Tuesday, June 13, 2017

মুফতি আমিনীর রাজনীতি ও আওয়ার ইসলামের বার্ষিক সম্মেলন



আজ ১৭ই রমজান, বদর দিবস। বদরের কিছু অসম্ভব ও অবিশ্বাস্য ফ্যাক্ট আছে। যা আজও সারা বিশ্বের বিশ্বাসী মুসলমানদের প্রেরণার উৎস। এর মধ্যে শক্তিশালি একটা ফ্যাক্ট হচ্ছে,
শত্রুর মোকাবেলার জন্য সংখ্যায় অধিক হওয়ার চাইতে সেই উপরওয়ালার সাথে সম্পর্কের গভীরতাটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ যিনি আমাদেরকে শত্রু চেনার তৌফিক দিয়েছেন। 

কিভাবে সাহাবায়ে কেরাম রোজা রেখে আরবের তপ্ত রোদে দগ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন? ওজর আপত্তি তো দূর কি বাত, বদরের বাহিনীতে শামিল হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভেবেছিলেন।
সেদিন তো কেউ রাসূলুল্লাহকে গিয়ে বলেননি,
হুজুর!
রোজা রেখে তো কর্মীদের যেতে কষ্ট হয়ে যাবে। যুদ্ধটা নাহয় ঈদের পরই শুরু করি!
কারণ এটা রাসূলুল্লাহর নির্দেশ ছিল।

একটু ২০১১ সালের ১৭ই রমজানে ফিরে যাই। আমরা সে বছর হেদায়াতুন্নাহু পড়লাম। কুরআনবিরোধী নারী-নীতিমালা এবং শিক্ষানীতি নিয়ে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির আন্দোলন তখন তুঙ্গে। মুফতি আমিনী রহঃ আইন বাস্তবায়ন কমিটির আমীর। দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম প্রায় সবাই এ ব্যানারে এসে আন্দোলনের শরিক হয়েছেন।

ওদিকে রমজানে মৌলভীদের কর্মসূচী শিথিল হবে ভেবে যখনই আইন প্রণয়নের ফন্দিফিকির শুরু হল মুফতি আমিনী রহঃ সাথে সাথে ১৭ই রমজান বদর দিবসেই বিক্ষোভ সমাবেশ ডেকে বসলেন। তিনি "ঈদের পর"এর অপেক্ষায় থাকলেন না। বাধ্য হয়ে সরকার তখন সেই নীতিমালা স্থগিত করেছিল। যা এখনো সে অবস্থায়ই বহাল আছে।

মুফতি আমিনী নিশ্চিতভাবে জানতেন সেদিন প্রশাসনিক বাধা আসবে। লাঠিচার্জ হবে। এবং হয়েছিল। মারাত্মকভাবে আহতও হয়েছিল একজন কর্মী। তারপরও রোজার অজুহাতে সেদিন মিছিলে লোক কম দেখা যায়নি। আমার এক বন্ধু নারায়ণগঞ্জ তারাবীহ পড়াতো, সেখান থেকে ছুটে এসেছিল। এমন আরো অনেকেই এসেছিল সেই ১৭ই রমজান বদর দিবসে।

পুলিশের লাঠিচার্জে সেই ছেলেটির হাত ভেঙে যাওয়ার পর আমিনী সাহেব নিজ খরচে তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভার গ্রহণ করেছিলেন। অথচ উনাকে তখন আমি বাসার বাজারের টাকা পর্যন্ত ধার করতে দেখেছি। আন্দোলনের খরচ যোগাতে নিজের বাড়িটা পর্যন্ত বিক্রি করতে বসেছিলেন।
এই ছিল আমিনীর রাজনীতি। রাজনীতির নামে পেটপুজা করতে দেখেছেন অনেক চেতনাধারীকেই কিন্তু এই নোংরা পরিমন্ডলের কোন কিছুই তাকে প্রভাবিত করেনি কখনো। কেননা তার চেতনার উৎসটাই ছিল ভিন্ন। তিনি রাজনীতি করতেন মদিনার নীতিতে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর নীতিতে।

আজকে যখন কোন কুলাঙ্গার সেই মুফতি আমিনীর মত আদর্শবান একজন রাজনীতিবিদের রাজনীতি নিয়ে কটুকথা বলার সাহস করে তাও আবার কোন ইসলামিক অনলাইন পত্রিকার বার্ষিক সম্মেলনে তখন অবাক হবো না লজ্জা পাবো এ নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। গঠনমূলক কোন সমালোচনা হলে না হয় মানা যেত। এটাতো মরহুম একটা মানুষের উপর ভিত্তিহীন অভিযোগ!

ওবায়দুল মুক্তাদিরের অভিযোগটা হাস্যকরও ছিল বটে। আমিনী সাহেব নাকি লোক পাঠিয়ে তার গাড়ি ভাংচুর করিয়েছিলেন। অথচ মুফতি আমিনীর ডাকে ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল দেশব্যাপী স্বতঃস্ফুর্তভাবে যে হরতালের নজীর সৃষ্টি করেছিল তৌহিদী জনতা সেখানে একজন কর্মীকেও লাঠিহাতে দেখা যায়নি। আমরা সেদিন বাইতুল মুকাররম এলাকায় ছিলাম। মুফতি সাখাওয়াত হোসেন সাহেব, মুফতি তৈয়্যব সাহেব গ্রেফতার হয়েছিলেন সে হরতালে। কেন্দ্রীয় নেতা তৈয়্যব সাহেব হুজুরসহ আরো অনেক কর্মীদেরকে রাস্তায় ফেলে লাঠিচার্জ করেছিল সরকারী পেটোয়া বাহিনী। এরপরও প্রশাসনের উপর পালটা আক্রমণের কোন নির্দেশনা বা অনুমতি মুফতি আমিনী সেদিন দেননি। এসব ঘটনার সাক্ষী পুরো মিডিয়া জগত। তাদের কাছে সেদিনের সব ফুটেজ আছে। অনেক ফুটেজ এখন ইউটিউবেও এভেইলেবল। কোন ধরণের সহিংসতা ছাড়া শান্তিপূর্ণ হরতালের দৃষ্টান্ত একমাত্র মুফতি আমিনীর সৈনিকেরাই স্থাপন করে দেখিয়েছিল। যেখানে হরতালে আমিনী সাহেবের লাঠি ধরতে হয়না এবং এলাকায় মুক্তাদিরের সমর্থন আমিনী সাহেবের বিপরীতে শূন্যের কোঠায় সেখানে এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তাকে দমন করতে তার গাড়ি ভাংচুর করেছেন এমন অমূলক দাবীকে পাগলের প্রলাপই বলতে হয়।

অনেকে যুক্তি দিতে পারেন যে মুক্তাদীর তো আমিনী সাহেবের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সে এভাবে বলাটাই তো স্বাভাবিক। এখানে আসলে কেন আওয়ার ইসলামকেও মুকতাদিরের বিরোধিতা করতে হবে সেটা একটু বুঝার বিষয়।
বিষয়টা হল, আমীনী সাহেবের যে আন্দোলনের বিরোধিতা মুক্তাদীর করেছে সেটা কোন রাজনৈতিক আন্দোলন ছিলনা। নারীনীতির বিরুদ্ধে সে আন্দোলন কুরআন রক্ষার আন্দোলন ছিল। যাতে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে স্বীকৃতি দিয়েছেন পুরো দেশের ওলামায়কেরাম। ফলে, ঐ সময় নিয়ে প্রশ্ন করাটা খুবই মারাত্মক । এটা পুরো আলেম সমাজ নিয়ে প্রশ্ন করার নামান্তর।

আওয়ার ইসলামের হুমায়ন আইয়ুব সাহেবের সাথে সেই ওবাইদুল মুক্তাদির নামক কুলাঙ্গারের সুসম্পর্ক থাকতেই পারে। এ নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। সে তার থেকে টাকা নিয়ে পোর্টাল চালালেও কারো কোন সমস্যা নাই। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে এর আগেও আওয়ার ইসলাম একাধিকবার কওমী সনদ ও হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামিক দল নিয়ে বিতর্কিত সংবাদ প্রচার করে বিশেষ বিশেষ তকমা লাভ করেছিল। এখন আবার তাদের বার্ষিক সম্মেলনে এমন একটা লোককেই দাওয়াত করে আনা হল যে কিনা বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির একজন কিংবদন্তীকে কটাক্ষ করে বসলো।

আরো অবাককর তথ্য দেই। আওয়ার ইসলামের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে উলটো মুক্তাদিরের সেই বক্তব্যের পক্ষে গিয়ে আমাকে তার ব্যাখ্যা শুনালো। তার কথায় "মুফতি ফয়জুল্লাহ সাহেব নাকি মূর্তি আর চেতনা নিয়ে কিসব বলেছেন তাই মুক্তাদির সাহেবকেও ওভাবে বলতে হয়েছে।"
ব্যাপারটা একটু বেশীই মজার হয়ে গেল না? ইসলামিক সম্মেলনেও আজকাল মূর্তির পক্ষে এবং মূর্তির বিপক্ষে, দুই ধরনের চেতনার কথা বলেই ব্যালেন্স করা লাগে! মজা না? মজা তো!

যাইহোক, এটা সেই কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। তবে নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে চাইলে যেকোন গণমাধ্যমকে তাদের অবস্থান পরিস্কার করতে হয়। এইসব লোকজন যারা সরাসরি আমাদের আকাবেরদের নিয়ে ভিত্তিহীনভাবে অভিযোগ তুলে কটাক্ষ করবে তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত ভালবাসাপূর্বক এসব বক্তব্যের নীরবে সয়ে গেলে আমাদেরকে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে যে ইসলামীক এই মিডিয়াটার কাছে আসলেই আদর্শগত পার্থক্যগুলো কোন গুরুত্ববহন করে কিনা। আর যদি গুরুত্ববহন নাই করে থাকে তাহলে বলতেই হবে যে শুধুই ইসলামের নাম বিক্রি করে ব্যবসা করার একটা সুপ্তবাসনা তাদের ভেতরে অবচেতনমনে হলেও কাজ করছে।

আসলে আদর্শিক লড়াইটা ছিল, আছে এবং থাকবে। এরমধ্যে আমার আদর্শ কোনটা সেটা আমাকে অবশ্যই জানতে হবে, এবং ধারণ করতে হবে। মেইনস্ট্রীম বা মূলধারায় আসার দোহাই দিয়ে যারা আদর্শের সাথে আপোষ করাকে হিকমত মনে করে তারা আসলে হিকমতের মানেই বুঝেনা।

মুফতি আমিনী রহঃ আমাদেরকে একটা দুয়া খুব পড়তে বলতেনঃ
اللهم ارنا الحق حقاً وارزقنا اتباعه وارنا الباطل باطلا وارزقنا اجتنابه

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নিজ আদর্শের উপর অটল থাকার তৌফিক দান করুক।


No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...