১৯২৮ সালে সদর সাহেব হুজুর
বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এবং থানভী রহ. এর পরামর্শে তিনি জামেয়া ইউনুসিয়ায় ছদরে
মুদাররিস হিসেবে যোগদান করেন।
এ সময়ে তাঁর সাথে ছিলেন
মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব পিরজী হুজুর ও হাফেজ্জী হুজুর রহ। তাদের পরিশ্রমে কয়েক
বছরের মধ্যে মাদরাসাটি দাওরায় হাদিস পর্যন্ত উন্নতি লাভ করে।
সদর সাহেবের ইচ্ছা ছিল
বাংলার প্রতিটি গ্রামে একটি করে আদর্শ মক্তব এবং বড় বড় শহরগুলোতে কমপক্ষে একটি করে
দাওরায় হাদিস মাদরাসা খোলা। এই মহান চিন্তা বাস্তবায়নের লক্ষে তিনি এক জায়গায় বসে
না থেকে বাগেরহাট জেলার গজালিয়া গ্রামে চলে এসে একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। কিছুদিন
থেকে তিনি বুঝতে পারলেন যেই বড় মিশন নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেছেন এতে এই নিভৃত
পল্লিতে বসে থেকে এই মিশন বাস্তবায়ন করা সম্ভব না।
১৯৩৬ সালে সেই লক্ষ্যে তিনি ঢাকার ব্যস্ততম নগরী বড়কাটারায় চলে আসেন।
এবং সেখানে হাফেজ হোসাইন আহমেদের সহায়তায় হুসাইনিয়া আশরাফুল উলুম বড়কাটারা মাদরাসা
প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময়ে দেশব্যাপি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ব্যাপক প্রচারণা চালান তিনি।
এবং অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনেক নতুন নতুন মাদরাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
১৯৩৭ সালে অর্থাৎ বড় কাটারা মাদরাসা প্রতিষ্ঠার এক বছর পর সদর
সাহেব নিজ গ্রাম গওহরডাঙ্গায় দারুল উলুম খাদিমুল ইসলাম নামে আরো একটি মাদরাসা
প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৫০ খৃষ্টাব্দ মোতাবেক ১৩৭০
হিজরী সনে মাওলানা যফর আহমদ উসমানীর দুয়ায় মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর
এবং দ্বীন মুহাম্মদ খান সাহেবকে সাথে নিয়ে লালবাগ শাহী মসজীদকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা
করেন জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া।
এছাড়াও তখন তিনি ঢাকার
ফরিদাবাদে জামেয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন।
এবং ফরিদপুর শহরে খাবাসপুর
শামসুল উলুম সহ আরো বহু মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
সদর সাহেব লালবাগ প্রতিষ্ঠার
পর থেকে আরো অনেক মাদরাসার সাথে জড়িত থাকলেও ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত তিনি লালবাগের
প্রিন্সিপাল ছিলেন।
শেষ জীবনে হাপানী রোগে তাঁর
অনেক কষ্ট হলেও কখনো তাহাজ্জুদ কাযা হয়নি। লালবাগে থাকতে তাঁর নিয়ম ছিল
তাহাজ্জুদের পর কুরআন তিলাওয়াত করা। মসজিদের হাউজের উত্তর পাশে নীচ তলায় বর্তমানে
যেখানে দাওরায় হাদিসের দরস হয়ে থাকে সেখানে হার্ড বোর্ডের পার্টিশন দিয়ে সারাজীবন
কাটিয়ে দিয়েছেন। ফজরের পর সেই রুমের বারান্দায় বসে তিনি আটটা পর্যন্ত তাফসীর
লেখতেন। এরপর নাস্তা সেরে তিনি দফতরে গিয়ে যাবতীয় কাজ করতেন। এ সময় আগত অনেকের
সাথে কথা বলতেন। এগারোটার দিকে গোসল সেরে আরাম করতেন। যোহরের পর খানা খেয়ে দফতরে
যেতেন। এ সময় তিনি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যাদি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণ নিয়ে আলাপ করতেন। আসরের পর ছাত্রদের ও খাস মুরিদদের গুরুত্বপূর্ণ নসিহত করতেন। মাগরিবের পর তিনি নফল নামাজ ও বিশেষ
আমলে থাকতেন। ইশার পর খানা খেয়ে শুয়ে পড়তেন। রমজানের প্রথম ১৫ দিন তিনি লালবাগে ও
শেষ পনেরোদিন তিনি গওহরডাঙ্গায় কাটাতেন।
রাজনৈতিক নেতাদের ভীড়
হরহামেশাইই তাঁর দরবারে লেগে থাকতো। কিন্তু কখনোই তিনি তাদের প্রতি অতিরিক্ত
মনোযোগ দিতেন না। মুনয়েম খান যখন পাকিস্তানের গভর্নর তখন তিনি দীর্ঘ সময় অপেক্ষা
করে ফিরে গিয়েছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে।
সূত্রঃ আলোর কাফেলা।
(শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. কে নিয়ে মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর প্রবন্ধ থেকে।)
(শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. কে নিয়ে মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর প্রবন্ধ থেকে।)
No comments:
Post a Comment