চীনের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তের একটি প্রদেশ জিনজিয়াং। আয়তন ৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৩০ বর্গমাইল।মধ্য এশিয়ার এই প্রদেশটি আয়তনের দিক থেকে পুরো চীনের ৬ ভাগের এক ভাগ। এটি চীনের সবচেয়ে বড় প্রদেশ।
প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত এখানে মুসলিমরা স্বাধীনভাবে বাস করে আসছে। কিন্তু বিশ শতকের মধ্যভাগে এসে কমিউনিস্ট চীন এ অঞ্চলকে নিজেদের করায়ত্ব করে নেয়। মূলত ১৯২১ সালে চীনে কমিউনিস্ট পার্টি গঠন হয়। এবং ১৯২৭ পর্যন্ত মাও সেতুংয়ের হাত ধরে এর বিকাশ ঘটতে থাকে। এবং ১৯৪৭ সালে তারা ক্ষমতায় আসে।
কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসার পরই চীনের মুসলমানদের উপর শুরু হয় অকথ্য নির্যাতন। ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করে তারা ইসলামের ঐতিহ্য ও প্রাচীন নিদর্শনাবলী একের পর এক ধ্বংস করে দিতে থাকে। বিশেষ করে চীনের হান সম্প্রদায়ের অত্যাচার ওখানকার মুসলিমদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। এ সমস্ত কর্মকাণ্ড বহির্বিশ্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে আড়াল করে রাখতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। যেহেতু সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে চীনের মুসলমানদের নির্যাতনের এই অধ্যায় অনেকটাই অজানা সে হিসেবে বলাই যায় যে কমিউনিস্ট সরকার তার সেই চেষ্টায় অনেকাংশেই সফল হয়েছে।
বলছিলাম জিনজিয়াংয়ের কথা। অঞ্চলটির নাম আসলে ছিল তুর্কিস্তান। কমিউনিস্ট সরকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এ অঞ্চলটির নাম পরিবর্তন করে রেখেছে জিনজিয়াং।
অবস্থান ও পরিচিতিঃ
বর্তমানে মধ্য এশিয়ায় তুর্কি জাতিসমূহ অধ্যুষিত অঞ্চলকে তুর্কিস্তান বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে আধুনিক তুর্কমেনিস্তান , কাজাকিস্তান , উজবেকিস্তান , কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও চীনের জিনজিয়াং (চীনা তুর্কিস্তান)। অনেকে রাশিয়ার তুর্কি অঞ্চলসমূহ তুর্কিস্তানের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তার মধ্যে রয়েছে তাতারস্তান ও সাইবেরিয়ার কিছু অংশ।
যেহেতু অঞ্চলটির পরিধি অনেক ব্যাপক তাই একে পূর্ব ও পশ্চিমে ভাগ করে পূূর্ব তুর্কিস্তান ও পশ্চিম তুর্কিস্তান নামে অভিহিত করা হয়। চীন যে অংশটি দখল করে রেখেছে, তা হলো পূর্ব তুর্কিস্তান। আর পশ্চিম তুর্কিস্তান অতীতে স্বাধীন থাকলেও একসময় তা সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে ছিলো। ৯০ এর দশকে রাশিয়ার পরাজয়ের পর দখলকৃত অধিকাংশ ভূখণ্ড পুনরায় স্বাধীনতা লাভ করলেও তুর্কিস্তানীরা লাভ করে নামমাত্র স্বাধীনতা । সেই রাষ্ট্রগুলোকেই এখন স্বাধীন বলে ধরা হয়।
তুরকিস্তানের মুসলমানদের পরিচিতিঃ
তুর্কিস্তানের মুসলিমরা 'উইঘুর' নামে পরিচিত। উইঘুর হচ্ছে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিমদের একটি শাখা। পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বসবাস। উইঘুর মুসলিমদের মোট সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশেই বাস করে ৮৫ লাখের মতো। রাজধানী বেইজিং ছাড়াও বিভিন্ন নগরীতেও অল্পসংখ্যক উইঘুর বাস করে। আর কিছু আছে হুনান ও চীনের অন্যান্য প্রদেশে। এ ছাড়াও কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়াতে উইঘুরদের বসবাস রয়েছে। এরা সুন্নি মুসলমান এবং অনেকেই সুফিবাদের চর্চা করে।
তুর্কিস্তানের মুসলিমরা 'উইঘুর' নামে পরিচিত। উইঘুর হচ্ছে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলিমদের একটি শাখা। পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বসবাস। উইঘুর মুসলিমদের মোট সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশেই বাস করে ৮৫ লাখের মতো। রাজধানী বেইজিং ছাড়াও বিভিন্ন নগরীতেও অল্পসংখ্যক উইঘুর বাস করে। আর কিছু আছে হুনান ও চীনের অন্যান্য প্রদেশে। এ ছাড়াও কাজাকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়াতে উইঘুরদের বসবাস রয়েছে। এরা সুন্নি মুসলমান এবং অনেকেই সুফিবাদের চর্চা করে।
উইঘুর শব্দের অর্থ হচ্ছে নয়টি গোত্রের সমষ্টি বা সমন্বয়। তুর্কি ভাষায় এ জন্য উইঘুর শব্দকে বলা হয় 'টকুজ-ওগুজ'। টকুজ অর্থ নয় এবং গুর অর্থ উপজাতি। ওগুজ থেকে গুর শব্দটি এসেছে।
প্রাচীন আমলে আলতাই পর্বতমালার পাদদেশে তুর্কিভাষী বিভিন্ন গোত্র বা উপজাতি বাস করত। এদের মধ্যে নয়টি উপজাতিকে নিয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। উইঘুরদের কখনো কখনো ‘গাউচি’ এবং পরে ‘তিয়েলে’ জনগোষ্ঠী হিসেবেও ডাকা হতো। তুর্কি শব্দ তিয়েলে বা তেলে এর অর্থ হচ্ছে নয়টি পরিবার। বৈকাল হ্রদের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী সিয়র তারদুস, বাসমিল, ওগুজ, খাজার, আলানস, কিরগিজসহ মোট নয়টি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে উইঘুর নামের জনগোষ্ঠী বা জাতি গড়ে ওঠে।
উত্তরাঞ্চলীয় ওয়েই রাজবংশের শাসনামলে উইঘুর জাতির অস্তিত্বের দলিলপত্র পাওয়া গেছে।এক সময় তারিম অববাহিকা থেকে মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত উইঘুর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। যুদ্ধবিগ্রহ, বন্যা, খরাসহ নানা কারণে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে মঙ্গোলিয়ার উইঘুররা তারিম অববাহিকা এলাকায় চলে গিয়ে সেখানে ছোট ছোট কয়েকটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এ সময়ই বর্তমান জিনজিয়াং এলাকাটি কখনো 'উইঘুরিস্তান' আবার কখনো 'পূর্ব তুর্কিস্তান' নামে উইঘুর মুসলিমদের শাসনে ছিলো।
এই অঞ্চলে ইসলামের আগমনঃ
হিজরী প্রথম শতকেই তুর্কিস্তান অঞ্চলে মুসলিম বিজয়ীদের মাধ্যমে ইসলামের আগমণ ঘটে। ২য় খলীফা উমার রা. এর যুগে সর্ব প্রথম পশ্চিম তুর্কিস্তানের দক্ষিণ অঞ্চল বিজয় হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে এর সীমানা বাড়তে থাকে।
হিজরী প্রথম শতকেই তুর্কিস্তান অঞ্চলে মুসলিম বিজয়ীদের মাধ্যমে ইসলামের আগমণ ঘটে। ২য় খলীফা উমার রা. এর যুগে সর্ব প্রথম পশ্চিম তুর্কিস্তানের দক্ষিণ অঞ্চল বিজয় হয়। তারপর ক্রমান্বয়ে এর সীমানা বাড়তে থাকে।
৯৬ হিজরী সনে 'উমাইয়া' বংশীয় শাসক ওয়ালীদ বিন আবদুল মালিকের যুগে বিখ্যাত মুসলিম বীর, সেনাপতি কুতাইবাহ বিন মুসলিমের হাতে পূর্ব তুর্কিস্তানের ঐতিহাসিক শহর 'কাশগড়' বিজয় হয়।
বিজয়ের পর কুতাইবাহ্ বিন মুসলিম চীন সম্রাটের দরবারে হুবাইরার নেতৃত্বে ৩০০ জনের এক প্রতিনিধিদল পাঠান। তারা সম্রাটের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে বলেন "হয়তো ইসলাম গ্রহণ করো, নতুবা কর প্রদান করো, অন্যথায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো"।
বিজয়ের পর কুতাইবাহ্ বিন মুসলিম চীন সম্রাটের দরবারে হুবাইরার নেতৃত্বে ৩০০ জনের এক প্রতিনিধিদল পাঠান। তারা সম্রাটের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে বলেন "হয়তো ইসলাম গ্রহণ করো, নতুবা কর প্রদান করো, অন্যথায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকো"।
চীনের সম্রাট সমঝোতায় আসতে রাজী হলে কুতাইবাহ চীন বিজয়ের ঘোষণা দিয়ে দেন। তাদের দুঃসাহসিকতাপূর্ণ কথা ও কাজে চীন সম্রাট ভীত হয়ে যায় এবং নিজ দেশের কিছু মাটি, প্রচুর পরিমাণ সোনা-রূপা এবং রাজ পরিবার ও অন্যান্য শাহজাদাদের মধ্য হতে ৪০০ জনের একটি দল কুতাইবাহর খিদমাতে প্রেরণ করে। এর বিস্তারিত বিবরণ ইবনে কাছিরের সুবিখ্যাত ইতিহাসগ্রন্থ 'আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ'তে উল্লেখ আছে।
তারপর থেকে পূর্ব তুর্কিস্তান মুসলিমদের শাসনেই ছিলো। ব্যতিক্রম ঘটে, ১৬৬৪ সালে যখন বর্তমান চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঞ্চু শাসকরা এক রাজতান্ত্রিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা মঙ্গোলিয়ার অধিকাংশ এলাকা, পূর্ব তুর্কিস্তান ও তিব্বত দখল করে এবং ২০০ বছর পর্যন্ত এই এলাকা তারা দখল করে রাখে। এই সময়কালে মাঞ্চু সম্রাটদের বিরুদ্ধে উইঘুররা অন্তত ৪২ বার বিদ্রোহ করেছে।
শেষ পর্যন্ত ১৮৬৪ সালে উইঘুররা পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে ওদেরকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন এবং কাশগড়কেন্দ্রিক এক স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এটাকে 'ইয়েতিসার' বা সাত নগরীর দেশও বলা হত। কারণ কাশগড়, ইয়ারখন্ড, হোতান, আকসু, কুচা, কোরলা ও তুরফান নামে সাতটি নগরী এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
শেষ পর্যন্ত ১৮৬৪ সালে উইঘুররা পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে ওদেরকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন এবং কাশগড়কেন্দ্রিক এক স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এটাকে 'ইয়েতিসার' বা সাত নগরীর দেশও বলা হত। কারণ কাশগড়, ইয়ারখন্ড, হোতান, আকসু, কুচা, কোরলা ও তুরফান নামে সাতটি নগরী এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
তখন উইঘুরদের নতুন এই রাজ্য পূর্ব তুর্কিস্তান স্বাধীন রাজ্য হিসেবে তিন পরাশক্তি স্বীকৃতি দিয়েছিল।
১ উসমানী সালতানাত ১৮৭৩ সালে
২ জার শাসিত রাশিয়া ১৮৭২ সালে
৩ গ্রেট ব্রিটেন ১৮৭৪ সালে ।
এমনকি রাজধানী কাশগড়ে এই তিনটি দেশ তাদের কূটনৈতিক মিশনও খুলেছিল। কিন্তু রাশিয়ার জার পূর্ব তুর্কিস্তান দখল করে নিতে পারে এমন আশঙ্কায় মাঞ্চু শাসকরা ১৮৭৬ সালে আবার হামলা করে পূর্ব তুর্কিস্তানে।
জিনজিয়াং নামকরণঃ
জেনারেল ঝু জংতাংয়ের নেতৃত্বে এক বাহিনীর হামলা করে তুর্কিদের উপর। এবং এই হামলায় নগ্ন সমর্থন জানায় ব্রিটেন। দখলের পর ১৮৮৪ সালের ১৮ নভেম্বর পূর্ব তুর্কিস্তানের নাম পাল্টে রাখা হয় 'জিনজিয়াং' বা 'সিনকিয়াং' যার অর্থ ‘নতুন ভূখণ্ড’। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব এখনো এই এলাকাকে মোগলিস্তান বা তুর্কিস্তানের পূর্ব অংশ হিসেবেই জানে। জিনজিয়াং নামকরণের আগে এই ভূখণ্ড মাঞ্চু চীনাদের কাছে 'হুইজিয়াং' বা মুসলিমদের ভূখণ্ড হিসেবে পরিচিত ছিল।
জেনারেল ঝু জংতাংয়ের নেতৃত্বে এক বাহিনীর হামলা করে তুর্কিদের উপর। এবং এই হামলায় নগ্ন সমর্থন জানায় ব্রিটেন। দখলের পর ১৮৮৪ সালের ১৮ নভেম্বর পূর্ব তুর্কিস্তানের নাম পাল্টে রাখা হয় 'জিনজিয়াং' বা 'সিনকিয়াং' যার অর্থ ‘নতুন ভূখণ্ড’। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব এখনো এই এলাকাকে মোগলিস্তান বা তুর্কিস্তানের পূর্ব অংশ হিসেবেই জানে। জিনজিয়াং নামকরণের আগে এই ভূখণ্ড মাঞ্চু চীনাদের কাছে 'হুইজিয়াং' বা মুসলিমদের ভূখণ্ড হিসেবে পরিচিত ছিল।
পুনরায় স্বাধীনতাঃ
পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার পর উইঘুর স্বাধীনতাকামীরা তাদের মুক্তির লড়াই অব্যাহত রাখে। ১৯৩৩ ও ১৯৪৪ সালে তারা দুইবার বিদ্রোহ করেছে এবং শেষবার তারা সফলও হয়। তারা আবার পূর্ব তুর্কিস্তান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। চীনের জাতীয়তাবাদী সরকার স্বাধীন তুর্কিস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং জোসেফ স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নও নতুন এই রাষ্ট্রকে সমর্থন জানায়। কিন্তু চীনের গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদীরা হেরে যাওয়ার পর 'মাও সে তুংয়ের' নেতৃত্বে বিজয়ী কমিউনিস্টরা তুর্কিস্তানকে চীনের সাথে কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এতে উইঘুর নেতারা রাজি হননি। এর পর এক রহস্যঘেরা বিমান দুর্ঘটনায় পূর্ব তুর্কিস্তানের সব শীর্ষ উইঘুর নেতা প্রাণ হারান। প্রচলিত আছে যে, মাও সে তুংয়ের চক্রান্তেই ওই বিমান দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।
পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার পর উইঘুর স্বাধীনতাকামীরা তাদের মুক্তির লড়াই অব্যাহত রাখে। ১৯৩৩ ও ১৯৪৪ সালে তারা দুইবার বিদ্রোহ করেছে এবং শেষবার তারা সফলও হয়। তারা আবার পূর্ব তুর্কিস্তান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। চীনের জাতীয়তাবাদী সরকার স্বাধীন তুর্কিস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং জোসেফ স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নও নতুন এই রাষ্ট্রকে সমর্থন জানায়। কিন্তু চীনের গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদীরা হেরে যাওয়ার পর 'মাও সে তুংয়ের' নেতৃত্বে বিজয়ী কমিউনিস্টরা তুর্কিস্তানকে চীনের সাথে কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এতে উইঘুর নেতারা রাজি হননি। এর পর এক রহস্যঘেরা বিমান দুর্ঘটনায় পূর্ব তুর্কিস্তানের সব শীর্ষ উইঘুর নেতা প্রাণ হারান। প্রচলিত আছে যে, মাও সে তুংয়ের চক্রান্তেই ওই বিমান দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছিল।
কমিউনিস্ট চীনের দখলে পূর্ব তুর্কিস্তানঃ
ওই বিমান দুর্ঘটনার পরপরই জেনারেল ওয়াং ঝেনের নেতৃত্বে বিশাল এক চীনা বাহিনী মরুভূমি পাড়ি দিয়ে পূর্ব তুর্কিস্তানে হামলা চালিয়ে সেটি দখল করে। এরপর ওই ভূখণ্ডের নাম পরিবর্তন করে আবার জিনজিয়াং রাখা হয়। চীনা দখলের পর অনেক স্বাধীনতাকামী উইঘুর নেতা পালিয়ে তুরস্কে ও বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে চলে যান। তখন থেকেই জিনজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা কমিউনিস্ট সরকার নানাভাবে নিপীড়ন চালিয়ে আসছে।
চীন সরকার মুসলিমদের ইতিহাস ও কাশগড় নগরীর প্রাচীন ভবনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। এমনকি এখান থেকে প্রাদেশিক রাজধানী সরিয়ে হাজার মাইল দূরের 'উরুমচি' বা 'উরুমকি'কে জিনজিয়াংয়ের রাজধানী বানিয়েছে। তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিচিতি ও স্বার্থের প্রতি সরকারের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। উইঘুর শিশুরা স্কুলে তাদের নিজস্ব ভাষা ও ধর্ম শিক্ষা করতে পারে না। স্কুলে কেবল চীনা ভাষাতেই শিক্ষা দেয়া হয়। হান চীনারা তাদেরকে আবর্জনার মতো গণ্য করে। সরকার উইঘুরদের প্রান্তিক অবস্থায় ঠেলে দেয়ার জন্য বিগত বছরগুলোতে উরুমচিসহ জিনজিয়াংয়ের অন্যান্য স্থানে লাখ লাখ হানকে এনে বসতি গড়ে দিয়েছে। রাজধানী উরুমচির প্রায় ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি হচ্ছে হান। এটি এখন হানদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
হান পরিচিতিঃ
চীনের অধিকাংশ অধিবাসীকে বলা হয় ‘হান’। কিন্তু এই হান ছাড়াও চীনে বাস করে একাধিক জাতি। যে অঞ্চলে হান চীনাদের বাস, তাকে বলা হয় খাস চীন।
চীনা বলতে প্রধানত আমাদের মনে আসে এই হান চীনাদের কথা। চীনের ইতিহাস ও সভ্যতা বলতে সাধারণভাবে আমরা যা বুঝি, তা হলো এই হান চীনাদেরই সৃষ্টি।
চীনের যে অঞ্চল মাঞ্চুরিয়া নামে পরিচিত, সেখানে বাস করত মাঞ্চুরা। নৃজাতিক দিক থেকে এরা হলো হান চীনাদের থেকে ভিন্ন। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাঞ্চুদের এক রাজা খাস চীন দখল করে সপ্তদশ শতাব্দীতে এবং মাঞ্চু রাজবংশ মহাচীন শাসন করে ১৯১২ সাল পর্যন্ত। মাঞ্চুরা আর হান চীনারা এখন প্রায় এক হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। মাঞ্চু রাজারা এক পর্যায়ে চীনের সভ্যতাকেই নিজেদের করে নিয়েছে। কিন্তু মাঞ্চু ও হানদের মধ্যে যে রকম সদ্ভাব গড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে, মহাচীনে বসবাসকারী অন্যান্য নৃজাতি ও ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে হান চীনাদের একই রকম সদ্ভাব গড়ে উঠতে পারেনি। যেমন তিব্বতী ও তুর্কিস্তানীদের সাথে ওদের বৈষম্যমূলক আচরণ।
চীনের অধিকাংশ অধিবাসীকে বলা হয় ‘হান’। কিন্তু এই হান ছাড়াও চীনে বাস করে একাধিক জাতি। যে অঞ্চলে হান চীনাদের বাস, তাকে বলা হয় খাস চীন।
চীনা বলতে প্রধানত আমাদের মনে আসে এই হান চীনাদের কথা। চীনের ইতিহাস ও সভ্যতা বলতে সাধারণভাবে আমরা যা বুঝি, তা হলো এই হান চীনাদেরই সৃষ্টি।
চীনের যে অঞ্চল মাঞ্চুরিয়া নামে পরিচিত, সেখানে বাস করত মাঞ্চুরা। নৃজাতিক দিক থেকে এরা হলো হান চীনাদের থেকে ভিন্ন। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাঞ্চুদের এক রাজা খাস চীন দখল করে সপ্তদশ শতাব্দীতে এবং মাঞ্চু রাজবংশ মহাচীন শাসন করে ১৯১২ সাল পর্যন্ত। মাঞ্চুরা আর হান চীনারা এখন প্রায় এক হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। মাঞ্চু রাজারা এক পর্যায়ে চীনের সভ্যতাকেই নিজেদের করে নিয়েছে। কিন্তু মাঞ্চু ও হানদের মধ্যে যে রকম সদ্ভাব গড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে, মহাচীনে বসবাসকারী অন্যান্য নৃজাতি ও ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে হান চীনাদের একই রকম সদ্ভাব গড়ে উঠতে পারেনি। যেমন তিব্বতী ও তুর্কিস্তানীদের সাথে ওদের বৈষম্যমূলক আচরণ।
মুসলিমদের উপর কঠোরতাঃ
জিনজিয়াংয়ে চীন সরকারের অনুসৃত কঠোর নীতির কারণে খুব সামান্যসংখ্যক উইঘুর মুসলিমই হজ্জে যাওয়ার সুযোগ পান। রমজান মাসে উইঘুর সরকারি কর্মচারীরা রূযা রাখতে পারেন না কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে। জুমার নামাজের খুৎবায় কী কথা বলা হবে সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগেই ইমামকে বলে দেয়। উইঘুরদের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কাশগড় নগরীর অনেক মসজিদ ও ভবন ভেঙে ফেলে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর অনেক এলাকার মুসলিমদের উচ্ছেদ করে কাশগড় থেকে শত মাইল দূরে নির্মিত আবাসিক কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অনুমতি নেয়া কিংবা জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।
জিনজিয়াংয়ে চীন সরকারের অনুসৃত কঠোর নীতির কারণে খুব সামান্যসংখ্যক উইঘুর মুসলিমই হজ্জে যাওয়ার সুযোগ পান। রমজান মাসে উইঘুর সরকারি কর্মচারীরা রূযা রাখতে পারেন না কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে। জুমার নামাজের খুৎবায় কী কথা বলা হবে সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগেই ইমামকে বলে দেয়। উইঘুরদের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কাশগড় নগরীর অনেক মসজিদ ও ভবন ভেঙে ফেলে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর অনেক এলাকার মুসলিমদের উচ্ছেদ করে কাশগড় থেকে শত মাইল দূরে নির্মিত আবাসিক কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অনুমতি নেয়া কিংবা জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।
পূর্ব তুর্কিস্তান সম্পর্কিত কিছু বাস্তব তথ্যঃ
(১) ঐতিহাসিকভাবে পূর্ব তুর্কিস্তান কখনোই চীনের অংশ ছিল না। বরং এই ভূমিকে 'হান' চীনারা উপনিবেশে পরিণত করেছে, যেমন ভাবে ব্রিটিশরা আমাদের উপমহাদেশকে উপনিবেশে পরিণত করেছিল। এই ভূমির অবস্থান চীনের মহা প্রাচীরের বাইরে। আমরা জানি, চীনের মহা প্রাচীর ছিল চীনের সীমানা নির্ধারক স্থাপনা যা বহিঃশত্রুদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকতে চীনারা নির্মাণ করেছিল। পূর্ব তুর্কিস্তান যেমনি চীনের প্রাচীরের বাইরে, ঠিক তেমনি Jade Gate (জেড ফটক) এর পশ্চিমে। সুতরাং ইতিহাস সাক্ষী, কস্মিনকালেও পূর্ব তুর্কিস্তান চীনের অংশ ছিল না। তাই, শুধুমাত্র পূর্ব তুর্কিস্তান নাম পরিবর্তন করে জিনজিয়াং/ সিংকিয়াং (অর্থ- নতুন রাজ্য) রাখলেই অতীত ইতিহাস বদলে যাবে না।
(২) বিগত দুই সহস্রাব্দের মধ্যে ১৮০০ বছরই পূর্ব তুর্কিস্তান চীনের কবল থেকে মুক্ত ছিল। আর ১০০০ বছর পুরনো ইসলামী ইতিহাসের কথা হিসাব করলে, দীর্ঘ ৭৬৩ বছর পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলিমরা স্বাধীন থাকলেও, বর্তমানে ও অতীতের বিভিন্ন সময় মিলিয়ে মোট ২৩৭ বছর তারা চীনের কাছে পরাধীন আছে।
(৩) ১৯৪৯ সালের হিসাব অনুযায়ী পূর্ব তুর্কিস্তানের ৯৩% জনসংখ্যা ছিল উইঘুর বা তুর্কি মুসলিম। কিন্তু এ সংখ্যা কমে ৯৩ % থেকে বর্তমানে ৫৫% এ নেমে এসেছে। কারণ, বিগত ৬০ বছর যাবত চীনা কমিউনিস্ট সরকার মুসলিমদেরকে পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে চীনের অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে এখানে হান চীনাদের সংখ্যা ৪৫%, যেখানে কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের আগে অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে যা ছিল মাত্র ৭%।
(৪) ১৯৪৯ সালে চীনের ক্ষমতা দখলের পর থেকে কমিউনিস্ট সরকার বেশ কয়েকবার পূর্ব তুর্কিস্তানে চৈনিক জাতিশুদ্ধি অভিযান চালায়। যাতে প্রাণ হারায় প্রায় ৪৫ লক্ষ মুসলিম।
(৫) চীনা সরকার এ পর্যন্ত নিজেদের নাগালে যতগুলো কুরআনের কপি কিংবা দ্বীনী কিতাব পেয়েছে, প্রত্যেকটাকে বাজেয়াপ্ত করেছে। ওরা এ পর্যন্ত মোট ত্রিশ হাজার সাতশ টি (৩০,৭০০) মুদ্রিত আধুনিক ও হাতে লেখা প্রাচীন ইসলামী কিতাব আগুনে ভস্ম করেছে, আটাশ হাজার (২৮,০০০) মসজিদ বন্ধ করে দিয়ে সেগুলোকে বারে (মদের আড্ডা) পরিণত করেছে, আঠারো হাজার (১৮,০০০) মাদ্রাসা গুদামঘরে পরিণত করেছে, এক লক্ষ বিশ হাজার (১,২০,০০০) আলেমে দ্বীনকে হত্যা করেছে এবং চুয়ান্ন হাজার (৫৪,০০০) জনকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে লেবার ক্যাম্পের শ্রমিক-মজুর বানিয়েছে।
(৬) চীনে কোন মুসলিমকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার শাস্তি: ১০ বছরের কারাদণ্ড!
(৭) মুসলিম মহিলাদের হিজাব পরিধান আইনত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ! কোন মুসলিমা বোন হিজাব পড়ে যদি ধরা পড়েন, তাকে ৫০০০ ডলার জরিমানা দিতে হয়। অথচ পূর্ব তুর্কিস্তানের একজন মুসলিমের সারা বছরের গড় আয়ই কিনা কেবলমাত্র ১০০০ ডলার!
(৮) চীন পূর্ব তুর্কিস্তানকে পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করার জায়গা বানিয়েছে। এ পর্যন্ত তারা সেখানে মোট ৩৫ টি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করেছে, যার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে দুই লক্ষ (২,০০,০০০) মুসলিম প্রাণ হারিয়েছে। অনবরত পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কারণে পূর্ব তুর্কিস্তানে তেজস্ক্রিয়তার এমন প্রভাব পড়েছে যে এক বছরেই (১৯৯৮ সাল) সেখানে বিশ হাজারের (২০,০০০) উপর বিকলাঙ্গ ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। আর বিগত বছরগুলোতে পূর্ব তুর্কিস্তানে ক্যান্সার, প্যারালাইসিস এবং বেশ কিছু জীবন নাশক অজানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে।
(৯) বিশ এর কম বয়সী তরুণদের কুরআন শেখা, মসজিদে আসা, এমনকি জুমার নামায পড়াও নিষিদ্ধ!!! আর যাদের বয়স ২০ এর উপর তাদেরকে যদিও জুমা পড়ার সুযোগ দেয়া হয়, কিন্তু তাদেরকে নামায পড়ার জন্য মাত্র ২০ মিনিট সময় দেয়া হয়। ২০ মিনিটের চেয়ে ১ সেকেন্ড বেশী সময় মসজিদে থাকা আইনত নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয়!!!
(১০) পূর্ব তুর্কিস্তানকে সদা 'শান্ত' রাখতে চীনা সরকার সেখানে সেনা ও পুলিশবাহিনীর ১০ লক্ষ সদস্যকে সর্বদা মোতায়েন করে রাখে।
সূত্র: উইকিপিডিয়া, বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও নির্ভরযোগ্য ইতিহাসগ্রন্থ সমূহ।
No comments:
Post a Comment