Thursday, August 3, 2017

ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস

ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস
লেখকঃ মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম

ইসরাইল একটি অবৈধ রাষ্ট্র। ১৯৪৮ সালের ১৫মে মুসলিম ফিলিস্তিনে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া রূপী ইহুদী ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে ইহুদীরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিল এবং তাদের কোন সুনির্দিষ্ট জাতীয় বাসস্থান বা দেশ ছিল না।

ইসরাইল একটি অবৈধ রাষ্ট্র। ১৯৪৮ সালের ১৫মে মুসলিম ফিলিস্তিনে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া রূপী ইহুদী ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে ইহুদীরা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিল এবং তাদের কোন সুনির্দিষ্ট জাতীয় বাসস্থান বা দেশ ছিল না। যে দেশে তারা বাস করত, তারা সে দেশেরই নাগরিক ছিল। ইসরাইলের আয়তন ২০,৭৭০ বর্গ কিলোমিটার (৮,০২৯ বর্গমাইল)। এ আয়তনের মধ্যে গাজা, পশ্চিমতীর, গোলান মালভূমি বা অন্য অধিকৃত আরব অঞ্চলগুলিকে ধরা হয়নি। সীমান্তরেখা ১,০০৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। ইসরাইলকে ঘিরে আছে মিশর (২২৫ কি.মি), জর্ডন (২৩৮ কি.মি), লেবানন (৭৯ কি মি), সিরিয়া ৭৬ কি. মি), পশ্চিম তীর (৩০৭ কি. মি), গাজা উপত্যকা (৫১ কি. মি)। পশ্চিমে ভূমধ্যসাগর তটরেখা ২৭৩ কি. মি। জনসংখ্যা ৬২ লক্ষ ৭৬ হাজার ৮শত ৮৩ জন। জনসংখ্যা ৮৩ শতাংশ ইহুদী, ১৭ শতাংশ আরব। ইসরাইলের দখলে থাকা বিভিন্ন আরব এলাকার লোকসংখ্যা ইসরাইলের লোকসংখ্যা হিসেবে ধরা হয়েছে। অধিবাসীদের ইসরাইলি বলা হয়। সরকারি ভাষা হিব্রু। শিক্ষার হার ৯৫.১ শতাংশ। পূর্ব রাজধানী তেলআবিব। ১৯৫০ সালে ইসরাইল অধিকৃত আরব অঞ্চলের জেরুসালেমকে রাজধানী বলে ঘোষণা করে। কিন্তু জাতিসংঘের কোন সদস্য তা মেনে নেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল দেশের দূতাবাস তেলআবিব শহরেই আছে। তেলআবিব দেশের প্রধান বন্দর। হাইফা অন্য উল্লেখযোগ্য শহর। ভূমধ্যসাগরের পূর্বপ্রান্তে, পশ্চিম এশিয়ার শেষে, ১৯৪৮ সালে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রে গঠিত হয় অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল। ইসরাইলের পূর্ব সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত জর্ডন নদীর পানিতে তার মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল খুব উর্বর। দক্ষিণের নেজেভ অঞ্চল যা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত ইসরাইলের ভূখন্ডের প্রায় অর্ধেক তা অনুর্বর মরু অঞ্চল। ইসরাইলের জাতীয় সেচ প্রকল্প নেজেভ অঞ্চলকে কর্ষণযোগ্য করে তুলছে।
ইসরাইলের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ও ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন দুর্ধর্ষ সেনাবাহিনী রয়েছে। সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার। এর মধ্যে স্থলবাহিনীর সদস্য হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার, নৌবাহিনীর সদস্য ৮ হাজার, বিমান বাহিনীর সদস্য ৩৫ হাজার। তার ওপর তাদের রয়েছে ৪ লাখ ৮ হাজার রিজার্ভ মিলিশিয়া। সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ট্যাংক ৪.৩০০টি, জঙ্গী বিমান ৬১৩টি, যুদ্ধ জাহাজ ১৫টি, সাবমেরিন ৩টি, ২০০টি পারমাণবিক বোমা ও অসংখ্য প্যাট্রিয়টিক মিসাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র সাম্রাজ্যবাদীরা কোন মুসলিম দেশকেই পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে দেবে না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অথচ ইসরাইলকে তারা করেছে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ। ইসরাইলে এমনভাবে সমরাস্ত্র কারখানাসমূহ গড়ে তোলা হয়েছে যে, তা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের অন্যতম সমরাস্ত্র ও সামরিক হার্ডওয়ার রফতানীকারক দেশ। ইসরাইলের দৃষ্টিতে সে চারধারে বৈরী প্রতিবেশী যেমন- ইরান, ইরাক , সৌদি আরব, সিরিয়া, জর্ডন, মিশর, আলজেরিয়া, লিবিয়া দ্বারা বেষ্টিত যাদের সম্মিলিত আয়তন ১৭ লাখ ৮৪ হাজার ৫ শত ৯৫ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ২৫ কোটি ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭ শত। ট্যাংক ১৬ হাজার ৫ শত ৪৭টি। সাবমেরিন ২৫টি। ডেস্ট্রয়ার/ফ্রিগেট ৩১টি। ইসরাইলের মতে তার পাশে যেহেতু বৈরী প্রতিবেশী রয়েছে সে জন্যই সে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে বাধ্য হয়েছে। আর এ জন্য করতে হচ্ছে বিপুল অংকের বরাদ্দ। ২০০১ সালে ১০০টি দেশের বিবেচনায় ইসরাইল বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে রাশিয়াতে ইহুদী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূচনা হয় এবং ১৮৯৫ সালে এর গোড়াপত্তন ঘটে। উক্ত আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ‘ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জন্য আন্তর্জাতিক আইন ও স্বীকৃতির ভিত্তিতে একটি স্থায়ী আবাসস্থান প্রতিষ্ঠা করা।’ ১৮৯৭ সালে ইহুদীদের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম বিশ্ব ইহুদী কংগ্রেস সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেলে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে ইহুদীদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫০ জন ইহুদী পন্ডিত, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ অংশ নেন। অতঃপর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ভিয়েনাবাসী ইহুদী নেতা, দার্শনিক ও সাংবাদিক থিউডর হারজেল (Theodor Herzel) একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজন সম্পর্কে মত প্রকাশ করেন এবং তা হতেই আধুনিক কালের ইহুদী জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি হয়।
ইহুদী বিশ্বসংস্থা গঠন
ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কল্পনাকে বাস্তব রূপ দান করার জন্য ১৮৯৭ সালে থিউডর হারজেল বুদাপেষ্টে আন্তর্জাতিক ইহুদী আন্দোলনের (International zionism movement) জন্য একটি বিশ্বসংস্থা গঠন করেন। ফিলিস্তিনের মালিক উসমানীয় তুর্কী সালতানাতকে হারজেল স্বপক্ষে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। ১৯০৪ সালে হারজেল মারা যান। ১৯০৫ সালে বৃটেন ইহুদীদেরকে তার আফ্রিকান উপনিবেশ উগান্ডা দিতে সম্মত হয়; কিন্তু ঐতিহাসিক ও ভাবাবেগগত কারণে ইহুদী কংগ্রেসের ফিলিস্তিনের প্রতি আকর্ষণ থাকায় তারা এ দান প্রত্যাখ্যান করে। এদিকে আন্তর্জাতিক ইহুদী আন্দোলন শক্তিশালী হতে থাকে। ইহুদীগণ ক্ষুদ্র আকারে ফিলিস্তিনে গিয়ে বসবাস করতে আরম্ভ করার অল্প পরেই শুরু হয় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইহুদী নেতা ও বিজ্ঞানী ডঃ চেইম ওয়েইজম্যান (Chaim Weizmann) ফিলিস্তিনে ইহুদীদের বসবাস করার অনুমতি লাভের বিনিময়ে ইহুদীদের কাছ থেকে মিত্র শক্তির গৃহীত ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে তথা মওকুফ করে দিতে স্বীকৃত হন।
বেলফোর ঘোষণা
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ ও মার্কিন সরকার ফিলিস্তিনে স্বতন্ত্র আবাসভূমির প্রশ্নে ইহুদীদের দাবীর প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে। ১৯১৭ সালের ২রা নভেম্বর বৃটিশ সরকারের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ভ আর্থার বেলফোর (A.J. Balfour) ঘোষণা করেন যে, ফিলিস্তিনে ইহুদীদের জাতীয় আবাসস্থল স্থাপনে ইংরেজ সরকারের সম্পূর্ণ সহানুভূতি আছে এবং এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইংরেজ সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। এটিই বেলফোর ঘোষণা (Balfour Declaration) নামে খ্যাত। এ ঘোষণা বা অঙ্গীকারটি ইংরেজ ইহুদীদের নেতা ও জায়নিষ্ট সংস্থার পৃষ্ঠপোষক লর্ড জেমস রথচাইন্ডের প্রতি লিখিত হয়েছিল। এই ঘোষণার ভাষ্য ছিল সংক্ষিপ্ত, সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। এ ঘোষণার ভাষ্য ছিল নিম্নরূপ :
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
২ নভেম্বর ১৯১৭
প্রিয় লর্ড জেমস রথচাইল্ড,
‘মহামান্য সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদী জাতির একটি জাতীয় স্বদেশভূমি (National Homeland) সৃষ্টির বিষয়টি সহানুভূতির সাথে দেখছে। এই লক্ষ্য অর্জনের ব্যবস্থা গ্রহণে সে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। স্পষ্টত এ ঘোষণা ফিলিস্তিনে বিদ্যমান ইহুদী সম্প্রদায়গুলোর নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকারের বিরুদ্ধে কোন পক্ষপাতিত্ব করছে না। অনুরূপভাবে এটি অন্যান্য দেশে ইহুদীরা যে আইনগত ও রাজনৈতিক অবস্থায় আছে তার ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব যদি দয়া করে এ ঘোষণাটি জায়নিস্ট ফেডারেশনকে জানিয়ে দেন।
আপনার বিশ্বস্ত
আর্থার জেমস বেলফোর।
বৃটেন ছিল তদানীন্তন বিশ্ব পরাশক্তি। বৃটিশ সাম্রাজ্যে তখন নাকি সূর্য অস্ত যেতনা। ইহুদীরা তাই বিশাল বৃটিশ সাম্রাজ্যের দ্বারস্থ হয়। বৃটেন ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়।
বেলফোর ঘোষণা দ্বারা ফিলিস্তিনে ইহুদীদের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে বলে ইহুদী মহলে বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। বৃটেন ইহুদী সংঘের সভাপতি লর্ড রথচাইল্ড বেলফোর ঘোষণাকে অভিনন্দিত করেন। প্রকৃতপক্ষে অক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে ইহুদীদের সমর্থন লাভ ও মুসলিম ফিলিস্তিনকে মুছে ফেলার লক্ষ্যে বেলফোর ঘোষণা রচিত হয়েছিল। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড লয়েড জর্জ (১৯১৬-১৯২১) এ ঘোষণাকে ইহুদীদের জন্য বৃটিশের একটি পুরস্কার বলে অভিহিত করেন। ফিলিস্তিন সমস্যা তথা মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার ইতিহাসে বেলফোর ঘোষণা একটি উল্লেখযোগ্য দলিল। লঘুচিত্তে এ ঘোষণা করা হয়নি। এ ঘোষণার পেছনে বহুবিধ কারণ ছিল। যেমন-
১. রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর বৈপ্লবিক সরকার ‘বুর্জোয়া ও সাম্রাজ্যবাদী প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হতে সরে দাঁড়াবার ইচ্ছা প্রকাশ করে। এ ইচ্ছা কার্যে পরিণত হলে পূর্ব ফ্রন্টে নিয়োজিত বিপুলসংখ্যক জার্মান সৈন্য পশ্চিম ফ্রন্টে নিয়োজিত হতে পারত। এর ফলে ফরাসি সীমান্তে মিত্রবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এ সম্ভাবনা দূর করার জন্য যে কোন উপায়ে আরও কিছু দিন রাশিয়াকে যুদ্ধে ব্যাপৃত রাখার নীতি গৃহীত হয়। বলশেভিক বিপ্লবে রাশিয়ার ইহুদীগণ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃবৃন্দের মধ্যেও বেশ কিছুসংখ্যক ইহুদী ছিল। মিত্রশক্তির নেতৃবৃন্দ মনে করেছিলেন যে, ফিলিস্তিনে ইহুদী আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতৃস্থানীয় বলশেভিক ইহুদীদের সন্তুষ্ট করতে পারলে তাদের সহায়তায় রাশিয়াকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীর নেতৃত্বাধীন শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যাপৃত রাখা যাবে।
২. ১৯১৭ সালের এপ্রিলের ৬ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানীর বেপরোয়া ডুবো জাহাজ ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও সীমিতভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধই ঘোষণা করেনি। এই অবস্থায় মিত্রশক্তিবর্গ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকতর অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন (১৯১৩-১৯২১ কার্যকাল) সহ মার্ক

No comments:

Post a Comment

The word of Shaykhul Azhar about Corona victim

সামর্থ্যবান প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব তাদের কিছু ব্যয়ভার বহন করা যারা এই রোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ লকডাউনে ঘরে আটকা পড়ার কারণে হ...