রাত কখন খুব বেশী বিভীষিকাময় হয় জানেন? যখন নিষ্পাপ শিশুদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হবার চিত্রগুলো চোখে খুব স্পষ্ট হয়ে ভাসতে থাকে।
আলেপ্পোর রাস্তায় ঘন্টাখানেক আগে ধারণ করা একটা ভিডিও দেখলাম। বাচ্চাটার বয়স চার কি পাচ হবে। অঝোরে কাদছে আর তার বাবাকে খুজছে। গোলাবারুদের শব্দগুলোতে সে অভ্যস্ত হলেও বাবাকে হারিয়ে তো সে অভ্যস্ত না। এই গোলাগুলির ভেতরেই চাচার কোলে করে রাস্তায় বেরিয়ে এসে বাবাকে খুজছে।
-চাচ্চু! আব্বু কোথায়?
- আব্বু? আছে মা, আব্বু জান্নাতে আছে।
এটা তো কেবল মোবাইলের স্ক্রীনে দেখা সুদূর আলেপ্পো শহরের একটি ভিডিওক্লিপ। কিন্তু গত একটা সপ্তাহ টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করার সময় তাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এমন অনেক মর্মান্তিক ঘটনা শুনতে হয়েছে।
ছেলেটার বয়স এগারো হবে। সেদিন বিকেলেই সাঁতরে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে এসে এপাড়ের এক ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। ওপাড়ে বাবা মা ভাই বোন সবাইকে নিজের চোখের সামনে খুন হতে দেখে আসতে হয়েছে তাকে। ঘটনাগুলো বলার সময় একেবারে নিথর হয়ে গিয়েছিল ছেলেটা। তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে কখন যে চোখগুলো বারবার ভিজে যাচ্ছিল টেরই পাচ্ছিলামনা। কতটা আঘাত পেলে শোকগুলো পাথরের মত এভাবে অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে!
আরেকটা বাচ্চা পেয়েছিলাম সেখানে। বয়স সাতের বেশী হবে না। সারাটাদিন কাদতে থাকে। মানুষ দেখলেই আতকে উঠে। কারণ ওপাড়ে যে পিশাচগুলোকে তার মত ছোট্ট একটা নিষ্পাপ শিশুর সাথে লোমহর্ষক আচরণ করেছে সেগুলোকেও তো মানুষের মতই দেখায়। সামনে বসিয়ে রেখে তার চোখের সামনে বাবা মাকে জবাই করেছে রক্তখেকো হায়নাগুলো। এরপর যখন সে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেছে পিশাচগুলো তার পা দুটো রান পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে। আমি শুধু ভাবছিলাম, কোলে করে এলাকার সেই বৃদ্ধা তাকে এপাড়ে না নিয়ে আসলে সেই হিংস্রপশুগুলো ছেলেটাকে আর কত নির্যাতন করতে পারতো? আগুনে পুড়ে যাওয়া চামড়াগুলো এখনো শুকায়নি। তারপর নিজ বাবা মাকে হত্যার চিত্র দেখা। কিভাবে সহ্য করতে পারছে? জানিনা। চোখ বন্ধ করলেই বাচ্চাগুলোর কষ্টের কথা মনে পড়ছে। ওদের কি দোষ ছিল?
শুয়ে থাকতে পারছিনা। আবার যেতে ইচ্ছা করছে সেই অসহায় মানুষগুলোর কাছে। নিজের যতটুকুই আছে তা নিয়েই আবার পাশে গিয়ে একটু দাড়াতে ইচ্ছে করছে।
আল্লাহ তুমি এবার তোমার এই বান্দদের দিকে একটু তাকাও। ওরা কিভাবে পারবে এত কঠিন পরিক্ষা দিতে? একটু তাকাওনা আল্লাহ! জালেমগুলোকে একটু দেখিয়েই দাওনা যে তুমি তোমার মজলুম বান্দার কত কাছে!
No comments:
Post a Comment