Sunday, September 10, 2017

গীজার পিরামিড

গীজার পিরামিড নিলনদের পশ্চিমদিকে।

 পিরামিড দেখে মনে হয় কোথায় যেন গিয়ে আকাশের সাথে মিশে গেছে। বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায়না, পিরামিডের মাথার উপর তীব্র সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ছে।

অদৃশ্য কোন কিছু আটকে রেখেছে এক পাথরের সাথে অন্য পাথরকে। ছবিতে দেখে আন্দাজ করা সম্ভবনা যে আসলে পিরামিড কতটা বড়।

প্রথম পিরামিডটি হল ফারাও কিওপ্সের (দা গ্রেট পিরামিড অফ কুফু অর কিওপ্স)এটা পুরো মিসরের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুরানো পিরামিড। ত্রিশ লাখ লাইমস্টোন একটি আরেকটির উপর রেখে তৈরী। উচ্চতা ৪৫৫ ফুট। পিরামিডের ভেতরে দেখা সুযোগ আছে কিন্তু তার জন্য টিকেট কাটতে হয়।

এই পিরামিডকে ছাড়িয়ে একটু সামনে এগোলেই ফারাও কাফিরান বা কাফরে এর পিরামিড। কাফিরান হচ্ছে কিউপ্সের পুত্র। এটিও ৪৫৫ ফুট। তবে একটূ উচিতে হওয়ার কারণে এটিকে একটু বড় মনে হয়।
এর একটু সামনেই মিখারনিস এর পিরামিড।
এইসব পিরামিডের গা আগে ঢাকা ছিল চকচকে শুভ্র লাইমস্টোনে। পরবর্তীকালে মানুষ সেগুলো খুলে নেয়াতে এখন আমরা খসখসে হলদেটে রঙের লাইমস্টোন দেখি।
গীজার পিরামিড ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তৈরী। হেরোডাটাস লিখেছেন এক লক্ষ ক্রিতদাসের ত্রিশ বছর লেগেছিল এই পিরামিড তৈরী করতে। অন্যমতে বন্যার সময়ই কৃষকরা এই কাজে নিয়জিত হত। কারণ একেকটি পাথরের ওজন আড়াই টন। আর এইসব পাথর আনা হত আসওয়ান এবং টুরা থেকে। সেই আড়াই টন ওজনের পাথর আছে এই পিরামিডে তেইশ লক্ষ। মোট ওজন তাহলে হয় ৬০০০০০০ হ্যা, ছয় এর পর ছয়টা শূন্য। আর উচ্চতা ৪৮২ ফুট। একালের আটচল্লিশ তলা বাড়ির সমান। ফিকে হলুদ, সামান্য খয়েরী মেশানো।

এই তিন পিরামিডের মাঝে দেখা যায় কয়েকটি শুস্ক নালার মত সুরঙ্গ পথ। বলা হয়ে থাকে, এই সুরঙ্গ পথের গরতের ভিতর দিয়ে সোলার বোটের মাধ্যমে মৃত ফারাওদের দেহ নীল নদ থেকে পিরামিডের নীচের সুড়ঙ্গ এসে পৌঁছত। পরে এই নৌকাগুলোকেও সমাধিস্থ করা হত। পাশের একটা মিউজিয়ামে এইসব নৌকার মডেল রাখা আছে।

স্ফিংসঃ
তিন পিরামিডকে ছাড়িয়ে সামন যেতেই এক বিশাল, গভীর গহ্বর। গহ্বরের ভিতর প্রস্তরের এক স্থাপত্য শিল্পও চোখে পড়ে কিন্তু এর আকৃতি পেছন থেকে বুঝা যায় না। একটু সামনে আসতেই বুঝা যায়, বসে আছে উদ্ধত মানব মস্তক নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত স্ফিংস। যান নাক পুরোটাই ভাঙ্গা এবং সিংহের থাবা সামনে এগিয়ে আছে।
এখানের মজার ব্যাপার হল, স্ফিংসের ঠিক মুখোমুখি দাড়ালে দেখা যায় তিন পিরামিডকে এক নজরে। মিশরের সূর্যোদয় হলে সর্বপ্রথম কিরণ পড়ে স্ফিংসের মুখে। আর দিনের শেষে সে কিরণ গিয়ে পড়ে নিলের জলে। এটি ৭৩.৫ মিটার লম্বা। স্ফিংসের মুখোমুখি দাড়ালে পেছনের তিন পিরামিডকে পাহাড়ের মত লাগে।
সন্ধায় আলোছায়ার স্ফিংস তার গল্প বলবে। পিজা হাটের ছাদে বসে নাকি বিনা টিকিটেই সেই গল্প শুনতে বসা যায়।

এই প্রাচীন সভ্যতাই আবিস্কার করেছিল করেছিল যে ৩৬৫ দিনে এক বছর হয়। এ কালের বিজ্ঞান এসে যেটাকে প্রমাণ করেছে সেটার সাথে সেই প্রাচীন আবিস্কারের পার্থক্য মাত্র কয়েক মিনিট।
জ্যামেতি গ্রিক থেকে পেয়েছিল ইউরোপ। আর গ্রিক পেয়েছিল মিশর থেকে। নীলনদের পাশে যে কৃষিজমির চাষ করা হত তা চিহ্নিত করে ভাগাভাগি করার জন্য এই জ্যামিতির আবিস্কার হয়। প্যাপারাইস কাগজে তারা লেখালেখি করতো। তা থেকেই ইংরেজী পেপার। আর এই কাগজ তৈরী হত প্যাপারাইস গাছের রিডস অর্থাৎ ডাটা থেকে।

স্ফিংসের নামকরণ করেছিল হেরোডোটাস। গ্রিক ঐতিহাসিকের এই আচরণকে ঔদ্ধত্য বলে বর্ণনা করেন নেপোলিয়ান। আলেকজান্ডারের মত বীর যোদ্ধারাও স্ফিংসের পদতলে মাথানত করেছেন বলে কথিত আছে।
একটা সময় স্ফিংসের বাকি দেহ মরুভূমির বালিতে ঢাকা পড়েছিল। কোন এক রাজকুমারের স্বপ্নে আসে স্ফিংস। বলে তার শরীরকে বালির চাদর সরিয়ে উম্নুক্ত করতে পারলে সে পরবর্তীতে ফারাও হতে পারবে। পরবর্তীকালে এই রাজকুমারই হয়েছিল চতুর্থ ফারাও থাটমোস।  গিজার এই গ্রেট পিরামিড বানানোর জন্য এক লক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়েছিল।

মমি বানানোর প্রসেসঃ
শরিরগুলো নিলনদ দিয়ে ভেসে আসার পর বা পাশ কেটে কিভার কলিজা মাংস বের করে ফেলা হত। মগজও বের করে ফেলতো মাথা থেকে। হয়তো পচে যাও্যার ভয়েই। এরপর ন্যাট্রন নামক এক ক্যামিকেলের সাহায্যে সম্পূর্ণ শুষ্ক করে নেয়া হত। পুরো চল্লিশ দিন সময় লাগতো মমি হতে। এরপর সেলাই করে দেও্য হত বাপাশ। এরপর শরীর ঢেকে ফেলা হত সোনার অলংকারে। পুরো শরিরকে প্রায় বিশটি আস্তরণে বাঁধা হত পাতলা কাপড় দিয়ে। প্রতি আস্তরণে ব্যবহার হত কিশমিশ সিডার তেল বিভিন্ন গাছের সুগন্ধি।
মিসরীয় প্রবাদে বলেঃ ওয়ার্ল্ড ফিয়ার দা টাইম এন্ড টাইম ফিয়ার দ্যা পিরামিড। এরপর সব অনুষ্ঠান শেষে একটি বিশাল পাথর দিয়ে সুড়ঙ্গপথের শেষ মুখটি চিরতরের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হত। এমনভাবে এই গহ্বরের মুখটি পাথর বসিয়ে বন্ধ করা হত যাতে পরবর্তীকালে বোঝা না যায় যে কোন পাথরটি সরালে সুড়ঙ্গপথ ধরে পিরামিডের ভেতর যাওয়া যাবে।

স্ফিংস নেফারতিতির প্রসংসাও করে। সুদীর্ঘ গ্রিবার অধিকারী নিফারিতিতি শুধু অদ্ভুত সুন্দরীই ছিলেন না বুদ্ধিমতিও ছিলেন। মিশরীয়তা তাকে বিউটি উইথ ব্রেইন্স বলে মনে করে।

স্ফিংস তার নাক ভাঙ্গার কাহিনী নিজ মুখেই বলে। কোন এক রাজপুত্রের কাছে তার হাসু দেখে ভয় লেগেছে। ব্যাস তার চেহারার অহং কমাতে নাক ভেঙ্গে দেয় সেই রাজপুত্র। 

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...