আংসান সূচি আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কিছু মিল খুজে পেয়েছেন বিবিসি সাংবাদিক জোনাহ ফিশার। গতকাল এ নিয়ে তিনি একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। বিবিসির ফ্যানপেজে সেটি পোষ্ট করার দুই ঘন্টার মাথায় হাজার ছাড়িয়েছিল এই পোষ্টের শেয়ার। সে হিসেবে একদিনে প্রতিবেদনটা অনেকেরই চোখে পড়ার কথা।
সুচি এবং ট্রাম্পের মিলটা হল উভয়ের মাথার চুল নিয়েই মিডিয়ায় অত্যাধিক আলোচনা হয় এবং সাংবাদিকদের প্রতি তারা উভয়েই প্রচন্ড ক্ষোভ লালন করে থাকেন।
(নিন্দুকেরা বলবেন সাংবাদিকদের চুলের আলোচনা সহ্য না করতে পেরেই তারা দুজন এইভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠেন
)
কথা হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পেছনে যেহেতু বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের তেমন কোন ভূমিকা নেই তাই সাংবাদিকদের প্রতি তার "ক্ষোভনীয়" আচরণ অতটা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু সুচি কি করে পারলো তার উত্থানের পেছনে বিবিসিদের ভূমিকা ভুলে যেতে! যখন সে মিয়ানমারের সামরিক সরকার কর্তৃক রেঙ্গুনে গৃহবন্দি ছিল তখন জীবনের ঝুকি নিয়ে এই আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরাই কি সুচিকে বিশ্বে পরিচিত করে তোলেনি? যারা নোবেলটা পর্যন্ত পাইয়ে দিল এত বড় কুরবানীর পরও সুচি তাদের সাথে এহেন অপ্রীতিকর আচরণ কেন করে? কেনু সুচি! কেনু!
সেই চৌদ্দমাস আগের কথা। শেষবারের মত সাংবাদিকদের সাথে এক বৈঠকে সম্মিলিত হয়েছিলেন সুচি। এরপর কতদিন গেল.. গেল কত রাত.. আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের লোকজন শুধু নীরবে নিভৃতে পানি ফেলেই যাচ্ছেন, ফেলেই যাচ্ছে। (আরেহ, আমি চোখের পানির কথা বলছি
) কিন্তু সুচি তাদেরকে আর কোন সময় দেননি। এখন সবটুকু সময় শুধু দেশীয় সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে ফটোসেশনের জন্য বরাদ্দ।
ইন দা মিনটাইম, ফিশার সাহেবের সাথে একটা ঘটনা ঘটেছে। যাকে কেন্দ্র করেই মূলত তার এই প্রতিবেদন লেখা। সম্প্রতি শুরু হওয়া নির্যাতনের নির্মম চিত্রগুলো তুলে ধরতে বিবিসি কোন একভাবে রোহিঙ্গাদের এরিয়ায় ঢুকে নিউজ কভার করার অনুমতি আদায় করলো। এবং সেটাও আবার সুচিকে না জানিয়ে। যদিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন নিয়ে মাথাব্যথা করাটা বিবিসির নীতির মধ্যে কখনোই পড়েনি। এরপরও নাকি অনুমতি পেয়েই তারা তাড়াহুড়ো করে রওনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই জানতে পারলো তাদের কোন এক কল্যাণকামী ব্যক্তি সুচির কানে তাদের আগমনের খবর পৌঁছে দিয়েছে। অত:পর সুচি সরাসরি তাদেরকে রোহিঙ্গা নিধনের এরিয়ায় যেতে বাধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নিরুপায় হয়ে তারা সেখানকার স্থানীয় এক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিরে এল। মজার ব্যাপার হল, সেই কর্মকর্তাও সাক্ষাৎকারে দিতে গিয়ে বিবিসিকে সাফ বলে দিল "মায়ানমারের নামে আন্তর্জাতিক মিডিয়া শুধুই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। আসলে গণহত্যার মত কোন ঘটনাই এখানে ঘটছেনা।"
এই বলে সাংবাদিকদের উলটা বাশ দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়া হল।
দুঃখ এখানেই শেষ নয়। রোহিঙ্গা নিধনের সময় সুচির নির্দেশে তার দেশের জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করে জোরদার লেখালেখি চলে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দোষ একটাই, তারা কেন রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত বলে "মিথ্যা" নিউজ করবে! সুচি এতবার স্পষ্ট করে বললো যে, "মিয়ানমারে কোন গণহত্যা বা জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হচ্ছেনা"।
এর সুন্দর ভাবে বলার পরও কেন তারা সুচির একথাকে অন্ধ প্রেমিকের মত বিশ্বাস করছেনা! এরপরও কি তাদের সাথে পুরাতন প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়! কক্ষনো না!
তাই ধীরে ধীরে একটা সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর সাথে সুচির সম্পর্কটা প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার মত হয়ে যায়। এদিকে সুচির ক্ষমতাও পাকাপোক্ত হয়। তাই সেও নিজের উত্থানের পেছনে মিডিয়ার সেইসব অবদানের কথা স্মরণ করার প্রয়োজনবোধ করেনা।
লক্ষণীয় বিষয় হল, সুচির দিক থেকে ভালবাসার অনুপস্থিতি থাকলেও বিবিসি এখনো তার সাথে প্রণয়ের পুরোনো সেই দিনের কথা পুরোপুরি ভুলতে পারেনি। যদিও নিজেদের ইজ্জত বাচাতে সুচিকে দায়সারা একটি পালটা আক্রমণ ফিশার সাহেব এই প্রতিবেদনে করেছেন। এত এত অপমান, কিছু জবাব তো দিতেই হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলে কথা।
আপত্তি তোলার আগে শুরুতেই সুন্দরভাবে সুচির পক্ষ নিয়ে একটু সাফাই গেয়ে নেয়া হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। ফিশার সাহেবের মতে "আংসান সুচি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেনা। তাই তিনি চাইলেই তাদের অভিযান বন্ধ করতে পারেন না।"
মানে তারা বলতে চায় শুধু শুধু সুচিকে সব দোষ দিয়ে লাভ নেই। আচ্ছা, যদি ধরেও নেই যে বিবিসির এই অমূলক দাবির আংশিক সত্যতা আছে এরপরও তো প্রশ্ন থেকে যায়।
-সুচি তাহলে সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযানের কথা অস্বীকার কেন করে?
-আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য সংবাদমাধ্যম যখন এই নির্মম অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরতে চায় তখন তাদের কাজে সুচি কঠোরভাবে বাধা কেন দেয়?
-এসব কিছুর পরও কি প্রমাণ হয় না যে সুচি পুরোপুরিভাবে সেনাবাহিনীকে এই গণহত্যার অভিযানে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে?
এরপর ফিশার সাহেবের তার দ্বিতীয় আপত্তি তুললেন। সেখানেও পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনয়ের সুর বিদ্যমান।
"রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের সংবাদগুলো নিয়ে যে মিয়ানমারের জাতীয় সংবাদমাধ্যমের উস্কানীমূলক মিথ্যা প্রচারণা চলছে তা তো সুচি বন্ধ করতে পারতেন।"
একদিকে আমরা রোহিঙ্গা হত্যার সংখ্যা গুনে কুল পাচ্ছিনা আর উনারা আছেন উনাদের ইমেজ নিয়ে। সুচি কেন উনার অধীনস্তদের বলে আমাদের ইমেজ সংরক্ষণ করছেন না? ভাবসাব দেখে মনে হয় প্রেম থাকাকালে মান ইজ্জত যে বর্গা দেয়া হয়েছিল তা এখনো ফেরত নেয়া হয়নি। আর রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের খবর যে এমনিতেও তারা কতটুকু প্রচার করে থাকেন বিশ্ববাসী তো তা প্রতিনিয়তই দেখে আসছে।
তো বিবিসি সেখানে না গেলে নিউজ করতে পারেন না? তাহলে আলজাযিরা কিভাবে নিউজ করে? সিরিয়া যুদ্ধের সময় AJ+ ভিডিওগুলো দুনিয়াব্যাপি ভাইরাল হতো তার অনেকগুলোই তো স্থানীয়দের কোন স্মার্টফোনে করা ভিডিও ছিল। সংবাদ প্রচারের ইচ্ছা থাকলে রোহিঙ্গাদের সংবাদগুলোও করা যেত। স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে ধারণ করা নির্যাতনের যে ভয়াবহ চিত্র ভিডিও ফুটেজগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে সেগুলো থেকেই প্রচার করা যেত। এসব হল প্রচার না করার বাহানা। প্রচার যাদের করার তারা ঠিকই করে যাচ্ছে।
যেহেতু বিবিসি লন্ডনের তাই তার দেশ ব্রিটেন তাই এতকিছুর পরও কেন সুচিকে এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, নৈতিকতার বিচারে এটা যে সঠিক, তা তো প্রমাণ করাই লাগবে। প্রতিবেদনের শেষে নির্লজ্জভাবে ব্রিটেনের মিয়ানমারকে সমর্থনের একটা কারণ দর্শানো হয়েছে। সেটা হল "সুচির কিছু ভুল থাকলেও সামরিক শাসন থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের পথে হাটার জন্য সুচিই এখন পর্যন্ত বেষ্ট অপশন। তাই ব্রিটেন এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।"
কতটা বায়াসড হলে কথাটা এইভাবে বলা যায়! নূন্যতম লজ্জাবোধ থাকলে এখনো এইভাবে সুচির সাফাই গাওয়ার কথানা বিবিসির। এত এত বাশ খাওয়ার পরও যদি একটু লজ্জা হত। এরপরও নাকি এইসব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইমেজ সংকটে পড়েনা!
সুচি এবং ট্রাম্পের মিলটা হল উভয়ের মাথার চুল নিয়েই মিডিয়ায় অত্যাধিক আলোচনা হয় এবং সাংবাদিকদের প্রতি তারা উভয়েই প্রচন্ড ক্ষোভ লালন করে থাকেন।
(নিন্দুকেরা বলবেন সাংবাদিকদের চুলের আলোচনা সহ্য না করতে পেরেই তারা দুজন এইভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠেন

কথা হচ্ছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পেছনে যেহেতু বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের তেমন কোন ভূমিকা নেই তাই সাংবাদিকদের প্রতি তার "ক্ষোভনীয়" আচরণ অতটা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু সুচি কি করে পারলো তার উত্থানের পেছনে বিবিসিদের ভূমিকা ভুলে যেতে! যখন সে মিয়ানমারের সামরিক সরকার কর্তৃক রেঙ্গুনে গৃহবন্দি ছিল তখন জীবনের ঝুকি নিয়ে এই আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরাই কি সুচিকে বিশ্বে পরিচিত করে তোলেনি? যারা নোবেলটা পর্যন্ত পাইয়ে দিল এত বড় কুরবানীর পরও সুচি তাদের সাথে এহেন অপ্রীতিকর আচরণ কেন করে? কেনু সুচি! কেনু!

সেই চৌদ্দমাস আগের কথা। শেষবারের মত সাংবাদিকদের সাথে এক বৈঠকে সম্মিলিত হয়েছিলেন সুচি। এরপর কতদিন গেল.. গেল কত রাত.. আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের লোকজন শুধু নীরবে নিভৃতে পানি ফেলেই যাচ্ছেন, ফেলেই যাচ্ছে। (আরেহ, আমি চোখের পানির কথা বলছি

ইন দা মিনটাইম, ফিশার সাহেবের সাথে একটা ঘটনা ঘটেছে। যাকে কেন্দ্র করেই মূলত তার এই প্রতিবেদন লেখা। সম্প্রতি শুরু হওয়া নির্যাতনের নির্মম চিত্রগুলো তুলে ধরতে বিবিসি কোন একভাবে রোহিঙ্গাদের এরিয়ায় ঢুকে নিউজ কভার করার অনুমতি আদায় করলো। এবং সেটাও আবার সুচিকে না জানিয়ে। যদিও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন নিয়ে মাথাব্যথা করাটা বিবিসির নীতির মধ্যে কখনোই পড়েনি। এরপরও নাকি অনুমতি পেয়েই তারা তাড়াহুড়ো করে রওনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই জানতে পারলো তাদের কোন এক কল্যাণকামী ব্যক্তি সুচির কানে তাদের আগমনের খবর পৌঁছে দিয়েছে। অত:পর সুচি সরাসরি তাদেরকে রোহিঙ্গা নিধনের এরিয়ায় যেতে বাধা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নিরুপায় হয়ে তারা সেখানকার স্থানীয় এক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়ে ফিরে এল। মজার ব্যাপার হল, সেই কর্মকর্তাও সাক্ষাৎকারে দিতে গিয়ে বিবিসিকে সাফ বলে দিল "মায়ানমারের নামে আন্তর্জাতিক মিডিয়া শুধুই প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। আসলে গণহত্যার মত কোন ঘটনাই এখানে ঘটছেনা।"
এই বলে সাংবাদিকদের উলটা বাশ দিয়ে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়া হল।
দুঃখ এখানেই শেষ নয়। রোহিঙ্গা নিধনের সময় সুচির নির্দেশে তার দেশের জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করে জোরদার লেখালেখি চলে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দোষ একটাই, তারা কেন রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত বলে "মিথ্যা" নিউজ করবে! সুচি এতবার স্পষ্ট করে বললো যে, "মিয়ানমারে কোন গণহত্যা বা জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হচ্ছেনা"।
এর সুন্দর ভাবে বলার পরও কেন তারা সুচির একথাকে অন্ধ প্রেমিকের মত বিশ্বাস করছেনা! এরপরও কি তাদের সাথে পুরাতন প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়! কক্ষনো না!
তাই ধীরে ধীরে একটা সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর সাথে সুচির সম্পর্কটা প্রাক্তন প্রেমিক প্রেমিকার মত হয়ে যায়। এদিকে সুচির ক্ষমতাও পাকাপোক্ত হয়। তাই সেও নিজের উত্থানের পেছনে মিডিয়ার সেইসব অবদানের কথা স্মরণ করার প্রয়োজনবোধ করেনা।
লক্ষণীয় বিষয় হল, সুচির দিক থেকে ভালবাসার অনুপস্থিতি থাকলেও বিবিসি এখনো তার সাথে প্রণয়ের পুরোনো সেই দিনের কথা পুরোপুরি ভুলতে পারেনি। যদিও নিজেদের ইজ্জত বাচাতে সুচিকে দায়সারা একটি পালটা আক্রমণ ফিশার সাহেব এই প্রতিবেদনে করেছেন। এত এত অপমান, কিছু জবাব তো দিতেই হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলে কথা।
আপত্তি তোলার আগে শুরুতেই সুন্দরভাবে সুচির পক্ষ নিয়ে একটু সাফাই গেয়ে নেয়া হয়েছে সেই প্রতিবেদনে। ফিশার সাহেবের মতে "আংসান সুচি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করেনা। তাই তিনি চাইলেই তাদের অভিযান বন্ধ করতে পারেন না।"
মানে তারা বলতে চায় শুধু শুধু সুচিকে সব দোষ দিয়ে লাভ নেই। আচ্ছা, যদি ধরেও নেই যে বিবিসির এই অমূলক দাবির আংশিক সত্যতা আছে এরপরও তো প্রশ্ন থেকে যায়।
-সুচি তাহলে সেনাবাহিনীর গণহত্যার অভিযানের কথা অস্বীকার কেন করে?
-আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য সংবাদমাধ্যম যখন এই নির্মম অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরতে চায় তখন তাদের কাজে সুচি কঠোরভাবে বাধা কেন দেয়?
-এসব কিছুর পরও কি প্রমাণ হয় না যে সুচি পুরোপুরিভাবে সেনাবাহিনীকে এই গণহত্যার অভিযানে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছে?
এরপর ফিশার সাহেবের তার দ্বিতীয় আপত্তি তুললেন। সেখানেও পর্যাপ্ত পরিমাণে বিনয়ের সুর বিদ্যমান।
"রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের সংবাদগুলো নিয়ে যে মিয়ানমারের জাতীয় সংবাদমাধ্যমের উস্কানীমূলক মিথ্যা প্রচারণা চলছে তা তো সুচি বন্ধ করতে পারতেন।"
একদিকে আমরা রোহিঙ্গা হত্যার সংখ্যা গুনে কুল পাচ্ছিনা আর উনারা আছেন উনাদের ইমেজ নিয়ে। সুচি কেন উনার অধীনস্তদের বলে আমাদের ইমেজ সংরক্ষণ করছেন না? ভাবসাব দেখে মনে হয় প্রেম থাকাকালে মান ইজ্জত যে বর্গা দেয়া হয়েছিল তা এখনো ফেরত নেয়া হয়নি। আর রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের খবর যে এমনিতেও তারা কতটুকু প্রচার করে থাকেন বিশ্ববাসী তো তা প্রতিনিয়তই দেখে আসছে।
তো বিবিসি সেখানে না গেলে নিউজ করতে পারেন না? তাহলে আলজাযিরা কিভাবে নিউজ করে? সিরিয়া যুদ্ধের সময় AJ+ ভিডিওগুলো দুনিয়াব্যাপি ভাইরাল হতো তার অনেকগুলোই তো স্থানীয়দের কোন স্মার্টফোনে করা ভিডিও ছিল। সংবাদ প্রচারের ইচ্ছা থাকলে রোহিঙ্গাদের সংবাদগুলোও করা যেত। স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে ধারণ করা নির্যাতনের যে ভয়াবহ চিত্র ভিডিও ফুটেজগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে সেগুলো থেকেই প্রচার করা যেত। এসব হল প্রচার না করার বাহানা। প্রচার যাদের করার তারা ঠিকই করে যাচ্ছে।
যেহেতু বিবিসি লন্ডনের তাই তার দেশ ব্রিটেন তাই এতকিছুর পরও কেন সুচিকে এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, নৈতিকতার বিচারে এটা যে সঠিক, তা তো প্রমাণ করাই লাগবে। প্রতিবেদনের শেষে নির্লজ্জভাবে ব্রিটেনের মিয়ানমারকে সমর্থনের একটা কারণ দর্শানো হয়েছে। সেটা হল "সুচির কিছু ভুল থাকলেও সামরিক শাসন থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের পথে হাটার জন্য সুচিই এখন পর্যন্ত বেষ্ট অপশন। তাই ব্রিটেন এখনো সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।"
কতটা বায়াসড হলে কথাটা এইভাবে বলা যায়! নূন্যতম লজ্জাবোধ থাকলে এখনো এইভাবে সুচির সাফাই গাওয়ার কথানা বিবিসির। এত এত বাশ খাওয়ার পরও যদি একটু লজ্জা হত। এরপরও নাকি এইসব আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ইমেজ সংকটে পড়েনা!
No comments:
Post a Comment