"হে শহরবাসী, শহর ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তোমাদেরকে চব্বিশ ঘন্টা সময় দেয়া হচ্ছে। তোমাদের বিদেশী নেতাদের সে ক্ষমতা নেই যে এই যুদ্ধবিধ্বস্ত মরণকূপ থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। সুতরাং যারা বেঁচে থাকতে চাও, অস্ত্র ফেলে দাও, আমরা নিরাপত্তা দেবো। অন্যথায় চব্বিশ ঘন্টা শেষে তোমাদের উপর হামলা করার জন্য আমরা অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করবো।
মনে রেখো, যেসব নেতাদের দ্বারা তোমরা পরিচালিত হচ্ছো, তোমাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে তারা কিন্তু দিব্যি আরাম আয়েশ করে লাক্সারী হোটেলে অবকাশ যাপন করে বেড়াচ্ছে। নিজেদের ব্যক্তিগত হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তারা তোমাদেরকে কেবল ব্যবহার করে যাচ্ছে। অতএব যদি যুদ্ধবিগ্রহ থামিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাও তাহলে আমাদের কথা মেনে নাও, আমরা তোমাদের সে সুযোগ দেবো।"
কি মায়াভরা হুমকি! সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিরাপত্তা দিতে আসাদ সাহেবের নতুন বার্তায় দরদ ও হুমকির কি অসাধারণ কম্বিনেশন!
তবে আলেপ্পোর বিদ্রোহীদের জন্য এ ধরণের বার্তা নতুন কিছুনা। বাশার আল আসাদের থেকে এমন বার্তা আগেও বহুবার পেয়েছে তারা। আগে হয়তো লাউডস্পিকারে ঘোষণা করা হতো অথবা উপর থেকে লিফলেট ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু এবারের ঘোষণার ধরনটা ভিন্ন ছিল। বার্তার এবারের ধরণ দেখে বিদ্রোহীরাও মনে করছে, আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে নেয়ার জন্য এবং শহর থেকে আমাদের বের করে দেয়ার জন্য বাশার বড় ধরণের সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত। তাছাড়া চিঠির একটা বাক্য বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল "তোমাদের বিদেশী নেতাদের সে ক্ষমতা নেই যে তোমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।"
খেলাটা শুরু হয়েই গেল তাহলে। সিরিয়ায় বাশার বিদ্রোহীদের আমেরিকা আর কোন ধরণের সাহায্য করছেনা। ট্রাম্পের এই স্পষ্ট বক্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ইস্ট আলেপ্পোর বিদ্রোহীদেরকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটামে শহর ছেড়ে যাওয়ার চূড়ান্ত বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছে বাশার আল আসাদ। ইতিমধ্যে তার সেনাবাহিনী আক্রমণের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।
সিরিয়ার উপকূলে রাশিয়া যুদ্ধজাহাজ আর এয়ারক্রাফট কেরিয়ারের সংখ্যাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের যে অবস্থা তাতে খুব সহসাই তাদের সংকট নিরসনের সম্ভাবনা নেই। তাই সমাধানটা এখন অনিশ্চিত একটা আলাপ। তবে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যে নীতিতে এতদিন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যকে ডিল করে এসেছে তাতে যে ট্রাম্প ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এখন তার সেই অভিনব নীতি যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ করতে যদি ভূমিকা রেখেও ফেলে তাও বলে এটা ভাবার কোন কারণ নেই যে মুসলমানদের সুখ শান্তি কামনায় তারা সংঘাতের পথ পরিহার করেছে। ট্রাম্প ব্যবসায়ী মানুষ। হয়তো অস্ত্রনীতি দিয়ে আঘাত করার চাইতে অর্থনীতি দিয়ে আঘাত করাকেই সে অধিক কার্যকরী বলে মনে করে।
No comments:
Post a Comment