আরাকানে রোহিঙ্গা যা বাকি ছিল গত তিন সপ্তাহে তার ৪০ ভাগ চলে এসেছে। আর দশ ভাগ
পাঠিয়ে যদি অভিযান থামিয়েও দেয়া হয় তাহলে পরবর্তী ধাক্কাতেই আরাকান রোহিঙ্গামুক্ত
হয়ে যাবে আশা করা যায়। দুনিয়ার মানুষ যত কিছুই বলুক এই অঞ্চলের গডফাদাররা তাতে কোন
রকম কর্ণপাত না করে নিজস্ব কায়দায় সফলভাবে একটা মুসলিম জাতিকে নিধন করে যাচ্ছে।
হ্যা, মুসলিম জাতিকেই তো!
ও আচ্ছা, ইদানীং তো আবার নতুন প্রশ্ন
উঠেছে।
আসলে কি মুসলিম বলেই রোহিঙ্গাদের এভাবে মারা হচ্ছে?
সেকুলারিজমের উটকো গন্ধযুক্ত এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে প্রশ্নকারীদের কাছে
একটা সরল প্রশ্ন রাখা দরকার।
-হিন্দু নিধন হলে কি তাতে
মোদিজীর অকুণ্ঠ সমর্থন আসতো বলে আপনি মনে করেন?
মুসলিম ছাড়া অন্য যেকোন ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হলেই এখানে জাতিগত নিধন চালিয়ে
বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিল করার কথা চিন্তাও করতে পারতোনা এই অঞ্চলের গডফাদাররা। এটা
মাথায় রাখলে এখন বাকি হিসেবগুলো বুঝতে সুবিধা হবে।
আসলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে নোংরা রাজনীতি করার পেছনে মুসলিম হওয়ার কারণটাকে
একেবারেই এড়িয়ে যাওয়ার এই প্রবণতাটা আসে ধর্মের প্রতি বিশেষ এলার্জি থেকে। এখন
আপনি হয়তো নিজেকে একজন প্র্যাকটিসিং মুসলিম বলে দাবী করবেন। কিন্তু আমি বলবো, আপনার এই চুলকানীর পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে ইসলামকে
সামগ্রিক ভাবতে না পারা। অর্থাৎ আপনি ইসলামকে ব্যক্তিগত জায়গার ধর্ম হিসেবে মানতে
পারছেন। কিন্তু যখনই বলা হয়, ইসলাম শুধু ব্যক্তি
নয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে
বিধান দেয়ার মত একটি ধর্ম।
সেকুলারগণের মতে, ধর্ম ব্যক্তিগত, জাতির কোন ধর্ম থাকতে পারেনা। এই থিওরীর ভিত্তিতেই রোহিঙ্গা
ইস্যুতে ধর্ম টেনে আনার ঘোর বিরোধিতা করে থাকেন উনারা।
উনাদের ভয় হচ্ছে, ধর্মকে টেনে আনলেই তো
ভণ্ডামিগুলো ধরা পড়ে যাবে। তাই আগেই বলে দিয়েছেন, ধর্মের সাথে রাজনীতি মেশানো যাবে না। সে হিসেবে ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে যদি কোন
জাতি নির্যাতিত হয় এবং তাতে যদি নোংরা রাজনীতির মদত থাকে তাহলেও সেটাকে তারা
রাজনৈতিক অবিচার বলবেন না।
অথচ এটা এখন স্পষ্ট যে পুরো রোহিঙ্গা ইস্যুটা তৈরিই করা হয়েছে আন্তর্জাতিক
অপরাজনীতির চর্চা করার জন্য। আন্তর্জাতিকভাবে তাদের ক্ষমতা থাকায় তাঁরা সেটাকে
কাজে লাগিয়ে এই অপরাজনীতি করে যাচ্ছে।
এর ফলে যা হয়েছে, সেকুলাররা এর
সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। গোজামিল দেয়াও সম্ভব হচ্ছনা। এই
জুলুমের নাম এখন তাঁরা কি দিবেন! অরাজনৈতিক জুলুম!
ঐতিহাসিক অনেক কারণেও রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় পরিচয়কে মাইনাস করে এই সংকটকে
ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কারণ রোহিঙ্গাদের জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য
অনেক কম। অতএব এভাবে ভাবার কোন অধিকার সেকুলারদের নেই। এতে পুরো রোহিঙ্গা
জনগোষ্ঠির পরিচয়কে অস্বীকার করা হয়। মুসলিম পরিচয়ে রোহিঙ্গাদের সংগ্রামকে এভাবে
ছোট করে দেখার কোনই সুযোগ নেই।
ভাবসাব দেখে মনে হয়, মুসলিম পরিচয়টা
সেকুলারদের কাছে অনেকটা ভীনগ্রহের কোন প্রাণীর মত। তাই হয়তো উনারা সেই
"প্রাণী জাতি"র অধিকারকে মানবাধিকার বলে স্বীকার করতে চান না। যদিও
পরিস্থিতির কারণে বাধ্য হয়ে অনেকে জুলুমটাকে মেনে নেন কিন্তু মুসলিম হওয়ার কারণেই
যে এই জুলুমটা হচ্ছে সেটা তাঁরা কোনদিনও স্বীকার করতে চান না। আর এখানেই
ধর্মনিরপেক্ষতা নামক ভণ্ডামির চরম সংকীর্ণতার ধরা পড়ে।
এই ধোকাবাজীগুলো আমাদের সচেতনভাবে বুঝা উচিৎ। আমার ধর্ম ইসলাম যেখানে দুনিয়ার
সমগ্র মানবজাতির জন্য অধিকারের কথা বলে সেখানে যখন ধর্মনিরপেক্ষতা এসে নিরপেক্ষতার
নামে সংকীর্ণতা চর্চা করতে শেখায় তখন তারে আর কি করে নিরপেক্ষ বলি!
No comments:
Post a Comment