Friday, June 2, 2017

লঞ্চ সফর ও শংকার একটি রাত

অনেক অনেক কাল আগের কথা। সাল তখন টোয়েন্টি ফিফটিন। সপ্তম মাসের ছাব্বিশ তারিখ। মেশকাতের ছেলেগুলো সবে দাওরায় উঠেছে। পাঁচ বন্ধু বসে বসে ভাবছে "ক্লাস শুরু হতে তো সপ্তাহখানেক বাকি, ঢাকার বাইরে একটা ট্যুর হয়ে যাক।" গন্তব্য নির্ধারণ হল কুয়াকাটা। ওদের মধ্যে চারজনের এখনো লঞ্চভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করা বাকি। তাই সিদ্ধান্ত নিতে তেমন বেগ পেতে হলোনা।

সমস্য অন্যখানে,  এবার ফেসবুকে ছবি আপলোড বা চেক ইন কোনটাই দেয়া যাবে না। কারণ অন্যদের বাসা থেকে অনুমতি থাকলেও মাহদি আর ইফতেখারের জন্য এটি একটি অনুমতিবিহীন সফর। কারণ মাত্র তারা চট্টগ্রাম ঘুরে এসেছে, এত দূরের অনুমতি নাও মিলতে পারে। তাই বাসায় ছুটিটা নিয়েছে অন্য জায়গার কথা বলে।

যে কোন যানবাহনের চেয়ে নৌযানের ভ্রমণ আরামদায়ক, এটা তারা এতদিন শুধু লোকমুখেই শুনেছে। সেদিন রাতে তারা বুঝলো যে, লোকেরা আসলে সত্যই বলে। তাছাড়া রাতের মেঘাচ্ছন্ন আকাশের সাথে নদী উথালপাথাল ঢেউ খেলে যাওয়ার মধ্যে একটা তাল মেলানো ব্যপার আছে। আর যখন লঞ্চ সেই ঢেউগুলা ভেদ করে নতুন স্রোত সৃষ্টি করে তখন আরো একটা ব্যপার যোগ হয়।
একেবারে সামনে টাইটানিক পয়েন্টে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যখন তারা নিজেদের মত করে দূর আকাশের আবছা আলোর ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছিলো তখন দীর্ঘ সময় ব্যয় করে এত বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেয়ার হাজারো কারণ খুজে পাচ্ছিলো। দু পাশের আকাবাকা চরগুলো কখনো নৌপথটাকেই হারিয়ে ফেলছিলো। আর বহুপাওয়ারের লাইট ফেলে নাবিকদের বাকা পথ খুজে বার করছিলো। এসব কিছুই ভাল লাগার কারণগুলোকে আরো অর্থবহ করে তুলছিলো। 

সবকিছু ঠিকঠাকমতোই চলছিল, ঘন্টা চারেক পর একটা দুঃসংবাদ শোনার আগ পর্যন্ত। বড় বড় ঢেউগুলো যা এতক্ষণ পর্যন্ত তারা উপভোগ্য ভেবে আসছিলো, তা আসলে ছিল বিপদ সংকেতের পূর্বাভাস।
বৃষ্টির দিনে নদীপথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিপদ সংকেতের ব্যপারটা খেয়াল রাখতে হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় কেউই এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করেনি। যেই খবর পেল "আজ নদীতে তিন নম্বর বিপদ সংকেত" সবার বুকে ধুকধুকানি শুরু হয়ে গেল। একটুপর একসাথে আরো কয়েকটা খারাপ খবর "নদী এতটাই অস্থির বরিশালের লঞ্চগুলো চাদপুর ঘাটে ভেড়ানো হয়েছে। মাওয়া থেকে সকল প্রকার নৌচলাচল বন্ধ। সাথে নিম্নচাপের আশংকা"। তাদের লঞ্চ ততক্ষণে বহুদূর এসে গেছে, যেখানে নদী খুব বেশী বিস্তৃত, তীর দেখা যায়না। জীবনে প্রথম লঞ্চ সফরে যখন এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, তখন কলজে তো শুকাবেই। সবচেয়ে ভয় পেল মাহদি আর রবিন। আর সাহসের জোগান দেয়ার দায়িত্ব শামসু নিজের কাধেঁ তুলে নিল। ইফতেখার একবার ভয় পায় আরেকবার সাহসী হয়। আর আমানের ঘুম ভাংতে তখনও বহু দেরী। একটা সময় ছিল, যখন মাহদী কথায় কথায় শামসুকে তাকদীরের বয়ান দিতো, "ভাগ্যে যা আছে তাতো ঘটবেই, কেন যে ফাউ এত চিন্তা কর!!!" আজকে সুযোগ পেয়ে এই বয়ানটা শামসু মাহদীকে দিচ্ছে।
এ থেকে মাহদির একটা সত্য উপলব্ধি হয় "তাকদিরের উপর বিশ্বাসটা নিজের ভেতর যতই জোরদার করা যায় মৃত্যুভয় ততই কেটে যায়।"

এভাবে প্রায় একটা ঘন্টা কেটে গেল। এরপর নদী একেবারেই শান্ত। বুঝার উপায় নেই যে এখানেই কিছু আগে নদীর উথালপাথাল ঢেউগুলো হার্টবিট বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় বিপদটা আসলো রাত আড়াইটায় হঠাৎ খুব জোরেশোরে লঞ্চটা ধাক্কা খেয়ে এদিক ওদিক কাত হয়ে গেল। বুকটা আগের চেয়ে জোরে কেপে উঠলো। অনেকেরই ঘুম ভেঙ্গে গেছে। নাহ, তেমন কিছু না। চরে আটকে গেছে। এমনটা নাকি প্রায়ই হয়। ভয়ের কিছু নেই।
মজার ব্যপার হল পৌঁছে যাবার পর পুরো ব্যপারটাকেই তাদের কাছে কেন যেন উপভোগ্য মনে হচ্ছিলো।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...