Saturday, December 17, 2016

বিপন্ন মানবতার আর্তনাদ (৩)


কাজের ক্ষেত্র ও রাহবারের কৃতজ্ঞতা


গত দুইদিন রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ না শুনানোর পেছনে একটা বিশেষ কারণ ছিল। বিজয়ের ধ্বনিতে উল্লাসিত ফেসবুক নিউজফিডকে দুঃখ-কষ্টমুক্ত রাখা। তবে এবারের বিজয় দিবসে তাদের স্ট্যাটাসগুলো খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করে পড়ার চেষ্টা করেছি  যারা সিরিয়া আর মিয়ানমারের মানচিত্রে রক্তের দাগের ভেতর দিয়ে বিজয় আনন্দ পালনের অর্থ  খুজে পাননি। তখন মনে হয়েছে, কিছু মানুষ এখনো বেচে আছে।
তো গল্পটা থামিয়েছিল শরণার্থী ক্যাম্পের ভেতর। ক্যাম্প নিয়ে একটু বলি। সদ্য ওপাড় থেকে আসা রোহিঙ্গা যারা আছে তাদেরকে খুজে পেলে আশ্রয় দেয়ার নামে নিবন্ধন করে করে সেই বন্দিশালায় আটক করা হয়। এবং কোন ধরনের নূন্যতম নাগরিক সুবিধা তো দূরের কথা, দুবেলা খাওয়ার জন্য উপার্জন করতে চাইলেও এই অসহায় মানুষগুলোকে বেশ বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়। যে ঘরটাতে পাচজন পুরুষ আর পাচজন মহিলা থাকছে তারা দশজনই হয়তো ওপাড়ের দশটা পরিবার থেকে আসা। অনুভূতিগুলো পাথর হয়ে যাওয়ার পর থেকে এভাবে পশুর মত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েই বোধহয় ফেলে আসা অতীতের কষ্টগুলো ভুলে যাবার চেষ্টা করছে তারা। এরপর খাবারের সময় হলে যখন ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ পাচজনের খাবার দশজনকে খেতে দেয়, তখন বাচার তাগিদে তারা শিখে নেয়, কি করে ক্ষুধার্ত হায়নার মত শিকার দেখলেই হামলে পড়তে হয়। যে মানুষগুলোর সামনে দুই প্লেট খাবার এতটা অনিরাপদ সেখানে আপনি যখন ত্রাণ নিয়ে যাবেন আর তারা সেটা বুঝতে পারবে তখন আপনি কতটা নিরাপদ হবেন চিন্তা করেন?
ঘটনাগুলোর প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের লালবাগ জামেয়ার উস্তাদ মাওলানা ইসহাক সাহেব। ক্যাম্পে ঢুকে যাওয়ার পর উনাকে পেছন থেকে পুলিশ ডাক দিয়ে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিল। হুজুর বলেছিলেন যে তিনি কেবলই ক্যাম্পটা ঘুরে দেখতে এসেছেন। পুলিশের কথাবার্তা শুনেও বুঝা যাচ্ছিলো যে পুলিশ হুজুরের কথা বিশ্বাস করছেনা। এরপরও হুজুরকে সাবধান করে ছেড়ে দেয়ার মতলব হল, "আপনারা ত্রাণ দেন সমস্যা নাই, তবে ভুলেও কিন্তু আমাদের চোখের সামনে পইড়েন না।"
ঢাকা থেকে অনেকে আবার ত্রাণ নিয়ে গিয়ে শরণাপন্ন হন স্থানীয় ক্ষমতাসীন নেতাদের। যেই নেতারা দায়িত্ব নিয়ে বেশিরভাগ ত্রাণ বিলি বন্টন নিজ দলের কর্মীদের মাঝেই সেরে ফেলেন। আর অনেকে সাহায্যের জন্য স্থানীয় লোক খুজতে গিয়ে পড়েন দালালের খপ্পরে। দালালরাও নেতাদের মতই। নিজেদের লোকদের রোহিঙ্গা বানিয়ে আপনার সামনে এনে হাজির করবে।
তাই সবচেয়ে নিরাপদ হল, এলাকার স্থানীয়দের মধ্যে যারা তাবলীগের কাজের সাথে জড়িত এমন কাউকে সাথে রাখা। তারা অনেক সমস্যা থেকে বাচাতেও পারেন আবার পুরাতন রোহিঙ্গাদেরও চিনে তাদেরকে লাইন থেকে সরিয়েও দিতে পারেন।
টেকনাফে যাওয়ার পর যেই মানুষটি আমাদের সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করেছেন তিনি হলেন আমাদের ইয়াকুব মামা।  আমরা যাওয়ার আগে থেকেই তিনি অতিগোপনে ও সুকৌশলে স্বার্থহীনভাবে একাই কাজ করে যাচ্ছিলেন। উনি না থাকলে আমাদের কাজের শুরুটা আরো অনেক ধীর গতিতে হত। হয়তো সম্ভবই হতো না। যাওয়ার সাথে সাথেই উনার তাজা তাজা অভিজ্ঞতাগুলো পাওয়াতে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকার পরও শুধুমাত্র আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ফেরার প্রোগ্রাম ক্যানসেল করে দিয়েছেন। মামা! আপনার এসব স্বার্থহীন কাজগুলো আপনার প্রতি ভাল লাগার পরিমাণ সত্যিই অনেক বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহ আপনার সবধরনের খেদমতকে কবুল করুক।
এরপর শুরু হয়ে গেল আমাদের কাজ। আগামী পর্ব থেকে সদ্য আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খুজে বের করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলবো ইনশাল্লাহ।

Wednesday, December 14, 2016

বিপন্ন মানবতার আর্তনাদ (২)


প্রশাসনের গতিবিধি ও হালকা বিশ্লেষণ

বর্ডার গার্ডের এধরণের অস্বাভাবিক আচরণে অবাক হব কিনা বুঝতে পারছিলাম না। মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে এভাবে আমাদের নাম কেন জিজ্ঞেস করছে সে? আবার খুব ধমকের সুরে সাবধানও করে দিচ্ছে আমরা যাতে কেউ নিজেদের পরিচয় গোপন না করি। তবে এরপরের প্রশ্নেই আমাদের কাছে তার অস্থিরতার রহস্য স্পষ্ট হয়ে গেল। ঘটনা হচ্ছে,উপর থেকে তাকে নির্দেশ দেয়া আছে, ঢাকার অমুক ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা থেকে অমুকেকের নেতৃত্বে এই রাস্তা দিয়েই বিশাল ত্রাণের বহর যাবে। তাদেরকে যেকোন মূল্যে আটকাতে হবে। কারণ দুর্ভাগ্যবশত তাদের ঢাকঢোল পিটানোর শব্দটা একটু বেশিই জোরে হওয়াতে প্রশাসনের কান পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। অতএব এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করলাম যে প্রকাশ্যে ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের ব্যাপক আপত্তি আছে।
এবার হালকা বিশ্লেষণের দিকে যাওয়া যাক।
মিয়ানমারে গত দুমাস আগে নতুন করে দাঙ্গা শুরু হওয়ার পরপর রোহিঙ্গারা যখন এপাড়ে আসতে শুরু করেছিল তখন সরকার এদের প্রবেশে বাধা দেয়ার ব্যাপারে খুব কঠোর ছিল।  এদিকে সবাই বলছে, মিয়ানমারকে চাপ দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বাধ্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে এর স্থায়ী সমাধান আসবেনা। কিন্তু এসব "আবেগী" বক্তব্যের উপর আমল করে দেশীয় স্বার্থকে ছোট
করে দেখার সময় এবং সুযোগ আসলেই আমাদের সরকারের নেই। চীনের সাথে ব্যাপক লেনদেনের একটা বিষয় আছে। মিয়ানমারকে চাপ দিলে যদি এ সম্পর্কের অবনতি হয়ে যায়! তাই দেশীয় স্বার্থের কথা ভেবেই হয়তো কিছু বলছেনা সরকার। আচ্ছা, এই ব্যাপারটা কি কেউ লক্ষ্য করেছেন? চীন সরকার যে বিবৃতিটা এক ডিসেম্বর দিয়েছিল, আমাদের সরকার হুবহু সেই কথাটাই নয় তারিখে এসে বলেছে। "সামরিকশক্তি নয় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে।"
অসাধারণ বক্তব্য!
গল্পের এ অংশ পর্যন্ত আমরা প্রথম পর্ব হিসেবে ধরে নিতে পারি। এরপর ধরেন স্ক্রীনে ভেসে উঠলো "ইন্টারভাল"...
পরের পর্বে এসে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে প্রশাসনিক বিধিনিষেধের কঠোরতা রহস্যজনকভাবে কমে আসতে থাকে। বর্ডার শিথিল হয়। কারণ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন মানবতার কথা। আর ইসলামপন্থীদের ব্যাখ্যা হল, আন্দোলনের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে বিধায় সরকার বর্ডার শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। এগুলোর যেকোন একটি বাস্তব হওয়ার সমূহ সম্ভাবনার কথা আমি বিলকুল অস্বীকার করছিনা। তবে এসব কিছুর পূর্বে আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি শুধু সেইদিকটায় একটু ফোকাস করতে চাচ্ছি। এতে করে সেখানকার পরিস্থিতি বুঝতে সহজ হবে।
যদি পত্রিকায় কারো নিয়মিত নজর বুলানোর অভ্যাস থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই জানবেন যে কিছুদিন আগে জাতিসংঘের কফি আনান সাহেব মিয়ানমারে গিয়ে তেমন কোন পাত্তা পাননি। মংডুতে তার চোখের সামনেই মকদস্যুরা রোহিঙ্গা নিধনের বর্বরতার চিত্র প্রদর্শন করেছে। তাই তিনি ফিরে এসে কিছু অভিযোগ তুলে উনার দায়িত্ব পালন করে ক্ষান্ত হলেন। এরপর যা হলো, কিছু মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশকেই মানবতার প্রদর্শন করতে আহবান জানালো। এদিক থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রীও তাদেরকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে বলছেন। খাপে খাপ মিলে গেলনা? আশ্রয় দেয়া যে স্থায়ী কোন সমাধান না এ ব্যাপারে সবাই একমত হওয়ার পরও এই শিথিলতার মানে কি?
এখনো বুঝেননাই ব্যাপারটা। সরেজমিন নিয়ে একটু বলি নাইলে বুঝবেন না।
ওপাড় থেকে আসা রোহিঙ্গারা দুই ধরণেরঃ
১. নিবন্ধিত। তারা শরণার্থী শিবিরে বা ক্যাম্পগুলোতে থাকছে। এরা হচ্ছে পুরাতন অনুপ্রবেশকারী।
২. অনিবন্ধিত। এরা নতুন এসে কারো ঘরে গোপনে আশ্রয় নিয়েছে। যারা সাতই অক্টোবর শুরু হওয়া নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে এপাড়ে এসেছে।
এখন এই পুরাতন যেই রোহিঙ্গারা আছে তারা নিবন্ধিত হওয়ার ফলে জাতিসংঘসহ আরো কিছু সংস্থা থেকে বিরাট অংকের একটা টাকা এদের জন্য আসে। দায়িত্বশীলরা নিজ দায়িত্বে এখান থেকে ব্যাপক লুটপাটও করে থাকেন। তাই রোহিঙ্গারা যতক্ষণ পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের শোষণে অভ্যস্ত লোকদের জন্য ক্ষতির চেয়ে লাভই বেশি। অতএব এসব দায়িত্বশীলদের সাথে পরামর্শ বসলে তো সরকার অবশ্যই রোহিঙ্গা আসতে দিতে বলবেন।
যাইহোক দুইপর্ব বিশিষ্ট এ নাটকে যে সরকার অসাধারণভাবে ব্যালেন্স ধরে রেখেছে সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। হয়তো বিশ্লেষণের ধারাবাহিকতা বাস্তবতা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। হতেও পারে। আমি কেবল আমার খালি চোখে দেখা ঘটনা সামনে রেখে বিশ্লেষণ করেছি।
তবে এটা সত্যি যে যদি সরকারী অনুমতি নিয়ে ত্রাণ দিতে যেতে হয় তাহলে এই নিবন্ধিত পুরাতন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ দিয়েই ফিরে আসতে হবে। প্রকৃত হকদার পর্যন্ত পৌছার সুযোগ খুব একটা নেই। কারণ প্রশাসনের কাছে নতুন রোহিঙ্গারা অবৈধ। সুযোগ সুবিধা পেতে চাইলে তাদেরকে নিবন্ধিত হয়ে সেই ক্যাম্প নামক মৃত্যুকূপে ঢুকতে হবে। কারণ নিবন্ধিত ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এখন আর মানুষ হিসেবে বেচে নেই। ক্যাম্পের পরিবেশ পরিস্থিতি তাদেরকে পশুর মত একটা জীবন যাপন করতে বাধ্য করেছে। এরা এতটাই ক্ষুধার্ত হায়নার মত ভেতরে থাকে যে একবার যদি বুঝতে পারে আপনি ত্রাণ নিয়ে গেছেন গায়ের কাপড়টা নিয়েও ফিরে আসতে দিবে কিনা সন্দেহ। এসব দিক বিবেচনায় আমরা আর ক্যাম্পমূখী হবোনা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সুকৌশলে বাইরে বিভিন্ন ঘরে আশ্রয় নেয়া নতুন রোহিঙ্গাদের নিয়েই কাজ করবো।  এরপরও একদিন আমাদের কাফেলার এক হুজুর ক্যাম্পে ঢুকার সাহস করেই ফেললেন। বাধাহীনভাবে প্রথমে ঢুকেও পড়েছিলেন। হঠাৎ ঠিক পেছন থেকে একজন ডাক শুনে থেমে গেলেন....
(চলবে)

Tuesday, December 13, 2016

বিপন্ন মানবতার আর্তনাদ (১)


শত প্রতিকূলতা ঠেলে নাফ নদীর তীরে

"তাহলে আগামী সোমবার আমরা ত্রাণ নিয়ে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।"
টেকনাফ যাওয়ার আগের বুধবার বিকালে লালবাগ জামেয়ার দফতরে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হল। নাফ নদির ওপাড় থেকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে, সহায় সম্বল সবকিছু হারিয়ে টেকনাফে এসে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যার্থে গঠিত ত্রাণ তহবিলে তখনও কিছুই জমা পড়েনি।
কাজে নেমে পড়লাম। দুদিন যেতে না যেতেই ত্রাণ বিতরণ সংক্রান্ত নানান জল্পনাকল্পনা ও প্রতিবন্ধকতার খবর বাতাসে ভেসে আসতে শুরু করলো। সোমবার দিনটা যতই ঘনিয়ে আসছিল ত্রাণ বিতরণ নিয়ে বহুমুখী বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোরতার একটা আভাষ পাওয়া যাচ্ছিলো। এদিকে প্রচুর শীতবস্ত্রসহ বিরাট অংকের টাকা তহবিলে জমা হয়ে যাচ্ছে। এমন সময়ে এ ধরণের সংবাদ পেয়ে বেশ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়াটাই স্বাভাবিক। চারিদিক থেকে ফোন আসতে শুরু করল, "শুনেছি ত্রাণ নিয়ে নাকি যাওয়া যায় না? প্রশাসন নাকি বাধা দিচ্ছে? তাহলে আপনারা কিভাবে যাচ্ছেন?"
আল্লামা আহমদ শফি সাহেব দা.বা. রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানোর আহবানের খবরটা যেদিন পত্রিকায় এসেছে ঠিক সেদিনই আমরা উদ্যোগটা নিয়েছিলাম। আমাদের দায়িত্বশীল উস্তাদগণের মাধ্যমে হাটহাজারীতে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। যতটুকু বোঝা গেল, বাতাসে ভেসে আসা খবরগুলোর আংশিক সত্যতা ছিল। তবে একদিন যেতে না যেতেই খুব আশাব্যঞ্জক একটা সংবাদ পেলাম। আহমদ শফি সাহেব
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে এ ব্যাপারে ফোনে কথা বলেছেন। এবং মন্ত্রী ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিকভাবে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ সংবাদ পেয়ে আমাদের কাজের গতি বেড়ে গেল।
ঠিক রওনা হবার দিন জানতে পারলাম, আহমদ শফি সাহেবকে দেয়া প্রশাসনের এ অনুমতি কেবলই মৌখিক।  তাই অন্য কেউ ত্রাণ বিতরণ করতে পারবে কিনা এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না। সিদ্ধান্ত হল, আমরা প্রথমে হাটহাজারী যাবো, এরপর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
মংগলবার ফজরের পরপর আমরা হাটহাজারী পৌছলাম। সেখানকার দায়িত্বশীলদের সাথে খোলামেলা আলাপ করে বুঝতে পারলাম যে সরকারী অনুমতির কোন অগ্রগতি নেই। ফোনের আলাপে যা জেনেছিলাম পরিস্থিতি এখনো সেখানেই আটকে আছে। সরকার দিবে দিবে করে এখনো লিখিত অনুমতি দেয়নি। তাই হাটহাজারীও প্রকাশ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য আরো দু'চারদিন অপেক্ষা করবে। আমরা তখনই বুঝে নিয়েছি যে হাটহাজারী ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নিলে তাতে বাধাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা প্রবল।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনো প্রশাসন তাদের সেই "দুইদিনে"র আশা দিয়ে রেখেছে। আর তারাও স্বীকৃতির মত "গুরুত্বপূর্ণ" বিষয় নিয়ে অতিব্যস্ত সময় পার করছে। জোরদার আন্দোলন করে মায়ানমারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ কেন করছেনা সেটা ভাবছেন? কেন? এটা কি হেফাজতের দায়িত্ব  নাকি? আচ্ছা, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ফরিদ উদ্দিন মাসুদ সাহেবের বক্তব্য কি? অং সান সুচিকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কি কোন "ফতুয়া" সাক্ষরিত হচ্ছে?
থাক সেসব কথা। প্রশাসনের প্রতিশ্রুত সেই "দুইদিন" অপেক্ষার সময় ও সুযোগ তখন আমাদের হাতে ছিল না। আর এত সহজে আমরা ফিরেও আসছিনা। দায়িত্ব যখন নিয়েই ফেলেছি যে করেই হোক এই ত্রাণ মানুষের হাতে হাতে পৌছে দিতে চেষ্টার কোন ত্রুটি করবোনা আমরা। কতদূর যেতে পারবো সে ফায়সালা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। তবে এটা সত্যি যে বর্ডার গার্ডরা কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যেও মানবতার দিকটি প্রাধান্য পেয়েছিল। এসব কিছু বিবেচনায় আমারা ধারণা করেছিলাম যে কাজটা করার ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হতে পারলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। ধারণাটা একেবারেই ভুল ছিলনা।
হাটহাজারী থেকে আসর পড়েই রওনা হলাম। কক্সবাজার পৌছতে রাত হল। কক্সবাজারে রাত কাটানোর বিষয়টা অবশ্য পূর্বপরিকল্পিত ছিল। কারণ টেকনাফে ঢুকতে বর্ডার গার্ডের কড়া পাহাড়াদারীতে থাকা সাতটি চেকপোষ্ট পাড়ি দিতে হয়। ফজরের পর রওনা হলে সেসব চেকপোস্টে সেনাবাহিনীরা গাড়ি খুব একটা থামায় না। কারণ কেবলমাত্র সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উদ্দেশ্য হলেই সাধারণত এত সকালে কেউ এই পথে যায়। এটা নিত্যদিনকার ঘটনা। তাও একেবারে শেষ চেকপোস্টটায় গাড়ি থামানো হল। কড়া নির্দেশের ভঙ্গিতে একজন আর্মি গাড়ির সামনে এসে দরজা খুলতে বলল। ভাবসাব দেখে মনে হল, সে আমাদের ব্যাপারে আগে থেকে কোন সংবাদ পেয়ে গেছে। কিন্তু আমরা তো এত ঢাকঢোল পিটিয়ে আসিনি, তাহলে সে এতসব জানবে কোত্থেকে!.....
(চলবে)

Thursday, October 20, 2016

লালবাগ জামেয়ায় মুসা আল হাফিয


আগেই বলে নিচ্ছি, এটা একটা দাওয়াতনামা। আগামীকাল ২০ অক্টোবর ২০১৬ ইং, বাদ মাগরীব লালবাগ জামেয়ার ইফতা বিভাগে আপনার দাওয়াত। সুযোগ হলে চলে আসবেন। দেখা হবে। এবার কিসের দাওয়াত এটা বুঝতে চাইলে স্ট্যাটাসখানা কষ্ট করে পড়তে হবে। 

মুসা আল হাফিজ সাহেবের গবেষণামূলক গ্রন্থ "প্রাচ্যবিদদের দাতের দাগ"। পড়া হয়েছিল গত বছর। তখন থেকেই ওরিয়েন্টালিজমের ব্যাপারটা একটু আধটু বোঝা শুরু করেছি। আরবীতে যেটাকে বলে ইস্তেশরাক। এরপর পড়া হয়ছিল এডওয়ার্ড সাইদের ওরিয়েন্টালিজম। বিষয়টা হলো, আরব সভ্যতা ও ইসলাম নিয়ে পশ্চিমা গবেষকগণ নানানরকম কল্পকাহিনী সাজিয়েছে। এরসাথে নিজস্ব কিছু গলদ ধারণা ও অনুমানকে যোগ করে ইচ্ছাকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেদের মধ্যে এসব ভুল ধারণার চর্চা করে বেড়িয়েছে। উদ্দেশ্য হল, ইসলামকে পশ্চিমাদের কাছে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা। দুঃখজনক বিষয় হল, ষড়যন্ত্রটা তারা আমাদের নিয়ে করলেও গভীর জ্ঞানগত জায়গায় এধরণের সুচারু আক্রমণের বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানাশোনা একেবারেই শূন্যের কোঠায়। ঘটনাটা অনেকটা এমন যে চিন্তা আমাদের, সভ্যতাও আমাদের, তবে সেটা ব্যাখ্যা করে দেবে অন্য কেউ। এবং তাও হবে তাদের নিজস্ব বুঝ ও ভাষা অনুযায়ী। 

এই কাজটা তারা বেশ নীরবে নিভৃতে ঘটিয়ে ফেললেও ইসলামের উপর এই আঘাতটা অত্যন্ত মারাত্মক। তবে যেহেতু এ আঘাতে মুসলমানদের দেহে জখম হয়না, জখমটা হয় গিয়ে দেমাগে, মানে একেবারে মগজের ভেতর তাই ইসলামের উপর এই আঘাতের ফলে ক্ষরণ হয়ে বেয়ে পড়া রক্তের স্রোত অনেকেই দেখতে পায় না। অসচেতন মুসলমানদের খুব বিচক্ষণতার সাথে ব্রেইনওয়াশ করা হয় এই অপকৌশলের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ হল, আরব দেশগুলো সহ ভারত পাকিস্তানের ওলামাগণ ব্যাপক সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে বহু আগ থেকেই এ বিষয়ের উপর লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং একাডেমিকভাবে এই প্রাচ্যবিদের চক্রান্তকে পাঠ করার ব্যবস্থাও সচেতন ওলামা সমাজে জারি আছে।

আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের বাংলাদেশেও পাশ্চাত্যের এসব চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী করার লক্ষ্যে বেশ দীর্ঘ সময় যাবত গভীর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন আমাদের অমূল্য রত্ন, জীবন্ত কিংবদন্তী মাওলানা মুসা আল হাফিজ সাহেব। এ বিষয়ের উপর তার বেশ গবেষণাধর্মী ও মূল্যবান লেখাজোখা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা সেমিনারের মাধ্যমেও সচেতনতা গড়ে তোলার ব্যাপক প্রয়াস চালাচ্ছেন তিনি। তারই ধারাবাহিতায় তিনি দুইদিনের সফরে ঢাকা এসেছেন। এবং গতকাল বাসাবো মাদরাসাতুল হুদায় তার ইস্তেশরাক বা ওরিয়েন্টালিজম নিয়ে বেশ সারগর্ভ আলোচনা করেন তিনি। আগামীকাল বাদ মাগরিব লালবাগ জামেয়ার ইফতা বিভাগের ছাত্রদের সাথে তিনি কিছু সময় ব্যয় করবেন। মূল্যবান আলোচনা রাখবেন ওরিয়েন্টালিজম বা প্রাচ্যবাদ নিয়ে। আশেপাশের মাদরাসা থেকে আরো অনেকেই আসবেন। যাদের পক্ষে আসা সম্ভব হয় অবশ্যই অংশগ্রহণের চেষ্টা করবেন।




লালবাগ জামেয়ার দারুল ইফতায় আয়োজিত ওরিয়েন্টালিজম শীর্ষক সেমিনারে সারগর্ভ আলোচনা রাখছেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ সাহেব

Thursday, October 6, 2016

বদরুলের বিচার চাইতে গেলেও হুমকি!

"খাদিজা নির্যাতন প্রতিরোধ মঞ্চ" থেকে বদরুল সাহেব কর্তৃক সংগঠিত সেই নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে একটা আন্দোলন হচ্ছিলো। নেতৃত্বে ছিলো ফজিলাতুন্নেসা নামে এক শিক্ষার্থী। সে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী না। আজ তার মায়ের ফোনে ফোন করে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে "যেখানেই তোকে পাবো সেখানেই খাদিজার মতো কুপিয়ে মারবো।" ফজিলাতুন্নেসার বাবা নেই। এবং তার পরিবারেও এমন কেউ নেই যে এখন তাদের নিরাপত্তা দিতে পারে।
ক্ষমতাসীনদের অন্যায়ের প্রতিবাদে ন্যায় বিচার চাওয়ার পর এ ধরণের পরিণামগুলো আজকাল স্বাভাবিকই বলা চলে। কারণ এসব ঘটনার পর আসামী যে উনাদের দলের কেউ না এটা প্রমাণ করতে তাদের বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। কে কালে হুমকি দিলো এতসব দেখার সময়টা কোথায়?
এদিকে আমরা পুরুষরা যখন চুড়ি পরে ঘরে বসে থাকার দায়িত্ব নিয়েই নিয়েছি তখন তো ফজিলতুন্নেছাদের ঝুকি নিয়ে মাঠে নেমে আসার কোন বিকল্পও নেই। কাল তাকে যদি আরেকটি খাদিজা হতে হয়? সেই ভয় অবশ্যই তার আছে। তাই আত্মরক্ষার তাগীদে হলেও বিচারের দাবীতে তাদের মাঠে নামতে হচ্ছে। তবে এটা স্পষ্ট যে, এতে তার কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিলো না। সে এখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই ঝুকিটা নিয়েছিলো। সরকার মহোদয়ের কাছে দাবী শুধু এতটুকুই যে এই অন্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিটা একবার দিন। এরপর দেখুন তারা এসব ধৃষ্টতা প্রদর্শনের সাহস পুনরায় দেখাতে পারে কিনা!
জানিনা বর্তমান সময়ের করুণ বাস্তবতাকে অতিক্রম করে সরকার মহোদয়ের কানে তাদের এই বিচার চাওয়ার আর্তনাদ আদৌ পৌছবে কিনা। তবে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে ফজিলাতুন্নেসারা এই বাস্তবতার আদলেই এভাবে হুমকির স্বীকার হয়ে যাবেন। এবং বাকিরা তার থেকে মুখে কুলুপ এটে বসে থাকার সবক নিবেন। আজ যদি আপনার পরিবারে কারো সাথে এর চেয়েও মারাত্মক কিছু ঘটে, কিছু বলার আগে আপনি দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য হুমকীর কথা ভাববেন। আপনিও প্রতিবাদ করবেন না। ভাববেন যে বিপদ একটা এসেছে, সহ্য করে কাটিয়ে দেই। কথা বললে বিপদ আরো বাড়বে।
তো বেশ ধারাবাহিকতার সহিত অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস, ক্ষমতা অথবা এধরণের কোন প্রবণতা না থাকাটা এখন সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন সব কিছু দেখে নির্বাক তাকিয়ে থাকা ছাড়া তেমন বিশেষ কিছু হয়তো করারও নেই। তবে আমরা একটা কাজ করতে পারি। আমাদের সর্বোচ্চ ঘৃণাটুকু বরাদ্দ রাখতে পারি সেইসব নরপিশাচ ও তাদের মদতদানকারী সম্প্রদায়ের জন্য। যাতে সেই ঘৃণা থেকে এসব অন্যায়ের প্রতিরোধের কিছু পরিকল্পনা উঠে আসে। তাহলে হাদিসে বর্ণিত অন্যায়ের প্রতিবাদের সর্বশেষ ধাপটুকু অন্তত মেনে চলা হবে। "ওয়াজালিকা আজআফুল ইমান"। এতে হয়তো একটা সময় প্রতিবাদের প্রথম ধাপ "ফাবিয়াদিহ" এর উপর আমল করার তৌফিকও আল্লাহ দিয়ে দিবেন।

Tuesday, October 4, 2016

বদরুলের ছাত্রলীগীয় কোপের ক্ষমতার উৎস

এতো বড় সাহস কোথায় পেলো খাদিজা?  ছাত্রলীগ সহ-সম্পাদকের সাথে ছলনা! এতো স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকেও জঘন্য অপরাধ। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে তো এই ছলনাময়ী নারীকে কোপানোটা বদরুল সাহেবের একান্ত কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। বদরুল সাহেবরা এখনো যে এইসব দায়িত্ব পালনকে নিত্যদিনের ঘটনা বানিয়ে ফেলেননি এটাই তো এসব "ছলনাময়ী নারী"দের উপর উনার বিরাট মেহেরবানী।
দেখেন ভাই, বদরুল সাহেবরা এখন ক্ষমতায়। উনাকে দোষ দিতে গিয়ে অযথা বিপদে পড়ে কোনই লাভ নাই। তার চেয়ে আসেন ক্ষমতা নিয়া আলাপ করি।
ক্ষমতা যখন নিজেই নিরাপত্তার বলয় সেজে তার অধীনস্থদের আশ্রয় দিয়ে বেড়ায় তখন এর ছায়াকে কেউ ব্যবহার করলে তাকে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী বলা যায়না।
কারণ সংকটগুলোকে ক্ষমতা নিজেই তৈরী করে রেখেছে। আজকে ক্ষমতা যদি ছায়াময় বটবৃক্ষ  আকারে বদরুল সাহেবের ওপরে হাজির না হতো তাহলে কি তিনি পারতেন এইভাবে জনসম্মুখে চাপাতিবাজী করার সাহস দেখাতে?
পৃথিবীটা যেহেতু নৈতিকতার আবরণে মোড়ানো না তাই এসব ঘটবেই। অতঃপর সেখানে আপনার আমার কিছু করণীয় থাকবে। এটাই তো নিয়ম। তবে কখনো প্রেক্ষাপট বিবেচনায় কিছু ফ্যাক্টস আমলে নিতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত এই নিয়মগুলো ভেঙে ফেলি। ফ্যাক্টগুলো হলো,
আপনি যখন অন্যায়ের প্রতিপক্ষ আকারে দাড়ানোর সাহস করবেন তখন প্রতিবাদের ধরনটা নির্ভর করবে আপনার ক্ষমতার উপর। রাষ্ট্র যতই স্বার্থপর হোক, কখনোই সে এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারবেনা যে নৈতিকতার জায়গা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার ক্ষমতা সে তার প্রত্যেকটা নাগরিককে দেয়। সমস্যাটা হয়, যখন অন্যায়ের ছোটখাটো কোন প্রতিবাদ করতে গিয়েও আপনি নিজের প্রতিবাদী সত্ত্বাকে ঘুমন্ত দেখেন। তখন বুঝে নিতে হয় যে অবচেতনভাবেই আপনার পিঠের ওপর আপনি ক্ষমতার চাপাতি ঠেকিয়ে রাখাকে অনুভব করছেন। ক্ষমতার সাম্রাজ্য তখন একচেটিয়াভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। এবং ধীরে ধীরে তা এতটাই প্রকট হয় যে নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে নৈতিকতার তাগিদে আপনি মুখ খোলার সাহস এবং চিন্তার মত দুটো বিপ্লবী অনুভূতি হারিয়ে ফেলেন।
এইখানেই ক্ষমতার বিশাল এক সংকটের বহু আলাপ জমা হতে থাকে। অনেক প্রতিভাবানরা মাঝে মাঝে নিজ কাধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে সচেতন সমাজকে কিছু আলাপ বুঝিয়ে দেয়। ধরিয়ে দেয় সংকটগুলো আসলে কোথায়। ইফতেখার জামিল তাদেরই একজন। সত্যিকার অর্থে একজন ইফতেখার জামিলে অভাব অনুভব করছি।
তুই যেখানেই থাকিস, যে অবস্থাতেই থাকিস, আল্লাহ তোকে সবরে জামিল এখতিয়ারের তৌফিক দিক।

Wednesday, September 21, 2016

শ্যামলবাংলা রিসোর্ট ও আমাদের একদিন

যাওয়ার কথা ছিল মনপুরা, যাওয়া হলো শ্যামল বাংলা। মনপুরার সেই বিশেষ ট্যুরটা নস্যাৎ করার দায় যাদের উপর চাপানোর কথা তারা আগেভাগেই সাইকেল নিয়ে সুদূর চাটগাঁও পাড়ি জমিয়েছেন। আর এ নিয়ে তাদের কোনরকমের দোষারোপের সুযোগ যাতে না পাওয়া যায় সেজন্য তাদের একজন জানিয়েও দিয়েছেন যে তারা খুব টাফ পিরিয়ড পার করছেন। Shakil ভাই অবশ্য তাদের সেই অজুহাতীয় পোষ্টে সর্বকালের সেরা সান্তনাটাই দিয়েছেন। "প্রথম প্রথম তো... ঠিক হয়ে যাবে..."  এত জিনিয়াস কেমনে ব্রো!

এখন কথা হচ্ছে, তাদের অতসব অজুহাত শোনার মত পর্যাপ্ত সময় আমাদের হাতে নাই। অতএব এই "হুটহাট ট্যুর"এর আয়োজন আমাদের করতে হয়েছে। তবে ট্যুরের এই যুগোপযোগী নামকরণটা Jubayer ভাই নিজে করে থাকলেও সকাল সাতটার আগ পর্যন্ত নাকি তিনি নিজেই নিশ্চিত ছিলেন না যে ট্যুরটা হচ্ছে। এটা তথ্যটা Abdullah ভাইয়ের মুখে শুনে তাকে কিছু একটা বলবো ভাবছিলাম। কিন্তু রোহিতপুরের সেই সর্বকালের সেরা খিচুড়ির সন্ধানে নিয়ে গিয়ে জুবায়ের ভাই সেই বলার সুযোগটা আর বাকি রাখলেন না। আপনেও সো জিনিয়াস ভাই! 

নাস্তা সেরে সেখান থেকে "আট মিনিটে" কেরানীগঞ্জ ইকোপার্ক। নতুন একটা রিসোর্ট হয়েছে। জায়গাটা পরিসরে কিছুটা ছোট হলেও সময় কাটানোর জন্য খুব একটা মন্দ না। সুইমিংপুলের পানিতে আধো আধো সাতারের চেষ্টায় শরীর ব্যাথা করার মধ্যে একটা উপভোগ্য ব্যাপার ছিল। আরো নানান বিষয় ছিল যে কারণে এই রিসোর্টটাকেও জিনিয়াস বলা যায়। 

ওয়াটএভার, আই এম সো থ্যাংকফুল টু অল দিজ গুড পিপল যাদের সাথে যাওয়ার কারণে আজকের মিনি ট্যুরটা অসাধারণ হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এত এত গেট টুগেদার আর আড্ডার ফলে আমাদের ফ্রেন্ডশীপটা এতটাই গভীর হয়েছে যে আমরা নিজেরাও ভুলে যাই যে আমাদের পরিচয়ের শুরুটা ছিলো কেবলই একটা সোসাল নেটওয়ার্কের থ্রুতে। বেশ রিফ্রেশিং কিছু ট্যুর অথবা দীর্ঘ সময় ধরে জমিয়ে আড্ডা দেয়ার পর যখন এটা মনে পড়ে, খুব অবাকই লাগে। আর তখন ছোট্ট করে একটা থ্যাংকস দেই ফেসবুককে। আবার দ্যাট মোমেন্ট যখন দিনশেষে ফেরার পথে Abu Bakar ভাই কোন বড় হুজুরের কাছে এই বলে ধরা খায় যে "হুজুর! আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত" তখন আবার ঠিকই তারে আচ্ছা মতন ধোলাই দেই সবাই মিলে। Rashidul ভাই! ইজন্ট দ্যাট হিপোক্রেসি! তবে ভাই, আর যাই বলেন, সারাদিনের সেই হাই প্রোফাইল ম্যানার কিন্তু আপনে ডিনার টেবিলে ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২২০ টাকার জন্য এক মিনিট নিরবতা



Sunday, September 11, 2016

পশু কুরবানী ও মানবতাবাদ

কুরবানীকে কেন্দ্র করে মুসলমানদের এই "নির্মম তরিকায় পশুহত্যা"র মাঝে যেসব প্রজাতির অতিদরদী মানবরা মানবতা বা সামাজিকতা খুজে পাননা তাদের থেকে আমরা প্রায়ই বেশ আপত্তিকর কিছু প্রশ্ন শুনে থাকি। অবান্তর সেসব প্রশ্নের জবাবে আরিফ আজাদ ভাই তার সময়োপযোগী এই গল্পটা নিজ ব্লগে পোষ্ট দিলেন। লিংক দেয়ার জন্য লিংকদাতাকে অশেষ ধন্যবাদ। ওর্থ শেয়ারিং মনে হলো তাই লেখার শেষ অংশটুকু শেয়ার করলাম।

"আমরা রসুলপুরে পৌঁছাই ভোর সাড়ে চার'টে তে। তখন কিছু কিছু জায়গায় ফজরের আজান পড়ছে।যেখানে নেমেছি, সেখান থেকে বেশকিছু পথ হাঁটতে হবে।
খানিকটা হেঁটে একটা মাটির ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। বুঝতে পারলাম, এটা মসজিদ।ভেতরে একটি কুপি বাতি মিটমিট করে জ্বলছে।
ব্যাগপত্র রেখে দু'জনে ওজূ করে নিলাম। মসজিদে মানুষও আমরা তিনজন। আজব! তিন সংখ্যাটা দেখি একদম পিঁছু ছাড়ছেনা।লঞ্চেও ছিলাম তিনজন। মসজিদে এসেও দেখি আমরা তিনজন।
নামাজ শেষ হয়েছে একটু আগে। আমরা বসে আছি মসজিদের বারান্দায়।আরেকটু আলো ফুঁটলে বেরিয়ে পড়বো। ঈমাম সাহেব আমাদের পাশে বসে কোরআন তিলাওয়াত করছেন। মাঝারি বয়স। দাঁড়িতে মেহেদি লাগিয়েছেন বলে দাঁড়িগুলো লালচে দেখাচ্ছে। উনি সূরা আর রহমান তিলাওয়াত করছেন। 'ফাবি আইয়্যি আলা-য়্যি রাব্বিকুমা তুকাযযিবান' অংশটিতে এসে খুব সুন্দর করে টান দিচ্ছেন। পরান জুড়ানিয়া।
আর রাহমান তিলাওয়াত করে উনি কোরআন শরীফ বন্ধ করলেন। বন্ধ করে কোরআন শরীফে দুটি চুমু খেলেন।এরপর সেটাকে একবার কপালে আর একবার বুকে লাগিয়ে একটি কাপড় দিয়ে পেঁছিয়ে একটা কাঠের তাকে তুলে রাখলেন।
আমরা লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি। লোকটা আমাদের দিকে ফিরে বললেন,- "আমনেরা কি শহর হইতে আইছেন?"
সাজিদ বললো,- 'জ্বি।'
-"আমনেরা কি লেহাপড়া করেন?"
সাজিদ আবার বললো,- 'জ্বি।'
-"মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ। আমনেরা শহরে পইড়্যাও বিগড়াইয়া যান নাই। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।"
লোকটার কথা আমি ঠিক বুঝিনি। সাজিদ বুঝেছে। সে জিজ্ঞেস করলো,- 'চাচা, শহরে পড়াশুনা করলে বিগড়িয়ে যায়, আপনাকে কে বললো?'
লোকটা হঠাৎ গম্ভীরমুখ করে বললেন,- 'হেইয়া আবার কেডায় কইবে বাপ! মোর ঘরেই তো জন্মাইছে একখান সাক্ষাৎ ইবলিশ।'
- 'কি রকম?'- সাজিদের প্রশ্ন।
- 'মোর এক্কুয়াই পোলা। পড়ালেহা করতে পাডাইল্যাম ঢাকার শহরে। হেইনে যাইয়া কি যে পড়ালেহা করসে! এহন কয়, আল্লা-বিল্লা কইয়া বোলে কিস্যু নাই। এই যে, এহন তো বাড়ি আইছে। আইয়া কইতেয়াছে কি বোঝঝেন, কয় বোলে কোরবানি দিয়া মোরা ধর্মের নামে পশুহত্যা হরি। এইগুলা বোলে ধর্মের নাম ভাইঙ্গা খাওনের ধান্দা হরি মোরা। কিরপিক্যা যে এইডারে ঢাকায় পড়তে পাডাইল্যাম বাপ! হালুডি হরাইলে আইজ এই দিন দেহা লাগতে না!"
লোকটার সব কথা আমি বুঝতে পারিনি। তবে, এইটুকু বুঝেছি যে, লোকটার ছেলে ঢাকায় পড়ালেখা করতে এসে নাস্তিক হয়ে গেছে।
সাজিদ বললো,- 'আপনার ছেলে এখন বাড়িতে আছে?'
- 'হ'
সাজিদ আমার দিকে ফিরে বললো, - 'দেখেছিস, মেঘনার এতো বড় বুকেও কিন্তু নাস্তিকদের বসবাস আছে। হা হা হা।'
সিদ্ধান্ত হলো ছেলেটার সাথে দেখা করে যাবো।
সকাল ন'টায় ছেলেটার সাথে আমাদের দেখা হলো।বয়সে আমাদের চেয়ে ছোট হবে। জিজ্ঞেস করে জানলাম, ছেলেটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিষয় নিয়ে পড়ছে। ফাষ্ট ইয়ারে। নাম- মোঃ রফিক।
সাজিদ রফিক নামের ছেলেটার কাছে জিজ্ঞেস করলো,- 'কোরবানি নিয়ে তোমার প্রশ্ন কি?'
ছেলেটা বললো,- 'এইটা একটা কু-প্রথা। এভাবে পশু হত্যা করে উৎসব করার কোন মানে হয়?'
সাজিদ বললো,- 'তুমি কি বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছু জানো?'
ছেলেটি চোখ বড় বড় করে বললো,- 'আপনি কি আমাকে বিজ্ঞান শিখাচ্ছেন নাকি? ইণ্টারমিডিয়েট লেভেল পর্যন্ত আমি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম।'
সাজিদ বললো,- 'তা বেশ। খাদ্যশৃঙখল সম্পর্কে নিশ্চই জানো?'
- 'জানি। জানবো না কেনো?'
- 'খাদ্যশৃঙখল হলো, প্রকৃতিতে উদ্ভিদ আর প্রাণীর মধ্যকার একটি খাদ্যজাল। যেসব উদ্ভিদ সূর্যের আলো ব্যবহার করে নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করে নেয়, তাদের বলা হয় উৎপাদক। এই উৎপাদককে বা সবুজ উদ্ভিদকে যারা খায়, তারা হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর খাদক.......'
ছেলেটা বললো,- 'মশাই, এসব আমি জানি। আপনার আসল কথা বলুন।'
ছেলেটার কথার মধ্যে কোনরকম আঞ্চলিকতার টান নেই।তাই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছেনা।
পাশ থেকে ছেলেটার বাবা বলে উঠলেন,- 'এ, হেরা বয়সে কোলং তোর চাইয়া বড় অইবে! মান-ইজ্জত দিয়া কথা কইতে পারোনা?'
ছেলেটা তার বাবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। সে দৃষ্টিতে পড়াশুনা জানা ছেলের মূর্খ বাবার প্রতি অবজ্ঞার ছাপ স্পষ্ট।
সাজিদ বললো,- 'বেশ। তোমাদের গরু আছে?'
- 'আছে।'
- কয়টা?'
ছেলেটার বাবা বললেন,- 'হ বাপ, মোগো গরু আছে পাঁচখান। দুইডা গাই, এক্কুয়া ষাঁড় গরু। লগে আবার বাছুরও আছে দুইডা!
- 'আচ্ছা রফিক, ধরো- তোমাদের যে দুটি গাভি আছে, তারা এইবছর দুটি করে বাচ্চা দিলো। তাহলে তোমাদের মোট গরুর সংখ্যা হবে ৯ টি।ধরো, তোমরা পশু হত্যায় বিশ্বাসী নও।তাই, তোমরা গরুগুলো বিক্রিও করো না। কারন, তোমরা জানো, বিক্রি হলেই গরুগুলো কোথাও না কোথাও  কোরবানি হবেই।ধরো, এরপরের বছর গরুগুলো আরো দুটি করে বাচ্চা দিলো।মোট গরু তখন ১৩ টি। এরপরের বছর দেখা গেলো, বাচুরগুলোর মধ্য থেকে দুটি গাভি হয়ে উঠলো, যারা বাচ্চা দিবে।এখন মোট গাভির সংখ্যা ৪ টি। ধরো, ৪ টি গাভিই এরপরের বছর আরো দুটি করে বাচ্চা দিলো।তাহলে, সে বছর তোমাদের মোট গরুর সংখ্যা কতো দাঁড়ালো?'
ছেলেটির বাবা আঙুলে হিসাব কষে বললেন,- 'হ, ১৯টা অইবে!'
সাজিদ বললো,- 'বলোতো রফিক, ১৯ টা গরু রাখার মতো জায়গা তোমাদের আছে কিনা? ১৯ টা গরুকে খাওয়ানোর মতো সামর্থ্য, পর্যাপ্ত ভূষি, খৈল, ঘাস আছে কিনা তোমাদের?'
- 'না'- ছেলেটা বললো।
- 'তাহলে, আল্টিমেইটলি তোমাদের কিছু গরু বিক্রি করে দিতে হবে। এদের যারা কিনবে তারা তো গরু কিনে গুদামে ভরবে না, তাই না? তারা গরুগুলোকে জবাই করে মাংশ বিক্রি করবে। গরুর মাংশ আমিষের চাহিদা পূরণ করবে,আর চামড়াগুলো শিল্পের কাজে লাগবে, তাই না?'
- 'হুম'
- 'এটা হলো প্রকৃতির ব্যালেন্স। তাহলে,প্রকৃতির ব্যালেন্স ঠিক রাখার জন্য পশুগুলোকে জবাই করতেই হচ্ছে।সেটা এমনি হোক, অথবা কোরবানে।'
ছেলেটা বললো,- 'সেটা নিয়ে তো আপত্তি নেই।আপত্তি হচ্ছে, এটাকে ঘিরে উৎসব হবে কেনো?'
সাজিদ বললো,- 'বেশ! উৎসব বলতে তুমি হয়তো মিন করছো, যেখানে নাচ-গান হয়, ফূর্তি হয়, আড্ডা,ড্রিংকস হয়। মিছিল হয়, শোভাযাত্রা হয়, তাই না? কিন্তু দেখো, মুসলমানদের এই উৎসব সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে নাচ-গান নেই,আড্ডা-মাস্তি নেই।ড্রিংক'স নেই, মিছিল-শোভাযাত্রা নেই।আছে ত্যাগ আর তাকওয়ার পরীক্ষা।আছে, অসহায়দের মুখে হাসি ফোটানোর প্রাণান্তকর চেষ্টা-তদবির।সমাজ থেকে শ্রেণী বৈষম্য দূর করে, ধনী-গরীব সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়। এরকম উৎসবে সম্ভবত কার্ল মার্ক্সেরও দ্বিমত থাকার কথা না। কার্ল মার্ক্স কে চিনো?'
ছেলেটা এরপর কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো।তারপর বললো,- 'আরজ আলি মাতুব্বরকে চিনেন আপনি?'
সাজিদ বললো,- 'হ্যাঁ, চিনি তো।'
- 'কোরবানি নিয়ে উনার কিছু যৌক্তিক প্রশ্ন আছে।'
- 'কি প্রশ্ন, বলো?'
ছেলেটা প্রথম প্রশ্নটি বললো। সেটি ছিলো-
'আল্লাহ ইব্রাহীমের কাছে তার সবচাইতে প্রিয় বস্তুর উৎসর্গের আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, ইব্রাহীমের কাছে সবচাইতে প্রিয় বস্তু তার ছেলে ইসমাঈল না হয়ে তার নিজ প্রান কেন হলো না?'
সাজিদ মুচকি হেসে বললো,- 'খুবই লজিক্যাল প্রশ্ন বটে।
আমি যদি আরজ আলি মাতুব্বরের সাক্ষাৎ পেতাম, তাহলে জিজ্ঞেস করতাম, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে, তাদের কাছে তাদের নিজের প্রাণের চেয়ে দেশটা কেনো বেশি প্রিয় হলো? কেন দেশ রক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণটাকে মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিলো?
দুটো জিনিসই সেইম ব্যাপার। ইব্রাহিমের কাছে নিজের চেয়েও প্রিয় ছিলো পুত্রের প্রাণ, আর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নিজের চেয়ে প্রিয় ছিলো নিজের মাতৃভূমি।
কিন্তু, পরীক্ষার ধরন ছিলো আলাদা। ইব্রাহিমকে বলা হলো, প্রিয় জিনিস কুরবানি করতে, আর মুক্তিযোদ্ধাদের বলা হলো- প্রিয় জিনিস রক্ষা করতে।কিন্তু, আমরা দেখতে পেলাম - দু দলের কারো কাছেই প্রিয় বস্তু নিজের প্রাণ নয়।
সুতরাং, আরজ আলি মাতুব্বরের মাতব্বরিটা এইখানে ভুল প্রমানিত হলো।'
ছেলেটা কাঁচুমাচু করে দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো।
আরজ আলি মাতুব্বর বলেছেন,- 'আল্লাহ পরীক্ষাটা করেছেন ইব্রাহিমকে।ইব্রাহিমের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেই পরীক্ষাটা কেন তার অনুসারীদের দিতে হবে?'
সাজিদ বললো,- 'এইটাও খুব ভালো প্রশ্ন। আমরা মুহাম্মদ সাঃ কে অনুসরন করি। তাহলে, আমরা কি বলতে পারি যে,- কই, আমাদের উপর তো জিব্রাঈল আঃ ওহী নিয়া কখনোই আসে নাই। তাহলে, মুহাম্মদের উপরে আসা ওহি আমরা কেনো মানতে যাবো? বলো, প্রশ্নটা কি আমরা করতে পারি?'
ছেলেটা চুপ করে আছে। সাজিদ বললো,- 'আরজ আলি মাতুব্বরের Leader & Leadership বিষয়ে আদতে কোন জ্ঞানই ছিলো না। তাই তিনি এইরকম প্রশ্ন করে নিজেকে সক্রেটিস বানাতে চেয়েছিলেন।'
ছেলেটা তার তৃতীয় প্রশ্ন করলো-
'আরজ আলি মাতুব্বর বলেছেন,- নবী ইব্রাহিমকে তো কেবল পুত্র ইসমাঈলকে কোরবানি করা সংক্রান্ত পরীক্ষায়ই দিতে হয়নি, অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হবার মতো কঠিন পরীক্ষাও তাকে দিতে হয়েছিলো। তাহলে, মুসলমানরা ইব্রাহিমের স্মৃতি ধরে রাখতে পশু কোরবানি করলেও, ইব্রাহিমের আরেকটি পরীক্ষা মতে- মুসলমানরা  নিজেদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে না কেনো?'
আরজ আলি মাতুব্বরের আগের প্রশ্নগুলো আমার কাছে শিশুসুলভ মনে হলেও, এই প্রশ্নটিকে অনেক ম্যাচিউর মনে হলো। আসলেই তো। দুইটাই ইব্রাহীম আঃ এর জন্য পরীক্ষা ছিলো। তাহলে, একটি পরীক্ষার স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা যদি পশু কোরবানি করি, তাহলে নিজেদের অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করি না কেনো?
পদ্মা থেকে সাঁ সাঁ শব্দে বাতাস আসতে শুরু করেছে।
সাজিদ বললো,- 'রফিক, তার আগে তুমি আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাও। তুমি কি শেখ মুজিবকে ভালোবাসো? তার আদর্শকে?'
ছেলেটা বললো,- 'অবশ্যই। তিনি না হলে তো বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকতো না। তিনি আমাদের জাতির পিতা।'
- 'তুমি ঠিক বলেছো। শেখ মুজিব না হলে বাংলাদেশ হয়তো কোনদিন স্বাধীনই হতো না। সে যাহোক, শেখ মুজিবকে জীবনে দুটি বড় ধরনের পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো।
প্রথমে, একটা দেশকে স্বাধীন করার লড়াইয়ে সামনে থেকে নের্তৃত্ব দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, স্বপরিবারে খুন হওয়া। আমি কি ঠিক বললাম রফিক?'
- 'হু'
- 'এখন, তুমি শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারন করো। তুমি ৭১ এর চেতনায় নিজেকে বলিয়ান ভাবো। তুমি ৭ ই মার্চে বিশাল মিছিলে যোগদান করো। ১৬ ই ডিসেম্বরে সভা-সমাবেশে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু বলে শ্লোগান দাও। কিন্তু, ১৫- ই আগষ্টে রাস্তায় বেরিয়ে কোনদিন বলেছো- হে মেজর ডালিমের বংশধর, হে খন্দকার মোস্তাকের বংশধর, তোমরা কে কোথায় আছো, এসো- আমাকেও মুজিবের মতো স্বপরিবারে খুন করো', বলো কি?'
আমি সাজিদের কথা শুনে হো হো হো করে হাসা শুরু করলাম। ছেলেটার মুখ তখন একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। সাজিদ আবার বলতে শুরু করলো,- 'তুমি এটা বলো না।শেখ মুজিবের আদর্শ বুকে ধারন করে এরকম কেউই এটা বলেনা। যদি কেউ এরকম বলে, তাহলে তাকে মানুষে বলবে,- 'কি ব্যাপার? লোকটাকে কি ভাদ্র মাসের কুকুরে কামড়িয়েছে নাকি?'
সাজিদের কথা শুনে এবার রফিকের বাবাও হা হা হা করে হাসতে লাগলো। ছেলেকে পরাজিত হতে দেখে পৃথিবীর কোন বাবা এত খুশি হতে পারে, এই দৃশ্য না দেখলে বুঝতামই না।
আমরা রসুলপুরের পথে হাঁটা ধরলাম।পদ্মাপাড়ের জনবসতিগুলো দেখতে একেবারে ছবির মতো। নিজেকে তখন আমার হোসেন মিয়ার ময়না দ্বীপের বাসিন্দা মনে হচ্ছিলো। আর সাজিদ?  তাকে আপনারা আপাতত হোসেন মিয়া রূপেই ভাবতে পারেন।"

Tuesday, September 6, 2016

ইসলামের দৃষ্টিতে খারেজীদের বিধান

---মুরতাদের ব্যপারে সাহাবাদের ইজমাঃ
সন্দেহের ভিত্তিতে শরিয়তের কোন ফরজকে অস্বীকার করলে তাকে পুনরায় বিশ্বাস স্থাপনের আহ্বান জানানো হবে। যদি তারা লড়াইয়ে প্রস্তুত হয় তাহলে হুজ্জত পূর্ণ করার পর তাদের সাথে লড়াই করা হবে। আত্মসমর্পণ করলে তো ভাল অন্যথায় কাফেরদের সাথে যেই আচরণ করা হয় তাই করা হবে। অর্থাৎ হত্যা করেয়া হবে এবং তার ধন সম্পদ গনীমত বলে গন্য হবে। হত্যাটা হবে কুফুরের ভিত্তিতে।
দলিলঃ যারা ইসলামের মূলের উপর বহাল ছিল কিন্তু সন্দেহের কারণে যাকাত আদায় করতে অস্বীকার করেছিল তাদের বিপক্ষে পরিপূর্ণ হুজ্জত আসার আগ পর্যন্ত তাদেরকে কাফের সাব্যস্ত করা হয়নি। [হাফেয ইবনে হাজার]

---আহলে কেবলা হওয়া সত্ত্বেও খারেজীরা কাফেরঃ
দলিলঃ ১- আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত, "ইয়াম্রুকুনা মিনাদ দিনী মুরুকাস সাহমী মিনার রমিয়্যাতি, ফাইয়ানযুরুর রামি ইলা সাহমিহি ফাইয়াতামারা ফিল ফুরকাতি হাল আলিকা বিহা মিনাদ দামি শাইউন" "নিক্ষেপকারী তীরটির আগাগোড়া সন্দেহের দৃষ্টিতে পরিক্ষা করে যে তাতে কি কিছু লেগে আছে কিনা। অর্থাৎ তাদের দ্বীন থেকে বের হওয়াটা সেই শিকারীর তীরের মত যা শিকারকে ভেদ তো করে গেছে কিন্তু তাতে কোন নিশানা নেই।
মুরুক শব্দ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, তারা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে কিন্তু নিজেরাও টের পাবেনা।
২- ইমাম বুখারী খাওয়ারেজ এবং মুলহিদের কতলের প্রবক্তা। যা বুঝা যায় ইমাম বুখারীর তরজমাতুল বাব কায়েমের ধরণ দেখে "বাবু কাতলিল খাওয়ারিজী অয়াল মুলহিদিন বা'দা ইকামাতিল হুজ্জাতি আলাইহিম"
৩- খারেজীরা প্রত্যেক সেই ব্যক্তিকে কাফের বলে থাকে যারা তাদের আকিদা বিশ্বাস বিরোধী। আর মুসলিম শরিফের হাদিস অনুযায়ী যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে কাফের বলে প্রকৃতপক্ষে যদি সে কাফের না হয়ে থাকে তাহলে বক্তা নিজেই কাফের হয়ে যায়।[কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী]
৪- উচু মর্যাদার সাহাবীদের কাফের বলাটা হুজুর সা কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। কেননা হুজুর নিজে তাদের জান্নাতি হওয়ার সাক্ষ্য দিয়েছেন। [আল্লামা সুবকি]
৫- হযরত আলীর রেওয়ায়েতে বুখারীর হাদিসে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ আইনামা লাকিতুম ফাকতুলুহুম, ফাইন্না ফি কাতলিহিম আজরান লিমান কাতালাহুম ইউমাল কিয়ামাহ।
৬ কাফের হওয়ার জন্য ইসলাম ছেড়ে অন্য ধর্মে প্রবেশ করার ঘোষণা দেওয়া জরুরী না। বরং কুফুরী মতবাদ উক্তি ও আমল অবলম্বন করাই কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

প্রশ্নঃ খারেজীরা তো নিজেদের মুসলিম ভাবে। তাহলে কাফের কিভাবে বলা যায়?
উত্তরঃ হাদিসে এসেছে "ইয়াকুলুনাল হাক, ও্যা ইয়াকরউনাল কুরআন, ও্যা ইয়াম্রুকুনা মিনাল ইসলামি লা ইয়াতাআল্লাকু মিনহু বিশাইইন"
হক কথা বলতে থাকবে কুরআন পড়তে থাকবে কিন্তু ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে
এবং ইসলামের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবেনা।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, গাল মন্দ কটুক্তি ছাড়াও যেমন ইরতেদাদ পাওয়া যায় তেমনি ধর্ম পরিবর্তনের সংকল্প ছাড়াও কুফুরী পাওয়া যায়। যেমন ইবলিস রুবুবিয়াতের অস্বীকার করা ছাড়াই কাফের হয়েছে।

-- উদ্দেশ্যের বিপরীত কুরানের ব্যাখ্যা এবং হারামকে হালালকরণঃ
খারেজীরা মুসলমানদের জান মালকে হালাল মনে করে কুরানের কিছু আয়াতের উদ্দেশ্যের বিপরীত তাবীলের মাধ্যমে। [ইবনে তাবারী]
দলিলঃ ইবনে আব্বাসের রেওয়ায়েত খারেজীরা মুহকাম আয়াতের উপর ইমান আনে কিন্তু মুতাশাবিহাতের ব্যাখ্যায় ধ্বংস হয়।

খারেজীদের কাফের না বলার ব্যাপারে মতঃ
ইলমুল কালামের আলেমদের মতে খারেজিরা ফাসেক। কারণ হচ্ছে তারা শুধু একটি বাতিল তাবীলের আশ্রয়ে নিজেদের বাদে সকল মুসলমানদের কাফের বলে থাকে।
কাফের না বলার কারণ হল তারা নিজেদের তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করে থাকে। কাফের না বলাটা জমহুরের ওলামারও মত। তবে গোমরাহির ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।
দলিলঃ হাদিসে "ইয়াতামারা" শব্দটি সন্দেহপূর্ণ। আর সন্দেহের দ্বারা কুফুর প্রমাণিত হয় না।

তবে হাফেজ ইবনে হাজার এ দলিলের জবাব দিয়েছেন। কেননা হাদিসের ভিন্ন রেওয়ায়েতে আরো দুইটি শব্দ পাওয়া যায়। যার দ্বারা ইয়াকীন পাওয়া যায়। "লাম ইউলাক মিনহু বিশাইইন" "কদ সাবাকাল  ফারসু ওয়াদ দামু"। এই তিন রেওয়ায়েতের সামঞ্জস্যবিধান হল, প্রথমে তীর নিক্ষেপকারী সন্দীহান থাকলেও পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে তার তীর শিকার ভেদ করেছে। কিন্তু এত দ্রুত হয়েছে যে তার মধ্যে রক্তের নাম নিশানাও নেই।

ইমাম কুরতুবীঃ খারেজীদের কাফের হওয়ার বিষয়টি কাফের না হওয়ার বিষয়টি বেশি স্পষ্ট।

--খারেজীদের কাফের বলা না বলার মধ্যে পার্থক্যঃ
কাফের বললে তাদের সাথে যুদ্ধ করা যাবে।  কাফের না বললে যারা ইসলামী হুকুমতের বিরোধিতা করে যুদ্ধে নেমে পড়েছে তাদের সাথে রাষ্ট্রদোহী মুসলমানদের মত আচরণ করা হবে। অর্থাৎ যারা মারা গেল তো মারাই গেল আর যারা বেচে যাবে তাদেরকে বিদ্রোহ করার শাস্তি দেওয়া হবে। শাস্তি প্রদানের ভার শাসকের উপর ন্যস্ত হবে। তিনি চাইলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।

--খারেজীদের সাথে যুদ্ধ করা বেশী জরূরীঃ
হেকমত হচ্ছে, খারেজীদের সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য হলো ইসলামের মুল পুজি অর্থাৎ দ্বীনকে হেফাজত করা। আর কাফের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ানো ও অমুসলিমদের সংখ্যা কমানো। কাফেরদের সাথে যুদ্ধে মুনাফা ও উপকারীতা অর্জন হয়। আর এটা স্পষ্ট যে মুনাফা হেফাজত থেকে মূলপুজির হেফাজত গুরুত্বপূর্ণ। আর খারেজীরা ইহুদী নাসারাদের চেয়েই বেশী ক্ষতিকর ইসলামের জন্য।

--খারেজীদের তাবীলে সমস্যাঃ
ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ এই আয়াতের বাহ্যিক অর্থ উদ্দেশ্য নিয়ে তারা হযরত আলীর হুকুমকে অমান্য করেছিল। কারণ তিনি একজন হাকাম মেনে নিয়েছিলেন। [এই বক্তব্যের তাহকীক লাগবে] অথচ নিয়ম হল বাহ্যিক অর্থ যদি ইজমায়ের পরিপন্থি হয় তাহলে তাবীল করা লাগবে।

--খারেজীদের ব্যাপারে হুকুমঃ
হাদিস দ্বারা তাদের সাথে যুদ্ধের অনুমতি প্রমাণিত হয়। হযরত আলি রা বলেন, যদি তারা ন্যায়পরায়ণ বাদশাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাহলে তাদের সাথে যুদ্ধ করো। আর যদি জালেম বাদশাহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও বিদ্রোহ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না।
ইবন্র হজার আসকালানী বলেন, কারবালার ময়দানে ইয়াজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হাররাতে উকবা ইবনে মুসলিমের বাহিনীর বিরুদ্ধে মদিনাবাসীর যুদ্ধ, মক্কাতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের বিরুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের যুদ্ধ এই প্রকারের মধ্যেই শামিল।

--খারেজীদের ব্যাপারে ইমাম গাজ্জালিঃ
খারেজীদের হুকুমের ব্যাপারে দুইটি সুরত। এক- মুরতাদের হুকুম লাগানো হবে। দুই- রাষ্ট্রদোহী মুসলমান আখ্যায়িত করা হবে।
খারেজীদের মধ্যে দুটি দল আছে। একদল হল, যারা ইসলামী শাসকদের সাথে বিদ্রোহ করে এবং লোকদের নিজেদের বাতিল আকিদা মানতে বাধ্য করে। এ দলটি নিশ্চিত কাফের। দ্বিতীয় দল হচ্ছে, যারা নিজেদের আকিদা মানতে বাধ্য করে না। শুধুমাত্র ক্ষমতা দখল করার জন্য ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এদের উদ্দেশ্য যদি  জালেমের জুলুম থেকে মুক্ত করা আর দীনকে হেফাজত করা তাহলে তারা আহলে হক। আর যদি জোশের বশবর্তী হয়ে বিদ্রোহ আর যুদ্ধ করে চাই তাদের মধ্যে কোন গোমরাহী পাওয়া যাক বা না যাক তারা নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রদ্রোহী

--খারেজীদের ব্যাপারে মুসান্নেফ কাশ্মিরী রহ-
যারা খারেজীদের কাফের বলার পক্ষে নয় তারাই আবার "কাফের" আর "কাফের নয়" দুইভাগে ভাগ করলেন। ইবনে হাজার নিজেও কাফের আখ্যায়িত করার পক্ষে না, তবুও তিনি কাফের আখ্যায়িত না করার দলিলসমূহের জবাব দিয়েছেন। মুসান্নেফের ফায়সালা হল, যে ব্যক্তি কোন মুতাওয়াতের বিষয়কে অস্বীকার করবে তাকে কাফের বলা যাবে। ইয়াম্রুকুনা শব্দে যদিও সন্দেহ থেকে থাকে কিন্তু ইবনে মাজার হাদিস দ্বারা কাফের হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। "কদ কানা হা-উলা-ই মুসলিমিনা ফাসারা কুফফারান। 

Friday, August 26, 2016

কওমী স্বীকৃতির আলাপ নিয়ে একরাত

এখানে সবকটা কওমীয়ান। মাঝে মাঝে তারা এমন আলাপ জমায়। আজকে নিজেদের বিষয় নিয়েই জমিয়েছিল।
বহুলালোচিত স্বীকৃতি তারা নিবে কি নিবেনা সেই সুদীর্ঘ আলোচনায় এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে শুধুমাত্র একটা সেলফির জন্য পোজ দেয়ার সময়টা বের করতে রাত একটা বেজে গেলো।


সেদিনের আলোচনা জমেছিল বেশ। ভিডিওগুলো আরেকটু সাজিয়ে গুছিয়ে করলে ইউটিউব বা ফেসবুকে আপলোড দেয়া যেত। 



Friday, August 12, 2016

তিনমাসের জায়গায় তো এক বছর হতে চললো!

১২ই আগস্ট
সারাদিন কিছু ভাল কাজ করার চেষ্টা করে দিনের শেষে যখন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে খুব বাজে রকম কিছু ঘটে যায় তখন সেটাকে কি দুর্ঘটনা বলা যায়? হয়তো যায়। কিন্তু খুব কাছের মানুষরা যে সেটাকে অত সহজে মেনে নিতে পারবেনা এটাই নিয়ম।

সত্যি Farhad ভাইয়া! আগে যদি বুঝতাম এমন কিছু ঘটবে তাহলে আমি গতকাল ঢাকার বাইরে যাওয়ার প্রোগ্রামটা একেবারে বাদই দিয়ে দিতাম। আসলে ভালমত নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিলাম যে আজকে সন্ধার আগে আমি ঢাকা থাকতে পারবো। কিন্তু আমাদের দেশের রাস্তাঘাটের অবস্থা তো জানোই। যেখানে আমার তোমার সাথে বসে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কথা সেখানে আমি রাত নয়টায় বসে ছিলাম গাবতলির জ্যামে।
জানি এইসব ওজর আপত্তিতে এখন আর কোন কাজ হবে না। জীবনে কোনদিন যেই পরিমাণ রাগ কারো সাথে করোভনাই সেটা আজকে আমার সাথে করবা এটাই স্বাভাবিক। আমার নিজের কাছে সত্যিই কিন্তু অনেক খারাপ লাগতেছে। সেই ছোট্টবেলা থেকে সবসময় এত একসাথে থাকার পরও এই বিশেষ দিনটায় তোমার সাথে থাকবোনা এটা ভাবিও নাই কোনদিন।

আচ্ছা বাদ দাও না! এটা একটা দুর্ঘটনা ছিল তো! এই শুভ দিনেও কেউ এত রাগ কইরা থাকে? আচ্ছা তুমি ভাবীর সাথে পরামর্শ কইরা আমার জন্য যতটা সম্ভব কঠিন একটা শাস্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারো। আমি পরামর্শ সভার যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত। 
একটু কি কমলো রাগটা? আরেহ, আমার সাথে রাগ কইরা থাকতে পারবানা জানি। আর ধইরা নাও যে আমি বিয়েতে ছিলাম। অনেক ব্যস্ততার কারণে হয়তো দেখা হয়নাই। এইবার একটু হাসো না ভাই! খুশি হও এবং অনেক সুখী হও। অনেক কাছের মানুষ হিসাবে আমার পক্ষ থেকে শুভকামনাটাও কিন্তু অনেক অনেক বেশী।


১৪ই আগস্ট
ওলিমায় এসে খাওয়া দাওয়া শেষে 
সব মেহমানরা বসে 
একটাই প্রশ্ন করলেন মুরুব্বির বেশে।
"মাহদি!তোমারটা কবে?" 
আমিও একটাই উত্তর দিয়েছি, 
"আপনারা তো মুরুব্বী,
দিন তারিখ ঠিক করার দায়িত্ব তো আপনাদেরই নিতে হবে।"

সাথে মনে করিয়ে দিলাম
বরের জন্মের তিনমাস পরই আমি এসেছিলাম ভবে,
নিয়ম বলে, বিয়ের ব্যাপারেও এ তফাৎটা অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে।
সবশেষে গাড়ির পেছন সিটে নববধূর মাথা নিজ কাধে নিয়ে যখন রওনা হয়ে গেল তার বর,
আমি বুঝলাম, খুব বেশী দেরী করা ঠিক হবেনা।
ভেতরে তো শুরু হয়েই গেছে তুমুল বেগে ঝড়। 


আসহাবে কাহাফের ইভেন্টে বন্যার্তদের পাশে

ট্রেন যখন থামলো। মনে পড়লো যে আমাদের তো একটা সেলফিও তোলা হল না। শেষ মুহূর্তে তোলা হয়েছিল এই একখনাআ ছবি।





এক ট্রলারে ত্রাণ পাঠিয়ে আরেক ট্রলারে আমরা যমুনার কড়া রোদের সাথে একটু প্রেম চর্চা করে নিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই জামালপুরের বন্যার্তদের মাঝে ভালবাসা বিতরণ শুরু করতে হবে যে!








স্থানটা কালিরচর, ইসলামপুর। ট্রলারে দুইঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়েছে বন্যার্ত অসহায় মানুষগুলোকে খুজতে। এটা আজকের প্রথম স্পট ছিল। সেখানে তিনশো পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এরপর দুটি স্পটে আরো দুইশো পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শেষে আসহাবে কাহফ টিম এখন ঢাকার পথে।

যাইহোক, এই ছবিতে আমার সুরতে যেই ছেলেটাকে দেখতে পারছেন তাকে আমি ভেবে ভুল করবেন না। আমি কিন্তু আমার পকেটে। ছবিতে গলায় ঝুলানো কার্ডটি ভাল করে দেখুন। এই ছেলেটি নেসার উদ্দিন রুম্মান। এই মহৎ ইভেন্টের মূল উদ্যোক্তা


Monday, August 8, 2016

ইফতেখারের গ্রেফতার ও সুযোগসন্ধানী মন্তব্যের জবাব

এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলাম। যখন প্রশাসন নিজ মুখে স্বীকার করবে যে ইফতেখার নির্দোষ।

নিখোঁজ হওয়ার পরদিন সকালেই কাউসার ভাইয়ের সাথে যখন মোহাম্মাদপুর থানায় ইফতেখারের খোজ নিতে গিয়েছিলাম পুলিশ তখন সরাসরি অস্বীকার করে বসেছিলো। ভেতর থেকে এক বন্দির ইশারায় ইফতি ভেতরে আছে বুঝতে পেরে যখন দ্বিতীয়বার ডিউটি অফিসারকে একটু খোজ নেয়ার অনুরোধ করতে গেলাম তখন আমাকেই ভেতরে ভরে দেয়ার ভয় দেখালো। পরিচয় দেয়ার পর খাতা খুলে দেখালো। আগেররাতে আটক করা বারোজনের মধ্যে ইফতেখারের নাম নেই। তাহলে কি ইফতেখারকে তারা গুম করর ফেলতে চেয়েছিল? করতে চাইলেও এটা এখন বলা যাবেনা। এই ছিল ঘটনার শুরু। এরপর থেকে এমন আরো বহু ঘটনা ঘটে চলছে যেগুলো শুধু চুপচাপ দেখেই যেতে হচ্ছে। চাইলেই বলা যাবেনা, লিখাও যাবেনা।

কিন্তু খুবই খারাপ লাগে, যখন আপনি ইফতেখারের সাথে দুএকদিনের পরিচয়ে অতিদরদ নিয়ে তারপক্ষে প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিছু না জেনেই সরকার বিরোধী স্ট্যাটাস লিখতে বসে যান। এটা তো আজকাল একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। অনেক অনেক লাইক কমেন্ট পেয়ে সহজে আপনার এই সেলেব্রিটি হওয়ার লোভ যে ইফতেখারের জন্য বিপদ ডেকে আনবে এটা আপনাকে কে বুঝাবে? আর কেউ তো ফরহাদ মাজহারকে এখানে টেনে এনে গালি দিয়ে প্রমাণ করতে চাচ্ছেন ইফতেখার তার দ্বারা প্রভাবিত। 

একটা সত্যি ঘটনা বলি। হেফাজতের সময় যখন ফরহাদ মাজহার হেফাজতের পক্ষে লিখতো এবং হেফাজত নেতা কর্মী সমর্থক নির্বিশেষে সবাই মযহার সাহেবের প্রশংসা পারলে পাচমুখ দিয়ে করতো তখন আমি ইফতেখারকেই একমাত্র দেখেছি ফরহাদ মযহারের ভুলের দিকগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে। 

ভাই, দশ বছ ধইরা একসাথে পড়ি। ক্লাসে পাশাপাশি বসি। এইসব নিয়া আমার থেকা তর্ক কেউ বেশী করেনাই। তর্কে বিরোধিতা করতে গিয়া আমি তারে অনেক ট্যাগ দিতে পারলেও কখনো জামাত ট্যাগ দিয়ে পারিনাই। তার চিন্তায় জামাতের সমস্যাগুলা খুব স্পষ্ট ছিল।
অতএব সে কি দ্বারা প্রভাবিত আর কি চিন্তা লালন করে এটা দুইদিনের পরিচয়ে আপনে খুব বেশি বুইঝা ফেলার ভাব যখন নেন তখন বিষয়টা খুব বেশী ফালতু টাইপ কিছু হয়া দাঁড়ায়।

এইসব কিন্তু আসলে কোন কাহিনী না। এই যে তাকে জামাতী বলে মামলা দেয়া এটার পিছনে আসল কাহিনীটা কি জানার চেষ্টা করেছেন? দোষটা কি আসলেই সরকারের বা কোন বিপ্লবীর যে তারে প্রভাবিত করতে চাইছিল? সেটা জানতে হলে তো কাওসার ভাই (ওর বড় ভাই)এর সাথে কথা বলতে হবে। আর যারা এই কেসটা নিয়ে দিনরাত দৌড়াচ্ছে তাদের কাছ থেকে শুনতে হবে। আর যদি আপনার অত সময় না থাকে তাহলে এই ***মার্কা স্ট্যাটাস দিয়া আলগা দরদ আপনে দেখাইতে আইসেন না।

কিছু দুষ্টচক্র চাচ্ছেই তাকে সরকার বিরোধী প্রমাণ করে নিজেদের দল ভারী করতে। এইটা একটা গেম। আপনি নিজের অজান্তে এতে অংশ নিচ্ছেন। 
যদি ইফতেখারের জন্য আসলেই কিছু করতে চান তাহলে তার ভাল যেই দিকগুলা জানেন সেগুলো নিয়ে স্ট্যাটাস দিন। ইতিমধ্যেই কয়েকজন ইফয়েখারের প্রতিভা, মেধা, চিন্তার শুদ্ধতা নিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। উপর মহল থেকে বহু তদবীরের পর আজকে যেই সুসংবাদ আসলো, এতে এই ইতিবাচক স্ট্যাটাসগুলোরও বেশ ভাল একটা ভূমিকা ছিল বলে আমি মনে করি। অনেক কৃতজ্ঞতা তাদের সবার প্রতি।

Friday, August 5, 2016

বন্যাদুর্গতদের পাশে লালবাগ জামেয়ার সাথে


২রা আগস্ট,২০১৬

এইতো তিনদিন আগের কথা। বন্যার্ত মানুষগুলোর দুঃখ কষ্ট দেখে কেবল হাহাকার ছাড়া করার মত তেমন কিছুই পাচ্ছিলাম না। ওদিকে রুম্মান ভাই একলাই বন্যা ইস্যুতে সবাইকে সক্রিয় করার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর আওয়াজ তুললেন মুসা ভাই। জানতে পারলাম অপু ভাই আর জুবায়ের ভাইও ভিক্টিমদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। এতগুলো মানুষ পাশে পেয়ে মনে হলো কিছু একটা করার সুযোগ এসেছে। যোগ দিলাম কাহাফ ব্যাটেলিয়নে। সাকিব ভাই, সাইফ ভাই, ফায়সাল ভাই, মাহমুদ ভাই, এবিসি ভাই ও এমদাদ মামা সহ আরো অনেকে এগিয়ে এলেন। রোকন ভাই তার মিডিয়া আওয়ার ইসলামকে আমাদের পার্টনার বানিয়ে দিলেন। প্রচুর সাপোর্ট আসতে লাগলো সবদিক থেকে। 

বন্যার্তদের নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায় এ নিয়ে কাহফিয়ানদের চ্যাটগ্রুপে পরামর্শ শুরু হলো। সিদ্ধান্ত হলো সবাই প্রাথমিকভাবে নিজ নিজ মাদরাসায় ক্যাম্পেইন করবে। সে মোতাবেক গতকাল আমি মাদরাসার ভেতর কাজ করার জন্য অনুমতি নিতে গেলাম দায়িত্বশীল হুজুরদের কাছে। কথা বলতে বসে বন্যার প্রসঙ্গ তুলতেই হুজুররা জানালেন লালবাগ মাদরাসা ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই সপ্তাহে ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর আমাকে লিফলেট বানাতে পাঠানো হলো আমাকে। আসহাবে কাহাফের রুম্মান ভাইয়ের লেখা এত সুন্দর ডেসক্রিপশন থাকতে আবার কষ্ট করে কেন লিখতে যাবো? শুধু নামটা চেঞ্জ করে দিলাম কপি মেরে। 

এইভাবেই মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে একই সাথে দুইটা গ্রুপের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছি। আসলে ভেতরের মানবতাবোধটাকে জাগিয়ে তুলতে পারলে একটা মানুষ যে কতটা অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে এটা দেখতে পাচ্ছি। সত্যিই অভিভূত হচ্ছি। এখনো এমন কিছু ভাল মানুষ বেচে আছে যারা সুযোগ পেলে মানুষের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে জানে। কালেকশন করতে নেমে মনে হচ্ছে সবাই টাকা হাতেই বসে ছিল। শুধু দেওয়ার জায়গাটাই পাচ্ছিলোনা।

আপাতত এই শুক্রবার পর্যন্ত মাদরাসার কাজ নিয়ে অফলাইনে একটু ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। তবে আসহাবে কাহাফের কাজটাও চলতে থাকবে পাশাপাশি। কাহাফের জন্য আমার যেই বিকাশ নাম্বারটা আছে এখন পর্যন্ত সেই একাউন্টের সংগ্রহ দশ হাজার টাকা। সাকিব ভাইয়ের একাউন্টেও আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভাল অংকের টাকা জমা হয়েছে।



সবকাজ বেশ তাড়াহুড়োর বধ্যেই করেছিলাম। তখনকার লিফলেট দিয়ে পোষ্ট যেটা দিয়েছিলাম ফেসবুকেঃ
লালবাগ জামেয়ায় ছাত্র শিক্ষক ও এলাকাবাসীর ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাড়ানোর। আগামী শুক্রবার বাদ আসর ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দুর্যোগ কবলিত এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা করা হবে।
যারা শরিক হতে চান সহায়তা পাঠাতে পারেন লিফলেটে উল্লেখিত বিকাশ নাম্বারে।





৬ই আগস্ট ২০১৬ এর স্ট্যাটাসঃ
রওনা হয়ে গেলাম বন্যার্তদের ত্রাণ নিয়ে। গন্তব্য গাইবান্ধা। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর একটি। খোজ খবর নিয়ে বিতরণকেন্দ্র চূড়ান্ত করতে ও ত্রাণ তহবিলে আরো কিছু যোগ করতে বড়দের পরামর্শে নির্ধারিত দিবসের একদিন পরই রওনা হতে হলো। কেবলমাত্র চারদিনের কালেকশন। প্রথম দুইদিনে তো আমি নিজেও নিশ্চিত ছিলাম না যে আসলেই নিয়ে যাওয়ার মত ত্রাণ হবে কিনা। কারণ লাখ দেড়েক যা উঠেছিলো তার অর্ধেক তো যাওয়া আসাতেই খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু ফয়সালাটা যে উপর থেকেই করা হয়েছিল সেটা গতকাল জুমার পর বেশ ভালভাবে উপলব্ধি করলাম। কারণ জুমার পরের সংগ্রহে বেশ বড় একটা অংক ত্রাণ তহবিলে জমা পড়ে গেল। এবং তখন এলাকার অনেকেই আরো একটা দিন সময় চাইলো। আলহামদুলিল্লাহ, সবার সহযোগিতায় লালবাগ টিম আগামীকাল প্রায় চারশত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যাচ্ছে।

গত কয়েকদিনে খোজখবর নিয়ে যা মনে হলো, দেশের বন্যাপ্লাবিত এলাকাগুলোর পরিস্থিতি যতটা ভয়াবহ তার সিকিভাগও মিডিয়া তুলে ধরছেনা। দেশের জনগণকে হতাশ করতে চায়না বলেই হয়তো এসব বন্যার্তদের অসহায়ত্বের প্রদর্শন একটু কম করে প্রদর্শন করছে তারা। তাছাড়া মিডিয়ার কাছে তো রামপাল ও জঙ্গি ইস্যুসহ আরো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি পড়ে আছে খেয়াল করার মত। যেসব মানুষদের রান্না করার ব্যবস্থাটা পর্যন্ত নেই, কলা বা বাশের ভেলায় বিকল্প পদ্ধতিতে রান্না করে কোনও রকম জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছে তারা আর যাই হোক মিডিয়ার লাখ টাকার ক্যামেরার লেন্সগুলোর দৃষ্টি নিজেদের দিকে ফেরানোর ক্ষমতা রাখেনা। কারণ আজকাল অসহায়ের আর্তনাদ শোনাতে যতটুকু ক্ষমতার প্রয়োজন ততটুকু ক্ষমতা তাদের নেই।

গাইবান্ধার একটা উপজেলার কিছু তথ্য দেই। শুধু ফুলছড়ি উপজেলায় ভেঙ্গে গেছে প্রায় ছয়টি ব্রীজ। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায় ৪০টি কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আরো তলিয়ে গেছে তিন হাজার চার শত ৪০ হেক্টর জমির আউস, রোপা আমন, আমন বীজতলা ও শাকসবজি। ফলে বাজারে শাকসবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বন্ধ হয়ে গেছে ২৫৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। 

আসলে এতকিছুর মাঝে আমাদের এতটুকু প্রচেষ্টা সত্যিই খুব সামান্য। কিন্তু এতটুকু করার সামর্থ্য থাকার পরও যদি একেবারেই কিছু না করতাম তাহলে যিনি এই সামর্থ্যটুকু দিয়েছিলেন তার কাছে অবশ্যই এর জবাবদিহিতা করতে হতো।





চলছে বিতরণ
ঠিক যেখানটায় দাঁড়িয়ে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তিনদিন আগেও তার অনেকটাই পানিতে ডুবে ছিল। দেয়ালগুলোতে কোমর পর্যন্ত পানির দাগ এখনো খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আর মানুষগুলোর চেহারায় যে ছাপ পরিস্ফুটিত হচ্ছিলো সেটাকে অসহায়ত্ব বললে যথেষ্ট হবে কিনা জানিনা। কারণ এই মলিন চেহারাগুলোকে বোঝাতে কোন শব্দ যদি ব্যবহার করতে চাই তাহলে সে শব্দের প্রকাশ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। খুব কঠিন হয়ে গেল মনে হয়। 
আমার কাছে তাদের জীবনটা এর চেয়ে বহুগুণ বেশী কঠিন মনে হয়েছে। তাও তো তারা বেচে আছে। একটু সাহায্যের আশায়। একটু ভালবাসার আশায়। 

ফুলছড়ির একশত ত্রিশ পরিবার ও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এক মাদরাসায় ত্রাণ বিতরণ শেষে এখন লালবাগ টিম যাচ্ছে মুন্সিপাড়া স্পটে।




আরেক স্পটের ছবি
লালবাগ টিমের আজকের দ্বিতীয় স্পট ছিল মুন্সিপাড়া মাদরাসা প্রাঙ্গণ। এই পর্বে গ্রামের দুইশত পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

Wednesday, August 3, 2016

মুসলিম নারীদের রোল মডেল

অনেক দিন আগে আমেরিকার লাসভেগাস শহরে ইসলামি উগ্রবাদ বিষয়ে এক সেমিনারে কিছু ইসলামবিরোধী উদ্ধত প্রগলভ ব্যক্তির মুখোমুখি হয়েছিলাম। ওই সেমিনারে ইসলামকে উগ্র ও অসহিষ্ণু ধর্ম হিসেবে অভিহিতকারীদের মধ্যে সবার আগে ছিল রবার্ট স্পন্সর, যে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে বই লিখে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের চেষ্টা করেছিল। সেমিনার ছিল উগ্রবাদের বিরুদ্ধে, অথচ রবার্ট স্পন্সরের পুরো বক্তব্য ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে। সুতরাং আমাকে আমার বক্তৃতায় ইসলাম ধর্মের ওপর কৃত অভিযোগগুলোর বিস্তারিত জবাব দিতে হয়। আমি স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী হয়েও রবার্ট স্পন্সরকে মিথ্যা প্রমাণিত করলাম।

কিছু স্থানীয় টিভি চ্যানেল সেমিনার যথাযথ প্রচার করে। এ প্রচারের ফলে আমেরিকার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও দফতর থেকে লেকচারের নিমন্ত্রণ আসে। আমি যেখানেই গেছি, সেখানেই বেশির ভাগ নারী ইসলামে নারীর অধিকার সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছেন। আত্মসম্মানবোধের নামে হত্যা, জোরজবরদস্তিমূলক বিয়ে, নারীশিক্ষা ও রোজগার করার ওপর বিধিনিষেধ সম্পর্কে পাশ্চাত্য মিডিয়ায় প্রচার করা সংবাদ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়।

ওইসব প্রশ্নের জবাবে এ অধম বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হজরত খাদিজা রা:-এর ঈমান ও বিশ্বস্ততা এবং হজরত আয়েশা রা:-এর জ্ঞানগরিমার দৃষ্টান্ত পেশ করে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়েছি।
যখন আমি এ কথা বললাম, আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রথম স্ত্রী হজরত খাদিজা রা: একজন মহিলা ব্যবসায়ী ছিলেন। তার দু’বার বিয়ে হয়েছিল। আগের স্বামীর তিন সন্তানের জননী ছিলেন। বয়সেও বড় ছিলেন। তা সত্ত্বেও হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তার দাম্পত্য জীবন সফল ও সুখকর ছিল। তার জীবদ্দশায় নবী করিম সা: দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। তখন প্রশ্নকারীরা আরো জানার জন্য এ সংক্রান্ত গ্রন্থ সম্পর্কে জানতে চান।
এ অধম তখন মুহাম্মদ হুসাইন হায়কাল, মার্টিন লিংস ও ক্যারন আর্মস্ট্রংয়ের নবী করিম সা:-এর ওপর লিখিত গ্রন্থগুলোর উদ্ধৃতি পেশ করি। যখন মুহাম্মদ ডোগার সাহেবের রচনা আল আমিন আমার নজরে পড়ল, তখন আরো বেশি জানার আগ্রহ সৃষ্টি হলো।
আল্লামা শিবলী নোমানী ও আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নদভীর সীরাতুন্নবী গ্রন্থে পড়েছি, হজরত খাদিজা রা:-এর পিতা আগেই ইন্তেকাল করেছিলেন। তবে তার চাচা আমর বিন আসাদ বেঁচেছিলেন। হজরত খাদিজা রা: চাচা থাকা সত্ত্বেও নবী করিম সা:-এর কাছে বিয়ের পয়গাম নিজেই প্রেরণ করেছিলেন।

পীর মুহাম্মদ করমশাহ আল আজহারি তার জিয়াউন্নবী গ্রন্থে লিখেছেন, বিশ্বনবী সা:-এর বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা হজরত খাদিজা রা:কে তার গুণগ্রাহী বানিয়ে দেয়। সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-এর মতামত জানার জন্য অন্তরঙ্গ বান্ধবী নাফিসাকে তাঁর কাছে পাঠান। নাফিসা রাসূলুল্লাহ সা:-এর মতামত অবগত হন এবং ফিরে এসে হজরত খাদিজা রা:কে খোশখবর শোনান। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সা:কে দাওয়াত করেন।
রাসূলুল্লাহ সা: তাশরিফ আনলেন। কথাবার্তা হলো। উভয়ে রাজি হওয়ার পর হজরত খাদিজা রা: রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে আবেদন করেন, তিনি যেন তাঁর চাচা আবু তালেবকে তার কাছে পাঠিয়ে দেন। চাচা আবু তালেব পরের দিন তার কাছে গেলে তিনি তার কাছে অনুরোধ করেন, আপনি আমার চাচার কাছে গিয়ে আমার সাথে আপনার ভাতিজার সম্বন্ধের আবেদন করুন। এভাবে পাত্রপাত্রীর মুরব্বিদের অনুমতিতে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। অপর কিছু গ্রন্থেও এ বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। হজরত খাদিজা রা:-এর জীবন ও কর্মের আলোকে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করা ও ওপরে তুলে ধরা আরো বেশি সহজ হয়ে গেছে।

কিছু দিন আগে ইসলামি নজরিয়্যাতি কাউন্সিলরের সদস্য ও জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তানের ওমেন অ্যান্ড ফ্যামিলি কমিশনের প্রেসিডেন্ট ড. সাবিহা রাহিল কাজী তার এক পত্রের সাথে আমাকে জুবায়ের মানসুরির হজরত খাদিজা রা. : ঈমান ওয়া ওয়াফা কি সাথী (হজরত খাদিজা রা. : ঈমান ও বিশ্বস্ততার সঙ্গী) গ্রন্থ প্রেরণ করেন। তার উদ্দেশ্য ছিল ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা:-এর ভূমিকা সবার সামনে তুলে ধরা। ওই গ্রন্থেও এ কথা লেখা আছে, হজরত মুহাম্মদ সা:-এর সাথে হজরত খাদিজা রা:-এর বিয়ের কথাবার্তা নাফিসার মাধ্যমে শুরু হয়। অতঃপর বড়রা কথাবার্তাকে এগিয়ে নিয়ে যান।

এ ঘটনা এবং অপর কিছু হাদিস এ কথা প্রমাণ করে যে, ইসলামে পছন্দের বিয়ে নিষেধ নয়। এ জন্য ১৬ জুন, ২০১৬ (নয়া দিগন্তে প্রকাশ ২৮ জুলাই, ২০১৬) আমি আমার কলামে এ কথা লিখেছিলাম যে, হজরত খাদিজা রা: তার বান্ধবী নাফিসার মাধ্যমে নবী করিম সা:-এর মতামত জানেন। অতঃপর উভয় পরিবারের বড়রা বিয়ের বন্দোবস্ত করেন। এটাকে পছন্দের বিয়ে অভিহিত করেছি।
কিছু ব্যক্তি এ বিষয়ে তাদের অমনঃপুতের কথা প্রকাশ করেছেন এবং উল্লেখিত কলামকে ঘর থেকে পালানো মেয়েদের সহায়তাকারী বলে অভিহিত করেছেন। আপত্তিকারীদের প্রতি অনুরোধ কলামের শিরোনাম লক্ষ করুন। মূলত ‘মেকি আত্মসম্মানবোধ’ শিরোনামের এ কলাম ছিল বোন ও কন্যাদের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে। ওই কলামে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের আলোকে বলা হয়েছে, একজন বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক বালেগ মুসলমান নারী তার পছন্দমতো বিয়ের অধিকার রাখে।
সুপ্রিম কোর্টের এ রায় সায়েমা নামের এক নারী ও আরশাদ নামের এক যুবকের বিয়ে সম্পর্কে ছিল। সায়েমা ঘর থেকে পালিয়ে বিয়ে করেননি। তার পিতা কন্যাকে তার অমতে বিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। জোরজবরদস্তিমূলক বিয়ে থেকে বাঁচার জন্য সায়েমা পাঁচজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে আরশাদকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি স্বীয় পিতার ঘরে ফিরে যান। মাকে বিয়ের কথা জানানোর পর সায়েমাকে নির্যাতন ভোগ করতে হয়।

আমার কলাম নারী নির্যাতন ও তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে ছিল। হজরত খাদিজা রা:-এর উদাহরণ পেশ করার কারণ শুধু এটাই ছিল যে, আমি উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা:কে মুসলিম নারীদের জন্য রোলমডেল মনে করি। তিনি ইসলামের প্রথম নারী। তিনি প্রতিটি কঠিন সময়ে স্বামী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর পাশে ছিলেন।

আমি স্পষ্টত লিখেছি যে, নবী করিম সা:কে পছন্দ করা এবং তার মতামত জানার পর উভয় পরিবারের বড়রা বিয়ের কার্যক্রম চূড়ান্ত করেন।

১৬ জুনের কলাম নিয়ে একটি পত্রিকা কিছু বিরোধিতামূলক বক্তব্য প্রকাশ করলে অনেক বিজ্ঞ আলেম আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং পরিপূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তবে ওইসব আলেমকে এক অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়িয়ে পড়া থেকে দূরে থাকতে বললাম।
আমার আবেদন, যদি কারো কোনো মতবিরোধ থাকে, তাহলে এ বিষয়ে যৌক্তিক আলোচনা ও তথ্যনির্ভর যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ রাখা উচিত। একজন আরেকজনের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়াতে কোনো ফায়দা নেই। ফায়দা সেই উঠাবে, যে ইসলামের বদনাম করতে চায়। আপনি আব্দুল মালেক মুজাহিদের বেশ সুন্দর গ্রন্থ হজরত খাদিজা রা: কি জিন্দেগি কে সুনাহরি ওয়াকিয়াত (হজরত খাদিজা রা:-এর জীবনের সোনালি ঘটনাবলি) পড়–ন অথবা ড. মুহাম্মদ আজম রেজা তাবাসসুমের গ্রন্থ খাদিজাতুল কুবরা অধ্যয়ন করুন। আপনি জানতে পারবেন, উম্মুল মুমিনিন খাদিজা রা: তার সব কিছু আল্লাহর রাসূল সা:-এর কাছে কোরবান করে দিয়েছিলেন।
জীবনের শেষ তিনটি বছর মক্কার বাইরে গারে হেরার সন্নিকটে পাহাড়ি উপত্যকা শেয়াবে আবি তালিবে ক্ষুৎ-পিপাসায় দিন অতিবাহিত করেন। ৬৫ বছর বয়সে রমজানুল মোবারকে তার ইন্তেকাল হয়। হজরত আয়েশা রা: বর্ণনা করেন, নবী করিম সা: তার প্রথম বিবিকে বেশ সুন্দর শব্দ দিয়ে স্মরণ করতেন।

এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, নবী করিম সা:-এর সব সন্তান হজরত খাদিজা রা:-এর গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণ করেন। দুই পুত্র হায়াত লাভ করেননি। চার কন্যা ছিলেন পিতার চক্ষুশীতল নয়নমণি। রাসূলুল্লাহ সা: নিজের সন্তানদের পাশাপাশি হজরত খাদিজা রা:-এর প্রাক্তন স্বামীর সন্তানদেরকেও বুকে আগলে রেখেছিলেন।
স্বীয় কন্যাদের খুব ভালোবাসতেন। কন্যা সাইয়েদা জয়নব রা: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সফরের প্রাক্কালে হাব্বার বিন আসওয়াদ তার ওপর আক্রমণ করে বসে। জয়নব রা: উট থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। (ওই সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন) তার দেবর তাকে উদ্ধার করেন। কন্যার ওপর আক্রমণের খবর শুনে নবী করিম সা: খুব কষ্ট পান। আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: আমাদেরকে (তাদের বিরুদ্ধে) অভিযানে প্রেরণ করে বললেন, যদি অমুক অমুককে পেয়ে যাও, তাহলে তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারবে।

যখন সাহাবায়ে কেরাম রা: রওনা হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে বিদায় নিতে গেলেন, তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের অমুক অমুককে আগুনে পুড়িয়ে মারার আদেশ করেছিলাম, তবে আগুনের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ দিতে পারে না, এ জন্য যদি তোমরা তাদের পেয়ে যাও, তাহলে তাদের হত্যা করবে।
এ কথাগুলো লিখে এটাই নিবেদন করতে চাই যে, আল্লাহর পেয়ারা নবী সা: স্বীয় কন্যার ওপর আক্রমণকারীদের আগুনে পুড়িয়ে মারার আদেশ ফিরিয়ে নিয়েছেন, আর আমাদের সমাজে নিজের মেয়েকেই পুড়িয়ে মারার ঘটনা রীতিমতো অব্যাহত রয়েছে।
মেয়েদের পুড়িয়ে মারা ও আত্মসম্মানবোধের নামে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন এবং বিশ্বকে জানান, আসল ইসলাম উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসীদের নয়, আসল ইসলাম হজরত মুহাম্মদ সা:-এর, যার ওপর সর্বপ্রথম একজন নারী ঈমান এনেছেন এবং ওই মহীয়সী নারীকেও খাতুনে জান্নাত আখ্যায়িত করা হয়েছে।
——————————————
মূললেখক : পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক হামিদ মীর
অনুবাদ : ইমতিয়াজ আহমেদ

Tuesday, July 12, 2016

ইটজ সিলট এগেইন

সকাল সাতটায় বের হলাম। রাত বারোটায় বাসায় ফিরলাম। এত ভাল একটা দিন কাটানোর পর আনন্দঘন মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিশেষ কিছু করার প্রয়োজন নেই। তাও কিছু ছবি টানিয়ে রাখলাম।

যদিও এদের সবার সাথেই পরিচয়টা অনেকদিনের এরপরও আজকের বিশেষ উপলব্ধি হল এই মানুষগুলোর সাথে পরিচিত হওয়াটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা ঘটনা ছিল।

ছুটি প্রায় শেষ হয়ে এলো। দুদিন পর আবারো ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে। দিনটাকে মিস করতে হবে খুব। আরো যেটা মিস করতেই হবে সেটা বৃষ্টির পর মাধবপুর লেকের দৃশ্যপটটা। মনে হচ্ছিলো সেই ফয়েজ লেকে বসে আছি। নিজেকে হারিয়ে ফেলছিলাম বারবার। কেউ খুজেও দিচ্ছিলো না।

Friday, July 1, 2016

গুলশান হামলা ও তখনকার স্ট্যাটাসগুচ্ছ


স্ট্যাটাস একঃ 
হলি আরটিজান থেকে কোন রকমে পালিয়ে বেচে আসা সুপারভাইজার সুমন সাংবাদিকদেরকে দুইটা কথা খুব জোর দিয়ে বলছিলো, 
"হামলাকারীদের কারো মুখে দাড়ি ছিল না
এবং তারা প্রত্যেকটা আক্রমণের সময় আল্লাহুআকবার বলছিলো"
তার এই বর্ণনা যদি সত্যি হয় তাহলে
এটা পরিষ্কার যে হামলাকারীরা নিজেদের জঙ্গি প্রমাণ করতেই এমনটি করছে। এবং সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই "আল্লাহু আকবর" পার্টটা যেভাবে প্রচার করা হচ্ছে তাতে জঙ্গিরা সফল। এটাই তো চায় তারা। জঙ্গিদের এ সফলতার পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ হবে সেটা এখনই পুরোপুরি আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তবে আগামীকাল সকাল থেকেই হয়তো জঙ্গি সন্দেহে রাস্তাঘাটে নিরপরাধ মানুষগুলাকে গ্রেফতার করা শুরু হবে। 

কিন্তু এইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর একের পর এক হামলা করে তারা আসলে কি করতে চাচ্ছে? আতংক ছড়ানোর জন্য হলে তো হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার কথা। আর এই গুটিকয়েক জঙ্গির সাথে একটা দেশের তিন বাহিনী মিলে টানা কয়েকঘন্টা অভিযান চালানোর পরও পেরে উঠছেনা। বিদেশী জঙ্গি বলেই কী তাদের মোকাবেলার সামর্থ্য আমাদের নেই? বিদেশী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা ছাড়া জঙ্গিদের মোকাবেলা করা সম্ভব না, এটাই কি বুঝানো হচ্ছে? ঘটনা এইভাবে দেখতে গেলে তো নাটক মনে হয়।

তবে গুলশান থানার ওসি ও ডিবির সহকারী কমিশনার রবিউল নিহতের খবরটা দেখে মনে হলো ঘটনা আসলেই খুব সিরিয়াস দিকে মোড় নিচ্ছে।
আল্লাহ! আমাদের দেশটার দিকে একটু তোমার রহমতের দৃষ্টি দাও।



স্ট্যাটাস দুইঃ
জঙ্গিরা আত্মসমর্পণের তিনটি শর্ত দিয়েছে। শর্ত তিনটি হলো-
১. একদিন আগে ডেমরা থেকে আটক জেএমবি নেতা খালেদা সাইফুল্লাকে মুক্তি দিতে হবে।
২. তাদেরকে নিরাপদে বের হয়ে যেতে দিতে হবে
৩. ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাদের এই অভিযান- স্বীকৃতি দিতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিরা বার বার রেস্টুরেন্টের ভেতর থেকে চিৎকার করে এ কথা জানাচ্ছে।
-বাংলা ট্রিবিউন


স্ট্যাটাস তিনঃ 
আমরা যেমন ক্ষেপে আছি এই চুনোপুঁটি মার্কা জঙ্গিগুলোর উপর, ঠিক তেমনি আমেরিকাও কিন্তু খুব ক্ষেপে আছে। আমরা যেমন এদের বিচার করতে চাচ্ছি, তারাও কিন্তু খুব চাচ্ছে। আমরা যেমন সন্দেহে আছি হামলা কারীরা আইএস কিনা, তারাও সন্দেহে আছে আইএসের দায় স্বীকারের সত্যতা নিয়ে। কত্তো মিল ওদের সাথে আমাদের তাই না? বরং ওরা তো আমাদের থেকেও সিরিয়াস মনে হচ্ছে। মজার কিন্তু ব্যাপারটা।

আমাদের সাথে তারা ফোনে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এখন সব ধরনের সাহায্য সহযোগীতাসহ ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের দায়ভার নিতে তারা আগ্রহী। আমরা দিতে আগ্রহী তো? অবশ্যই!! কেন নয়!! মজা বাড়বে তো এতে..

তবে সমস্যা হলো এই কাহিনীটা খুব একটা ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠছেনা। কেমন যেন বাংলা ছবির মত। শুরু দেখেই শেষ বলে দেওয়া যাচ্ছে। নতুন বোতলে পুরান মদ খাওয়ানোর চেষ্টা আর কি। ওরা হয়তো জানে না বাঙালি এখন হলিউড দেখে অভ্যস্ত। তাহলে হয়তো আরেকটু প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে স্ক্রিপ্ট লেখাতো।



স্ট্যাটাস চারঃ
এই দীর্ঘ অভিযান শেষে ধরতে পারলোই মাত্র একটা জঙ্গি সেটাও নাকি আবার সন্দেহভাজন। 
আমাদের দেশে সন্দেহভাজন জঙ্গি ধরার প্র‍্যাকটিসটা একটু বেশীই হয় কিনা! 

তবে সফল এই অভিযানের জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে একটা অভিনন্দন জানাতেই হয়। এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে রাজনীতি শুরু হওয়ার আগেই এর সুষ্ঠ তদন্ত হোক। সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটুক।



স্ট্যাটাস পাচঃ
কেবল মাদ্রাসায় পড়ার কারণে আর দাঁড়ি রাখার কারণে গত ১২ বছরে নিত্যদিন যে হেনস্থা আর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি তা নিয়ে লিখলে বোধ হয় বিশাল মহাকাব্য লেখা যাবে। গুলশানের ঘটনা আমার মতো অনেকের জীবনের অভিজ্ঞতাকে যে নয়া ডাইমেনশানে নিয়ে যাবে তা পষ্ট। অনিক ভাই লিখেছেন,"গুলশান হামলার একটা গুরুত্বপূর্ন দিক হলো এই হামলা অনেকগুলো ফিল্ডকে লেভেল করে দিয়েছে। কোন দোষ ছাড়া, শুধুমাত্র মাদ্রাসায় পড়ার কারনে মিথ্যে অপবাদ খেতে মাদ্রাসার ছাত্রদের কেমন লাগে, সেই ফিলিংসটা এখন বড়লোকের ছেলে মেয়েদের বুঝতে সুবিধা হবে। শুধু মাত্র স্কলাস্টিকা, টার্কিশ স্কুল,ব্র্যাক ভার্সিটি, মোনাশ, কিংবা নর্থ সাউথে পড়ার কারনে কেউ যখন স্টেরিওটাইপড হবে, বিদেশের ভিসা নিতে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হবে, সে হয়তো বুঝতে পারবে শুধু মাত্র একটা পাঞ্জাবী পড়ার কারণে, কিংবা টুপি পড়ার কারণে হেনস্থা হতে মানুষের কেমন লাগে।"



স্ট্যাটাস ছয়ঃ 
সদ্য প্রকাশিত সাইট ইন্টেলিজেন্সের ভিডিওতে আইএসের বেশে হাজির হয়েছেন সাবেক ক্লোজআপ তারকা তাহমিদ রহমান শাফি। ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে নতুন করে আইএসভীতি ছড়াচ্ছে। বিবিসির দাবী তাহমীদের জঙ্গি হয়ে ওঠার পেছনে কারণ ছিল তার ধর্মের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠা। এবং তাদের অফিসিয়াল পেজেরই অন্য একটা নিউজে তারা তাহমীদকে খুব নামাজী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। হয়তো তার মধ্যে এসব গুণাবলী ছিল, তাই বলে জঙ্গি হওয়ার কারণ হিসেবে এইসব ধার্মিকতাকে বিশেষভাবে উল্লেখ করাটা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়?

গুলশানে হামলাকারী সেই ছেলেগুলো যে কি কারণে জঙ্গি হয়েছিল এসব নিয়ে গতকয়েকদিনে সোসাল মিডিয়ায় বিশ্লেষণ তো কম হয়নি। ব্যাপারগুলো এত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও ধর্মটাকে জোর করে টেনে এনে দোষারোপ কেন করছে তারা? এতে তাদের উদ্দেশ্যটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। এইসব জঙ্গিদের ইসলামিক বানানোর জোরদার প্রচেষ্টা কিছু মহল অনেক আগ থেকেই করে আসছে। আর বিবিসি তখন থেকেই সে মহলের অন্তর্ভুক্ত। এটাকে ইসলাম বলে প্রচার করে তারা মূলত দোষটা ইসলামের ঘাড়ে চাপাতে চায়। 

ইসলামের নামে নানান জায়গায় হামলা করে নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে যারা হালাল মনে করে তাদেরকে ইসলাম ধ্বংসকারী বলার নানান কারণ আছে। এভাবে যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যাকে হালাল মনে করে হাদিসের ভাষ্যমতে তারা খারেজী সম্প্রদায়ভুক্ত । এবং খারেজী হওয়ার কারণে অনেক ওলামায়েকেরামের মতে তারা কাফের। এর সপক্ষে দলিল হিসেবে আল্লামা আনওয়ার সাহ কাশ্মিরী ইবনে মাজার হাদিস এবং ইমাম বুখারী হযরত আবু সাঈদ খুদরীর রেওয়ায়েত এনেছেন। তাছাড়া এই নিরপরাধ মানুষগুলোকে হত্যা করাকে তারা ইসলামের পক্ষে বিশাল জীহাদ করে ফেলার দাবী করলেও এর যথাযথ কোন কুরআন হাদিসের ভিত্তিতে যৌক্তিক দলিল প্রমাণ তারা আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি।

আচ্ছা, অতসব ইতিহাস না টেনে শুধুমাত্র যদি বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখে বিচার করা হয় তাহলেও তাদের এজেন্ডা অনেকাংশে পরিষ্কার হয়ে যায়। মূলত তাদের এসব জঙ্গি কর্মকান্ডকে সামনে এনে কারা ইসলামকে দোষারোপ করার সুবর্ণ সুযোগ পাচ্ছে? এই গেমপ্ল্যানটা কাদের সাজানো এরপরও বুঝতে বাকি থাকার কথা না।

অতএব আইএস ইস্যুকে ইসলামিকলি ডিল করতে হবে। শুধু এতটুকু বললেই হবে না যে ইসলাম এসব সমর্থন করে না। ইসলাম কেন সমর্থন করে না এবং তাদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে এসব কথাও এখন খুব স্পষ্টভাষায় বলে দিতে হবে। এবং প্রচার প্রসারের মাধ্যমে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। কেবল কে জঙ্গি আর কোথাথেকে জঙ্গি বের হয় এ তর্ক নিয়ে ব্যস্ত থাকলে আপাতত বিপদ কমার কোন সম্ভাবনা নেই।



স্ট্যাটাস সাতঃ
ঈদের দিন পাশের বাড়ির প্রতিবেশী আপনার বাসায় বেড়াতে আসাটা স্বাভাবিক হলেও পাশের দেশের প্রতিবেশীদের নিরাপত্তা রক্ষার অজুহাতে সন্দেহজনকভাবে আপনার দেশে প্রবেশ করাটা মোটেও স্বাভাবিক না। আপনি হয়তো ঈদ আনন্দে ব্যস্ত তাই এই "প্রতিবেশী"র আগমনের সংবাদ আপনি পাননি। কেন আসলো সে বিশ্লেষণ পরে হবে। আসা যে শুরু করেছে এই সংবাদ অন্ততপক্ষে জেনে রাখা দরকার। 

নয়া দিগন্তের সংবাদঃ
"কিশোরগঞ্জে বিস্ফোরণের তদন্তের স্বার্থে ঢাকায় পাড়ি দিচ্ছে ভারতের স্পেশাল জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী (এনএসজি) টিম৷ বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্ত করতেই পাঠানো হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী, খবর পিটিআই সূত্রে৷ সঙ্গে যাবেন গোয়েন্দা ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরাও৷
এনএসজি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী ঢাকা পাড়ি দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যেই সবুজ সঙ্কেত মিলেছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে৷ কিশোরগঞ্জে বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল থেকে নমুনা ও প্রমাণ সংগ্রহ করতে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ যে দলটি ঢাকায় পাড়ি দেবে সেই দলে রয়েছেন বিস্ফোরণ বিশেষজ্ঞ ও জঙ্গি মোকাবিলা সংক্রান্ত যেকোনো অপারেশনে সক্ষম অফিসাররা৷"

স্ট্যাটাস আটঃ
"জঙ্গিরা সব প্রাইভেট ভার্সিটি পড়ুয়া উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান"
এখনকার মত সংকটময় মুহূর্তে এমন কথা বলে বলে মাদরাসাপড়ুয়া ও ভার্সিটিপড়ুয়াদের মধ্যে বিভাজন তৈরী করাটা সমর্থনযোগ্য না। কিন্তু শোলাকিয়ার ঘটনাতে আবারো নর্থ সাউথের ছেলেগুলাই খবরে ওঠে আসার পর এই অসমর্থনযোগ্য বাক্যটা আমাদের মুখেও চলে আসে...

স্ট্যাটাস নয়ঃ
পিস টিভি বন্ধ করাতে যারা খুব বেশী খুশি হচ্ছেন তাদের কাছে জাকির নায়েককে নিষিদ্ধ করার যুক্তিটা অনেকটা এরকম না?
হয়তো না, হয়তোবা হ্যা। 
এটা সত্য কথা যে আজকে তাকে একজন ইসলামপন্থী হিসেবেই নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। আঘাতটা এখানে সরাসরি ইসলামের উপর। তার লেকচার শুনে মানুষ জঙ্গি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলাটা নিতান্তই হাস্যকর একটা ব্যাপার। অনেকে বরং তার দাওয়াতী স্টাইলের লেকচারের উপর উদারপন্থার অভিযোগ তুলে তাকে মডারেট বলে থাকেন। আর মডারেটদের ব্যাপারে অভিযোগ আছে যে তারা এতটাই উদার যে জীহাদের আয়াতগুলোর ক্ষেত্রেও নমনীয় ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। তাহলে এই নমনীয়তা আর উদারপন্থা দিয়ে জাকির নায়েক কি করে উগ্রবাদ শেখায় সেই প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনের কাছে আছে বলে মনে হয়না। অতএব তাদের এইভাবে একটা চ্যানেল ব্যান্ড করাকে অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলতে হবে।
আর হকপন্থী আলেমওলামাদের সাথে জাকির নায়েকের বিরোধটা অন্যখানে। মাজহাবগত কিছু শাখাগত বিষয়ে। সেটা এখানে একেবারেই ভিন্ন একটা প্রসঙ্গ। সেটাকে আকিদার সমস্যা বলে বলে যারা এতদিন জাকির নায়েককে ইহুদীদের দোসর থেকে শুরু করে কাফের পর্যন্ত বানিয়ে ছেড়েছেন তারা একটু বেশীই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন।
মনে রাখবেন আজকে যদি আপনি প্রশাসনের এই অন্যায়কে সমর্থন করেন অথবা ধিক্কার জানালে বিপদ আসতে পারে এই ভয়ে চুপ থাকেন তাহলে আগামীকাল যখন শুধুমাত্র ইসলামপন্থী হওয়ার অপরাধে আপনার উপর কোন অন্যায় করা হবে সেই অন্যায়টাকেও অনেকে সমর্থন জানাবে। অথবা নিরাপত্তার ভয়ে চুপ থাকবে। তাই অন্তত অপরাধকে ঘৃণা করতে শিখুন। চুপ থাকতে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে অপরাধবোধটাও একসময় মরে যায়।






The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...