Thursday, September 14, 2017

রোহিঙ্গা সংকটঃ আন্তর্জাতিক এতিম ও বন্ধুহীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের নড়বড়ে অবস্থান (৪)


আজ দশম জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বললেন, "রোহিঙ্গাদের অবস্থা খুবই অমানবিক। বাংলাদেশ তাদের পাশে থাকবে। প্রয়োজনে তাদের সাথে খাবার ভাগ করে খাবো।"
সামাজিক অবস্থান থেকে আমরা সবাই এ বক্তব্যকে সমর্থন করি। অস্থায়ী সমাধান হিসেবে নিজেদের সাধ্যমত পাশে দাড়ানো এবং খাবার ভাগ করে খাওয়ার কাজটা আমরা আমাদের কর্তব্য হিসেবে করেও যাচ্ছি। 

কিন্তু এই সংকটের একটা স্থায়ী সমাধান নিয়ে সর্বমহলে যেই আলাপ উঠেছিল সে প্রত্যাশা পূরণের ক্ষমতা একমাত্র ছিল আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হাতে। শেষমেশ তিনিও বাংলাদেশ নামক স্বাধীন এই রাষ্ট্রটাকে সামাজিক কাজ করেই সন্তুষ্ট থাকতে বলে দিলেন!
ক্ষমতায় থাকার পরও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নিয়ে যখন প্রধানমন্ত্রী নিজেই সাহায্য নিয়ে পাশে দাড়ানোর কথা বলেন এবং অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মত সামাজিক দায়িত্ব পালন করে ক্ষান্ত হন তখন কিছু কথা মনে পড়ে। কথাগুলো সত্য উচ্চারণে এ সময়ের সাহসী একজন ব্যক্তির থেকে শুনেছিলাম দুদিন আগে। আমি নিজ থেকে কিছু না বলে শুধু তার কথাগুলোই তুলে ধরছি।

তিনি যা বলেছিলেনঃ
"আসলে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ব্যবহারের সদিচ্ছা না থাকলে এই সংকট নিরসন সম্ভব না। বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করেছিল সেটাও তৎকালীন সরকারের সাহসী উদ্যোগের ফলেই সম্ভব হয়েছিল।

বাংলাদেশ এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ইস্যুতে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে পারছেনা দুইটা কারণে।
১) বিরোধী দল ও মতের উপর অকথ্য নির্যাতনের ফলে রাষ্ট্রীয় কাঠামো অভ্যন্তরীণভাবে বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। জনসমর্থনের অভাবে সরকার শুধুই ক্ষমতায় থাকা না থাকা নিয়ে দুর্বল মানসিকতায় ভোগে। তাই বিদেশী শক্তির দ্বারা বাংলাদেশ কখন কিভাবে প্রতারিত হচ্ছে ও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে সে নিয়ে চিন্তার সুযোগ পায়না।
২) বহু বছর যাবত সরকার বলে আসছে ভারত আমাদের একমাত্র বন্ধুরাষ্ট্র। যার ফলে এক সময় মিডলিস্টের যেসব দেশ আমাদের ট্রেডিশনাল বন্ধু ছিল তারা এখন আর নেই। ওদিকে সুযোগ পেলেই সরকারের পক্ষ থেকে আমেরিকার সমালোচনা করা হয়। অতএব এমন একটা বন্ধুহীন রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক কোন শক্তি নিয়ে কিছু করা সম্ভব না এটা মিয়ানমার বেশ ভাল মতই জানে। এর উপর আবার এই অঞ্চলে যত বড় বড় স্টেকহোল্ডার আছে, যেমন চায়না, রাশিয়া ও ভারত, সবাই এই ইস্যুতে মিয়ানমারের পক্ষে।

এসব কারণেই মিয়ানমারের হেলিকাপ্টার ১৭ বার বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করার পরও বাংলাদেশ নিশ্চুপ বসে থাকে। কিছু বলার সাহস পায়না।"

এই সত্য কথাগুলো অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাহেবের। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে সত্য উচ্চারণে নির্ভীক এমন কিছু মানুষের খুব বেশী প্রয়োজন। তিনদিন আগে "রাউন্ড টেবিল ডিসকাশন অন ন্যাশনাল সলিডারিটি ফর দা রোহিঙ্গা" শীর্ষক বৈঠকে তিনি কথাগুলো বলেছিলেন। আজকে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সামাজিক হয়ে থাকার বক্তব্যে তার দাবীর সত্যতা একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেল। আসলেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ একটি জিম্মিরাষ্ট্রের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই ভূমিকা দেখার পর একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে অবশ্যই আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্ব নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।

কবি বেচে থাকলে হয়তো আজ এভাবে লিখতেনঃ
"রেখেছো "সামাজিক" করে, বাঙালি করোনি"
অন্তত বাঙালি হতে পারলেও তো একটা জাতিসত্ত্বা থাকতো, যে জাতির একটা স্বাধীন রাষ্ট্রসত্ত্বা থাকারও সম্ভাবনা ছিল।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...