বিদাতী কারা
মুফতি মিযানু্র রহমান সাঈদ
শাব্দিক অর্থে যে কোন নতুন কাজই
বিদয়াত। শরিয়তের পরিভাষায় ইসলামী শরিয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয় এমন যেকোন আকিদা
বা আমলকে বিদআত বলে। (ফাতওয়ায়ে শামীঃ১/৩৭৭)
মিসবাহুল লুগাতে পারিভাষিক অর্থ লেখা
হয়েছে যেই আকিদা বা আমলের প্রমাণ অনুসরণীয় তিন যুগ অর্থাৎ সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে
তাবেঈনদের কোন যুগে পাওয়া যায়না।
ধর্মের নামে কেউ যদি কুসংস্কার বা
নব্য সংস্কারের নামে কিছু করে যার প্রমাণ শরিয়তে পাওয়া যায় না তাই বিদআত। কারণ ইসলাম ধর্ম
যে পরিপূর্ণ সে ব্যাপারে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেছেনঃ “আলইয়াউমা আকমালতু লাকুম
দিনাকুম, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি”।
বিদআত বলা হবে কোন কাজকে?
১) শরীয়তে যে কাজের বৈধতার কোন
প্রমাণ বা অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায় না সে কাজ কে ধর্মীয় কাজ বা দ্বীনের অংশ মনে
করা। যেমনঃ জানাজার পর প্রচলিত মুনাজাত,
প্রচলিত মিলাদ, মিলাদে কিয়াম করা, জশনে জুলুশ করা, মাইয়েত নামানোর সময় আযান দেওয়া,
আযানের পূর্বে সালাত ও সালাম পড়া।
২) শরঈ দলিলের মাধ্যমে কোন কাজ
প্রমাণিত থাকার পরও নিজ সুবিধা বা ইচ্ছেমত সে কাজের পরিধি বা পরিমাণ কমানো এবং
বাড়ানো। জরুরী মনে করা বা বাড়াবাড়ি করা যতটা বাড়াবাড়ি শরিয়ত করতে বলেনি। যেমন ঈদের
সংখ্যা দুইটি, আরো বাড়িয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী করা।
৩) শরঈ দলিল দ্বারা প্রমাণিত তবে
স্থান কাল পাত্র বা অনুষ্ঠানের সাথে নির্দিষ্ট না। যেমন মিলাদের আলোচনার জন্য ১২ই
রউল আউয়ালকে নির্ধারিত করা।
এসব কাজ বিদাতের অন্তর্ভুক্ত। এসবকে
ইহদাস ফিদ্দিন বলা হয়। অর্থাৎ ধর্মে নতুন করে কিছু যোগ করা।
তবে অনেক বিষয় আছে যেগুলো রাসুলের
যুগে ছিল না কিন্তু এখন মানুষ করছে। সেগুলোকে ইহদাস ফিদ্দিন বলা হবে না। এগুলো ইহদাস
লিদ্দিন। পার্থক্যটা বুঝা জরুরী।
ইহদাস লিদ্দিন হল দ্বীনের জন্য কিছু
বৃদ্ধি করা। এটা দ্বীনের স্বার্থে হয়ে থাকে। তাই এতে ইহদাস ফিদ্দিনের বিদয়াতী কাজ
বা সেই ধরনের কিছু পাওয়া যায় না। যেমন সাধারণত তিন ধরণের ইহদাস লিদ্দিনের উদাহরণ
আমরা দেখতে পাই,
১) যেসব নব উদ্ভাবিত কাজ মূলত ধমের
অংশ নয়, ধর্মীয় বিষয়ও না। যেমন আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার। এগুলোর সাথে ধর্মের
কোন সম্পৃক্ততা বা সংঘর্ষ নেই।
২) ধর্মের জন্য যেসব নতুন কাজ করা
হয়। যেমন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা শিক্ষা
কারিকুলাম, দাওয়াত ও তাবলিগ। এই কাজ শুধুমাত্র দ্বীনের সংরক্ষণের জন্যই করা হয়েছে।
৩) যেসব বিষয় ধর্মের অংশ হিসেবে নয়
বরং ধর্ম সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য। যেমন উসুলে ফিকহ, উসুলে হাদিস, উসুলে তাফসির,
ইলমে আকায়েদ, ইলমে ফিকহ।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে আহলে
বিদাতের আকিদাগত পার্থক্যঃ
১) একমাত্র আল্লাহই হাজির নাজিরঃ
“তিনি তোমাদের সাথেই আছেন, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের কার্যকলাপ দেখেন।
(হাদিদঃ৪)
কুরআনের আরো অনেক আয়াত দ্বারাই এই
বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে হাজির নাজির হওয়া একমাত্র আল্লাহ পাকের বিশেষ গুণ। যে কাউকে
এই গুনে গুণান্বিত করা শিরক। কিন্তু একদল ভন্ডপীর রাসুলের প্রতি অতি ভক্তি দেখাতে
গিয়ে রাসুলকে হাজির নাজির বলে ফেলে। যা সম্পূর্ণ সাহাবা তাবেঈ ও তাবে তাবেয়ীদের
ব্যাখ্যার পরিপন্থী।
২) একমাত্র আল্লাহই আলেমুল গাইবঃ “হে
নবী, আপনি বলে দিন আসমান জমিনে কেউই গায়েব জানেনা, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া” (আনয়াম
৬৫)
বিদাতীরা এই সিফাতকেও রাসুলের জন্য
সাবেত করতে চায়।
৩) রাসুল নূরের তৈরী নন তিনি সমস্ত
মানবজাতির মত মাটির তৈরী।
৪) আমলী বেদয়াতঃ যেমন ঈদে
মিলাদুন্নবী, জশনে জুলুশ মিলাদ কিয়াম, যিকির মাহফিল, তাবারুক বিতরণ। জানাযা
নামাজের পর মুনাজাত। ইকামাতে কাদকা মাতিসসালাহের সময় দাড়ানোকে জরূরী সুন্নত মনে
করা।
No comments:
Post a Comment