তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার পর
এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নও রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার
পক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন তো মিয়ানমারকে অবরোধ করার প্রস্তাব পর্যন্ত দিয়েছে। তাছাড়া
জাতিসংঘের এখনকার সব স্টেটমেন্ট দেখে মনেই হচ্ছে অন্যবারের তুলনায় এবার বিষয়টাকে
একটু সিরিয়াসলি নিচ্ছে তারা।
তবে যেহেতু মাথাব্যথাটা মূলত বাংলাদেশের তাই আসল কাজটা বাংলাদেশকেই করতে হবে।
ওলামায়ে কেরাম, সর্বস্তরের জনগণ ও বুদ্ধিজীবী
সমাজ যেভাবে আয়োজন করে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে এতে কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে এবং
হচ্ছে। আন্তর্জাতিক পাড়া বেশ কঠোর ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি
চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী দুই সদস্য হওয়ার পরও সেখান
থেকে বলা হয়েছে এই ইস্যুতে বাংলাদেশের কথাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। আনান কমিশন
বলেছে, তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে
প্রাধান্য থাকবে বাংলাদেশের। সেই কমিশনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত
করার উপর জোর দেয়া হয়েছে। এবং এদিকে বাংলাদেশও আজকে মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত
রাষ্ট্রদূতকে তলব করে আকাশসীমা লঙ্ঘনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। জনগণের আন্দোলন
করে চাপ সৃষ্টি না করতে পারলে এতটুকুও সম্ভব হতনা।
তবে এই সামান্য অর্জনে অত সন্তুষ্ট হলে ধরে নেব আপনি এই মুভির ভিলেনের কথা
ভুলে গেছেন।
ভারত বসে নেই। এতসব কিছু দেখে সে খেলার কৌশল পাল্টেছে। ভারতের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল শেখ হাসিনাকে ফোন করে বলেছেন,
"আপনি কোন চিন্তা
করবেন না। মিয়ানমারকে বলে দিয়েছি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে।"
আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো নড়েচড়ে বসার পরপরই ভারতের এভাবে পল্টি নিয়ে ফেলার পেছনে
যেই দুইটা কারণ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য,
তা হলঃ
প্রথমত, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ কোন
অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ না ভারতের কাছে।
সাগরে নিজেদের আধিপত্য রক্ষার জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই হাতে রাখতে হবে। তাই
তারা যতই বাশ দিক সময়মত একটু পিঠে হাত বুলিয়ে দিলে যে বাংলাদেশ ঠান্ডা হয়ে যাবে
সেটা তারা ভালই বুঝে। এবং এতে কাজও হচ্ছে। বাংলাদেশের মন্ত্রীরা দলমত নির্বিশেষে
বাংলাদেশের সকল জনগণকে ভারতপন্থী হয়ে গিয়ে ভারতকে বন্ধু হিসেবে মেনে নেয়ার আহ্বান
জানাচ্ছেন। বিস্তারিত জানতে গত কয়েকদিনের পত্রিকাগুলোতে আমাদের মন্ত্রীদের কথাবার্তাগুলো
দেখে নিন।
দ্বিতীয় আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, এই ইস্যুতে
অন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপমুক্ত রেখে পুরো ব্যাপারটি অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে
নিজেদের হাতে রাখার চেষ্টা করা। ঠিক যে কাজটি করেছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়
পাকিস্তানের মিত্রশক্তি। তারা বাংলাদেশে চালানো গণহত্যাকে অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে
আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে চেয়েছিল পাকিস্তানকে। কিন্তু তখন আমাদের
স্বাধীনতায় ভারতের স্বার্থ জড়িত থাকায় এই ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বানিয়ে রাখা সম্ভব
হয়নি। পাকিস্তান তখন ব্যর্থ হয়েছিল।
কিন্তু কোন ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বানিয়ে বাংলাদেশ সফল হয়েছিল গত নির্বাচনে। যখন
আমেরিকা গণতন্ত্র হত্যা নিয়ে কথা বলতে চাইছিল এবং মোদি "অভ্যন্তরীণ
বিষয়ে" বলে আমেরিকাকে এখানে এসে নাক গলাতে নিষেধ করে দিয়েছিল।
এবারও ভারত বাংলাদেশের পিঠে হাত বুলিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুকে অভ্যন্তরীণ বানিয়ে
রাখার চেষ্টা করছে। কারণ তারা চায়না বাংলাদেশ ভারতকে ডিঙিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে গিয়ে
ন্যায় বিচার চাওয়ার সুযোগ পাক।
আর আমাদের মন্ত্রীদের আচরণে তো মনে হচ্ছে ভারতমাতারই জয় হতে চলেছে।
No comments:
Post a Comment