছুই তাকে প্রভাবিত করেনি কখনো। কেননা তার চেতনার উৎসটাই ছিল ভিন্ন। তিনি রাজনীতি করতেন মদিনার নীতিতে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর নীতিতে।

আজকে যখন কোন কুলাঙ্গার সেই মুফতি আমিনীর মত আদর্শবান একজন রাজনীতিবিদের রাজনীতি নিয়ে কটুকথা বলার সাহস করে তাও আবার কোন ইসলামিক অনলাইন পত্রিকার বার্ষিক সম্মেলনে তখন অবাক হবো না লজ্জা পাবো এ নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। গঠনমূলক কোন সমালোচনা হলে না হয় মানা যেত। এটাতো মরহুম একটা মানুষের উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ!

ওবায়দুল মুক্তাদিরের অভিযোগটা হাস্যকরও ছিল বটে। আমিনী সাহেব নাকি লোক পাঠিয়ে তার গাড়ি ভাংচুর করিয়েছিলেন। অথচ মুফতি আমিনীর ডাকে ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী স্বতঃস্ফুর্তভাবে যে হরতালের নজীর সৃষ্টি করেছিল তৌহিদী জনতা সেখানে একজন কর্মীকেও লাঠিহাতে দেখা যায়নি। আমরা সেদিন বাইতুল মুকাররম এলাকায় ছিলাম। মুফতি সাখাওয়াত হোসেন সাহেব, মুফতি তৈয়্যব সাহেব গ্রেফতার হয়েছিলেন সে হরতালে। কেন্দ্রীয় নেতা তৈয়্যব সাহেব হুজুরসহ আরো অনেক কর্মীদেরকে রাস্তায় ফেলে লাঠিচার্জ করেছিল সরকারী পেটোয়া বাহিনী। এরপরও প্রশাসনের উপর পালটা আক্রমণের কোন নির্দেশনা বা অনুমতি মুফতি আমিনী সেদিন দেননি। এসব ঘটনার সাক্ষী পুরো মিডিয়া জগত। তাদের কাছে সেদিনের সব ফুটেজ আছে। অনেক ফুটেজ এখন ইউটিউবেও এভেইলেবল। কোন ধরণের সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণ হরতালের দৃষ্টান্ত একমাত্র মুফতি আমিনীর সৈনিকেরাই স্থাপন করে দেখিয়েছিল। যেখানে হরতালে আমিনী সাহেবের লাঠি ধরতে হয়না এবং এলাকায় মুক্তাদিরের সমর্থন আমিনী সাহেবের বিপরীতে শূন্যের কোঠায় সেখানে এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাকে দমন করতে তার গাড়ি ভাংচুর করেছেন এমন অমূলক দাবীকে পাগলের প্রলাপই বলতে হয়।

অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে মুক্তাদীর তো আমিনী সাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সে এভাবে বলাটাই তো স্বাভাবিক। এখানে আসলে কেন আওয়ার ইসলামকেও মুকতাদিরের বিরোধিতা করতে হবে সেটা একটু বুঝার বিষয়।
বিষয়টা হল, আমীনী সাহেবের যে আন্দোলনের বিরোধিতা মুক্তাদীর করেছে সেটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিলনা। নারীনীতির বিরুদ্ধে সে আন্দোলন কুরআন রক্ষার আন্দোলন ছিল। যাতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে স্বীকৃতি দিয়েছেন পুরো দেশের ওলামায়কেরাম। ফলে, ঐ সময় নিয়ে প্রশ্ন করাটা খুবই মারাত্মক । এটা পুরো আলেম সমাজ নিয়ে প্রশ্ন করার নামান্তর।

আওয়ার ইসলামের হুমায়ন আইয়ুব সাহেবের সাথে সেই ওবাইদুল মুক্তাদির নামক কুলাঙ্গারের সুসম্পর্ক থাকতেই পারে। এ নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। সে তার থেকে টাকা নিয়ে পোর্টাল চালালেও কারো কোন সমস্যা নাই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে এর আগেও আওয়ার ইসলাম একাধিকবার কওমী সনদ ও হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামিক দল নিয়ে বিতর্কিত সংবাদ প্রচার করে বিশেষ বিশেষ তকমা লাভ করেছিল। এখন আবার তাদের বার্ষিক সম্মেলনে এমন একটা লোককেই দাওয়াত করে আনা হল যে কিনা বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির একজন কিংবদন্তীকে কটাক্ষ করে বসলো।

আরো অবাককর তথ্য দেই। আওয়ার ইসলামের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে উলটো মুক্তাদিরের সেই বক্তব্যের পক্ষে গিয়ে আমাকে তার ব্যাখ্যা শুনালো। তার কথায় "মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব নাকি মূর্তি আর চেতনা নিয়ে কিসব বলেছেন তাই মুক্তাদির সাহেবকেও ওভাবে বলতে হয়েছে।"
ব্যাপারটা একটু বেশীই মজার হয়ে গেল না? ইসলামিক সম্মেলনেও আজকাল মূর্তির পক্ষে এবং মূর্তির বিপক্ষে, দুই ধরনের চেতনার কথা বলেই ব্যালেন্স করা লাগে! মজা না? মজা তো!

যাইহোক, এটা সেই কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। তবে নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে চাইলে যেকোন গণমাধ্যমকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করতে হয়। এইসব লোকজন যারা সরাসরি আমাদের আকাবেরদের নিয়ে ভিত্তিহীনভাবে অভিযোগ তুলে কটাক্ষ করবে তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত ভালবাসাপূর্বক এসব বক্তব্যের নীরবে সয়ে গেলে আমাদেরকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে যে ইসলামীক এই মিডিয়াটার কাছে আসলেই আদর্শগত পার্থক্যগুলো কোন গুরুত্ববহন করে কিনা। আর যদি গুরুত্ববহন নাই করে থাকে তাহলে বলতেই হবে যে শুধুই ইসলামের নাম বিক্রি করে ব্যবসা করার একটা সুপ্তবাসনা তাদের ভেতরে অবচেতনমনে হলেও কাজ করছে।

আসলে আদর্শিক লড়াইটা ছিল, আছে এবং থাকবে। এরমধ্যে আমার আদর্শ কোনটা সেটা আমাকে অবশ্যই জানতে হবে, এবং ধারণ করতে হবে। মেইনস্ট্রীম বা মূলধারায় আসার দোহাই দিয়ে যারা আদর্শের সাথে আপোষ করাকে হিকমত মনে করে তারা আসলে হিকমতের মানেই বুঝেনা।

মুফতি আমিনী রহঃ আমাদেরকে একটা দুয়া খুব পড়তে বলতেনঃ
اللهم ارنا الحق حقاً وارزقنا اتباعه وارنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنابه

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিজ আদর্শের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করুক।


Friday, June 2, 2017

লঞ্চ সফর ও শংকার একটি রাত

অনেক অনেক কাল আগের কথা। সাল তখন টোয়েন্টি ফিফটিন। সপ্তম মাসের ছাব্বিশ তারিখ। মেশকাতের ছেলেগুলো সবে দাওরায় উঠেছে। পাঁচ বন্ধু বসে বসে ভাবছে "ক্লাস শুরু হতে তো সপ্তাহখানেক বাকি, ঢাকার বাইরে একটা ট্যুর হয়ে যাক।" গন্তব্য নির্ধারণ হল কুয়াকাটা। ওদের মধ্যে চারজনের এখনো লঞ্চভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করা বাকি। তাই সিদ্ধান্ত নিতে তেমন বেগ পেতে হলোনা।

সমস্য অন্যখানে,  এবার ফেসবুকে ছবি আপলোড বা চেক ইন কোনটাই দেয়া যাবে না। কারণ অন্যদের বাসা থেকে অনুমতি থাকলেও মাহদি আর ইফতেখারের জন্য এটি একটি অনুমতিবিহীন সফর। কারণ মাত্র তারা চট্টগ্রাম ঘুরে এসেছে, এত দূরের অনুমতি নাও মিলতে পারে। তাই বাসায় ছুটিটা নিয়েছে অন্য জায়গার কথা বলে।

যে কোন যানবাহনের চেয়ে নৌযানের ভ্রমণ আরামদায়ক, এটা তারা এতদিন শুধু লোকমুখেই শুনেছে। সেদিন রাতে তারা বুঝলো যে, লোকেরা আসলে সত্যই বলে। তাছাড়া রাতের মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সাথে নদী উথালপাথাল ঢেউ খেলে যাওয়ার মধ্যে একটা তাল মেলানো ব্যপার আছে। আর যখন লঞ্চ সেই ঢেউগুলা ভেদ করে নতুন স্রোত সৃষ্টি করে তখন আরো একটা ব্যপার যোগ হয়।
একেবারে সামনে টাইটানিক পয়েন্টে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যখন তারা নিজেদের মত করে দূর আকাশের আবছা আলোর ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছিলো তখন দীর্ঘ সময় ব্যয় করে এত বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেয়ার হাজারো কারণ খুজে পাচ্ছিলো। দু পাশের আকাবাকা চরগুলো কখনো নৌপথটাকেই হারিয়ে ফেলছিলো। আর বহুপাওয়ারের লাইট ফেলে নাবিকদের বাকা পথ খুজে বার করছিলো। এসব কিছুই ভাল লাগার কারণগুলোকে আরো অর্থবহ করে তুলছিলো। 

সবকিছু ঠিকঠাকমতোই চলছিল, ঘন্টা চারেক পর একটা দুঃসংবাদ শোনার আগ পর্যন্ত। বড় বড় ঢেউগুলো যা এতক্ষণ পর্যন্ত তারা উপভোগ্য ভেবে আসছিলো, তা আসলে ছিল বিপদ সংকেতের পূর্বাভাস।
বৃষ্টির দিনে নদীপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিপদ সংকেতের ব্যপারটা খেয়াল রাখতে হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কেউই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করেনি। যেই খবর পেল "আজ নদীতে তিন নম্বর বিপদ সংকেত" সবার বুকে ধুকধুকানি শুরু হয়ে গেল। একটুপর একসাথে আরো কয়েকটা খারাপ খবর "নদী এতটাই অস্থির বরিশালের লঞ্চগুলো চাদপুর ঘাটে ভেড়ানো হয়েছে। মাওয়া থেকে সকল প্রকার নৌচলাচল বন্ধ। সাথে নিম্নচাপের আশংকা"। তাদের লঞ্চ ততক্ষণে বহুদূর এসে গেছে, যেখানে নদী খুব বেশী বিস্তৃত, তীর দেখা যায়না। জীবনে প্রথম লঞ্চ সফরে যখন এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তখন কলজে তো শুকাবেই। সবচেয়ে ভয় পেল মাহদি আর রবিন। আর সাহসের জোগান দেয়ার দায়িত্ব শামসু নিজের কাধেঁ তুলে নিল। ইফতেখার একবার ভয় পায় আরেকবার সাহসী হয়। আর আমানের ঘুম ভাংতে তখনও বহু দেরী। একটা সময় ছিল, যখন মাহদী কথায় কথায় শামসুকে তাকদীরের বয়ান দিতো, "ভাগ্যে যা আছে তাতো ঘটবেই, কেন যে ফাউ এত চিন্তা কর!!!" আজকে সুযোগ পেয়ে এই বয়ানটা শামসু মাহদীকে দিচ্ছে।
এ থেকে মাহদির একটা সত্য উপলব্ধি হয় "তাকদিরের উপর বিশ্বাসটা নিজের ভেতর যতই জোরদার করা যায় মৃত্যুভয় ততই কেটে যায়।"

এভাবে প্রায় একটা ঘন্টা কেটে গেল। এরপর নদী একেবারেই শান্ত। বুঝার উপায় নেই যে এখানেই কিছু আগে নদীর উথালপাথাল ঢেউগুলো হার্টবিট বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিপদটা আসলো রাত আড়াইটায় হঠাৎ খুব জোরেশোরে লঞ্চটা ধাক্কা খেয়ে এদিক ওদিক কাত হয়ে গেল। বুকটা আগের চেয়ে জোরে কেপে উঠলো। অনেকেরই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। নাহ, তেমন কিছু না। চরে আটকে গেছে। এমনটা নাকি প্রায়ই হয়। ভয়ের কিছু নেই।
মজার ব্যপার হল পৌঁছে যাবার পর পুরো ব্যপারটাকেই তাদের কাছে কেন যেন উপভোগ্য মনে হচ্ছিলো।

যুবায়ের ভাইয়ের আর কাতার যাওয়া হলোনা

তখন শরহে বেকায়া পড়ি। মাদানীনেসাব থেকে এক ছাত্র এসেছে জালালাইনে। শুনেছি তিনি আরবীতে পড়েন, খান এবং আরবীতেই ঘুমান। ওদিকে এমনই একজনের সাথে পরিচয় হল ফেসবুকে। চ্যাটিংয়ে জানালেন  তিনি নাকি লালবাগেই পড়েন। একই মাদ্রাসায় পড়ি অথচ সরাসরি পরিচয় না হয়ে আগে ফেসবুকে!! তখন পুরো মাদ্রাসায় ফেসবুক ব্যবহারকারী হাতেগোনা কয়েকজন। তাই তখনকার জন্য এটা একটা অবাককর ব্যপার ছিল বটে। পরে জানতে পেরেছি দুজন একই ব্যক্তি ছিল।
ছেলেটা টিপিকাল ছিলো না। আমাদের চিন্তাগুলোর কোথাও একটা মিল ছিল। তাই অল্প কিছুদিনেই বেশ খাতির হয়ে গেল। নতুন একটা সার্কেল হল। পরিচয় হল মাহমুদ, তানভীর, আর শিমুল ভাইয়ের সাথে। বিভিন্ন অকেশনে হ্যাংআউট, এদিক সেদিক ঘুরতে যাওয়া, সবই শুরু হল। ত্রিভুজ হল। মিটিং হল। প্রেজেন্টেশন হল। স্টেজ পারফর্ম হল। জুবায়ের ভাইয়ের সাথে সবচেয়ে বেশী যেই জিনিসটা হত সেটা ছিল কালচারাল ডিবেট। ইংলিশ বনাম আরব। কত রাত যে এই চিল্লাচিল্লিতে কেটেছে। রাতে জুবায়ের ভাইয়ের কমন প্রশ্ন "মাহদি কিছু আছে?" কিছুটা আমার কাছে বেশিরভাগই থাকতো। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে তার কাছ থেকে শিখেছি অনেক কিছুই, অনেক ভুল শুধরেছে। এসব কিছু করেই কিভাবে যেন কেটে গেছে তিন তিনটা বছর।
জুবায়ের ভাইকে ইগো নিয়ে আমি খুব খোচাতাম। কিন্তু ইগো প্রবলেমটা আমার নিজের মধ্যেও ছিল। তাই তার দ্বারা সাধিত হওয়া কোন উপকারে আমি কখনো সরাসরি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিনি। আজকেও করবোনা, শুধু দোয়া থাকবে মানুষ যেন আজীবন এভাবে তার থেকে উপকৃত হতে থাকে।

ট্রাম্পের ক্ষমতা, বাশারের হুমকি

"হে শহরবাসী, শহর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তোমাদেরকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দেয়া হচ্ছে। তোমাদের বিদেশী নেতাদের সে ক্ষমতা নেই যে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত মরণকূপ থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। সুতরাং যারা বেঁচে থাকতে চাও, অস্ত্র ফেলে দাও, আমরা নিরাপত্তা দেবো। অন্যথায় চব্বিশ ঘন্টা শেষে তোমাদের উপর হামলা করার জন্য আমরা অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করবো।
মনে রেখো, যেসব নেতাদের দ্বারা তোমরা পরিচালিত হচ্ছো, তোমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তারা কিন্তু দিব্যি আরাম আয়েশ করে লাক্সারী হোটেলে অবকাশ যাপন করে বেড়াচ্ছে। নিজেদের ব্যক্তিগত হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা তোমাদেরকে কেবল ব্যবহার করে যাচ্ছে। অতএব যদি যুদ্ধবিগ্রহ থামিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাও তাহলে আমাদের কথা মেনে নাও, আমরা তোমাদের সে সুযোগ দেবো।"

কি মায়াভরা হুমকি! সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিরাপত্তা দিতে আসাদ সাহেবের নতুন বার্তায় দরদ ও হুমকির কি অসাধারণ কম্বিনেশন!
তবে আলেপ্পোর বিদ্রোহীদের জন্য এ ধরণের বার্তা নতুন কিছুনা। বাশার আল আসাদের থেকে এমন বার্তা আগেও বহুবার পেয়েছে তারা। আগে হয়তো লাউডস্পিকারে ঘোষণা করা হতো অথবা উপর থেকে লিফলেট ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু এবারের ঘোষণার ধরনটা ভিন্ন ছিল। বার্তার এবারের ধরণ দেখে বিদ্রোহীরাও মনে করছে, আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়ার জন্য এবং শহর থেকে আমাদের বের করে দেয়ার জন্য বাশার বড় ধরণের সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত। তাছাড়া চিঠির একটা বাক্য বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল "তোমাদের বিদেশী নেতাদের সে ক্ষমতা নেই যে তোমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।"

খেলাটা শুরু হয়েই গেল তাহলে। সিরিয়ায় বাশার বিদ্রোহীদের আমেরিকা আর কোন ধরণের সাহায্য করছেনা। ট্রাম্পের এই স্পষ্ট বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ইস্ট আলেপ্পোর বিদ্রোহীদেরকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামে শহর ছেড়ে যাওয়ার চূড়ান্ত বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে বাশার আল আসাদ। ইতিমধ্যে তার সেনাবাহিনী আক্রমণের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
সিরিয়ার উপকূলে রাশিয়া যুদ্ধজাহাজ আর এয়ারক্রাফট কেরিয়ারের সংখ্যাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের যে অবস্থা তাতে খুব সহসাই তাদের সংকট নিরসনের সম্ভাবনা নেই। তাই সমাধানটা এখন অনিশ্চিত একটা আলাপ। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যে নীতিতে এতদিন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যকে ডিল করে এসেছে তাতে যে ট্রাম্প ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এখন তার সেই অভিনব নীতি যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ করতে যদি ভূমিকা রেখেও ফেলে তাও বলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে মুসলমানদের সুখ শান্তি কামনায় তারা সংঘাতের পথ পরিহার করেছে। ট্রাম্প ব্যবসায়ী মানুষ। হয়তো অস্ত্রনীতি দিয়ে আঘাত করার চাইতে অর্থনীতি দিয়ে আঘাত করাকেই সে অধিক কার্যকরী বলে মনে করে।

একটি বিভীষিকাময় রাত্রি

রাত কখন খুব বেশী বিভীষিকাময় হয় জানেন? যখন নিষ্পাপ শিশুদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হবার চিত্রগুলো চোখে খুব স্পষ্ট হয়ে ভাসতে থাকে।

আলেপ্পোর রাস্তায় ঘন্টাখানেক আগে ধারণ করা একটা ভিডিও দেখলাম। বাচ্চাটার বয়স চার কি পাচ হবে। অঝোরে কাদছে আর তার বাবাকে খুজছে। গোলাবারুদের শব্দগুলোতে সে অভ্যস্ত হলেও বাবাকে হারিয়ে তো সে অভ্যস্ত না। এই গোলাগুলির ভেতরেই চাচার কোলে করে রাস্তায় বেরিয়ে এসে বাবাকে খুজছে।
-চাচ্চু! আব্বু কোথায়?
- আব্বু? আছে মা, আব্বু জান্নাতে আছে।

এটা তো কেবল মোবাইলের স্ক্রীনে দেখা সুদূর আলেপ্পো শহরের একটি ভিডিওক্লিপ। কিন্তু গত একটা সপ্তাহ টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার সময় তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এমন অনেক মর্মান্তিক ঘটনা শুনতে হয়েছে।

ছেলেটার বয়স এগারো হবে। সেদিন বিকেলেই সাঁতরে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে এসে এপাড়ের এক ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। ওপাড়ে বাবা মা ভাই বোন সবাইকে নিজের চোখের সামনে খুন হতে দেখে আসতে হয়েছে তাকে। ঘটনাগুলো বলার সময় একেবারে নিথর হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা। তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কখন যে চোখগুলো বারবার ভিজে যাচ্ছিল টেরই পাচ্ছিলামনা। কতটা আঘাত পেলে শোকগুলো পাথরের মত এভাবে অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে!

আরেকটা বাচ্চা পেয়েছিলাম সেখানে। বয়স সাতের বেশী হবে না। সারাটাদিন কাদতে থাকে। মানুষ দেখলেই আতকে উঠে। কারণ ওপাড়ে যে পিশাচগুলোকে তার মত ছোট্ট একটা নিষ্পাপ শিশুর সাথে লোমহর্ষক আচরণ করেছে সেগুলোকেও তো মানুষের মতই দেখায়। সামনে বসিয়ে রেখে তার চোখের সামনে বাবা মাকে জবাই করেছে রক্তখেকো হায়নাগুলো। এরপর যখন সে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছে পিশাচগুলো তার পা দুটো রান পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি শুধু ভাবছিলাম, কোলে করে এলাকার সেই বৃদ্ধা তাকে এপাড়ে না নিয়ে আসলে সেই হিংস্রপশুগুলো ছেলেটাকে আর কত নির্যাতন করতে পারতো? আগুনে পুড়ে যাওয়া চামড়াগুলো এখনো শুকায়নি। তারপর নিজ বাবা মাকে হত্যার চিত্র দেখা।  কিভাবে সহ্য করতে পারছে? জানিনা। চোখ বন্ধ করলেই বাচ্চাগুলোর কষ্টের কথা মনে পড়ছে। ওদের কি দোষ ছিল?
শুয়ে থাকতে পারছিনা। আবার যেতে ইচ্ছা করছে সেই অসহায় মানুষগুলোর কাছে। নিজের যতটুকুই আছে তা নিয়েই আবার পাশে গিয়ে একটু দাড়াতে ইচ্ছে করছে।

আল্লাহ তুমি এবার তোমার এই বান্দদের দিকে একটু তাকাও। ওরা কিভাবে পারবে এত কঠিন পরিক্ষা দিতে? একটু তাকাওনা আল্লাহ! জালেমগুলোকে একটু দেখিয়েই দাওনা যে তুমি তোমার মজলুম বান্দার কত কাছে!

ট্রাম্পনামক ভুলটি কি ইচ্ছাকৃত!

পেনসেলভেনিয়া থেকে ট্রাম্পের বক্তব্য লাইভ দেখানো হচ্ছে। হাজার হাজার মাইল দূর থেকে বসে তা দেখা ও নিচের কমেন্ট পড়ে সেখানকার জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার ব্যাপারটা আগের জমানার মুরুব্বিদের কাছে অবাককর বটে। তারা যখন এমন স্বাভাবিক কারণে অবাক হতে থাকেন আমরা তখন বক্তব্যরত ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়ার মত কিছু অস্বাভাবিক কারণ খুজে পাই। নার্সিসিজমে আক্রান্ত পাগল এই লোকটা কিভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বনে গেল? এরপর মাথার ভেতর জটিল কিছু হাইপোথিসিস খেলে যায়। এসবকে আপনি মধ্যরাতের ফালতু ভাবনা বলতে পারেন। ইচ্ছে হচ্ছিল লিখতে তাই লিখলাম। থাক, আপনার পড়ার দরকার নেই। পরে আবার আমাকেই পাগল ভেবে গালমন্দ শুরু করে দিতে পারেন। :p
আচ্ছা, এমন কি হতে পারেনা যে জায়নবাদী মিডিয়াগুলোই চেয়েছিল যে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসুক। প্রচারণার কারণে মানুষ যে ভেবেছে মিডিয়া হিলারীকে চায়, মানুষকে এভাবে ভাবানোটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। হতে পারে না? মানুষ এখন ভাববে যে পলিসি মেকিংয়ে জায়নিস্টদের কন্ট্রোলটা আর আগের মত থাকছেনা।
ইহুদীরা কেন এটা চাইবে? চাইতেই পারে। অনেক সময় তো মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবেই আড়ালে গিয়ে কাজ করে। এতে বেশ কিছু সুবিধা আছে। নীতিনির্ধারণ করতে গিয়ে দেশ বা জাতির জন্য আত্মঘাতী কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলেও তখন আর খেসারতের খুব একটা হিসেব কষতে হয়না।
এভাবে বললে ট্রাম্পকে দুষ্টলোক হিসেবে উপস্থাপন করাটাকেও তাদের কৌশলের অংশ বলা চলে। একটা সময় ট্রাম্প থেকে মানুষের প্রত্যাশার পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। ঠিক সেই সময়ই যদি সে তাক লাগানোর মত ভাল একটা কিছু করে বসে তাহলে তো এক্সপেকটেশনের লেভেলটা আবারো অনেক হাই হয়ে যাবে। এবং মানুষ তখন অতীতকে ভুলে যেতে শুরু করবে। ধুর! ভিত্তিহীন ফালতু সব কথাবার্তা।
তবে সামগ্রিক একটা উপলব্ধিকে আমার সত্য ভাবতে ইচ্ছা হয়। মাঝে মাঝে সব কিছুর পেছনেই একটা পাতানো কাহিনী আছে বলে মনে হতে থাকে। আমাদেরকে যা দেখানো হচ্ছে তার সবটাই হয়তো পরিকল্পিত। এগুলো করা হচ্ছে আমাদের চিন্তা ভাবনাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। আমরা খালি চোখে দেখা ঘটনাগুলো নিয়ে কথা বলি। চা দোকানের আড্ডায় উঠে আসা বিশ্লেষণগুলোই আমাদের ভেতর একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরী করে নেয়। যা খুব প্রবলভাবে চেয়ে থাকে সমাজ বা রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রকবৃন্দ।
এরপর হয়তো একটা সময় আসে। যখন আমাদের মধ্যেই কেউ একজন খুব দূরদর্শী হয়ে উঠতে থাকে। পর্দার পেছনে বসে লিখতে থাকা স্ক্রীপ্ট রাইটারের কলমের আঘাতে জর্জরিত সমাজের চিত্রগুলো তার চোখে ধরা পড়তে থাকে। এবং একটা সময় সে ছন্টাও ধরে ফেলতে পারে। তখন চিৎকার করে সে সমাজের মানুষগুলোকে বলতে থাকে যে স্ক্রীপ্ট রাইটার অনবরত কি লিখে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তার চিৎকার শুনতে পায়না অথবা শুনতে চায়না।

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...