Wednesday, September 20, 2017

আরাকানের স্বাধীনতাকামী সংগঠন আরসা কি আসলে হকপন্থী? রোহিঙ্গা সংকট (৭)




প্রথমেই একটা বিষয় জেনে রাখতে হবে, ওপাড় থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে অনেকেই এমন আছে যারা এপাড়ে এসে নিজেদের আলেম বলে পরিচয় দেয় অথচ তারা আলেম না। এদের অনেকে আবার আরাকানের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের জঙ্গি বলেও আখ্যা ও ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। আজকে তাদের এই প্রবণতা ও প্রবণতার উৎস নিয়ে একটু কথা বলবো।

স্বাধীনতাকামী, মুক্তিকামী বা জীহাদী আপনি যে শব্দই রোহিঙ্গা যোদ্ধা আরসার বেলায় ব্যবহার করেন না কেন এটা অবশ্যই মানতে হবে যে তারা এখন যা করছে সেটা আরো বহু আগে শুরু করা দরকার ছিল। তবে কাজটা করতে গিয়ে যেই পন্থা বা মানহাজ তারা অবলম্বন করছে তা নিয়ে অবশ্য অনেকেরই প্রশ্ন আছে। যেসব প্রশ্ন যৌক্তিকও বটে। কিন্তু এ ধরণের সংকটের সময় এসব যুক্তি যে ধোপে টেকেনা এটাও আপনাকে বুঝতে হবে। যেহেতু তাদের নেতিবাচক বলে সন্দেহ করার নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা অতএব এর আগ পর্যন্ত আমাদের উচিত তাদের ব্যাপারে যেকোন ধরণের অবান্তর প্রশ্ন তোলা থেকে বিরত থাকা। 

এবার আসুন, মুক্তিকামী এই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে জান নিয়ে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের ক্ষোভের কারণ কি? সেনাবাহিনীরা যখন নির্যাতন করতো তখন তারা এই মুক্তিকামী বাহিনীর ছুতোর কথাই বারবার উচ্চারণ করতো। রোহিঙ্গাদেরকে বিশ্বাস করাতো যে স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের তৎপরতার জন্যেই তারা মার খাচ্ছে। এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেশীরভাগ অসচেতন হওয়ার ফলে ওপাড় থেকে বপন করে দেয়া বিশ্বাসের বীজকে তারা কিছুতেই উপড়ে ফেলতে পারলো না। তাছাড়া এই স্বাধীনতাকামনাকে যারা কিছুটা সমর্থন করে তারাও অনেক সময় নিজে পালিয়ে আসার ফলে সেটাকেই বৈধতা দিতে চায়। ও যুদ্ধের বিপক্ষে যুক্তি দিতে চায়। তা না হলে তো নিজের ভূমিকাই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এটাই হচ্ছে তাদের এখনকার প্রবণতা।

এর মৌলিক কারণ বা উৎস হিসেবে বলা যায় বহুকাল যাবৎ রোহিঙ্গাদের দ্বীনী শিক্ষার গন্ডিকে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংকীর্ণ করে রাখাকে। তাই কেউ ধর্মীয় কারণে আক্রমণ করলে পালটা আক্রমণ করার হুকুম যে তার ধর্ম দেয় এবং ইসলামের ধর্মে যে সমাধানকে জীহাদ বলা হয়েছে সেসব বিষয়ে তাদের কোন ধারণা নেই বললেই চলে। অন্তত শরণার্থীদের সাথে কথা বলে এবং বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে মার খেয়ে যাওয়ার ইতিহাস দেখে তাই মনে হয়।

গতবার সময় নিয়ে অনেক শরণার্থীর সাথে কথা বলেছিলাম। তখন সবার মধ্যে যে ব্যাপারটা কমন ছিল তা হল, কোন কারণ ছাড়াই তারা এই মুক্তিকামীদের দোষারোপ করে ঘটনা বর্ণনা করে থাকে। প্রথম প্রথম জিজ্ঞেস করতাম "যদি আরসার এই আক্রমণ ঠিক না হয় তাহলে সেনাবাহিনীর এই নির্যাতনের জবাব কিভাবে দেওয়া উচিত? মগরা আক্রমণ করলে আপনারা কি পালটা আক্রমণ করবেন না?"
অনেকে প্রশ্ন শুনে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতো। আর অনেকে উত্তর দিত, "বাবা আমরা মজলুম, আমাদের কিছুই করার নাই।"
তখন বুঝতাম, এসব নিয়ে কথা বলতে যতটুকু জ্ঞান থাকা দরকার সেটা তাদের নেই। অতএব তাদের কথা বা নেতিবাচক প্রবণতার উপর ভিত্তি করে আরাকানের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদেরকে সঠিক বা ভুল বলে বিবেচনা করে ফেলাটা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত না।

তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে কিছু মানুষও যে স্বাধীনতার পক্ষে নেই সেটা মিথ্যা কথা। আর এখন আলহামদুলিল্লাহ, পরিস্থিতি পরিবর্তনও হচ্ছে। এই দফায় আসার সময় অনেক যুবকরাই যুদ্ধ করতে আরাকানে থেকে গেছে। স্বাধীনতাই যে তাদের একমাত্র সমাধান এটা ধীরে ধীরে হলেও অনেকে বুঝতে পারছে। সেই সাথে যোদ্ধাদের সমর্থনের পাল্লাও ভারী হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুক।

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...