কমিউনিজম
স্রষ্টার অস্তিত্ব, ওহী ও আখেরাতকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। কমিউনিজমের সাথে যে
কোন ধর্মের সহাবস্থান অসম্ভব হওয়ার মৌলিক কারণ এটাই।
কমিউনিজমের কিছু নীতি আছে। সে সব নীতির উপর ভর করে কমিউনিস্টরা নিজেদের
স্বার্থসিদ্ধি করে থাকে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ
১ ব্যক্তিকে
শ্রেণি সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা।
২ পরিবার প্রথাকে
ধ্বংস করে দিয়ে শ্রেণি সংগ্রামকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আকারে তুলে ধরা।
৩ মানবিক নীতির
একক সত্তা অস্বীকার করে দল ও রাষ্ট্রের সুবিধামত তার ব্যাখ্যা প্রদান করা।
প্রত্যেকটি সমাজ
ব্যবস্থাতেই নীতির রূপায়ণের ক্ষেত্রে পন্থা বা মানহাজ আপেক্ষিক হতে বাধ্য। এই
প্রয়োজনের দিকে লক্ষ করেই ইসলাম ইজতেহাদ ও কিয়াসের সুযোগ রেখেছে। কিন্তু কমিউনিজম
নৈতিক এই ভিত্তিটাকে এতটাই আপেক্ষিক পর্যায়ে টেনেছে যে এর ফলে নৈতিক নৈরাজ্যের
জন্ম হয়েছে।
শ্রমিকদের
অর্থনৈতিক মুক্তিসাধনের প্রতিশ্রুতিকে পুজি করে আধুনিক কমিউনিজমের জন্ম হয়েছিল।
কিন্তু শেষে দেখা গেল অর্থনৈতিক চিন্তাধারার যেই বস্তুবাদী ভিত্তি তারা প্রতিষ্ঠা
করেছে সেটাকেই জীবনের সামগ্রিক একটা দার্শনিক কাঠামো আকারে দাড় করানোর চেষ্টা
চলছে।
কমিউনিজমের
প্রবক্তাদের থেকে বর্ণিত কিছু মূলনীতিঃ
কাল মার্ক্স
বলেছে, “আমাদের কাছে এ জড়জগত ছাড়া আর কোন সত্ত্বা নেই। পৃথিবী বস্তুর নিয়মের
মাধ্যমেই পরিচালিত হয়। এর জন্য কোন সার্বজনীন সত্তা বা খোদার প্রয়োজন নেই”।
বুহারিন প্রোব
ব্যাযেনস্কি তার এবিসি অফ কমিউনিজমে লিখেন, “কোন কমিউনিষ্ট যদি ধর্মে বিশ্বাস করে
তাহলে তার সাথে কমিউনিজমের কোন সম্পর্ক নেই। যেসব শ্রমিকের জীবনে ধর্মের প্রভাব
আছে তাদের ব্যাপারে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। তাদের কাছে এই মতবাদে বিশ্বাসী
করতে সূক্ষ্ম ও সুচতুরভাবে এগোতে হবে”।
এই নীতির কারণেই
চীনদেশে ধর্মের বিরুদ্ধে কমিউনিস্টদের সংগ্রাম অনেকখানি শিথিল করা হয়েছিল।
ইসলাম এবং এর
বিশ্বাসের সাথে যে কমিউনিজমের ঘৃণার চর্চা কতটা ভয়ংকর সেটা এই ঘটনা থেকে বেশ ভাল
বুঝা যায়। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে কমিউনিজমের মতবাদ সম্মিলিত জাতিসংঘের বিভিন্ন
সভা সমিতি হয়। মুসলমান ইসলামকে
অস্বীকার করতে না পেরে অথবা নিরপেক্ষতার মুখোশে আঁচড় পড়ার ভয়ে হলেও এইসব তাদের
করতে হয়। জাতিসংঘ সম্পাদিত মানবাধিকার ঘোষণায় বলা আছে, “আল্লাহর গুণাবলী দিয়ে
মানুষকে তৈরী করেছেন”।
কিন্তু এইটুকুতেই
সোভিয়েত রাশিয়ার আঁতে ঘা লেগে যায়। তারা এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে ঘোর আপত্তি জানায়।
সোভিয়েত প্রতিনিধি অধ্যাপক আলেক্সি প্যাডোলভ বলে দেয়, “মানবিক মর্যাদা ও অধিকারের
দিক থেকে যে মানুষ স্বাধীন ও সমান একথা আমরা অস্বীকার করিনা। কারণ মানব স্বাধীনতা সামাজিক
কাঠামোরই ফলমাত্র। খোদার উপর বিশ্বাস রাখা সামাজিক অনগ্রসতারই নামান্তর”।
সোভিয়েত
অধ্যাপকের এই ঘোষণায় মানুষের মানবিক সত্তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। সবকিছুর ভিত্তি
দাড় করানো হয়েছে সমাজকে। কমিউনিজমের নীতিতে যেমনটা করা হয়ে থাকে।
নৈতিকতা রক্ষায়
কমিউনিজমের এই ব্যর্থতার বিপরীতে ইসলামের সাফল্য থেকে শিক্ষা নেবার মত অনেক কিছু
আছে। খোদার একত্ব ও মানবিক খিলাফতের ওপর ভিত্তি করে মানব স্বাধীনতার স্বীকৃতি
দিয়েছে। এবং অধিকার রূপায়নের ক্ষেত্রে বাস্তব সামাজ ব্যবস্থা ও আপেক্ষিকতার
প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেছে ইজতিহাদ নীতির মাধ্যমে।
প্রসিদ্ধ ফরাসি
ঐতিহাসিক গিজো বলেন, ইসলামই সর্বপ্রথম সামন্তবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
অবশ্য পরবর্তীকালে যে ইসলামী সমাজ গঠিত হয়নি এর জন্য মুসলমানরা দায়ী, ইসলাম দায়ী
নয়।
গণতন্ত্র কথাটি
পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সাম্রাজ্যবাদ সমানভাবে ব্যবহার করে এসেছে
নিজেদের ক্ষমতার রক্ষার জন্য। এতে যদি গনতন্ত্রকে কলুষিত না বলা যায় তাহলে ইসলামকে
ব্যবহার করে যারা নিজেদের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে তাহলে তাদের কারণে ইসলামকে কেন
দোষী সাব্যস্ত করা হবে। এটা নিছকই একটা যুক্তি বুঝানোর জন্য বলা হল। ইসলাম
থিউরিটিকালিও গণতন্ত্রকে সমর্থন করেনা। তবে কোন দিক থেকে যদি গণতন্ত্র ইসলামের
সাথে সামঞ্জস্য রাখে তাহলে সেই অনুযায়ী কর্মপন্থা নির্ধারণে ক্ষতি নেই। ইসলামী
রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়ে যাদের গবেষণা আছে তাদের লেখনি থেকে এমনটাই জানা গেছে।
খাটি ইসলামী সমাজে
মানুষের সম্মান ধন সম্পদের ওপর নির্ভর করেনা। কমিউনিজম বলে ব্যক্তিগত সম্পত্তি
থাকলেই শোষণের সৃষ্টি হয়। ইসলাম বলে ব্যক্তির হাতে সম্পদ থাকলেই সাধারণ মানুষ তার
অধিকার বুঝে পায়। ইসলাম দেখে তার ধন
সম্পদ লাভের উপায় কি বৈধ নাকি অবৈধ। এরপর ইসলাম টাকার পরিমাণের দিকে লক্ষ করে তার
উপর সমাজের গরিবদের দায়িত্ব অর্পণ করে। এইভাবেই ইসলাম সামাজিক ভারসাম্য সৃষ্টি
করে।
সূত্রঃ কমিউনিস্ট
শাসনে ইসলাম- ড. হাসান জামান
No comments:
Post a Comment